কালের খবরঃ
গোপালগঞ্জের খাটরা সার্বজনীন কালীবাড়ীতে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল দুই দিনব্যাপী গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী কবি গান। বাৎসরিক বারোয়ারী (শীতলাপূজা, ত্রীনাথ ঠাকুরপুজা ও কালীপূজা) উপলক্ষ্যে বুধ ও বৃহস্পতিবার (১০ ও ১১জানুয়ারী) রাতে শহরের খাটরা সার্বজনীন কালীবাড়ীতে এ কবি গানের আয়োজন করা হয়। সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত পালাক্রমে চলে এই যুকিতর্কের গান। উপমহাদেশের প্রখ্যাত কবিয়াল মনি শংকর সরকার ও সঞ্জয় সরকার মাতিয়ে তোলেন দুই দিনের এই কবিগানের আসর। বিভিন্ন শ্রেণিপেশার ও বিভিন্ন বয়সের অসংখ্য শ্রোতা আসেন এ কবি গান উপভোগ করতে।
আয়োজক ও শ্রোতাদের সাথে কথা বলে জানাগেছে,এক সময়ে কবি বিজয় সরকারের গান মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনতেন ভাটি অঞ্চলের শ্রোতারা। কিন্তু কালের বিবর্তনে এবং আধুনিকতার বেড়াজালে এসব গানের শ্রোতা একদিকে যেমন কমেছে, তেমনি গায়কও কমেগেছে।
তাইতো কবি গানের ঐতিহ্য ধরে রাখতে শীতলা পূজা ও কালী পূজা উপলক্ষে জেলা শহরের খাটরা সার্বজনীন কালীবাড়ীতে বিগত চার বছর ধরে আয়োজন করা হয় এই কবিগানের। এই গানের আয়োজন করায় আয়োজকদেরকে ধন্যবাদ জানান গান শুনতে আসা মানুষ।
কবিয়ালারা জানিয়েছেন, কবিগানে গুরুশিষ্য (স্বামী বিবেকানন্দ ও রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব) পালা গাওয়া হয়। কবিয়াল সঞ্জয় সরকার গানে গানে প্রশ্ন ছুড়ে দেন আরেক কবিয়াল মনিশংকর সরকারের কাছে। গানের তালে তালে তিনিও দিতে থাকেন প্রশ্নের পাল্টা উত্তর। প্রশ্ন ও উত্তর শুনে আত্মিক সুখ অনুভব করেন শ্রোতারা। আর জাতি-ধর্ম ও বর্ণের পছন্দের কবিগান মানুষদের শুনাতে পেরে খুশি দুই কবিয়াল।
গোপালগঞ্জ শহরের মডেল স্কুল রোডের বাসিন্দা ও অবসরপ্রাপ্ত প্রবীন শিক্ষক নরেশ চন্দ্র দাস বলেন, কবি গানের মাধ্যমে ধর্ম, বর্ণ, বিজ্ঞান সম্পর্কে জানা ও বোঝা যায়। কবিগান বাংলার মানুষের প্রাণের অনুষ্ঠান ছিলো এখন খুব কম হয়। এই গানটি বেশী বেশী হওয়া উচিৎ। তাহলে সমাজের মানুষ উপকৃত হবে। যুব সমাজ গুরুজনদের শ্রদ্ধা ভক্তি করবে এবং সমাজে সুন্দর পরিবেশ বজায় থাকবে।
অপর শ্রোতা গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার উলপুর গ্রামের মৃণাল কান্তি রায় চৌধুরী (পপা) বলেন, বাংলার ইতিহাসের সাথে কবিগান মিশে আছে। এই গানকে লালন করা উচিৎ। তাহলে সমাজের কুশংস্কার দূর হবে। সমাজ বা দেশে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় থাকবে।
কবিয়াল সঞ্জয় সরকার বলেন, আজকের এই পালায় কবির ভূমিকায় আমি বিবেকানন্দ হয়ে শিষ্য হয়েছি। বিপক্ষে যিনি উত্তর দিয়েছেন তিনি আমার গুরুদেব রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব হয়ে আমার প্রশ্নের উত্তর দেন। আমি সাকার – নিরাকারের উপর প্রশ্ন করি। সমাজ উন্নয়ন এবং যুব সমাজ উন্নয়নের জন্য যে ত্রুটি রয়েছে সেই ত্রুটিগুলো কিভাবে সংশোধন করা যায় তার জন্য প্রশ্ন করেছি। আমার গুরুদেব যে জবাব বা উত্তর দিয়েছেন তাতে গোটা মানবকুল উপকৃত হবেন। জাত ভেদাভেদ ভুলে সকল শ্রেণি পেশার মানুষ একটা লক্ষে পৌছাতে পারবে বলে আমি মনে করি।
গুরুর ভূমিকায় থাকা কবিয়াল মনি শংকর সরকার বলেন, আমরা বিভিন্ন মহত ব্যক্তিদের লেখা পুস্তুক ও ধর্মগ্রন্থ পড়ে ধর্ম, বিজ্ঞান , ভালোমন্দ উপস্থাপন করে থাকি। যার মাধ্যমে সমাজের মানুষদের বুঝিয়ে থাকি কোনটি ভালো বা কোনটি মন্দ। সকল মনুষ্যজীব যে এক তা ব্যাখ্যা দিয়ে বুঝিয়ে দেই। তাতে সমাজের অবক্ষয় দূর হয়ে একটি সুষ্ঠধারার সমাজ প্রতিষ্ঠা লাভ করতে সহায়তা করবে বলে আমি মনে করি। তাই সবারই এই গান শোনা উচিৎ।
আয়োজক গোপালগঞ্জ খাটরা সার্বজনীন কালিবাড়ির সভাপতি রূপক বিশ্বাস বলেন, বিগত চার বছর হলো কবি গান শুরু করেছি। আগে এটি সরস্বতিপূজা উপলক্ষে গোপালগঞ্জ শহরের সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজ মাঠে হতো। সেটি বন্ধ হওয়ার পর আমরা শুরু করি। প্রাচীন এ ঐতিহ্যবাহী কবি গান ধরে রাখতে আমাদের এই আয়োজন। কবি গানের মধ্যে দিয়ে সকল ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে অটুট হবে সম্পৃতির বন্ধন । মানুষে মানুষে ভেদাভেদ ভুলে যাতে ভ্রাতিত্ববোধ জাগ্রত হয় সেই লক্ষে আমাদের এই আয়োজন। আগামীতেও এই ধারা অব্যাহত থাকবে।
Design & Developed By: JM IT SOLUTION
Leave a Reply