রবিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:২৫ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
গোপালগঞ্জে পৃথক অভিযানে আড়াই লক্ষটাকার নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ, ব্যবসায়দের জরিমানা কাশবন সাহিত্য পত্রিকা পুরষ্কার পেল যারা বিনাধান-২৫ এ কমবে চিকন চাল আমদানি নির্ভরতা গোবিপ্রবি’তে জিএসটি গুচ্ছভুক্ত ‘সি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত কোটালীপাড়ায় আগুনে পুড়লো ১০ দোকান। ৩০ লক্ষ টাকার ক্ষতি শুক্রবার থেকে শুরু গোবিপ্রবি’তে জিএসটি গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা। প্রস্তুতি সম্পন্ন কোটালীপাড়ায় কুকুর ব্যাগ থেকে বের করলো নবজাতকের লাশ! কোটালীপাড়ায় হয়েগেল শতবছরের ঐতিহ্যবাহী ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা ও বৈশাখী মেলা গোপালগঞ্জে বিএনপির কর্মি সমাবেশ অনুষ্ঠিত কুয়েট শিক্ষার্থীদের দাবির সমর্থনে গোবিপ্রবির শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন

লংগানের শতক গাছে নিমিষেই বছর পার

Reporter Name
  • Update Time : রবিবার, ৩ জুলাই, ২০২২, ১২.১৫ পিএম
  • ৩২২ Time View

কালের খবর কৃষি রির্পোটঃ 

থাইল্যান্ডের পিংপং জাতের লংগান (আশফল) চাষ করে সফলতা পেয়েছে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীর হর্টি কালচার সেন্টার।বিগত আড়াই বছর আগে রোপনকৃত গাছে এখন থোকায় থোকায় ফল ধরেছে। বাদামি রং এর গোলাকৃতির লিচু জাতীয় ফল এটি। খেতে সুস্বাদু ও সুমিষ্ট। ওষুধিগুন সম্পন্ন ফলটি গোপালগঞ্জসহ দেশ ব্যাপী বাণিজ্যিক ভাবে চাষ করার উদ্যোগ নিয়েছে হর্টি কালচার কর্তৃপক্ষ।

হর্টিকালচার সেন্টার সূত্রে জানাগেছে, বিগত আড়াই বছর আগে বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বছর ব্যাপী ফল উৎপাদন ও পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় থাইল্যান্ড থেকে ৮টি লংগান গাছের কলমের চারা দেশে আনা হয়। গাছগুলো কাশিয়ানী হর্টিকালচার সেন্টারের ভিতর পরীক্ষামূলক ভাবে চাষ করা হয়েছে। এবছর তার ফল এসেছে। ছোট গাছে যে ফল ধরেছে তা আসাতীত। প্রতিটি গাছে ১৫ থেকে ২০ কেজী ফল উৎপাদন হবে বলে আসা করছেন সেন্টার কর্তৃপক্ষ। তারা আরো বলেন, একটি পুর্ণবয়স্ক গাছে বছরে ১০০ থেকে ১২০ কেজী ফল উৎপাদন হবে। বিদেশী এই ফলের চাহিদা রয়েছে দেশের বড় বড় শহরে। এর দামও অনেক বেশী। প্রতিকেজী লংগান ৭শ থেকে ৮শ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়ে থকে। তাহলে একটি গাছে যে ফল ধরে তাতে একটি পরিবারের ১০০টি গাছ থাকলে খরচ বাদে ৭ থেকে ৮ লাখ টাকা উপার্জন করা সম্ভব।

ফলের পরিচিতিঃ

কাশিয়ানী হর্টি কালচার সেন্টারের উপ-পরিচালক আমিনুল ইসলাম বলেন, লংগান এক প্রকার লিচু জাতীয় সুস্বাদু ফল। এটি কাঠ লিচু বা আশফল হিসেবেও পরিচিতি রয়েছে। দেশী লংগান আমাদের গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী একটি ফল হলেও এর আঠি বড়। তাই এটির দাম কম। আর থাই লংগান আকারে বড় আঠি ছোট। তাই এটির চাহিদা বেশী, বাজারে দামও বেশী। ফলগুলো গোলাকৃতির, শাঁস সাদা, রসালো ও মিষ্টি। ফলের উপরীভাগ মশ্রিণ, রং বাদামি। ফল খেতে লিচুর মত বা লিচুর চেয়েও মিষ্টি। বীজ থেকে চারা উৎপাদন করা হলেও জমিতে বা ছাদে কলমের চারাই উপযোগী । গুটি কলম এর মাধ্যমেই খুব সহজেই এর বিস্তার করা সম্ভব।

চাষ পদ্ধতিঃ

থাই লংগান চাষ করতে রৌদ্রোজ্জ্বল জমির প্রয়োজন। যেসব জমিতে আলো বাতাস বা রোদ সহজেই পড়ে বা আসে সেই জায়গা নির্বাচন করতে হবে। প্রতিটি চারা বা ব্রীজ ১৫ থেকে ২০ফুট দুরত্বে রোপন করতে হবে। বেলে দোআঁশ মাটি লংগান চাষের জন্য উপযোগী। জমিতে রোপনের ক্ষেত্রে মাটির উর্বরতা পরীক্ষা করে প্রতিটি গাছের জন্য ২ফুট ব্যাসার্ধের একটি করে গর্ত করতে হবে। গর্তের মাটির সঙ্গে ২কেজি গোবরসার,১০০গ্রাম টিএসপি,১শ গ্রাম পটাশ সার মিশিয়ে এক সপ্তাহ রেখে দিতে হবে। এর পর সেখানে একটি লংগান চারা রোপন করতে হবে। আর ছাদে লংগানের চারা রোপনের জন্য কমপক্ষে ২ফুট উঁচু ড্রাম, মাটি  বা  কংক্রিট টব সংগ্রহ করতে হবে । বড় হলে ভালো হয়। টব বা ড্রামের তলায় দুইতিনটি ছিদ্র থাকতে হবে। যাতে গাছের গোড়ায় পানি জমে না থাকে। টব বা ড্রামের তলার ছিদ্রগুলো ইটের ছোট ছোট টুকরা দিয়ে বন্ধ করে দিতে হবে। টব বা ড্রামের গাছটিকে ছাদের এমন জায়গায় রাখতে হবে যেখানে সবসময় রোদ থাকে । এবার বেলে দোআঁশ মাটি, ১ ভাগ গোবর, ৫০ গ্রাম টি,এস,পি সার, ৫০ গ্রাম পটাশ সার এবং ২০০ গ্রাম হাড়ের গুড়া একত্রে মিশিয়ে ড্রাম বা টবে পানি দিয়ে রেখে দিতে হবে ১০/১২দিন। অতঃপর মাটি কিছুটা খুচিয়ে দিয়ে আবার ৫ দিন একইভাবে রেখে দিতে হবে । মাটি যখন ঝুরঝুরে হবে তখন একটি লংগান কলমের চারা রোপন করতে হবে। চারা রোপনের সময় খেয়াল রাখতে হবে গাছের গোড়া যেন মাটি থেকে আলাদা না হয়ে যায়। চারা গাছটিকে সোজা করে লাগাতে হবে। সেই সাথে গাছের গোড়ায় মাটি কিছুটা উঁচু করে দিতে হবে এবং মাটি হাত দিয়ে চেপে চেপে দিতে হবে ।

উৎপাদন মৌসুমঃ

প্রতিবছর ফেব্রুয়ারী মাসে একটি পুর্নবয়স্ক গাছে মুকুল আসে। এপ্রিল মাসে গুটি বা ফল ধরে। তখন পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে সালফার জাতীয় সিওভিট মিশ্রিত পানি স্প্রে করতে হবে। আর আগষ্ট মাসে ফল পাকে বা বাজারে পাওয়া যায়। তবে এই গাছে এখনও পর্যন্ত তেমন কোন পোকা মাকড়ের আক্রমণ দেখা দেয়নি বলে জানিয়েছেন হর্টি কালচারের উপ-সহকারী উদ্যান কর্মকর্তা মোঃ রফিকুল ইসলাম প্রধান।

তিনি আরো বলেন এই ফলটি জমিতে সহজেই চাষাবাদ করা সম্ভব। খুব বেশী যত্নের প্রয়োজন নেই। মাঝে মধ্যে পানি দিতে হয়। আর গাছের গোড়া পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রখলেই চলে। তবে টবে বা ড্রামে ছাদে লাগালে একটু বেশী যত্ন নিতে হবে। সময়মত পানি ও সার প্রয়োগ করতে হবে।

লংগানের উপকারিতাঃ

লংগান ফলে রয়েছে ভিটামিন সি, আয়রন, ক্যালশিয়াম, আ্যামাইনো  এসিড, ম্যাগনেশিয়াম, ভিটামিন এ, গ্লুকোজ। যা মানব দেহের অবসাদ দুর করে,হৃদযন্ত্র সুরক্ষা এবং সক্রিয় রাখে, স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে , ডায়রিয়া, দুর্বলতা, ক্ষতস্থান সারিয়ে তোলে, কৃমির সমস্যা দুর করতে সাহায্য করে থাকে। এছাড়া পেটের অসুখ দুর করে। দেহের মাংসপেশির ক্ষয় রোধ করতে লংগান ফল খুবই উপকারী। কোনো ধরনের ফ্যাট না থাকায় ওজন কমাতেও এ ফল সাহায্য করে থাকে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানের উদ্যান তত্ত্ববিদ এইচ এম রফিকুল হাসান।

কৃষকের উদ্যোগঃ

গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার নিজামকান্দি গ্রামের কৃষক মোঃ সাঈদ মোল্লা বলেন, আমি মাঝে মধ্যে হর্টিকালচার সেন্টারে এসে নতুন নতুন গাছের চারা নিয়ে বাড়িতে লাগাই। এবার এসে দেখলাম  বিদেশী আশফল (লংগান) । ফল ধরেছে খুব । দেখে আমার চারা নেয়ার ইচ্ছে হয়েছে। স্যারদের সঙ্গে আলাপ করেছি। সেপ্টেম্বর মাসে চারা দিবে। এখান থেকে চারা নিয়ে আমি দশ শতাংশ জমিতে লংগান চাষ করবো।

কৃষিবিদের কথাঃ

গোপালগঞ্জ হর্টিকালচার সেন্টারের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোঃ আমিনুল ইসলাম  বলেন, থাইল্যান্ডের পিংপং ভ্যারাইটির লংগান চাষ করে আমরা সফলতা পেয়েছি। বাংলাদেশের আবহাওয়ায় এই চাষ ভালোই হয়েছে। এখন আমরা কলম বা বীজের মাধ্যমে চারা উৎপাদন করে গোপালগঞ্জসহ দেশ ব্যাপী এই চাষ ছড়িয়ে দেয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। একজন কৃষক বা বেকার যুবক মাত্র ১০০টি গাছ লাগিয়ে প্রচুর আয় করতে পারবেন। তাতে অন্য ফসলের থেকে বেশী লাভবান হওয়া সম্ভব।

 

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category

Advertise

Ads

Address

Office : Sheikh Fazlul Haque Moni Stadium (2nd floor), Gopalganj-8100 Mobile: 01712235167, Email: kalerkhabor24.com@gmail.com
© All rights reserved 2022

Design & Developed By: JM IT SOLUTION