
কালের খবরঃ
রাজধানী ঢাকার সিরডাপ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো প্রান্তিক জনগণ ও পরিবেশ বিষয়ক এক বিশেষ কর্মশালা, প্রকাশনা উৎসব এবং তথ্যচিত্র প্রদর্শনী। প্রান্তিক জনগণের অধিকার ও তাদের সম্মান নিশ্চিত করার পাশাপাশি, পরিবেশের প্রতি সচেতনতা সৃষ্টি করা ছিল এই আয়োজনের উদ্দেশ্য।
গত বুধবার (২৬ নভেম্বর) আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি)-এর নির্বাহী পরিচালক ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. হোসেন জিল্লুর রহমান। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, প্রান্তিক জনগণের কণ্ঠস্বরের উপস্থিতি এবং তাদের সম্মান নিশ্চিত করা একটি দেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণের অংশ। ড. রহমান আরও বলেন, তথ্য ও জ্ঞানের শক্তি ব্যবহার করে প্রান্তিক জনগণের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং তাদের পরিস্থিতি সমাজে তুলে ধরা সম্ভব।
অনুষ্ঠানে কায়পুত্র ও ঋষি সম্প্রদায়ের উপর নির্মিত তথ্যচিত্র ‘জাতপাতের বলি’ প্রদর্শিত হয়। এই তথ্যচিত্রে সমাজের অবহেলিত জনগণের বাস্তব চিত্র তুলে ধরা হয়। অনুষ্ঠানটিতে সোসাইটি ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট (সেড) এর নতুন প্রকাশনা ‘Report and Analysis: Marginalized and Excluded Communities of Bangladesh’ এর মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
অনুষ্ঠানের সভাপতির বক্তব্যে, ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, সেড প্রান্তিক জনগণের পরিচিতি, অন্তর্ভুক্তি এবং সম্মান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করে আসছে। তার মতে, এই উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার রয়েছে। সেগুলো হলো,সম্প্রদায়ের নিজস্ব সংগঠন,তথ্য ও তথ্যভিত্তিক জ্ঞান,সম্প্রদায়ের সদস্যদের সক্ষমতা বৃদ্ধি
, সম্প্রদায়ের উপস্থিতি ও বুদ্ধিমত্তার সাথে তথ্যের প্রচার-প্রসার।
এছাড়া, সেড-এর পরিচালক ফিলিপ গাইন, প্রাকৃতিক শালবন ধ্বংসের বিরোধিতায় সেডের দীর্ঘদিনের কার্যক্রমের সার-সংক্ষেপ তুলে ধরেন। তিনি জানান, সেড শুরু থেকেই বন, পরিবেশ এবং প্রান্তিক জনগণের জন্য গবেষণা, সংবাদ প্রতিবেদন, প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ এবং গ্রন্থ প্রকাশ করেছে, যা আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর ক্ষতিকর প্রকল্প বন্ধে সহায়ক ভূমিকা রেখেছে।
প্রশান্ত ত্রিপুরা, দি হাঙ্গার প্রজেক্টের কান্ট্রি ডিরেক্টর, অনুষ্ঠানটিতে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে কায়পুত্র সম্প্রদায়ের বিষয়ে এতদিন জানতাম না। এই তথ্যচিত্র তাদের সমস্যাগুলি গভীরভাবে তুলে ধরেছে।
চলচ্চিত্র নির্মাতা ও প্রযোজক তানিম নূর জানান, ঋষি ও কায়পুত্রদের নিয়ে এতদিন কেউ এমনভাবে ভাবেনি, এমন তথ্যচিত্রও নির্মিত হয়নি। এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই।
অনুষ্ঠানে ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ-এর অধ্যাপক, চলচ্চিত্র নির্মাতা ও গবেষক ড. জাকির হোসেন রাজু বলেন, তথ্যচিত্রের মাধ্যমে প্রতিবাদ গড়ে তোলা সম্ভব। তিনি প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণে এথনোগ্রাফিক পদ্ধতির প্রয়োগের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেন।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)-এর সাবেক মহাপরিচালক মোহাম্মদ আবদুল ওয়াজেদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক ড. অশোক কুমার বিশ্বাস এবং কারিতাস বাংলাদেশের প্রতিনিধি কমল গান্ধাই।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন প্রান্তিক জনগণের প্রতিনিধিরা। যেমন আদিবাসী, চা শ্রমিক, কায়পুত্র, হিজড়া, যৌনকর্মী, জলদাস, বিহারি, হরিজন, বেদে ও ঋষি সম্প্রদায় থেকে। এদের মধ্যে উন্মুক্ত আলোচনার মাধ্যমে প্রকাশনা ও আলোচনা সভার সমাপ্তি ঘটে।
বক্তরা মনে করেন, এ আয়োজন প্রমাণ করে যে, প্রান্তিক জনগণের সমস্যা ও দাবির প্রতি সমাজ ও রাষ্ট্রের মনোযোগ আকর্ষণ করার পাশাপাশি তাদের উন্নয়ন ও অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
Design & Developed By: JM IT SOLUTION