কালের খবরঃ
আওয়ামী লীগ সরকারের ১৪ বছরে গোপালগঞ্জে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে গোপালগঞ্জে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য যোগাযোগসহ বেশ কয়েকটি বড় বড় প্রকল্প গ্রহণ ও শত শত উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়িত হয়েছে। দীর্ঘ মেয়াদী উন্নয়ন কর্মকান্ড চলমান থাকায় গোপালগঞ্জের গ্রাম ও শহরের মানুষ সুবিধা পেতে শুরু করেছেন। ইতোমধ্যে বেশকিছু প্রকল্প বাস্তবায়িত ও কিছু উন্নয়ন কাজ এখনও চলমান রয়েছে। বিভিন্ন অধিদপ্তরের উন্নয়ন কর্মকান্ডে জেলার শিক্ষা, স্বাস্থ্য,যোগাযোগ, অবকাঠামো, নিরাপত্তা, বিদ্যুৎ, সড়ক, পানিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন হয়েছে। এসব উন্নয়নের ফলে গোপালগঞ্জের মানুষ সুবিধা ভোগ করছে। বিশেষ করে যোগাযোগ ব্যবস্থার আমুল পরিবর্তন এসেছে। বাকী অন্যসব প্রকল্প চালু হলে গোপালগঞ্জের মানুষ স্বাচ্ছন্দে জীবন জাপন করতে পারবেন বলে মত প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষ।
গোপালগঞ্জে উন্নয়ন কর্মকান্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত বেশ কয়েকটি দপ্তরসূত্রে জানাগেছে, শতাধিক বড় প্রকল্পসহ বিভিন্ন উন্নয়ন মূলক কাজ করা হয়েছে গোপালগঞ্জের পাঁচটি উপজেলায়। এসব কাজে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। এর মধ্যে বেশ কিছু বড় প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। আবার কিছু চলমান রয়েছে। এসব উন্নয়ন কাজ শেষ হলে গোপালগঞ্জ জেলার মানুষ উন্নত জীবন জাপন করতে পারবেন এবং ব্যবসা বাণিজ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য খাতে উন্নতি সাধিত হবে ফলে এলাকার আর্থসামাজিক উন্নয়ন ঘটবে।
সড়ক ও যোগাযোগঃ
গোপালগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ জাহিদ হোসেন বলেন,আমার আড়াই বছরের মেয়াদ কালে প্রায় ১হাজার কোটি টাকার সড়ক যোগাযোগ উন্নয়ন কাজ করেছি। এর মধ্যে প্রায় ৬শ কোটি টাকা ব্যয়ে টেকেরহাট থেকে ঘোনাপাড়া পর্যন্ত সড়ক প্রশস্ত করার কাজ চলমান রয়েছে। একশ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪টি জেলা উন্নয়ন সড়কের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এর আগে ২০১০ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত সড়ক বিভাগ জেলা মহাসড়ক,বোড়াশী-বর্ণি -সিঙ্গীপাড়া সড়ক, বাজুনিয়া- গান্ধিয়াশুর- সাতপাড়- হাতিয়ারা- রামদিয়া সড়কসহ বেশ কয়েকটি নতুন সড়ক নির্মাণ ও সড়ক উন্নয়ন কাজে ৭৪৫ কোটি ৩৩ লাখ টাকায় ৬৮৬ দশমিক ১২ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ ও মেরামত কাজ করা হয়েছে।
এছাড়া সড়ক বিভাগ ৯৫৯ কোটি ৪৫ লাখ টাকা ব্যয়ে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীর মধুমতি নদীর উপর দেশের প্রথম ছয় লেনের সেতু নির্মাণ করেছে। এই মধুমতি সেতুটির দৈর্ঘ্য ৬৯০ মিটার ও প্রস্থ ২৭ দশমিক ১০ মিটার। এই সেতুটি এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে যুক্ত হবে । সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে সিলেটের তামাবিল হয়ে ঢাকা, ভাঙ্গা, নড়াইল, যশোর, বেনাপোল, কলকাতা পর্যন্ত সরাসরি এই সেতু ভূমিকা রাখবে। এতোদিন কালনা পয়েন্টে মধুমতি নদী এই যোগাযোগটাকে বিছিন্ন করে রেখেছিল। সেতু নির্মাণের ফলে সেই বিছিন্নতা আর রইল না।”
চলতি অর্থবছরে টেকেরহাট হতে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার ঘোনাপাড়া পর্যন্ত ৪৪ কিলোমিটার সড়ক উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ কাজ চলমান রয়েছে। এই কাজে ব্যয় নির্ধাণর করা হয়েছে প্রায় ৬১২কোটি টাকা। এছাড়া সড়ক বিভাগের পক্ষ থেকে অসংখ্য ব্রীজ নির্মাণ করা হয়েছে। এসব উন্নয়ন কর্মকান্ডের বাইরে রয়েছে রেল সংযোগ। বর্তমান সরকারের আমলে রাজশাহী-গোপালগঞ্জে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। ট্রেনে করে মানুষ কম খরচে বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছেন। এক জেলার উৎপাদিত পন্য অন্য জেলায় বাজারজাত হচ্ছে। ফলে লাভবান হচ্ছে কৃষক।
স্বাস্থ্য খাতঃ
গোপালগঞ্জে স্বাস্থ্যখাতেও ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া, টুঙ্গিপাড়া, কাশিয়ানী ও মুকসুদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলো ৫০ শয্যা থেকে ১০০ শয্যায় উন্নিত করা হয়েছে। কাশিয়ানীতে আইএইচটি ( ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি) নির্মাণ, কাশিয়ানীর রামদিয়ায় ১০ শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে।
এখানে ব্যয় ধরা হয়েছে ২২৫ কোটি ২৯ লাখ টাকা। এছাড়া শেখ ফজিলাতুনেচ্ছা মুজিব চক্ষু হাসপাতাল ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান স্থাপন, ট্রমা সেন্টার নির্মাণ করা হয়েছে। এতে ব্যয় হয়েছে ১৮৬কোটি টাকা। এছাড়া গোপালগঞ্জের ঘোনাপাড়ায় এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানী লিমিটেড একটি কারখান স্থাপন করেছে।
এই কারখানায় ইতোমধ্যে পেনিসিলিন উৎপাদন করা হচ্ছে। সৃস্টি হয়েছে কর্মসংস্থান। এছাড়া গোপালগঞ্জে নির্মিত হচ্ছে ডেন্টাল কলেজ ও হাসপাতাল। এই প্রতিষ্ঠানটি চালু হলে এই অঞ্চলের মানুষদের আর ঢাকা- খুলনা বা অন্য কোন স্থানে দাঁতের চিকিৎসার জন্য যেতে হবে না।
পানি ব্যবস্থাপনাঃ
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অফিস সূত্রে জানাগেছে, গোপালগঞ্জের বিভিন্ন গ্রামে গ্রামীণ পানি সরবরাহ প্রকল্পের আওতায় ২ হাজারটি গভীর নলকূপ স্থাপন, ইউনিসেফ সহায়তাপুষ্ট পানি সরবরাহ, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্য শিক্ষার আওতায় ৩৭০টি গভীর নলকূপ,কোটালীপাড়া ও টুঙ্গিপাড়ায় পৌরসভায় পানি সরবরাহ ও এনভায়নেমেন্টাল স্যানিটেশন উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ৩৬০ ঘনমিটার ওভারহেড ট্যাংক, ১৬ কিলোমিটার পাইপলাইন, ৬ কিলোমিটার ড্রেন,পাবলিক ৪ টয়লেট স্থাপন করা হয়েছে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০০কোটি টাকা। এছাড়াগোপালগঞ।জজেলার টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়া উপজেলায় খাল পুনঃখনন, ডুবশি-মোল্লাপাড়া এলঅকায় ৫০০ মিটার নদীতীর সংরক্ষণ , তাড়াইল- পাঁচুড়িয়া বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নিস্কাশন ও সেচ প্রকল্প, পশ্চিম গোপালগঞ্জ সমন্বিত পানি ব্যবস্থাপনা প্রকল্পসহ ৯টি প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। এই জন্য ব্যয় হয়েছে ৪৭৫কোটি টাকা।
ধর্মীয় খাতে উন্নয়নঃ
গোপালগঞ্জে ধর্মীয় খাতে বেশ কিছু উন্নয়ন করা হয়েছে। ইসলামিক ফাউন্ডেশন কমপ্লেক্স স্থাপন, টুঙ্গিপাড়ায় মসজিদ এবং ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন, মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম,জেলা শহর সহ ৫টি উপজেলায় মডেল মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে।এসব কাজ বাস্তবায়ন করেছে গণপূর্ত অধিদপ্তর।
শিক্ষা খাতে উন্নয়নঃ
গোপালগঞ্জের শিক্ষার গুনগত মান উন্নয়নে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, শেখ রেহানা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, শিশু একাডেমি নির্মাণ, কারিগরি প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান,টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ, স্কুল কলেজ ভবনের উন্নয়ন করা হয়েছে। এসব প্রকল্পে প্রায় ১হাজার কোটি টাকা ব্যয় করেছে গণপূর্ত ভবন। এছাড়া টুঙ্গিপাড়ায় ও কোটালীপাড়ায় দারিদ্র বিমোচনসহ বেশ কয়েকটি প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের নির্মাণ কাজ করা হয়েছে। যার সুফল ইতো মধ্যে পেতে শুরু করেছে স্থানীয়রা।
সামাজিক নিরাপত্তাঃ
গোপালগঞ্জ জেলায় বিভিন্ন কার্যক্রম ইতো মধ্যে চলমান রয়েছে।বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড (বিআরডিবি)জেলায় সমন্বিত দারিদ্র বিমোচন কর্মসূচি, পল্লী প্রগতি কর্মসূচি, আদর্শগ্রাম কর্মসূচিসহ বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।যেসব কাজ এখন চলমান রয়েছে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৩২৭ কোটি ২২ লাখ টাকা।এছাড়া জেলার পাঁচটি উপজেলায় ন্যাশনাল সার্ভিসের আওতায় দুই বছর মেয়াদি কর্মসংস্থানের সৃস্টি করা হয়। যার ব্যয় হয়েছে ২৩৪ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। এছাড়া সমাজ সেবার আওতায় ক্যানসার, কিডনি, লিভারসহ জটিল রোগের চিকিৎসার জন্য ৭৫কোটি ৪১ রাখ টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। যার সুফল পেয়েছে গোপালগঞ্জের মানুষ।
এলজিইডির উন্নয়নঃ
গোপালগঞ্জ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ২০০৯ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত জেলার ৫টি উপজেলায় সড়ক নির্মাণ ও সংস্কার করেছে ২হাজার ২৮ কিলোমিটার। ব্রীজ- কালভার্ট করেছে ১৪ হাজার ৩৩০ মিটার, হাট বাজার উন্নয়ন করেছে ৩৫টি। এজন্য অবকাঠামো উন্নয়ন করেছে ২হাজার ২২৭কোটি টাকা।
আর চলমান প্রকল্প রয়েছে ২০টি। এজন্য বরাদ্দ রয়েছে ২হাজার ৬৭৫কোটি ৫৮ লাখ টাকা। এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ এহসানুল হক।
এলাকাবাসীর অভিমতঃ
গোপালগঞ্জ জেলা উদীচীর সভাপতি নাজমুল ইসলাম বলেন, আওয়ামীলীগ সরকার গোপালগঞ্জের জন্য আর্শিবাদ। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে গোপালগঞ্জের উন্নয়ন হয়। আর অন্য সরকার থাকলে কোন উন্নয়ন কাজ হয়না। সকল সরকারেরই উচিৎ সমন্বয়ের মাধ্যমে উন্নয়ন করা। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গোপালগঞ্জে যে উন্নয়ন হয়েছে স্বাধীনতা পরবর্তি সময়ে তা কোন দিন হয়নি। আমরা এই সরকারের সাফল্য কামনা করি।
সুজনের সভাপতি কবি রবীন্দ্রনাথ অধিকারী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতার বাইরে থাকলে গোপালগঞ্জে কোন উন্নয়ন হয়না। যুদ্ধ পরবর্তি ও বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর গোপালগঞ্জ জেলা ২১ বছর ছিল অবহেলিত। আওয়ামী লীগ ৪বার ক্ষমতায় থাকায় বেশ উন্নয়ন হয়েছে। তবে আরো বেশী উন্নয়ন হওয়া উচিৎ ছিল। তাই আমরা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামীলীগকে আবারও ক্ষমতায় দেখতে চাই।
নেতাদের কথাঃ
গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জিএম সাহাব উদ্দিন আজম বলেন, একসময় গোপালগঞ্জ ছিল অবহেলিত। ২১ বছর বঞ্চনার শিকার হয়েছি আমরা। ৯৬ পরবর্তি গোপালগঞ্জে উন্নয়ন শুরু হয়। শেখ হাসিনা ও শেখ ফজলুল করিম সেলিম আমাদের উন্নয়নের রূপকার এনাদের হাত ধরে গোপালগঞ্জে ব্যপক ইন্নয়ন হয়েছে। একসময় গ্রামের মানুষ উপজেলা সদর বা জেলা শহরে আসতো পায়ে হেটে বা নৌকায় করে। এখন প্রতিটি গ্রামে গাড়ি চলে। গোপালগঞ্জে বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ, চক্ষু হাসপাতাল, সেতু, রাস্তাঘাট উন্নয়ন করেছে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। এই উন্নয়ন প্রত্যাশীত উন্নয়ন। যে উন্নয়ন হয়েছে তাতে আমরা শেখ হাসিনা ও শেখ সেলিমের প্রতি কৃতজ্ঞ। আশাকরি অন্যসব উন্নয়নথেকে আমরা বাদ পরবো না।
Design & Developed By: JM IT SOLUTION
Leave a Reply