রবিবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:৫২ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
কাশিয়ানীতে তিন মাদক করবারিকে গ্রেপ্তার কোটালীপাড়ায় ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প কোটালীপাড়ায় দুর্গা মন্ডপ পাহারায় আনসার নিয়োগে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ কোটালীপাড়ায় দ্বিতীয় শ্রেণির শিশুকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে সিরিয়াল ধর্ষক গ্রেপ্তার চক্ষুদানের মধ্য দিয়ে সপ্তমী বিহিত পুজা অনুষ্ঠিত গোপালগঞ্জের বিভিন্ন পূজা মন্ডপ পরিদর্শন করলেন বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মাজহার আল কবির খোকন গোপালগঞ্জে বাসের ধাক্কায় প্রাণ গেল যুবকের, আহত ১ কোটালীপাড়ায় এক যুবকের বিরুদ্ধে শিশু ধর্ষণের অভিযোগ বর্ষায় বিল পাড়ের দরিদ্র মানুষের আয় শাপলা বিক্রি টুঙ্গিপাড়ায় ৫০জেলে পরিবার পেল ইলিশ আহরনে বিরত থাকা চাল

অনগ্রসর জনগোষ্ঠীকে লেখাপড়ায় সম্পৃক্ত ও উৎসাহ যোগাতে জেলা প্রশাসকের উদ্যোগ

Reporter Name
  • Update Time : শুক্রবার, ৯ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪, ৫.৩০ পিএম
  • ১৩৬ Time View

কালের খবরঃ

বেদে সম্প্রদায়ের মানুষ এখনও যাযাবর জনগোষ্ঠী হিসাবে পরিচিত। একসময় এদের বসবাস ছিল নৌকায়। নৌকায় করে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় গিয়ে গ্রামগঞ্জ বা হাটবাজারে ক্ষুদ্র ব্যবসার মাধ্যমে জীবন জীবিকা নির্বাহ করা। এই জনগোষ্ঠীর মূল পেশা মানুষের শরীরে শিঙ্গা লাগানো, তাবিজ কবজ বিক্রি, সাপ খেলা দেখানো, সাপের কামড়ের চিকিৎসা, সাপ বিক্রি, আধ্যাত্মিক (কবিরাজি) স্বাস্থ্য সেবাদান, ভেষজ ওষুধ বিক্রি, বানরখেলা দেখানো, চুড়ি ফিতা বিক্রি, জাদু দেখানো ইত্যাদি তাদের জীবিকা নির্বাহের অবলম্বন। এখন তারা সড়ক পথে বা বিভিন্ন স্থানে ঘরবাড়ি তৈরী করে বসবাস করছেন। কেউ কেউ আদি পেশা ছেড়ে চায়ের দোকান সবজি বিক্রি, রিক্সাভ্যান চালানো, গাড়ীর ড্রাইভারের কাজ করে থাকেন। এছাড়া ছেলে মেয়েদের সমাজের মূল ধারায় সম্পৃক্ত করতে লেখা পড়া শিখাচ্ছেন।

আর এই বেদে ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীকে লেখাপড়ার মাধ্যমে জীবনমান উন্নয়ন এবং সমাজের মূল স্রোতধারায় সম্পৃক্ত করতে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন জেলা প্রশাসক কাজী মাহবুবুল আলম। তিনি বুধবার ( ৭ ফেব্রুয়ারী)  দুপুরে তার অফিস কক্ষে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার রঘুনাথপুর ইউনিয়নের দিঘারকুল গ্রামের মৃত দবির মৃধার অনার্স পড়ুয়া ছেলে রোমান মৃধাকে লেখাপড়ার সুবিধার জন্য একটি ল্যাবটপ উপহার দেন। রোমান মৃধা বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অনার্স চতুর্থ বর্ষের ছাত্র।

শিক্ষার্থী রোমান মৃধার সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, আমরা ৩ ভাই ৩ বোন। বাবা গোপালগঞ্জ শহরে রিক্সা চালাতেন। রিক্স চালিয়ে আমাদের বড় করেছেন এবং দিঘারকুল গ্রামে সাড়ে ৪ শতাংশ জমি কিনে ঘর তৈরী করেছিলেন। সেখানে আমাদের বসবাস। বিগত ৮বছর আগে বাবা মারা জান। ভাইদের মধ্যে আমি ছোট । বড় দুই সড়কে ফেরিকরে ইঁদুরসহ পোকামাকড় মারা ওষুধ বিক্রি করে সংসার চালায় এবং বিয়ে করে আলাদা থাকেন। মা অন্যের বাড়ি কাজ করে বোনদের বিয়ে দিয়েছেন আর আমাকে লেখাপড়া করিয়েছেন। আমি দিঘারকুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যখন লেখাপড়া করেছি তখন পড়া প্রতিবেশী ও সহপাঠিরা আমাকে ভিন্ন চোখে দেখতো এবং বেদের ছেলে স্কুলে যায় তাই নিয়ে হাসাহাসি করতো। হাই স্কুলে পড়েছি একই ইউনিয়নের শেখ মুজিব আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে। সেখানেও অবহেলা আর তুচ্ছতার শিকার হয়েছি। কিন্তু শিক্ষকরা আমাকে উৎসাহ দিয়েছেন। এই স্কুল থেকে  মানবিক বিভাগে জিপিএ ৪.১৭ পয়েন্ট পেয়ে এসএসসি পাশ করি। পরে ভর্তি হই গোপালগঞ্জ শহরের হাজী লাল মিয়া সিটি কলেজে। সেখানে মানবিকে ৪.৪৪ পয়েন্ট পেয়ে এইচএসসি পাশ করি। এখানে আমাকে বন্ধু বান্ধব বা শিক্ষকরা কোন তুচ্ছতা করেনি। প্রাথমিক থেকে এইচএসসি পাশ পর্যন্ত লেখাপড়ার জন্য অর্থের অভাবে কোন প্রাইভেট পড়তে পারিনি। এসএসসি পাশ করার পর অন্যদের বাড়িতে গিয়ে টিউশনি করে লেখাপড়া চালিয়েছি। বাবা মারা যাওয়ার পর আমি আর মা দিশেহারা হয়ে পড়ি। তখন টিউশনি বাড়িয়ে দিয়ে সংসারের খরচের পাশাপাশি লেখাপড়া চালাতে থাকি। এখন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে অনার্স পড়ি ও টিউশনি করি।  মোরাল প্যারেন্টস নামে একটি সংগঠনের মাসিক পনেরশ টাকা সাহায্যে আমার লেখাপড়া চলছে। বাড়িতে মাকেও খাবার খরচ পাঠাই।  কিন্তু বর্তমান যুগে লেখাপড়ার সুবিধার জন্য কম্পিউটার বা ল্যাবটপ প্রয়োজন। ল্যাবটপ বা কম্পিউটার কিনতে যে অর্থের প্রয়োজন এই সংগতি আমার নেই। এমত অবস্থায় আমার মা গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক কাজী মাহবুবুল আলমের কাছে ছেলের লেখাপড়ার চালিয়ে যাওয়ার সুবিধার্থে একটি ল্যাবটপের আবেদন করেন। মায়ের আবেদনে সারা দিয়ে জেলা প্রশাসক স্যার আমাকে একটি ল্যাবটপ উপহার দিয়েছেন। ল্যাবটপটি পাওয়াতে আমার লেখাপড়ার প্রতি উৎসাহ আরো বেড়ে গেল। আমি জেলা প্রশাসক স্যারের প্রতি কৃতজ্ঞ।

তিনি আরো বলেন, আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের লেখাপড়া শেষ করে বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা হয়ে দেশ ও সমাজের অবহেলিত, নিপিড়িত মানুষের পাশে দাড়াতে চাই। তাহলেই আমার এই সংগ্রামী জীবনের সফলতা পাবে। আর আমি সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগষ্ঠীর উদ্দেশ্যে বলতে চাই নিজের ইচ্ছা থাকলে কোন বাধাই বাধা নয়। সফলতা আসবেই।

রোমান মৃধার বৃদ্ধা মা ফুলজান বেগম বলেন, আমরা বেদে সম্প্রদায়। আমাদের কাজ হচ্ছে ফেরিকরা। এর মধ্য থেকে আমার ছোটছেলে লেখাপড়ার করার ইচ্ছা প্রকাশ করায় কষ্ট হলেও তাকে নিষেধ করিনি। আমাদের সম্প্রদায়ের মানুষ বলতো লেখাপড়া করে কি হবে। আমি সেসব কথায় কান না দিয়ে শিক্ষকদের অনুরোধ করে লেখাপড়ার ব্যবস্থা করেছি। আজ আমার ভালো লাগে আমার ছেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। পড়ালেখা করতে ল্যাবটপ দরকার। আমাকে জানানোর পর আমি গোপালগঞ্জের ডিসি স্যারের কাছে একটা আবেদন করি। স্যার আমার কথা বিশ্বাস করে কথা দেন ল্যাবটপ দেয়ার। এখন একটা চাকরী হলে ওর ইচ্ছাটা পুরন হবে। আল্লাহ যেন রোমানের মুখের দিকে থাকায় সেই দোয়া করি। আর ডিসি স্যারকে ধন্যবাদ জানাই।

জেলা প্রশাসক কাজী মাহবুবুল আলম বলেন, আমি চেষ্টা করি সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে অগ্রসর করতে। এই ছেলেটির মা আমাকে বিষয়টি জানালে আমি রোমান মৃধার লেখারপড়ার সুবিধার্থে একটি ল্যাবটপ উপহার দিয়েছি। আরো যদি এই ধরনে কেউ থাকে আমি তাদের জন্যও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিব।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category

Advertise

Ads

Address

Office : Sheikh Fazlul Haque Moni Stadium (2nd floor), Gopalganj-8100 Mobile: 01712235167, Email: kalerkhabor24.com@gmail.com
© All rights reserved 2022

Design & Developed By: JM IT SOLUTION