কালের খবর, গোপালগঞ্জঃ
গোপালগঞ্জে একটি ব্রীজ বদলে দিয়েছে অন্তঃত ২০ গ্রামের হাজার হাজার মানুষের আর্থ- সামাজিক অবস্থা। মাদারীপুর বিলরুট (এমবিআর) চ্যানেলের উপর সদর উপজেলার বৌলতলীতে নির্মাণ করা হয় ব্রীজটি। ২০০ মিটার দৈর্ঘ আর ৭ দশমিক ৩২মিটার প্রস্থ্য ব্রজিটি নির্মাণ হওয়ায় সুবিধা পাচ্ছে লক্ষাধিক মানুষ। সেইসাথে এলাকার উৎপাদিত ফসল আনানেয়ায় ব্যাপক সুবিধা হওয়ায় নিম্মজলাভূমি বেষ্ঠিত এলাকায় ব্যাপক আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন দেখাদিয়েছে। সেইসাথে অবসান ঘটেছে জন্মলগ্ন থেকে পোহানো দুর্ভোগ আর যাতায়াত বিড়ম্বনার।
বৌলতলী বাজারের ব্যবসায়ী হাফিজ শিকদার বলেন, একসময় এই এলাকার মানুষের যাতায়াতের একমাত্র অবলম্বন ছিল নৌক আর পায়ে হেটে। ব্রীজ চালু হওয়ায় এখন আর কাউকে খেয়াঘাটে মাঝির অপেক্ষা দাড়িয়ে থাকতে হয়না। অসুস্থ্য রোগীকে নৌকায় করে ডাক্তারের কাছে নিতে হয়না। রোগীরা অনাসায়ে এ্যাম্বুলেন্সে করে জেলা শহর গোপালগঞ্জ, রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যেতে পাড়ে। রোদে পুড়ে বা বৃষ্টিতে ভিজে ছাত্রছাত্রীদের স্কুল কলেজে যেতে হয়না। সময়মত তারা শিক্ষা লাভের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে পারে। যথাসময়ে সকল শ্রেনী পেশার মানুষ ভ্যান রিক্সা, সাইকেল বা গাড়ি করেই বাড়ি থেকে যেতে আসতে পারছেন। উন্নত যাতায়াত সুবিদা ভোগ করছে স্থানীয় গ্রামবাসী। স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা বাড়ি থেকেই গাড়িতে উঠে যায় তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। ব্যবসায়ী ও কৃষকেরা তাদের উৎপাদিত পন্য সহজে পরিবহন করতে পারায় বাজারজাতে তাদের সময় ও অর্থের সাশ্রয় হচ্ছে।
ব্রীজ নির্মানকারী কর্তৃপক্ষ গোপালগঞ্জ এলজিইডি অফিস সূত্রে জানাগেছে, গোপালগঞ্জ জেলার গুরুত্বপূর্ন পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ২০১৭ সালের ১২ জুলাই ২৩ কোটি টাকা ব্যয়ে এমবিআর চ্যানেলের উপর বৌলতলী ব্রীজের নির্মান কাজ শুরু হয়। চুক্তিছিল ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে মধ্যে ব্রীজটির নির্মান কাজ শেষ করার। কিন্তু ব্রীজটির পশ্চিম পাড়ে এপ্রোচসড়ক নির্মানের জন্য গ্রামবাসীর জমি অধিগ্রহনে বেশ কিছু সময় লাগে এবং পাঁচবার কাজের সময় বাড়িয়ে সংশোধিত মূল্য প্রায় ৩০ কোটি ব্যয়ে সর্বশেষ কাজের মেয়াদ বাড়ানো হয় ৩০ নভেম্বর-২৩ পর্যন্ত।এরমধ্যে জমি অধিগ্রহনে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে দেওয়া হয় প্রায় ৫ কোটি টাকা। ২০২৩ সালের ৩০ নভেম্বরের মধ্যেই বাকি কাজ শেষ করে চলাচলের জন্য ব্রীজ খুলে দেওয়া হয়। ফলে বৌলতলী, সাতপাড়, সাহাপুর, করপাড়া ইউনিয়েনের লোকজন খুব অল্প সময়ে এবং কম খরচে কাশিয়ানী উপজেলার রামদিয়া, ঘোনাপাড়া, ফুকরা, কাশিয়ানী, রাজপাট, ওড়াকান্দি এলাকায় সকল প্রয়োজনে সহজে যাতায়াত করতে পারছেন।
স্থানীয় বৌলতলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সুকান্ত বিশ্বাস, বাসিন্দা হাফিজ উকিল, আবেদ উকিল, রাসেল দাড়িয়া, মাছ ব্যবসায়ী মৈয়র আলী, আহাদ খান, কৃষক গোপাল বিশ্বাস, সাগর মোল্লা ভুটানসহ বেশ কয়েকজনের সাথে কথা হলে তারা বলেন, বৌলতলীতে নদীর উপর ব্রীজ না থাকায় আমাদের এলাকায় নদীর দুই পাড়ে বসবাসকারী অন্তঃত ২০ গ্রামের মানুষের যোগাযোগ ও যাতায়াতে খুবই সমস্যা ছিল। স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী, রোগী, কৃষকসহ সকল শ্রেনী পেশার মানুষের বৌলতলী খেয়াঘাটে ব্যাপক হয়রানী ও সময় অপচয় হতো। যে কারনে আমাদের দীর্ঘদিনের দাবীর প্রেক্ষিতে বৌলতলী ব্রীজ নির্মানের ব্যবস্থা করে এলজিইডি। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্থ ভূমি মালিকদের ক্ষতিপুরনের চেক প্রদানে বিলম্ব হওয়ায় বৌলতলী ব্রীজের নির্মান কাজে ঝুলে যায়। অবশেষে নির্মানকাজ শেষ হয়ে যানবাহন চলাচল শুরু করায় নদীর দুই পাড়ে বসবাসকারী বিল বেষ্ঠিত অন্তঃত ২০ গ্রামের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটেছে। আমরা গ্রামে থেকেই উন্নত জীবন যাপনের সুযোগ পাচ্ছি। এখানকার কৃষকরা সহজে কৃষিপন্যউপজেলা ও জেলার বাইরে পাঠিয়ে বেশী লাভ করতে পারছেন। জেলেরা স্বল্প খরচে দ্রæত সময়ে মাছ বাজারজাত করতে পারছে। এলাকার জমিজমার মূল্য বেড়েছে। এলাকার রোগীরা দ্রæততম সময়ের মধ্যে শহরে গিয়ে উন্নত চিকিৎসার সুযোগ পাচ্ছে। শিক্ষার্থীরা কোন প্রকার ভোগান্তি ছাড়াই তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা পেয়েছে, সাশ্রয় হয়েছে সময় ও অর্থ। কৃষি. শিক্ষা, স্বাস্থ্য সব দিক দিয়ে অজোপাড়াগাও এখন উন্নত এলাকায় পরিনত হয়েছে।
এ ব্যাপারে এলজিইডি গোপালগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী এহসানুল হক বলেছেন, কোন এলাকায় নতুন রাস্তা, ব্রীজ, কালভার্ট নির্মান হলে সেই এলাকার মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটে। বৌলতলী ব্রীজ নির্মানের ফলে গোপালগঞ্জ সদর ও কাশিয়ানী উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের অন্তত ২০ টি গ্রামের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটেছে। তারা গ্রামে থেকেই উন্নত জীবন যাপনের সুযোগ পাচ্ছে। কৃষকরা জমি থেকে ফসল সহজে বাড়িতে আনতে ও পন্য পরিবহন করতে পারছেন। জেলেরা স্বল্প খরচে দ্রæত সময়ে মাছ বাজারজাত করতে পারছে। এলাকার জামি-জমার মূল্য বেড়েছে। এলাকার রোগীরা দ্রæততম সময়ের মধ্যে শহরে গিয়ে উন্নত চিকিৎসার সুযোগ পাচ্ছে।
Design & Developed By: JM IT SOLUTION
Leave a Reply