নাজমুল ইসলামঃ
বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনের ইতিহাস গৌরব উজ্জ্বল। ৫২ থেকে ২০২৪ নানা পটভূমিতে অনেকবার বিজয় অর্জন করেছে ছাত্রসমাজ আর বিজয়ের উৎসব করেছে সুযোগ সন্ধানী লুটেরা রাজনীতিবিদেরা!আজ একজন সাবেক ছাত্রনেতার ইউটিউবে প্রকাশিত বক্তব্য দেখলাম তিনি অতীত গৌরব নিয়ে খুবই গৌরবান্বিত এবং বলতে শুনলাম একজন সিরাজুল আলম খান, আব্দুর রাজ্জাক, তোফায়েল আহমেদ একদিনে তৈরি হয় নি তাদের সাথে তুলনা করার মত কেউ হয় নি, হবে ও না।
এ প্রসংগে আমার বিবেচনা –
১* ৫২ ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে এদেশের ছাত্র সমাজ এর অর্জন বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষা এই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতির অসাম্প্রদায়িক চেতনার ধারা উন্মোচিত হয়।
২* এই আন্দোলনের পরবর্তীতে বাংলাদেশের প্রথম অসাম্প্রদায়িক সমাজতন্ত্রী মুখী প্রগতিশীল ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের জন্ম লাভ করে।
৩* বাহান্নের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে অর্জিত ঐক্য এর ধারাবাহিকতায় ৫৪এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে যুক্তফ্রন্টের ঐতিহাসিক বিজয়।
৬২ শিক্ষা আন্দোলন সামরিক শাষক আয়ুবের বিরুদ্ধে যখন রাজনীতিবিদরা মাঠ ছেড়ে শাসক , তখন ছাত্র সমাজ শিক্ষার অধিকারের দাবিতে সামরিক শাসকের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে রাজপথে নেমেছিল এবং জীবন দিয়েছিল। তার ধারাবাহিকতায় পরবর্তীতে বিরুদ্ধে ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান এবং মহান মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশের আপামর মানুষের কৃষক শ্রমিক ছাত্র সামরিক বাহিনীতে কর্মরত বাঙালি জোয়ান এবং অফিসার আপামর মানুষের অংশগ্রহনে এবং মহান মুক্তিযুদ্ধ। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয়।
এই যে সংগ্রাম লড়াইয়ে ছাত্রসমাজের নেতা ছিলেন কাজী জাফর আহমেদ, শেখ মনি,কমরেড মোঃ ফরহাদ, রাশেদ খান মেনন, কমরেড হায়দার আকবর খান রনো,মতিয়া চৌধুরী, সিরাজুল আলম খান, আবদুর রাজ্জাক, তোফায়েল আহমেদ, আসম রব, শাহজাহান সিরাজ, নূরে আলম সিদ্দিকি, আব্দুল কুদ্দুস মাখন ,সাইফুদ্দিন মানিক, নুরুল ইসলাম নাহিদ, মোজাহিদুল ইসলাম সেলিম আরো অনেকে।
স্বাধীনতার পরে এ প্রসংগে আমার বিবেচনায় ব্যার্থতাঃ
১* বিজয় অর্জন এর পরে ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্ব বাংলাদেশের পরিচালনায় কোন ভূমিকা রাখতে ব্যার্থতা বা তাদের রাখতে দেয়া হয়নি। ৭২ সালে বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরে এসে রণাঙ্গনের যোদ্ধাদের নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করলে এসকল ছাত্রনেতৃবৃন্ধ রঙানগানের মুক্তিযোদ্ধারা দেশ পরিচালনায় অংশ নিতে সুযোগ পেতো তাহলে হয়ত আজকের বাংলাদেশে একরকম দুর্যোগ নেমে আসত না।
বিপরীতে কি হলো সিরাজুল আলম খান একঝাঁক তরুণ তরুণী কে সমবেত করল সৃষ্টি হলো জাসদের অর্জন কি?
সরকারের রোষানলে ভুল রাজনৈতিক লাইন রনকৌশল এর জন্য হাজার হাজার মেধাবি তরুনের জীবন বিপন্ন এর পর ৭ নভেম্বরে আর এক ঐতিহাসিক ভুলের খেসারত কর্নেল তাহেরের ফাঁসি, আরো অনেক দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক মুক্তিযুদ্ধার জীবন অবসান!
ছাত্রলীগের অপরাংশ এবং ছাত্র ইউনিয়নের আত্মঘাতী রাজনৈতিক লাইন ডাকসু নির্বাচন ৭৩ তার চরমতম উদাহরন।৭৩ এর ১লা জানুয়ারি ভিয়েতনাম সংহতি দিবসে মতিউল ইসলাম, মীর্জা কাদের হত্যার পরেও নেতৃত্বের দোদুল্যমান ভূমিকা এবং নিজস্ব শক্তি বিশ্বাসের উপর দাড়িয়ে বিকল্পের সুযোগে হাতছাড়া করার দায় সেই সময়ের নেতৃত্বের।
স্বাধীনতার পরে মুজিববাদী ছাত্রলীগের ইতিহাস মহসীন হলে সেভেন মার্ডার আর সন্ত্রাস লালন-পালন এর ইতিহাস। যার জন্য ছাত্র সমাজের মধ্যে তার আবেদন আর সেই ভাবে গড়ে উঠেনি।এরপরে অবশ্য ৭৫ এর পরে একঝাঁক নিবেদিত নেতা কর্মির মাধ্যমে ছাত্রলীগের কিছুটা হলেও জনপ্রিয়তা পায়। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক ভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম কুশিলব এই ছাত্র সংগঠনটি বিগত ১৫ বছরে আচরণগত কারণে ছাত্র সমাজের কাছে সম্পুর্ন ভাবে গ্রহনযোগ্যতা হারায়।
৯০ এর গণঅভ্যুত্থানের পরে ছাত্র সমাজের যারা নেতা ছিলেন তারাও গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র সমাজের এবং জনগণের আকাঙ্ক্ষার সাথে বেইমানি করে এবং যার ফলশ্রুতিতে ছাত্র সমাজ গণতন্ত্রের অভিযাত্রায় যে ভূমিকা পালন করার কথা ছিল তা করতে ব্যর্থ হয়। সে সময়কার নেতৃত্ব যদি তাদের দায়িত্ব পরিপূর্ণভাবে পালন করতো তাহলে আজকে বাংলাদেশের চেহারা হয়তো অন্যরকম হতে পারত বাংলাদেশের কোন দলীয় সরকার এইভাবে কর্তৃত্ববাদি সরকারে পরিনত হতে পারতনা বলে আমি বিশ্বাস করি।
তাহলে বাংলাদেশের গৌরব উজ্জ্বলতির ছাত্র আন্দোলনের সকল অর্জন পরবর্তীতে তার লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে বলে প্রমাণিত।
সে তুলনায় ২৪ এর ছাত্র গণ আন্দোলন অনেক বেশি পরিপক্ক বলে আমার মনে হয়েছে এখনো পর্যন্ত।
উদাহরন ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে আন্দোলনের অংশগ্রহণকারি নেতৃত্বের অবস্থান। বিভিন্ন পর্বে পেশাজীবীদের সরকারের বিভিন্ন সেক্টরে উপদেষ্টা পরিষদে সংযুক্তি।যদিও শ্রমিক শ্রেণির ব্যাপক অংশগ্রহণ থাকা সত্বেও তাদের সরকারের অন্তর্ভুক্তি না করা হতাশাজনক।
এখন তুলনামূলক আলোচনায় উপসংহারে একথা বলা যায় বিজয় অর্জন করার চাইতে বিজয়কে সংহত এবং এগিয়ে নেওয়া আরো বেশি কঠিনতর।
আমাদের শ্রদ্ধা ভাজন নেতৃত্ব যাদেরকে মানুষ ভালবাসায় নিয়েছিল আস্থাশীল ছিল, তাদের কাছে বাংলাদেশের জনগণের প্রত্যাশা ছিল ব্যাপক কিন্তু প্রতিটি বিপ্লবের পরে তাদের ভুমিকা জাতিকে হতাশ করেছে।
১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ এ প্রাক্কালে ৬২ শিক্ষা আন্দোলনের ৬৫তম বার্ষিকীতে আমরা আশাবাদী হতে চাই এবারের ছাত্র গণ আন্দোলনের যে আকাঙ্ক্ষা সাধারণ মানুষের তার প্রতিফলন ঘটবে শ্রমিক কৃষকের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটবে শিক্ষা সংস্কৃতির বিকাশ অবারিত হবে এবং আমরা একটি মানবিক অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের স্বপ্ন ফিরে পাব। ৬২র শিক্ষা আন্দোলনের শহীদদের বিনম্র শ্রদ্ধা।
Design & Developed By: JM IT SOLUTION
Leave a Reply