বুধবার, ৩০ জুলাই ২০২৫, ০৫:০৩ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
কোটালীপাড়ায় উচ্ছেদ হলো অবৈধভাবে গড়ে উঠা শতাধিক স্থাপনা গোপালগঞ্জের সহিংসতায় নতুন আরেক মামলা। মোট মামলা ১৩, আসামী ১৫,৬৩০ জুলাই বিপ্লবের বর্ষপূর্তিতে গোবিপ্রবিতে বিনামূল্যে হেল্থ ক্যাম্প মুকসুদপুরে বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে । চালক নিহত । আহত ১৪ গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ওয়েবসাইটের পরীক্ষামূলক যাত্রা কোটালীপাড়ায় যুব মহিলা লীগ নেত্রী গ্রেপ্তার গোবিপ্রবির ১০৯১ মেধাবী ও অসচ্ছল শিক্ষার্থীকে দেয়া হলো বৃত্তি গোপালগঞ্জে চুরির অভিযোগে কারারক্ষী গ্রেপ্তার! কারাগারে প্রেরণ কোটালীপাড়ায় পুকুরের পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু গোপালগঞ্জে সহিংসতায় মোট ১২ মামলা। নতুন করে আরেকটি হত্যা মামলা

বর্ষা মৌসুমে বিলাঞ্চলের মানুষের আয়ের উৎস্য শাপলা বিক্রি

Reporter Name
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই, ২০২৫, ১২.৫৩ পিএম
  • ৫৫ Time View

কালের খবরঃ

গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী উপজেলার সিংগা গ্রাম, যেটি বিলাঞ্চলের মধ্যে অবস্থিত, সেখানে কৃষকের জীবন বেশ কঠিন। প্রকৃতির অনুকূল ও বিপরীত দুই দিকই তাদের উপর প্রভাব ফেলে। শুকনা মৌসুমে কৃষিকাজই তাদের একমাত্র উপার্জন, কিন্তু বর্ষাকালে বিলে জমা পানি সব কিছু তলিয়ে দেয়। অথচ, এই পানিতে জন্ম নেয় এক বিশেষ প্রাকৃতিক সম্পদ-শাপলা।

গোপালগঞ্জের সিংগা গ্রাম ও অন্যান্য বিলাঞ্চলে প্রতিবছর বর্ষাকালে এই শাপলা সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। যা স্থানীয় মানুষের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ জীবিকা। শাপলা সংগ্রহ এবং বাজারে বিক্রি করেই হাজার হাজার পরিবার চলে।

সংগ্রহকারীদের দিনযাপনঃ

সিংগা গ্রামের কৃষক বিনয় মন্ডল (৫৬) বলেন, “আমরা কৃষক পরিবার, তবে বর্ষাকালে আমাদের কাজ থাকে না। বিলে বর্ষার জল জমে থাকে, কোনো ফসল ফলানো সম্ভব হয় না। তবে শাপলা আমাদের একমাত্র ভরসা।” তিনি জানান, ভোররাত থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত তিনি সিংগার বিলে শাপলা সংগ্রহ করেন এবং প্রতিদিন ৩শ’ থেকে ৩৫০ টাকা উপার্জন করেন।

এছাড়া, একই গ্রামের দুলাল ঠাকুর, প্রাণেশ মন্ডল, নির্মল সরকার, সুকুমার বিশ্বাস, স্বপন বিশ্বাস, শ্যামল ঢালীসহ  আরও কয়েকজন শাপলা সংগ্রহকারী জানান, তারা প্রতিদিন প্রায় ৬০ থেকে ৭৫ আটি শাপলা সংগ্রহ করে এবং এক আটি শাপলা ৫ টাকা দরে পাইকারদের কাছে বিক্রি করেন। এর মাধ্যমে তারা দৈনিক ৩শ’ থেকে ৪শ’ টাকা উপার্জন করেন।এই আয় দিয়ে চলে আমাদের সংসার ও ছেলে মেয়ের লেখাপড়া খরচ।

শাপলার বাজার এবং চাহিদাঃ

গোপালগঞ্জের বিলাঞ্চলেই শুধু নয়, প্রতিবেশী জেলা থেকেও পাইকাররা এসে শাপলা কিনে নিয়ে যান। তারা শাপলা বাজারে বিক্রি করে, যা গ্রামের মানুষদের জন্য আরো একটি আয়ের পথ খুলে দেয়। গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার গান্ধিয়াশুর, সাতপাড়, বৌলতলী, কাজুলিয়া,রঘুনাথপুর, নিজড়া, উলপুর ও কাশিয়ানি উপজেলার  হাতিয়ারা, শিলটা, সীতারামপুর, ফলসী, বেথুড়ি। মুকসুদপুর উপজেলার চান্দার বিল এলাকায় শাপলা বিক্রির বাজার গড়ে উঠেছে।

নসিমন চালক জুয়েল সরকার,চিন্ময় মন্ডল ও বিকাশ বিশ্বাস জানান, “প্রতিদিন আমরা সিংগা ব্রিজ থেকে শাপলা নিয়ে বাগেরহাট, নড়াইল, মাদারীপুর, শরীয়তপুর  জেলার বিভিন্ন বাজারে যাই। এতে আমাদের প্রতিদিন এক দেড় হাজার  টাকা রোজগার হয়।” বর্ষা মৌসুমে আমরা এই ভাবে রোজগার করে বাঁচি।

 

পুষ্টি পরিবেশঃ

শাপলা শুধুমাত্র একটি সবজি নয়, এটি গোপালগঞ্জ শুধু নয় সকল মানুষের পুষ্টির চাহিদা পূরণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শাপলায় রয়েছে আয়োডিন, আয়রন এবং প্রচুর পানি, যা শরীরের জন্য খুবই উপকারী। বিশেষ করে, গরমে শাপলা খাওয়ার মাধ্যমে শরীরের পানির চাহিদা পুরন এবং এটি একটি সুস্বাদু সবজি হিসেবে পরিচিত। তবেপরিবেশ অতিরিক্ত শাপলা সংগ্রহ পরিবেশের ওপর প্রতিকূল প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে যদি শাপলা সংগ্রহের পদ্ধতি অব্যবস্থাপনা হয়, তবে এটি জলজ উদ্ভিদের প্রাকৃতিক বৃদ্ধি ও জীববৈচিত্র্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তাই, শাপলা সংগ্রহের ক্ষেত্রে একটি সুষ্ঠ এবং টেকসই পদ্ধতির প্রয়োগ করা প্রয়োজন।

পরিবেশগত সমস্যাঃ

এদিকে, পরিবেশের ওপর শাপলা সংগ্রহের কিছু নেতিবাচক প্রভাবও রয়েছে। বিলাঞ্চলের বিলে শাপলা সংগ্রহ করা, বিশেষ করে অযথা শাপলা তুলে নেওয়া, বিলে জলজ প্রাণীদের বাসস্থান এবং শাপলার প্রাকৃতিক বৃদ্ধিতে বাধাগ্রস্থ হতে পারে।

বাংলাদেশ সেন্টার ফর অ্যাডভান্স স্টাডিজ(বিসিএএস) এর সিনিয়র গবেষণা কর্মকর্তা বিধান চন্দ্র টিকাদার শাপলা সংগ্রহের বিষয়ে সতর্ক করে বলেছেন, যদিও শাপলা বিলাঞ্চলের মানুষের আয়ের একটা উৎস্য। যদি অতি মাত্রায় শাপলা সংগ্রহ করা হয়, তবে এটি স্থানীয় ইকোসিস্টেমে ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি করতে পারে। শাপলা সংগ্রহের জন্য অতিরিক্ত চাষি বা জনগণের প্রবাহের ফলে বিলে প্রাকৃতিক পরিবেশের পরিবর্তন হতে পারে, যেমন জলজ উদ্ভিদ এবং জলজপ্রাণীর বিভিন্ন  প্রজাতির হ্রাস হতে পারে। অতিরিক্ত শাপলা সংগ্রহের ফলে জলাশয়ে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যেতে পারে, যা পানির বাস্তুসংস্থানকে বিপর্যস্ত করতে পারে।

মৎস্য বিভাগের কথাঃ

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিজন কুমার নন্দী বলেন, বিলে অতিরিক্ত চলাচল ও জলজ উদ্ভীদ কমে যাওয়ার কারনে দেশীয় মাছের বংশবৃদ্ধিতে বিরুপ প্রতিবন্ধকতা সৃস্টি হয়। তাই শাপলাসহ জলাশয়ে যেসব জলজ উদ্ভীদ রয়েছে তার সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। তাহলে জলাশয়ে মৎস্য সম্পদ বৃদ্ধি পাবে।

তিনি আরো বলেন,জলাশয় কমে যাওয়া, ফসলে কীটনাশকের ব্যবহার,অবৈধ জাল, ফাঁদ, ইলেকট্রিক শক, বিষ প্রয়োগ করে মাছ ধরা, আবাসস্থল ধ্বংস করে বিভিন্ন স্থাপনা তৈরি, কলকারখানা ও অন্যান্য বর্জ্য নদীতে সরাসরি পতিত হয়ে দেশীয় প্রজাতির মাছ কমে যাচ্ছে। এছাড়া মানুযের অধিক ইন্টারভেনশনের কারনে জলজ জীববৈচিত্র ধ্বংস করার ফলে দেশীয় প্রজাতির মাছের উৎপাদন কমে যাচ্ছে।

 

 কৃষি অফিসের কথাঃ

গোপালগঞ্জ কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আঃ কাদের সরদার বলেন, “শাপলা এই অঞ্চলের জন্য একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় প্রাকৃতিক সবজি। সুদূর অতীত থেকে মানুষ এটি খেয়ে আসছে এবং বিক্রি করেও জীবিকা নির্বাহ করছে।” তিনি আরও জানান, গোপালগঞ্জের প্রায় শতাধিক বিল এলাকায় শাপলা জন্মায় এবং এই শাপলা শুধু জেলার চাহিদা মেটায় না, বরং আশপাশের অন্যান্য জেলাতেও চলে যায়।

তবে, তিনি পরিবেশগত ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য শাপলা সংগ্রহের নির্দিষ্ট নিয়ম এবং বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব দেন। এজন্য কৃষি বিভাগ মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের দিয়ে পর্যবেক্ষণ ও সঠিক দিকনির্দেশনার মাধ্যমে শাপলা সংগ্রহের প্রক্রিয়া তদারকি করছে।

তিনি আরো বলেন,বিলাঞ্চলের মানুষ তাদের জীবনযাপনে যে ধরনের সংগ্রাম করে, তা অন্যদের জন্য একটি অনুপ্রেরণা। শাপলা সংগ্রহ, কৃষিকাজ, এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক উপাদানগুলো তাদের জীবন-যাপন চলমান রাখতে সাহায্য করে। তবে এই অঞ্চলের মানুষগুলো তাদের জীবনধারণে কঠিন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে প্রতিদিন জীবন কাটাচ্ছে, যেখানে সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা এবং টেকসই উন্নয়ন অপরিহার্য।এখন, পরিবেশের ওপর শাপলা সংগ্রহের প্রভাবও আপনার রিপোর্টে যুক্ত হয়েছে। এটি আরও পূর্ণাঙ্গ এবং ভারসাম্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

সচেতন মহলের কথাঃ

গোপালগঞ্জের মতো দেশব্যাপী বিলাঞ্চলগুলি প্রকৃতি এবং মানুষের মধ্যে এক অবিচ্ছেদ্য সম্পর্কের সাক্ষী, যেখানে প্রতিটি দিন একটি নতুন সংগ্রাম এবং এক নতুন আশার সূচনা। তবে, পরিবেশের ক্ষতি রোধে এবং প্রকৃতির সাথে সহাবস্থানে জীবনযাপন নিশ্চিত করতে হলে সচেতনতা ও টেকসই ব্যবস্থাপনার দিকে আরও মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন সচেতন মহল। #

 

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Advertise

Ads

Address

Office : Sheikh Fazlul Haque Moni Stadium (2nd floor), Gopalganj-8100 Mobile: 01712235167, Email: kalerkhabor24.com@gmail.com
© All rights reserved 2022

Design & Developed By: JM IT SOLUTION