রবিবার, ১৬ মার্চ ২০২৫, ০৯:৩৯ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
দিদার হত্যা মামলায় মুকসুদপুর উপজেলা নেতা ও ইউপি চেয়ারম্যান গ্রেপ্তার কোটালীপাড়ার আলোচিত হত্যা ও ডাকাতির ঘটনায় তিন ডাকাত গ্রেপ্তার আবুল কালাম আজাদ গোপালগঞ্জের শ্রেষ্ঠ ওসি নির্বাচিত গোপালগঞ্জে ভিটামিন এ ক্যাপসুল ক্যাম্পেইনের উদ্বোধন গোপালগঞ্জে দোল পূর্ণিমা বা হোলি উৎসব পালিত মুকসুদপুরে ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইন উপলক্ষে অবহিতকরণ সভা গোপালগঞ্জে নির্বাচন অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মানববন্ধন গোপালগঞ্জে ১ লাখ ৭৯ হাজার ১০৩ জন শিশুকে খাওয়ানো হবে ভিটামিন এ ক্যাপসুল গোপালগঞ্জে অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে গেছে ২টি স্বর্ণের দোকান কাশিয়ানীতে বাস ও ট্রাক সংঘর্ষ! আহত-১২

প্রান্তিক গোষ্ঠীর কণ্ঠস্বর শক্তিশালী নয়! শক্তভাবে দাবি তুলে ধরতে হবে- অধ্যাপক রেহমান সোবহান

Reporter Name
  • Update Time : রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪, ১১.৫৪ এএম
  • ১১৮ Time View

ঢাকা অফিসঃ

“দরিদ্র মানুষ সব দেশেই আছে, তারাও তাদের আন্দোলন করে। কিন্তু এতো এতো মাত্রার বঞ্চনার শিকার হয়েও এখানে উপস্থিত প্রান্তিক গোষ্ঠীর কণ্ঠস্বর শক্তিশালী নয়। সবাইকে এক হয়ে কন্ঠ তুলতে হবে, শক্তভাবে দাবি তুলে ধরতে হবে। এছাড়া আর কোনও সমাধান নেই।

প্রান্তিক ও বিচ্ছিন্ন জনগোষ্ঠী নিয়ে সোসাইটি ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট (সেড)’র আটটি প্রকাশনার মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে গতকাল শনিবার (২৩ নভেম্বর ২০২৪) ঢাকার সিরডাপে এসব কথা বলেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডির)-এর প্রতিষ্ঠাতা ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক রেহমান সোবহান। এই প্রকাশনা উৎসব ও আলোচনা সভার আয়োজন করে সোসাইটি ফর এনভায়রমেন্ট অ্যান্ড হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট (সেড), ব্রাত্যজন রিসোর্স সেন্টার (বিআরসি) এবং পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি)।

সেড-এর পরিচালক ফিলিপ গাইন তার মূল বক্তব্যে নতুন প্রকাশনার মূল বিষয়ের উপর আলোকপাত করেন। “সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রম থেকে একজন বিধবা মাসে ৫৫০ টাকা পান। এই সামান্য ভাতা দিয়ে তিনি কী করতে পারেন। তাই অনেক বিধবাকে ভিক্ষা করেই খেতে হয়,” মন্তব্য করেন তিনি। সামাজিক সুরক্ষার পাশাপাশি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মজুরি বঞ্চনা, সামাজিক বৈষম্য, ভাষা ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য, ইত্যাদি নানা বিষয়ও তার আলোচনায় উঠে আসে।

সেড পরিচালকের মূল বক্তব্যের সাথে একমত প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন (বিসিএসইউ)-এর সাবেক সাধারণ সম্পাদক রামভজন কৈরী। তিনি বলেন,“এখন শ্রম আইনের সংশোধনের কথা আসলে আমরা চা শ্রমিকরা আতঙ্কে থাকি। পূর্বে সব সংশোধনেই চা শ্রমিকদের কোনও না কোনও দিক দিয়ে বঞ্চনার শিকার হতে হয়েছে। বর্তমান সংস্কার কমিশন নিয়ে আমরা আশাবাদী; আমরা চাই বর্তমান বাজার মূল্যের সাথে সামঞ্জস্য রেখে যেন চা শ্রমিকদের বার্ষিক মজুরি বৃদ্ধির শতাংশ নির্ধারণ করা হয়।”

“পার্বত্য চুক্তির মধ্য দিয়ে যে ভূমি কমিশন গঠিত হলো তার কোনও কার্যকারিতা আমরা এখনও দেখলাম না। আদিবাসী নারীদের বেশিরভাগেরই আয়ের উৎস জুমচাষ। অথচ উন্নয়ন কর্মকান্ডের ফল হিসেবে আজ আমরা তা হারাচ্ছি। ১৯০০ সালের সিএইচটি রেগুলেশনেও পরিবর্তনের জন্য জোর চেষ্টা চলছে,” মন্তব্য করেন সিএইচটি নারী হেডম্যান—কারবারি নেটওয়ার্ক’র সভাপতি জয়া ত্রিপুরা। “বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আমাদের প্রত্যাশা যেন পার্বত্য চুক্তির যথার্থ বাস্তবায়ন হয়, রেগুলেশনের কোনও পরিবর্তন না হয়।”

“সরকারের উপদেশে আমাদের সন্তানদের শিক্ষিত করলাম, কিন্তু দিনশেষে তো সেই ঝাড়ু হাতেই তাদের কাজে নামতে হয়। একজন কৃষকের সন্তান যদি সরকারের উচ্চ পদে চাকুরি পান, তবে আমাদের পরিচ্ছন্নকর্মীর সন্তান কেন পাবে না?” এমন প্রশ্ন রাখেন বাংলাদেশ হরিজন ঐক্য পরিষদ-এর সভাপতি কৃষ্ণলাল।

এছাড়া আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন জয়েনশাহী আদিবাসী উন্নয়ন পরিষদ-এর সভাপতি ইউজিন নকরেক ও পরিত্রাণ-এর নির্বাহী পরিচালক মিলন দাস।

“সংস্কার যে কারো জন্য আতঙ্কের বিষয় হতে পারে তা এখানে না আসলে আমি জানতে পারতাম না,” অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ-এর সম্মানিত ফেলো অধ্যাপক রওনক জাহান চা জনগোষ্ঠীর উদ্দেশ্যে এমন মন্তব্য করেন। “বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সাথে কীভাবে এই জনগোষ্ঠীর সংযোগ স্থাপন করা যায় তা নিয়ে ভাবার সময় এখন। সেড, পিপিআরসি’র মতো সংগঠণ আমি মনে করি এক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারে।”

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সৈয়দ এম হাশেমী বলেন, “এরকম জনগোষ্ঠীর জন্য যদি সরকার একটি আর্থ-সামাজিক শুমারি (সোস্যাল ইকোনমিক সেনসাস) করতে পারতো তবে তাদের প্রকৃত অবস্থা সবার সামনে উঠে আসতো। এ ধরণের আলোচনা সংকীর্ণ পরিসরে রাখলে চলবে না, জোরালো কন্ঠে সবার সামনে তুলে ধরতে হবে।”

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া ভূমি সমস্যা নিয়ে মন্তব্য করে বলেন, “২০১৫-১৬ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী বাংলাদেশ সরকারের হাজার হাজার একর জমি পড়ে আছে। এরকম প্রান্তিক ও ভূমিহীন জনগোষ্ঠীর মাঝে সরকারের খাস জমি বন্টনের যথেষ্ট সুযোগ আছে।” ১৯৮৯ সনের ইনডিজেনাস ও ট্রাইবাল পিপলস কনভেনশন-এ বাংলাদেশ স্বাক্ষর করবে এমন আশাই তিনি ব্যক্ত করেন।

“বিআরসি অবশ্যই প্রান্তিক গোষ্ঠীর কণ্ঠস্বর হিসেবে কাজ করবে, কিন্তু রাষ্ট্রীয় পর্যায়েও এই কথা শোনার আগ্রহ থাকতে হবে, ন্যায্যতা নিশ্চিত করার সংস্কারে এগিয়ে আসতে হবে,” বলেন আলোচনা সভার সভাপতি ও সঞ্চালক পিপিআরসি’র নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান। “প্রধান উপদেষ্টার কাছে আমার আহবান তিনি যেন একটা বৈঠকের জন্য সম্মতি দেন।”

সমধানের জন্য অধ্যাপক রেহমান সোবহান কিছু সুনির্দিষ্ট ক্ষেত্র তুলে ধরেন—বেসিক ইনকাম নির্ধারণ, আবাসন ব্যবস্থা ও জনগোষ্ঠীর সম্মিলিত প্রচেষ্টা। তিনি উপস্থিত জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের উদ্দেশ্যে বলেন, “প্রান্তিক গোষ্ঠীর জন্য আলাদা কমিশন না করা হলেও পথ এখানেই শেষ নয়। আপনারা নিজেরা সম্মিলিতভাবে একটি নাগরিক প্লাটফর্ম করেন, আপনাদের দাবি-দাওয়া তুলে ধরেন। আশা করি প্রধান উপদেষ্টা আপনাদের কথা অবশ্যই শুনবেন।”

অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য সংস্কার এজেন্ডা নিয়ে উন্মুক্ত আলোচনা হয়। আলোচনার মাধ্যমে সংস্কার এজেন্ডার একটি রূপরেখা তৈরি করা হয়।হিজড়া সংগঠণ “কথা কলা কেন্দ্র” এর মনোরম সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে প্রকাশনা ও আলোচনা সভার সমাপ্তি ঘটে।

 

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category

Advertise

Ads

Address

Office : Sheikh Fazlul Haque Moni Stadium (2nd floor), Gopalganj-8100 Mobile: 01712235167, Email: kalerkhabor24.com@gmail.com
© All rights reserved 2022

Design & Developed By: JM IT SOLUTION