কালের খবরঃ
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ও সড়ক বিভাগের গাফিলতি ও বিভিন্ন জটিলতার কারনে টেকেরহাট- গোপালগঞ্জ-ঘোনাপাড়া ৪৪কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের আঞ্চলিক মহাসড়কের কাজ চলছে অনেকটা ঢিমেতালে। রাস্তাটি ভেঙ্গে ফেলে রাখায় বিভিন্ন স্থানে সৃস্টি হয়েছে খানাখন্দে। যানবাহন চলাচলের কারনে ধুলাবালিতে অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে থাকেসড়ক এলাকার আশপাশ। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে এ সড়কে চলাচলরত যানবাহন চালক,যাত্রী ও সাধারণ জনগণ। এছাড়া সম্প্রসারণ সড়কের ভূমির মালিকানা দাবী করে বেশ কয়েকটি স্থানে নির্মাণ কাজে বাধা সৃস্টি করা হয়েছে। বিষয়টি স্বীকার করেছে সংশ্লিস্ট কর্তৃপক্ষ। তবে বর্ধিত (আগামী জুন মাসের) নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা জানিয়েছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ।
ঢাকা খুলনা মহাসড়ক হওয়ার আগে গোপালগঞ্জের টেকেরহাট-গোপালগঞ্জ-ঘোনাপাড়া সড়কটি ছিল যাত্রী সাধারণের যাতায়াতের একমাত্র পথ। তখন সড়কটি অঞ্চলিক সড়ক ছিল। এই ৪৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের আঞ্চলিক সড়কটি এখন আঞ্চলিক মহাসড়কে রূপান্তর করে ৩৪ ফুট প্রস্থ (চওড়া) করার কাজ চলমান রয়েছে। রাস্তার বিভিন্ন স্থান ভেঙ্গে দীর্ঘদিন ফেলে রাখায় সেখানে বড় বড় গর্ত ও খানাখন্দর সৃস্টি হয়েছে। নির্মানাধীন রাস্তার কাজের ধীরগতি থাকায় সড়কে চলাচলকারী যানবাহন চালক ও যাত্রীদের ভোগান্তি এখন চরমে পৌছিয়েছে বলে জনিয়েছেন এলাকাবাসী।
গোপালগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানাগেছে ,টেকেরহাট থেকে গোপালগঞ্জ শহরের ঘোনাপাড়া পর্যন্ত সড়কটির দৈর্ঘ্য ৪৪ কিলোমিটার। এই সড়কটি দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ গোপালগঞ্জ থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করে। আবার গ্রামের মানুষ জেলা শহরের আসা যাওয়া করে থাকে। এরই মধ্যে সড়কটি আঞ্চলিক সড়ক থেকে মহাসড়কে উন্নয়ন করতে ২০২০ সালের জুন মাসে একনেকে একটি প্রকল্প অনুমোদন করা হয়। প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছিল ২০২০ সালের জুলাই থেকে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত দুই বছর। ৬টি প্যাকেজের মাধ্যমে প্রকল্পটিতে ৬১২ কোটি ৫৮ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়। এতে মূল সড়কের জন্য ৪৯৬ কোটি টাকা ও জমি অধিগ্রহন ও অন্যান্য খরচ ধরা হয়েছে ১১২ কোটি টাকা । ওই বছরের নভেম্বরে প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ এবং ২০২১ সালে ২৪ জানুয়ারী দরপত্র আহবান করা হয়। পরে দরপত্র আহবানসহ নানা জটিলতার কারণে প্রকল্পের কাজ শুরু করতে বিলম্ব হয় প্রায় একবছর। এবং দুই বার কাজের মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়েছে। ছয়টি গ্রæপে কাজটি শুরু হলেও তিন চার পাঁচ ও ছয় নম্বর গ্রæপের ঠিকাদরী প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ করছে ঢিলেঢালা ভাবে। এছাড়া সড়কের ভেন্নাবাড়ি, চামটা, জলিরপাড় ও হরিদাসপুর এলাকায় জমির মালিকানা দাবী করে বাধার সৃস্টি করায় ওইসব স্থানে নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে। এসব জটিলতার কারনে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ করতে পারছে না। ফলে জনগণের চলাচলে ভোগান্তি হচ্ছে।
সড়কে চলাচলকারী ভ্যান চালক মিন্টু বৈরাগী বলেন, এই সড়কটি ভেঙ্গে ফেলে রাখা এবং দীর্ঘদিন কাজ না করায় রাস্তার বিভিন্ন যায়গায় গর্ত তৈরী হয়েছে। আমরা যারা ভ্যান চালাই তাদের খুব কষ্ট হয়। সঙ্গে যাত্রীদেরও কষ্ট হয়। মাঝে মধ্যে ভ্যানের চাকা ও ফর ভেঙ্গে যায়। বড় গাড়ীকে সাইড দিতে গিয়ে ভ্যান উল্টে পড়ে। তাই রাস্তাটি ঠিক করা হলে সবাই ঠিকঠাক চলতে পারবো।
মুকসুদপুর অংশের গঙ্গারামপুর গ্রামের পাট ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম বলেন,বেশ কয়েকবছর হলো টেকেরহাট গোপালগঞ্জ সড়কে কোন মেরামত বা পিচ দেয়া হয়না। এই কারনে রাস্তার অীধকাংশ জায়গায় খানা খন্দর তৈরী হয়েছে। গুডামে মালামাল আনতে খুব সমস্যা পোহাতে হয় খরচ ও বেশী লাগে। তাই সড়কটি দ্রæত ঠিক হওয়া উচিৎ।
সড়কে চলাচলকারী কলেজ ছাত্রী, আফরোজা বেগম বলেন, এই সড়ক দিয়ে গোপালগঞ্জ শহরের হাজী লাল মিয়া সিটি কলেজ যাতায়াত করি। রাস্তার কিছু কিছু ¯া’ন ভালো হলেও অধিকাংশ রাস্তা খারাপ। গাড়ী ঠিকমত চলতে পারে না। ধুলোবালিতে খুবই সমস্যা হয়। যে ড্রেস পরে যাই সেটি আর পরের দিন পরা যায়না। তাই বলবো সড়ক কর্তৃপক্ষ দ্রæতই সড়কটি কাজ শেষ করুক।
সদর উপজেলার বনগ্রামের এস এম নজরুল ইমলামের ছেলে স্কুল ছাত্র আবির মোল্লা বলেন, বাড়ি থেকে বৌলতলী স্কুলে এই সড়ক দিয়ে যেতে হয়। গ্রামীণ সড়ক শেষ করে যখন ভ্যান চালক এই বড় রাস্তায় উঠে তখন ঝাকিতে শরীর ব্যাথা হয়ে যায়। জামা প্যান্ট ধুলোয় ময়লা হয়ে যায়। তাই রাস্তাটি খুব তাড়াতাড়ি ঠিক করা উচিৎ।
সদর উপজেলার সাতপাড় গ্রামের প্রাইভেট এ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার অসিত বিশ্বাস বলেন, গ্রামাঞ্চলের বিভিন্ন রোগী নিয়ে গোপালগঞ্জসহ বিভিন্ন হাসপাতালে যেতে হয়। মুমুর্ষ রোগী নিয়ে দ্রæত যাওয়ার উপায় নেই। বিশেষ করে গর্ভবতি রোগীদের বেশী সমস্যা হয়। এই সমস্যা চলছে প্রায় ৩/৪ বছর। কিছু কিছু স্থান ভালো হলেও অধিকাংশ জায়গা খারাপ। গাড়ী চালাতে ও রোগীদের খুবই সদস্যা হয়ে থাকে।
বৌলতলী বাজারের মুদি ব্যবসায়ী মিন্টু বিশ্বাস ও মিলন মজুমদার বলেন, বৌলতলী বাজারে টেকেহাট, জলিরপাড়, বানিয়ারচর, চামটা,ভেন্নবাড়ি, সাতপাড়, গান্ধিয়াশুর,সিংগা, হাতিয়ারা, পুইশুর,তেলিভিটা,কালিভিটা, করপাড়া, তাড়গ্রাম, বনগ্রাম, কলপুর, বলাকইড়সহ অন্তত ৩০টি গ্রামের মানুষ বৌলতলী বাজার বা হাটে সদাই করতে আসেন। তাদের আসার একমাত্রা রাস্তা এটা। এই রাস্তাটি প্রায় চার বছর হলো চলাচলের অনুপোযুক্ত। রাস্তা খারাপের কারনে এখন লোকজন কম আসে। ব্যবসা বাণিজ্য কমে গেছে। দোকানে মালামাল আনতে খরচ বেশী হয়। সব মিলে খুব সমস্যায়-ই আছি আমরা। সরকার বা সড়ক বিভাগের কাছে দাবী করছি রাস্তাটি যেন দ্রæত ঠিক করে দেয়।
সড়কে চলাচলকারী ব্যক্তিগত গাড়ী চালক কাবুল শেখ, কালিম মোল্লা, ট্রাক চালক খোকন ফলিয়া, ইদ্রিস আলী মোল্লা, বাস চালক ই¯্রাফিল সহ বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, সড়কটিতে যানবাহন চলাচলে সমস্যা হচ্ছে। তারপর ও বাধ্য হয়ে চলতে হচ্ছে। গোপালগঞ্জ-টেকেরহাট ৪০/৫০ মিনিটের রাস্তা । কিন্তু সময় লাগে দেড় থেকে পৌনে দুই ঘন্টা। এতে গাড়ীরও ক্ষতি হয় এবং যাত্রীদেরও সমস্যা হয়।
এছাড়া কথা হয় জলিরপাড়া গ্রামের নিতিশ তালুকদার, প্রবীর শীল। বানিয়ারচর গ্রামের বাসিন্দা ও ভ্যান চালক কৃট হালদার, ব্যবসায়ী বিনয় বাইন, তরকারী বিক্রেতা সদানন্দ বালা, পান বিড়ির দোকানদার, নির্মল মন্ডল, চা ব্যবসায়ী সুব্রত বাড়ৈ, ভ্যান চালক, অনন্ত মজুমদার, শংকর দাস ও জলিরপাড় ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড মেম্বার মুকন্দ বৈরাগীর সঙ্গে। তারা জানিয়েছেন সড়কটি সম্প্রসারণের নামে ভেঙ্গে ফেলে রাখা হয়েছে। চলাচলে খুবই সমস্যা হচ্ছে। আমাদের দাবী সড়কটি দ্রæত সম্প্রসারণ বা মেরামত করে এলাকাবাসীর চলাচলের সুবিধা করে দেয়া হোক।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মাঈন উদ্দিন বাসীর প্রজেক্ট ম্যানেজার আব্দুর রউফ বলেন, আমাদের অংশের কাজ গেল ডিসেম্বরের মধ্যে করার কথাছিল। কিন্তু সড়কের সাতপাড় অংশে নতুন করে একটি ব্রীজ করার সিধান্ত হওয়ায় একটু বিলম্ব হচ্ছে। ব্রীজ বাদে অন্যসব কাজ আমরা দ্রæতগতিতে সম্পন্ন করছি। আশাকরি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে পারবো।
এছাড়া অন্য গ্রæমের ঠিকাদার ও ম্যানেজারদের বারবারফোন করলেও তারা ফোনটি রিসিভ করেননি। এই কারনে তাদেও বক্তব্যদেয়া সম্ভব হয়নি।
গোপালগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আজহারুল ইসলাম বলেন, দরপত্র আহবানের পর বিভিন্ন জটিলতার কারনে কাজ শুরু করতে বিলম্ব হয়। সড়কের ১ও ২নম্বর প্যাকেজের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। প্যাকেজের বাকী ৪টি গ্রুপের ১০টি স্থানে জমি অধিগ্রহণের জটিলতা দেখা দিয়েছে। এই কারনে জমির মালিকগণ কাজে বাধা দিয়েছেন। এসব কারনে আমরা ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত সময় বাড়ানোর জন্য প্রধান প্রকৌশলীকে চিঠি দিয়েছি। ইতো মধ্যে সড়কের ৬০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। অধিগ্রহণ জটিলতা সম্পন্ন হলে আশাকরছি মেয়াদের আগেই কাজ শেষ হবে।
Design & Developed By: JM IT SOLUTION
Leave a Reply