কালের খবর ডেক্সঃ
নতুন প্রজন্মের জন্য একটি অক্সিজেন ফ্যাক্টরী তৈরীর উদ্দেশ্য নিয়ে আমি বৃক্ষ রোপন শুরু করি। দেশটাকে সবুজে ভরে দিতে এবং সবুজ নগরীতে পরিনত করতে আমার এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা। দেশ সবুজায়ন হলে আমাদের নতুন প্রজন্ম একটি সুস্থ সুন্দর পরিবেশ পাবে। প্রাণভরে মুক্ত বাতাস গ্রহণ করবে।মানুষ জ্বালানি পাবে, ছায়া পাবে, পথিক ছায়াশীতল পরিবেশে নিরাপদে পথ চলতে পারবে,গাছ থেকে ফুলপাবে,ফলপাবে। ফল আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী। রোগবালাই মুক্ত জীবন যাপন করতে হলে গাছের কোন বিকল্প নেই। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গাছের গুরুত্ব অপরিসীম। এই লক্ষ্য নিয়ে আমি ২০১৮ সাল থেকে ফলদ, বনজ, ঔষুধী, ফুল ও সৌন্দর্য বর্ধনকারী গাছের চারা রোপন করে যাচ্ছি। এসব কথা বলেন গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার নিজামকান্দি ইউনিয়নের তালতলা গ্রামের বিনোদ বিহারী বিশ্বাসের একমাত্র সন্তান বিষ্ণুপদ বিশ্বাস। পেশায় তিনি একজন আমিন প্রশিক্ষক। লোকে তাকে বৃক্ষপ্রেমি বিষ্ণুপদ নামে চেনে। চাকরি করেন গোপালগঞ্জ শহরের সমাজ সেবা অফিসে আমিনশীপ প্রশিক্ষক হিসেবে।
১৯৮৪ সালে নিজ ইউনিয়নের নিজামকান্দি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করেন। ৯৭ সালে কাশিয়ানী উপজেলার রামদিয়া শ্রী কৃষ্ণা কলেজ থেকে এইচ এসসি ও ৯৪ সালে গোপালগঞ্জ শহরের সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজ থেকে ডিগ্রী পাশ করেন। এর পর সমাজ সেবা অধিদপ্তরের আওয়াতাধিন আমিনশীপ প্রশিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। প্রশিক্ষকের কাজ করে যে বেতন পান তার অধিকাংশ ব্যয় করেন বৃক্ষ রোপনের কাজে। পরিবারে বৃদ্ধা মা, স্ত্রী ও এক কন্যা সন্তান রয়েছে। স্ত্রী অনিমা রানী রত্ম কোটালীপাড়া উপজেলা সদরের কমলকুঁড়ি বিদ্যা নিকেতনের শিক্ষিকা। মেয়ে ওই বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের মেধাবী ছাত্রী। স্ত্রীর বেতনের টাকায় চলে তার সংসার খরচ।
বিষ্ণুপদ বিশ্বাসের সাথে কথা হলে তিনি বলেন,অফিস সময়ের পর ঘুরে ঘুরে দেখি কোথায় গাছ লাগানো যায়। কোন প্রতিষ্ঠানের সামনে ফাঁকা জায়গা পড়ে আছে। পরবর্তিতে প্রতিষ্ঠান প্রধানের সঙ্গে যোগাযোগ করে চারা রোপনের পরিকল্পনা করি। ২০১৮ সাল থেকে আজঅবদি প্রায় দেড়শত প্রতিষ্ঠানে তেরো হাজারেরও অধিক গাছের চারা রোপন করেছি।
তিনি বলেন, ২০১৮ সালের জুলাই মাসের ১০ তারিখ থেকে গাছ লাগানো শুরু করি। প্রথমে গাছের চারা রোপন করি গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার ভাঙ্গারহাটের কাজী মন্টু ডিগ্রী কলেজ চত্বরে। সেখানে বকুল ফুল, আমগাছ,অর্জুনবৃক্ষসহ পাঁচটি গাছের চারা লাগানো হয়। সেই থেকে পর্যায়ক্রমে কোটালীপাড়া উপজেলার উনশিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়,শেখ হাসিনা আদর্শ মহাবিদ্যালয় শেখ রাসেল কলেজ, ক্যাথলিক মিশনারি নারকেলবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়,কোটালীপাড়া সরকারি ইউনিয়ন ইনষ্টিটিউশন, উমাচরণ পূর্ণচন্দ্র সার্বজনীন উচ্চ বিদ্যালয়,গোপালগঞ্জ শহরের যুগশিখা উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়, এসএম মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, বীণাপাণি সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়, রঘুনাথপুর দীননাথ উচ্চ বিদ্যালয়, সরকারি শিশু কল্যাণ প্রাথমিক বিদ্যালয়, রংধনু স্কুল, ওহাব আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নিলখি দাখিল মাদ্রাসা, গোপালগঞ্জ মহিলা কামিল মাদ্রাসা,কাশিয়ানী উপজেলার তিলছড়া সৈয়দুন্নেছা উচ্চ বিদ্যায়ল, পূর্ব মিয়াপড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ফুকরা মদন মোহন একাডেমি, তালতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মিয়াপাড়া জামে মসজিদ, কোটালীপাড়া সর্বজনীন কালি মন্দির, ও পোনের ভিটা আশ্রমসহ দেড় শতাধিক প্রতিষ্ঠানে নিজ উদ্যোগে নিজের অর্থায়নে প্রায় তের হাজার গাছের চারা রোপন করেছি। এর মধ্যে বকুলফুল, কৃষ্ণচূড়া,বেলি,চেরি, আমলকী, নিম, অর্জুনবৃক্ষ, সজিনা, ঝাউ, কাঁঠাল, আমলকী, বয়েরা, হরিতকী, আম, জাম,লেবু , লিচুসহ বিভিন্ন জাতের গাছের চারা রয়েছে।
বৃক্ষপ্রেমি বিষুপদ কালের খবরকে বলেন, আমি দরিদ্র কৃষক পরিবারের সন্তান। একটি ছোট চাকরী করি। মা আছেন বাবা মারা গেছে। আমিন প্রশিক্ষণ কাজের বিনিময়ে যে অর্থ উপার্জন করি তার সিংহভাগ ব্যয় করি গাছ রোপনের জন। তিনি বলেন আমি যে প্রতিষ্ঠানে গাছ লাগাই সেখানের সকলকে এই কাজে সম্পৃক্ত করি। এর একটাই উদ্দেশ্য সকলে উদ্ভুদ্ধ হয়ে নিজ নিজি ইচ্ছায় উদ্যোগ গ্রহণ করে গাছের চারা রোপন করবে এবং দেশটাকে প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় ভূমিকা রাখবে। এছাড়া সমাজের যারা ধনাঢ্য ব্যক্তি রয়েছেন তাদেরকে আহবান করবো আপনারা এগিয়ে এসে দেশে ও মানুষের কল্যাণে বৃক্ষরোপন করুন। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দেশ একসময় সবুজে ভরে উঠবে। তৈরী হবে অক্সিজেনের ফ্যাক্টরি।
গোপালগঞ্জ শহরের পথ শিশু কল্যাণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা তন্দ্রা হালদার বলেন, বিষ্ণুপদ বিশ্বাস একাধিকবার আমার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গাছের চারা রোপন করেছেন। চারা রোপনের সময় তিনি ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকদের সম্পৃক্ত করে উৎসাহ যোগাচ্ছেন। এতে আমরাও উৎসাহিত হচ্ছি। শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ বাড়ির আঙ্গিনায় গাছ লাগতে বলা হয়েছে। তিনি চারা রোপন করেই ক্ষান্ত হয়নি প্রায়ই এসে এগুলো দেখভাল করেন ও যত্মনেন। তার মত বৃক্ষপ্রেমি মানুষ আমার চোখে পড়েনি। আমি তার উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই।
গোপালগঞ্জের জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা মোঃ শরীফুল ইসলাম বলেন, বিষ্ণুপদ বিশ্বাস আমার অনুমতি নিয়ে অফিস চত্বরে কৃষ্ণচূড়া, বকুল, সজিনা, ঝাউ গাছের মোট ২০টি চারাগাছ রোপন করেছেন। তিনি তার নিজের অর্থ ব্যয় করে এসব গাছ আমার প্রতিষ্ঠানের রোপন করেন। তার এই মহৎ কাজের স্বীকৃতি স্বরুপ সরকারি ভাবে পুরস্কৃত হওয়ার দাবী রাখে। আমি তার এই কাজকে স্যেলুট জানাই।
গোপালগঞ্জ সুজনের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ অধিকারী বলেন, বিষ্ণুপদ বিশ্বাসকে আমি দীর্ঘদিন চিনি। তিনি একজন সাদা মনের মানুষ। মানুষ ও সমাজের কাজে নিজেকে সব সময় সম্পৃক্ত রাখতে পছন্দ করেন। তিনি দীর্ঘদিন যাবত গোপালগঞ্জের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় ও স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানে বহু গাছের চারা রোপন করেছেন। আমি এই দেশপ্রেমি ব্যক্তিকে অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। সেই সাথে সমাজের বিত্তবানদের ভালো কাজে নিজেকে আত্মনিয়োগ করারও আহবান জানাই।
গোপালগঞ্জের সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শুকলাল বিশ্বাস বলেন, বিষ্ণুপদ বিশ্বাস প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় কাজ করছেন। তার গাছ লাগানোর মাধ্যমে কার্বনডাই অক্সসাইড কমচ্ছে,অক্সিজেন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলফলাদির মাধ্যমে পুষ্টির চাহিদা মিটাবে, ছায়া, মাটির ক্ষয়রোধ,উষ্মায়ন বৃদ্ধিতে বাধা সৃস্টি করবে। এতে জীব কুলের জীববৈচিত্র সংরক্ষিত হচ্ছে। যেমন উন্নত দেশ আমেরিকা কানাডা তাপদাহ বা আগুন থেকে রক্ষা পাচ্ছে না একমাত্র পরিবেশের কারনে। প্রকৃতি উত্তপ্ত হয়ে তাপমাত্রা বেড়ে আগুন ধরে যাচ্ছে। তাই সবারই গাছ লাগানো উচিৎ। আমি এই বৃক্ষপ্রেমি মানুষটিকে অনেক অনেক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।
Design & Developed By: JM IT SOLUTION
Leave a Reply