কালের খবরঃ
বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। কিন্তু পুষ্টিতে এখনো সফলতা অর্জন করতে পারেনি।তাই খাদ্যের মাধ্যমে মানুষের দেহের পুষ্টির চাহিদা নিশ্চিত করতে কাজ করছেন কৃষি বিজ্ঞানীরা। এরমধ্যে পুষ্টি সমৃদ্ধ একটি ধানের জাত উদ্ভাবন করেছে বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা)। নতুন উদ্ভাবিত বিনা ধান-২৬ প্রোটিন ও অ্যামাইলোজ সমৃদ্ধ ধান। এ ধান থেকে তৈরি চালের ভাত খেলেই মিলবে শরীরের প্রয়োজনীয় প্রোটিন।
বিনা গোপালগঞ্জ উপকেন্দ্রের উর্ধতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ড. মো: কামরুজ্জামান এ তথ্য জানিয়েছেন।
ওই কর্মকর্তা বলেন, বিনা ধান-২৬ এর চালে অন্য ধান থেকে অ্যামাইলোজের পরিমাণ শতকরা ২৬.৪ ও প্রোটিনের পরিমাণ ৯.৪ মিলি গ্রাম বেশি। এটি একটি উচ্চ ফলনশীল রোপা আমনের জাত । জাতটি ব্যাকটেরিয়াল লিফ ব্লাইট রোগ প্রতিরোধী। তাছাড়া জাতটিতে রোগবালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণ প্রচলিত যে কোন জাতের চেয়ে অনেক কম। ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, গোপালগঞ্জে ১০টি প্রদর্শনী প্লটে এ বছর নতুন জাতের বিনা ধান-২৬ চাষাবাদ করা হয়। এ জাতের ধান হেক্টরে ৬.২৫ মেট্রিক টন ফলন দিয়েছে। ধানটি স্বল্প জীবনকাল সম্পন্ন। হেক্টরে ৬ থেকে সাড়ে ৬ মেট্রিক টন ফলন দিতে সক্ষম।তাই অধিক ফলন পেয়ে কৃষক লাভবানও হয়েছেন ।
বিনা গোপালগঞ্জ উপকেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা সৌরভ অধিকারী বলেন, বিনা ধান-২৬ বাংলাদেশর প্রথম প্রোটিন সমৃদ্ধ ধানের জাত। গোপালগঞ্জে এ জাতটির প্রথম চাষাবাদে ব্যাপক সাফলতা এসেছে। কৃষক প্রত্যাশার চেয়েও বেশি ফলন পেয়েছে। খাদ্যের মাধ্যমে মানবেদেহে পুষ্টির চাহিদা পুরণ করবে এ ধান। বিশাল জনগোষ্ঠির পুষ্টিহীনতা দূর করতে এ ধান ব্যাপক ভূমিকা রাখবে ।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার বাসাবাড়ি গ্রামের কৃষাণী নাদিরা বেগম বলেন, আমি গত বছর স্থানীয় জাতের আমন ধান আবাদ করেছিলাম । তাতে হেক্টর প্রতি মাত্র ২ মেট্রিক টন ফলন পয়েছিলাম। এ বছর প্রোটিন সমৃদ্ধ বিনা ধান-২৬ আবাদ করে হেক্টর প্রতি ৬.২৫ মেট্রিক টন ফলন পেয়েছি। স্থানীয় জাতের তুলনায় এ জাত তিনগুনেরও বেশি ফলন দিয়েছে। রোপনের ১১৫ দিনের মাথায় ধান ঘরে তুলতে পেরেছি।এরপর ওই মাঠে সবজি করেছি। সবজি বিক্রি শেষ হলে বোরো ধান করব।এ ধানের কারণে বছরে ১ জমিতে ৩/৪ টি ফসল করতে পারছি।অধিক ফসল উৎপাদন করে আমরা লাভের মুখ দেখছি। প্রোটিন সমৃদ্ধ ধানের ভাল ফলন দেখে প্রতিবেশি কৃষকরা এ ধানের আবাদ করতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।
বিনা ধান-২৬ আবাদ সম্প্রসারিত হলে জেলাবাসীর প্রোটিনের চাহিদা পুরন হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাফরোজ আক্তার বলেন, এ ধানের চালের ভাত খেলে শর্করার সাথে হাই প্রোটিন পাওয়া যাবে । এছাড়া বিনা উদ্ভাবিত ধানের জাতগুলো উচ্চ ফলনশীল। তাই আমরা গোপালগঞ্জে বিনা উদ্ভাবিত ধান চাষাবাদ সম্প্রসারণ করছি। বিনা’র ধান আবাদ করে অধিক ফলন পেয়ে কৃষক লাভবান হচ্ছেন। এটি আমাদের কৃষির অন্যতম সাফল্য।
Design & Developed By: JM IT SOLUTION
Leave a Reply