কোটালীপাড়া প্রতিনিধিঃ
সবেমাত্র সন্ধ্যা । চারিদিকে নিস্তব্ধতা। হঠাৎ শিশুর কান্নার শব্দ। পাশের বাড়ি থেকে ছুটে এলেন এক নারী। দেখলেন একটি ঝুপড়ি ঘরে সদ্য ভূমিষ্ট এক পুত্র সন্তান কাঁদছে। দ্রুত নিয়ে যাওয়া হলো উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে। খবর পেয়ে ছুটে এলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার। শিশুটির চিকিৎসাসহ সকল ব্যবস্থা করলেন মানবিক এই সরকারি কর্মকর্তা। মঙ্গলবার ( ২৮ ফেব্রুয়ারী) সন্ধ্যায় গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলায় এ ঘটনা ঘটে। ধারনা করা হচ্ছে গর্ভবতী এক পাগলীর সন্তান এই শিশুটি।
জানাগেছে, ঘটনার দিন সন্ধ্যায় কোটালীপাড়া শেখ লুৎফর রহমান আদর্শ সরকারি কলেজের উত্তর পাশের একটি ঝুপড়ি ঘরে শিশুর কান্নার শব্দ শুনতে পায় পার্শবর্তী এক গৃহিনী মেহেরুন বেগম। সাথে সাথে তিনি ঝুপড়ির ঘরের কাছে ছুটে যায়। সেখানে গিয়ে একটি সদ্য ভূমিষ্ট পুত্র সন্তানকে দেখতে পান মেহেরুন বেগম। এরপর তিনি ওই শিশুটিকে পার্শবর্তী উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে ভর্তি করেন।
খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আজিম উদ্দিন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ছুটে গিয়ে শিশুটির চিকিৎসাসহ সকল ব্যবস্থা করেন। এ খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকসহ বিভিন্ন ভাবে এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে শিশুটির দায়িত্ব নিতে কোটালীপাড়া ও এর আশপাশের কয়েকটি এলাকার ১০ দম্পতি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে ছুটে আসেন।
এই ১০ দম্পতির মধ্যে যাচাই বাছাই করে বুধবার (২৮ ফেব্রুয়ারী) উপজেলা নির্বাহী অফিসার আজিম উদ্দিন তাঁর কার্যালয়ে বসে ফরিদপুর সদরের ব্যবসায়ী নিঃসন্তান এক দম্পতির হাতে সন্তানটিকে তুলে দেন।
এ সময় উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রের মেডিকেল অফিসার ডাঃ ইব্রাহিম, উপজেলা সমাজসেবা অফিসার রাকিবুল হাসান শুভ, উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা শ্রীময়ী বাগচীসহ বিভিন্ন গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
গৃহিনী মেহেরুন বেগম বলেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আমার বাড়ির পাশের একটি ঝুপড়ি ঘরে শিশুর কান্না শুনতে পেয়ে আমি ওখানে ছুটে যাই। গিয়ে একটি সদ্য ভূমিষ্ট পুত্র সন্তানকে দেখতে পাই। সাথে সাথে আমি উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে আসি।
বান্দল গ্রামের বশির আহম্মেদ বলেন , গত কয়েক দিন ধরে এই এলাকায় একজন অন্তঃসত্তা পাগলী নারীকে ঘোরা ফেরা করতে দেখেছি। সে অধিকাংশ সময়ই ওই ঝুপড়ি ঘরটিতে থাকতো। আমাদের ধারণা এই শিশু সন্তানটি ওই পাগলী নারীরই হবে। সন্তান জন্ম দেয়ার পর পাগলী বেশী নারীটি শিশুটিকে ফেলে রেখে স্থান ত্যাগ করেছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার আজিম উদ্দিন বলেন, আমি শিশুটির কথা শুনে উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ছুটে যাই। তার চিকিৎসা, খাবার, পোষাকসহ সকল প্রকার ব্যবস্থা করি। এরপর শিশুটির নাম রাখি মোঃ লাকিত হোসেন (কুড়িয়ে পাওয়া উত্তম সন্তান)। শিশু মোঃ লাকিত হোসেনের খবর চারিদিকে ছড়িয়ে পড়লে ১০ দম্পতি তার দায়িত্ব নেওয়ার জন্য আমার কাছে আসে। এই ১০ দম্পতির মধ্যে থেকে যাচাই বাচাই করে আইনী প্রক্রিয়া শেষে ফরিদপুরের এক ব্যবসায়ী নিঃসন্তান দম্পতিকে শিশুটিকে লালন পালনের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
ওই নিঃসন্তান দম্পতি বলেন, আমাদের কোন সন্তান নেই। আর কোন দিন আমরা মা বাবা হতে পারবো না। আমরা শিশু মোঃ লাকিত হোসেনকে পেয়ে খুবই আনন্দিত। আপনারা সকলে লাকিতের জন্য দোয়া করবেন। ও যেন সুস্থ স্বাভাবিক ভাবে বেঁচে থেকে মানুষ হতে পারে।
Design & Developed By: JM IT SOLUTION
Leave a Reply