রবিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৪৩ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
গোপালগঞ্জে পৃথক অভিযানে আড়াই লক্ষটাকার নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ, ব্যবসায়দের জরিমানা কাশবন সাহিত্য পত্রিকা পুরষ্কার পেল যারা বিনাধান-২৫ এ কমবে চিকন চাল আমদানি নির্ভরতা গোবিপ্রবি’তে জিএসটি গুচ্ছভুক্ত ‘সি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত কোটালীপাড়ায় আগুনে পুড়লো ১০ দোকান। ৩০ লক্ষ টাকার ক্ষতি শুক্রবার থেকে শুরু গোবিপ্রবি’তে জিএসটি গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা। প্রস্তুতি সম্পন্ন কোটালীপাড়ায় কুকুর ব্যাগ থেকে বের করলো নবজাতকের লাশ! কোটালীপাড়ায় হয়েগেল শতবছরের ঐতিহ্যবাহী ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা ও বৈশাখী মেলা গোপালগঞ্জে বিএনপির কর্মি সমাবেশ অনুষ্ঠিত কুয়েট শিক্ষার্থীদের দাবির সমর্থনে গোবিপ্রবির শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন

বঙ্গবন্ধুর বাল্যকাল ও শিক্ষা জীবন

Reporter Name
  • Update Time : মঙ্গলবার, ১৬ আগস্ট, ২০২২, ১১.৫১ এএম
  • ২৮৭ Time View

রবীন্দ্রনাথ অধিকারীঃ

হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একজন ক্ষণজন্মা মহাপুরুষ ও রাজনীতির মহানায়ক। ২০২০ সালে তাঁর জন্মশতবার্ষিকী পালিত হয়। ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ায় মধুমতি নদীর তীরে এক ছোট্ট  গ্রামে তিনি জন্মগ্রহন করেন। তরুলতায় ঘেরা সবুজ শ্যমলিমাময় এ গ্রামে ছিল অল্প কয়েকখানা বাড়ি। এর মধ্যে শেখ বাড়ি ছিল ঐতিহ্যবাহী এবং এলাকার  মধ্যে খুব পরিচিত। এ বাড়িতেই শেখ লুৎফর রহমান এবং মা সায়েরা খাতুনের কোলজুড়ে  নতুন যুগের মহানায়ক মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর  রহমানের জন্ম। যার জন্ম না হলে আমরা বাংলাদেশ পেতাম কিনা সন্দেহ  ছিল? ছোট বেলা থেকেই বঙ্গবন্ধু ছিলেন দূরন্ত সাহসী, জনদরদী ও মানবপ্রেমিক ক্রীড়ামোদী ও শিশু সংগঠক। এলাকার যেখানে হা-ডু-ডু ও ফুটবল খেলা হত সেখানে তিনি অংশ নেওয়াসহ নেতৃত্ব দিতেন। টুঙ্গিপাড়ার পার্শ্ববর্তী কেড়াইল কোপা, বালাডাঙ্গা, গিমাডাঙ্গা, মিত্রডাঙ্গা, চিংগুটি, পাটগাতী, মোল্লাহাট প্রভৃতি স্থানে ছিল তার দৃপ্ত পদচারণা। ছোট বেলা থেকেই খেলাধুলার প্রতি তিনি ছিলেন প্রচন্ড আগ্রহী। প্রাথমিক স্কুলে পড়ার সময়  একবার টুঙ্গিপাড়ার পার্শবর্তী মোল্লাহাট থানায় ফুটবলে অংশ নেন তিনি এবং তার নেতৃত্বে টুঙ্গিপাড়া টিম জয়লাভ করে। সেই থেকে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের গুণাবলির বিকাশ ঘটে। ধীরে ধীরে  হয়ে ওঠেন শিশু নেতা। তিনি শেখ বাড়ির  পাশ দিয়ে প্রবাহিত বাইগ্যা নদীতে ছোটবেলা প্রচুর সাঁতার কাটতেন, ‘নইল’ খেলতেন।  সাঁতরিয়ে নদী পার হয়ে পশ্চিমপাড় থেকে পূর্বপাড় বালাডাঙ্গায় যেতেন। স্কুল জীবনে জিটি প্রাইমারী স্কুলে পড়াকালে তিনি তাঁর সহপাঠীদের সাথে মিলতেন আন্তরিকভাবে। ছিলেন সকলের প্রতি সহানুভূতিশীল ও দয়ালু। শীতকালে একবার এক ছাত্রের গায়ে চাদর নেই দেখে তাকে তিনি নিজের গায়ের চাদর তুলে দিলেন। আর একবার বৃষ্টির দিনে ছাতা না থাকায় এক সহপাঠী বাড়ি যেতে পারছিল না দেখে তিনি তাঁর  নিজের ছাতাটি দিয়ে দিলেন। আর নিজে বাড়ি ফিরলেন বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে। কখনো কখনো সহপাঠীদের টাকা পয়সা দিয়ে সাহায্য করতেন। অসুখ-পীড়া দেখা দিলে তাদেরকে ডাক্তার দেখাতে নিয়ে যেতেন। শৈশবকাল থেকেই । তিনি ছিলেন মানব প্রেমিক, সেবাধর্মী উদারচেতা। কোন প্রকার  অন্যায়কে তিনি প্রশ্রয় দিতেন না। দরিদ্রদেরকে নিজেদের  ধানের গোলা থেকে ধান নিয়ে দিতেন অকাতরে । এজন্য তার মা-বাবা তাকে কখনোনই কিছু  বলতেন না।  বরং ছেলের এই মানবতার জন্য মনে মনে আনন্দিত হতেন তাঁরা। বঙ্গবন্ধুর গৃহশিক্ষক ছিলেন পন্ডিত সাফায়াতউল্লাহ। তাঁর কাছেই বঙ্গবন্ধুর  প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা জীবন শুরু। ১৯২৭ সালে ৭ বছর বয়সে তিনি পার্শ্ববর্তী গিমাডাঙ্গা-টুঙ্গিপাড়া (জিটি) স্কুলে ভর্তি হন।  সেখানে তিনি পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেন।  ১৯৩৪ সালে বঙ্গবন্ধুর বাবা লুৎফর রহমান এর চাকরির জায়গা মাদারীপুর নিয়ে যান বঙ্গবন্ধুকে। সেখানে সে বছর তিনি ইসলামিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হন। পরের বছর শেখ লুৎফর রহমান বদলি হয়ে গোপালগঞ্জে  চলে আসেন এবং বঙ্গবন্ধুকে তিনি সেন্ট মথুরানাথ ইনস্টিটিউটে (গোপালগঞ্জ মিশন স্কুলনামে পরিচিত স্কুলটি বর্তমান সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজ যেখানে অবস্থিত সেখানে ছিল) ভর্তি করেন।  সেন্ট মথুরানাথ বসু প্রতিষ্ঠিত এই স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় তাঁর চোখের অসুখ দেখা দেয়। চোখে ছানি পড়ে বেরিবেরি রোগ হয়। চোখের ভালো চিকিৎসার জন্য তাকে তাঁর পিতা কলকাতা নিয়ে যান। সুস্থ হতে বেশ কিছুটা সময় লাগে। ফলে এ সময় তাঁর পড়াশোনার ব্যাঘাত ঘটে। ১৯৩৮ সালে তিনি এই স্কুলে ভর্তি হন অষ্টম শ্রেণিতে। ওই সালেই  অষ্টম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী শেরে-ই বাংলা একে ফজলুল হক এবং তাঁর মন্ত্রিসভার বাণিজ্য ও পল্লী উন্নয়নমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী গোপালগঞ্জে মথুরানাথ ইনস্টিটিউটে পরিদর্শনে আসেন।  সে সময়  বঙ্গবন্ধু (কিশোর মুজিব) ঐ স্কুলের বৃষ্টি পড়া ছাদ মেরামতের দাবি জানিয়ে ওই দুই নেতার শুভদৃষ্টিতে পড়েন এবং ভবিষ্যতে তাদের রাজনৈতিক  জীবনের প্রতি আকৃষ্ট হন। ওই সময়  স্কুলের  প্রধান শিক্ষক ছিলেন গৈলার (আগৈলঝড়া) ফুল্লশ্রী গ্রামের বিপিন বিহারী সেনগুপ্ত। ১৯৪২ সালে বঙ্গবন্ধু ওই স্কুলে থেকে ম্যট্রিক পাস করেন।  পরে তিনি কলকাতা গিয়ে ইসলামিয়া কলেজে ভর্তি হন। এই কলেজ থেকে ১৯৪৪ সালে আইএ পাস  এবং ১৯৪৬ সালে বিএ পাশ করেন।  ওই কলেজ পড়াকালীন  তিনি কলেজ সংসদের ভিপি নির্বাচিত হন।  তিনি কলকাতায় ফরিদপুর সমিতি সংগঠিত  করেন এবং  হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সংস্পর্শে এসে ছাত্র ফেডারেশনের  রাজনীতির সাথে যুক্ত হন। এ সময় তিনি কলকাতা বেকার হোস্টেলে থাকতেন। সে রুমটি এখন ঐতিহাসিক স্থান হিসেবে সংরক্ষিত আছে। তাঁর নামে  একটি চেয়ার স্থাপন করা হয়েছে।  ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর তিনি ঢাকায় চলে আসেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এলএলবিতে ভর্তি  হন।  এর আগে তিনি বেগম ফজিলাতুন্নেছার সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।  তাদের সুযোগ্য কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহন করেন। তিনি এলএলবির ছাত্র থাকাকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় আন্দোলনে অংশ নেন এবং ছাত্রত্ব হারান। এরপর শুরু হয় তাঁর রাজনৈতিক জীবনের সংগ্রামী অধ্যায় । ছিনিয়ে আনেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা। হয়ে ওঠেন বঙ্গবন্ধু থেকে জাতির পিতা, আমাদের বাংলাদেশের স্থপতি।  হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি।

লেখকঃ সভাপতি,বঙ্গবন্ধু লেখক পরিষদ, গোপালগঞ্জ জেলা শাখা।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category

Advertise

Ads

Address

Office : Sheikh Fazlul Haque Moni Stadium (2nd floor), Gopalganj-8100 Mobile: 01712235167, Email: kalerkhabor24.com@gmail.com
© All rights reserved 2022

Design & Developed By: JM IT SOLUTION