কালের খবরঃ
বর্ষায় গোপালগঞ্জের নদ-নদী, খাল-বিল পানিতে টুই টুম্বর হয়েছে । বিলে বিলে শোভা পাচ্ছে সবুজ ও সাদা রংয়ের শাপলা। শাপলা শুধু জাতীয় ফুল নয়।শাপলা এ অঞ্চলের মানুষের কাছে সবজি হিসেবেও সমধিক জনপ্রিয়।আর এ শাপলা তুলে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহের কাজ করে থাকেন গোপালগঞ্জ জেলার শতাধিক বিলের হাজারও দরিদ্র মানুষ।
গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী-মুকসুদপুরের সিংগার বিল, চান্দারবিল এবং কোটালীপাড়া-টুঙ্গিপাড়ার জোয়ারিয়ার বিল, কান্দির বিলসহ শতাধিক বিলে প্রাকৃতিক ভাবে জন্ম নেয় শাপলা।বর্ষায় এসব বিল পানিতে তলিয়ে থাকে। আর জম্মে থাকে প্রচুর শাপলা ।বর্ষা মৌসুমে কৃষকের তেমন কাজও থাকে না। তাই বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ এ শাপলা তোলার পেশায় জড়িত। এ পেশায় কোন পুজির প্রয়োজন না হওয়ায় বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ বিল থেকে শাপলা তুলে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন।
শাপলা তোলার কাজে নিয়োজিতরা ভোরে নৌকা নিয়ে বিলে যেয়ে ঘুরে ঘুরে শাপলা তুলি। প্রতিদিন একশ থেকে চারশত আটি (১০পিচ শাপলায় এক মোঠা। ১০ মোঠায় এক আটি বা ১০০ পিচ) শাপলা তুলি।দুপুরে পাইকাররা আসে। তাদের কাছে বিক্রি করে তিনশ’ থেকে চারশ’ টাকা আয় করি।পাইকাররা আবার এসব শাপলা সংগ্রহ করে জেলা শহরসহ আশপাশের জেলার হাটবাজারে নিয়ে বিক্রি করে থাকেন।আর এই শাপলাকে কেন্দ্র করে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার গান্ধিয়াশুর, সাতপাড় ও কাশিয়ানী উপজেলার সিংগা, হাতিয়ারা, কোটালীপাড়ার রামনগর, কালিগঞ্জ, ভঙ্গারহাটসহ বিভিণ্ন স্থানে শাপলা বিক্রির বাজার গড়ে উঠেছে।
গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার সিংগা গ্রামের শাপলা সংগ্রহকারী শ্যামল মন্ডল, মনিন্দ্র নাথ ঢালী,বৌদ্ধনাথ বিশ্বাস বলেন, বর্ষা আমাদের বিলে প্রচুর শাপলা জন্মে। এই সময় আমাদের এলাকায় কোন ফসল নাই। তাই প্রতিদিন ভোর থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত সিংগার বিলে শাপলা সংগ্রহ করি। তাতে আমার ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা রোজগার হয়। এভাবেই আমাদের এলাকার অনেকে উপার্জন করে সংসার চালায়।
শাপলার পাইকার ব্যবসায়ী গোপীনাথপুর গ্রামের গাউস আলী মোল্লা,আনিস মোল্লা, মনোজ মল্লিক বলেন, আমারা সাতপাড়া , সিংগা ও হাতিয়ারা এলাকার মানুষদের কাছ থেকে শাপলা কিনে গোপালগঞ্জ জেলাশহরসহ বিভিন্ন হাটবাজারে পাইকারী বিক্রি করি। এতে যা হয়। তাতে ভালোই হয়। ঘুরে না বেড়িয়ে কাজ করে খাওয়া ভালো। এতে শাপলা সংগ্রহকারীদেরও উপকার হলো আর আমাদের ও কিছু উপার্জন হয়।
এব্যাপারে জেলা কৃষি সম্প্ম্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ ড.অরবিন্দু কুমার রায় বলেন, শাপলা এই অঞ্চলের খুবই জনপ্রীয় একটি প্রাকৃতিক সবজি। সুদুর অতিত থেকে এই শাপলা এই এলাকার মানুষ সবজি হিসেবে খেয়ে আসছে।পুষ্টি গুনে সমৃদ্ধ । শাপলায় রয়েছে আয়োডিন ও আয়রন । এছাড়া শাপলা বিক্রি করে দৈনন্দিন আয় করে জীবিকা নির্বাহ করছে অনেক দরিদ্র মানুষ। গোপালগঞ্জের বিলে উৎপাদিত শাপলা জেলার চাহিদা মিটিয়ে অন্যান্য জেলায়ও যেয়ে থাকে।
Design & Developed By: JM IT SOLUTION
Leave a Reply