
প্রসূন মন্ডলঃ
বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি ও গোপালগঞ্জ জেলায় প্রাচীন কাল (প্রায় ৪০০ বছর) থেকে চলে আসছে এক অনন্য কৃষি পদ্ধতি-ভাসমান চাষ। এই প্রাচীন কৃষি পদ্ধতিটি বর্তমানে শুধু ঐতিহ্য নয়, বরং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দেশের কৃষি ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্থানীয় ভাষায় যাকে বলা হয়, ধাপ বা বায়রা, পদ্ধতি। তা মূলত একটি ভাসমান কৃত্রিম দ্বীপ, যেখানে কচুরিপানা, শ্যাওলা, দুলালী লতা, ফ্যানা ঘাসসহ নানা জলজ উদ্ভিদের স্তুপে তৈরি হয় চাষের বেড বা ধাপ। জোয়ার-ভাটার সঙ্গে এই বেডগুলি ওঠানামা করে, এবং এখানেই চাষ হয় লাউ, কুমড়া, শিম, বেগুন, মরিচ, শশা, বাঁধাকপি, ফুলকপি, ঢেঁড়সসহ নানা ধরনের চারা,শাকসবজি ও মশলা জাতীয় কৃষি।
ভাসমান চাষের ঐতিহ্যঃ
ভাসমান চাষের ইতিহাস খুবই পুরনো। প্রাচীনকাল থেকেই জলাবদ্ধ অঞ্চলের কৃষক বা দরিদ্ররা বন্যা, জলাবদ্ধতা ও ক্ষতিগ্রস্ত জমিতে কচুরিপানা বা ধানের নাড়া (খড়) দিয়ে ধাপ তৈরী করে শাকসবজি চাষাবাদ শুরু করেছিলেন। চাষ এলাকার অনেক বয়োজ্যেষ্ঠ বা বৃদ্ধ কৃষকের মুখে শোনা যায়, প্রায় ৩০০ থেকে ৪০০ বছর আগে পিরোজপুরের নাজিরপুর অঞ্চলে প্রথম এই পদ্ধতিতে ভাসমান বেডে চাষাবাদ চালু হয়। তাদের মতে, নিম্নজলমগ্ন জমিতে কৃষি কার্যক্রম চালানোর জন্য জলজ উদ্ভিদের সাহায্যে ভাসমান চাষ পদ্ধতির সৃষ্টি হয়েছিল। পরে এই পদ্ধতি পিরোজপুর ছাড়িয়ে বরিশাল, ঝালকাঠি, গোপালগঞ্জসহ দেশের দক্ষিণাঞ্চলের অন্যান্য স্থানে ছড়িয়ে পড়ে এবং এখনও চলমান রয়েছে।
ভাসমান ধাপ তৈরিঃ
পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার ভাসমান ধাপ তৈরির পদ্ধতিটি অত্যন্ত সৃজনশীল ও দক্ষতা নির্ভর উল্লেখ করেছেন, শিকারীকুল ইউনিয়নের খলনি গ্রামের কৃষক আবু সালেক (৫৮) । তিনি জানিয়েছেন,প্রথমে বিলে জন্ম নেওয়া কচুরিপানা দিয়ে বেড তৈরী করা হয়। পরে শ্যাওলা, দুলালী লতাসহ অন্যান্য জলজ উদ্ভিদ সংগ্রহ করে স্তরে স্তরে সাজানো হয়। এর ওপর নারিকেলের ছোবড়া ও ক্ষুদ্র জলজ উদ্ভিদ ছড়িয়ে চারা বা বীজ বপন করা হয়। এর আগে ধাপে সামান্ন পরিমান ইউরিয়াসার দেয়া হয়। যা ধাপ পঁচতে সাহায্য করে এবং উর্বরতা বাড়ায়। প্রতিটিধাপ প্রায় ৬০ থেকে ৭০ ফুট লম্বা ও ৫-৬ ফুট চওড়া হয়ে থাকে। অনেকটা একটা ভেলার মতো দেখা যায়। এখানেই চাষ করা হয় শাকসবজি এবং মশলার চারা।
পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার কলারদোয়ানিয়া ইউনিয়নের মুগারঝোর গ্রামের ৫০বছর বয়সী সবজির চারাচাষী হান্নান ব্যাপারী জানান, ভাসমান বেডে শাকসবজি ও মশলার চাষে সবচেয়ে জনপ্রিয় ফসলগুলো হলো লাউ, বেগুন, টমেটো, শিম, বাঁধাকপি, ফুলকপি, করলা, পেঁপে, মরিচ, শশা, মিষ্টি কুমড়া, চালকুমড়া, ঢেঁড়স, কলমি শাক, পুঁইশাক, কচু, হলুদ, এবং শশা। বাংলা আষাঢ় মাস থেকে অঘ্রায়ণ মাস পর্যন্ত পাঁচবার চারা উৎপাদন হয়ে থকে। বেডে বীজ বসানো থেকে ৩০ দিনের মধ্যে চারা উত্তোলন বা বিক্রি করা হয়। তাতে প্রতিটি বেডে পাঁচ থেকে ছয়বার চারা তৈরী করা হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এতে চাষিরা বেশ লাভবান হয়ে থাকেন। আর যারা চারার পরিবর্তে সবজি চাষ করেন তারা স্থানীয় বাজারে সবজি বিক্রি করে বেশ লাভবান হয়ে থাকেন।

পিরোজপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক মোঃ রেজাউল হাসান জানান, এবছর জেলার ৮টি উপজেলায় ৯০৮জন কৃষক ৩০০৬টি বেডে ভাসমান সবি জবা চারা চাষ করেছেন। এর সঙ্গে প্রায় ৭০০০ মানুষ সম্পৃক্ত । আর এই চাষ জমি বা ভূমিতে রূপান্তর করলে প্রায় ২৩৮ হেক্টর হয়। এর মধ্যে নাজিরপুর উপজেলার কলারদোয়ানিয়া ইউনিয়নের মুগারঝোর গ্রামে বেশী চাষ হয়ে থাকে। এসব বেডে স্থানীয় কৃষকরা মূলত সবজি চারা ও নানা ধরনের সবজি চাষ করে থাকেন। যেসব বেডে সবজি চাষ হয় তার প্রতি হেক্টরে গড়ে প্রায় ১৮ মেট্রিক টন ফলন পাওয়া যায়।
কৃষি কর্তকর্তা আরো জানান, নাজিরপুরের এসব ভাসমান বেডে লাউ, টমেটো, শিম, করলা, ফুলকপি, বাঁধাকপি, ওলকপি, বেগুন, লালশাক, ঢেঁড়স, কাঁচামরিচ, মারমা, শশা, ক্ষিরাই, হলুদ, ঝিঙা, চিচিঙ্গা, মিষ্টিকুমড়া, পেঁপে, করলা, তরমুজ সহ নানা জাতের সবজির চারা ও সবজি উৎপাদন কওে থাকে। কৃষকরা উৎপাদিত এসব চারা ও সবজি দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় বিক্রি করে থাকেন। বিশেষ করে নদীপথে সহজ যোগাযোগের কারণে গোপালগঞ্জ, ঝালকাঠি, নড়াইল, ঢাকা , খুলনা, সাতক্ষীরা, যশোরসহ আশপাশের আরও অনেক জেলায় এগুলোর চাহিদা রয়েছে।
স্থায়ী জলাবদ্ধ এলাকায় সারা বছর ভাসমান চাষাবাদের মাধ্যমে সবজি ও মসলা উৎপাদন করা সম্ভব। এ পদ্ধতিটি পরিবেশবান্ধব ও সম্পূর্ণ জৈবভিত্তিক হওয়ায় কৃষকরা খুবই কম খরচে চাষ করতে পারেন। সেচের জন্য বাড়তি কোন খরচ প্রয়োজন পড়ে না, আবার খুব সামান্য সার ও বালাইনাশক ব্যবহার করেই ভালো ফলন পাওয়া যাচ্ছে। ফলে কৃষকের খরচ কম, কিন্তু লাভ তুলনামূলকভাবে বেশি হয়।
ভাসমান চাষ পদ্ধতি নিয়ে গোপালগঞ্জ জেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আব্দুল কাদের সরদার জানান, নিন্মজলাভূমি বেষ্টিত গোপালগঞ্জে ভাসমান বেডে সবজি চাষ বহু বছরের পুরানো। কৃষকদেও সাথে কখা বলে জানাগেছে এই চাষ প্রায় ২০০ বছরের পুরানো। গোপালগঞ্জ জেলার যেসব অঞ্চলের জমি প্রায় সারা বছর জলমগ্ন থাকে। বর্ষা মৌসুমে বিলের কচুরিপানা স্তুপ করে ধাপ তৈরী করে মানুষ চাষাবাদ করে আসছে। বর্তমানে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আমাদের কৃষি অনেকটা হুমকির মুখে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রতিনিয়ত আমাদের কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হয়ে থাকে। তাতে ক্ষতিগ্রস্থ হয় উৎপাদন। সেক্ষেত্রে ভাসমান পদ্ধতিতে চাষাবাদ একটি টেকসই পদ্ধতি। গোপালগঞ্জে ভাসমান পদ্ধতিতে সবজি ও মসলা উৎপাদন খুবই জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এতে উৎপাদন ব্যয় কম, লাভও বেশি। বন্যাসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে ফসল নষ্ট হয় না। এতে এ অঞ্চলের কৃষকেরা লাভবান হচ্ছেন। প্রতি বছরই ভাসমান পদ্ধতিতে চাষাবাদে ঝুঁকছেন এ জেলার কৃষক। আর বাড়ছে এ পদ্ধতিতে আবাদও।

চাষির অভিজ্ঞতা ও চ্যালেঞ্জঃ
পিরোজপুরের নাজিপুর উপজেলার কলারদোয়ানিয়া ইউনিয়নের মুগারঝোর গ্রামের কৃষক মিজান সরদার ( ৪৮) । যার রয়েছে ২৫টি ভাসমান ধাপ। অন্যের জমি বিঘাপ্রতি ১৪ হাজার টাকায় ভাড়া নিয়ে বিগত ৩০ বছর ধরে ভাসমান চাষের সঙ্গে যুক্ত। তিনি বলেন,আগে কোনো সার বা কীটনাশক ছাড়াই চাষ করা যেত। কিন্তু এখন জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে নানা ধরনের ভাইরাস ও পোকামাকড়ের আক্রমণ বেড়ে গেছে। এখন আমরা কিছুটা সার ও কীটনাশক ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছি। তবে এই পদ্ধতির অন্যতম দুশ্চিন্তা হলো ব্যয় বৃদ্ধি। শ্রমিকের মজুরি দিনে সাতশত টাকা। ৬০ হাত লম্বা একটি বেড তৈরি করতে প্রায় ৮ হাজার টাকা খরচ হয়। বীজ, সার, কীটনাশসহ উৎপাদন উপকরনের খরচ বেড়েছে, অন্যদিকে উৎপাদিত সবজি বা চারা বিক্রি করে আগের মতো লাভ পাওয়া যাচ্ছে না। কৃষিকে এগিয়ে নিতে সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা বা সহায়তার প্রয়োজন।
নারীদের কর্মসংস্থানঃ
একই গ্রামের নারী শ্রমিক শরীফা বেগম (২৮), ফিরোজা বেগম (৪৫) জানান, আমরা একহাজার দৌলা বা মেদা তৈরী করে দিলে টাকা পাই দেড়শত টাকা। আর দৌলার মধ্যে বীজ বপন করে দিলে দেয় ৮০টাকা। প্রতিদিন সংসারের কাজের ফাঁকে এক থেকে দেড় হাজার দৌলা বা মেদা তৈরী করে থাকি। সারা মাসে যা পাই তাই সংসারের কাজে ব্যয় করি।
বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার ইলুহার ইউনিয়নের মলুহার গ্রামের দৌলা তৈরী করেন আসমা বেগম। তিনি বলেন, সংসারের কাজের ফাঁকে দৌলা তৈরী ও বীজ বপন করে বেশ ভালোই আছি। প্রতি হাজার দৌলার জন্য ২৩০টাকা পাই। স্বামীর আয়ের সাথে আমার আয় যোগ করে পরিবারের স্বচ্ছলতা ফিরেছে। শুধু আমি নয় গ্রামের শত শত নারী এই কাজের সঙ্গে যুক্ত।

বীজ বা চারা রোপন পদ্ধতিঃ
গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার মিত্রডাঙ্গা গ্রামের সবজিচাষী শক্তিধর কীর্ত্তনীয়া, নাজিরপুরের মুগারঝোর গ্রামের মোঃ রুহুল আমিন বাহাদুর, একই গ্রামের শখহিদুল ইসলাম ব্যাপারী সাথে কথা হলে তারা জানান, বাবার কাছ থেকে শিখেছি ভাসমান বেডে সবজি চাষ। প্রথমে কচুরিপানা দিয়ে বেড বা ধাপ তৈরী করে থাকি। বাড়িতে বা শুকনা উঁচু জায়গায় তৈরী দৌলায় বীজ বপন করে চারা তৈরী করি। সেই চারা ধাপ বা বেডে রোপন করে সবজি উৎপাদন করি। এসব ধাপে ঢেড়শ, মিষ্টি মুকড়া, লালশাক, পুঁইশাক, লাউ, কচু, হলুদ, শশাসহ বিভিন্ন ধরনের চাষ করে থাকি। ইতো মধ্যে ঢেঁড়শ ও শশা, লাই, মিষ্টি কুমড়া বিক্রি শুরু হয়েছে। বছরের ছয়মাস ভাসমান বেডে ও শীত বা শুকনা মৌসুমে জমিতে সবজি ও ধান চাষ করে ভালোই আছি। তবে এই পেশা টিকিয়ে রাখতে সরকারি সাহায্য সহযোগীতা প্রয়োজন।

ভাসমান চাষ-জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে এক কার্যকর উপায়ঃ
বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তন কৃষি খাতে নানা সমস্যা সৃষ্টি করছে। বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় জেলা গুলো, বিশেষ করে পিরোজপুর ও বরিশাল, যেখানে জলাবদ্ধতা সমস্যা বিদ্যমান, সেখানে ভাসমান চাষ বেশ কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এই অঞ্চলের অনেক কৃষিজমি পানির নিচে চলে গেছে বা যাচ্ছে। তবে ভাসমান চাষ পদ্ধতি জলমগ্ন জমি ব্যবহার করে কৃষি কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার একটি অন্যতম উপায় বলে মনে করেন কৃষি সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে নাজিরপুর উপজেলা কৃষি অফিসার ইশরাতুন্নেছা এশা বলেন, ভাসমান চাষের ফলে শুধুমাত্র কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন না, বরং এটি পরিবেশবান্ধব এবং বৈশ্বিক খাদ্য নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। সেচের জন্য বাড়তি কোন ব্যয় প্রয়োজন হয় না, কম সার এবং কীটনাশক ব্যবহার হয়, ফলে এটি পরিবেশের জন্য উপযোগী ক্ষতিকর নয়।

আর্থিক সম্ভাবনা এবং রপ্তানীঃ
বর্তমানে ভাসমান চাষ শুধু দেশীয় বাজারে নয়, আন্তর্জাতিক বাজারেও রপ্তানির সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। কৃষকরা জানান, ঢাকা সহ সারা দেশের ছাদ বাগানগুলিতে এই অঞ্চলের চারা সরবরাহ হচ্ছে। কৃষি বিশেষজ্ঞরা বিশ্বাস করেন, যদি এই পদ্ধতিকে আরও প্রসারিত করা যায়, তবে অন্য দেশের বাজারেও চারা রপ্তানি সম্ভব হতে পারে।
তাছাড়া, এই ভাসমান চাষের মাধ্যমে কৃষকরা শুধু আয়ের উৎস সৃষ্টি করেননি, তারা স্থানীয় বাজারে সবজি সরবরাহ করে কর্মসংস্থানও তৈরি করছেন। এটি একদিকে যেমন আয়ের একটি মূল উৎস, তেমনি দেশের খাদ্য নিরাপত্তার উন্নতিতেও ভূমিকা রাখছে।

অভিজ্ঞ মহলের মতামতঃ
ভাসমান চাষ বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের কৃষকদের জন্য একটি জীবনের অবলম্বন, যা দেশীয় কৃষির ঐতিহ্য বহন করছে। জাতিসংঘের স্বীকৃতির পর এই পদ্ধতি পৃথিবীজুড়ে আলোচিত হয়েছে, এবং কৃষকদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি, পরিবেশগত সমস্যাগুলি এবং সরকারি সহায়তার অভাবে এই চাষের ভবিষ্যৎ কিছুটা অনিশ্চিত। সরকারি পরিকল্পনা, কৃষকদের প্রশিক্ষণ এবং সহায়তা বাড়ানো গেলে, ভাসমান চাষ আমাদের দেশের কৃষি ব্যবস্থার একটি শক্তিশালী অংশ হয়ে উঠতে পারে।
Design & Developed By: JM IT SOLUTION