কালরে খবরঃ
গোপালগঞ্জে শেষ হলো তিনদিন ব্যাপী জাতীয় পিঠা উৎসব। জেলা শিল্পকলার আয়োজনে ও জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় গোপালগঞ্জ শহরের পৌরপার্কে এই উৎসব চলে। পিঠা উৎসবে ১৬টি স্টল বসে। সেই সাথে প্রতিদিন সন্ধ্যায় ছিল মনোজ্ঞ সাংস্কৃতি অনুষ্ঠান। পিঠা দোকানীরা বাহারী রকমের পিঠার পসরা সাজিয়ে বসে। বিকাল থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত চলা উৎসব। শত শত মানুষ পিঠার সাধ গ্রহণ করতে ভিড় করে মেলাঙ্গণে। এই আয়োজনের মাধ্যমে নতুন প্রজন্ম বাংলার এই কৃষ্টি-কালচার সম্পর্কে জানতে পারবে বলে মনে করছেন আয়োজক কর্তৃপক্ষ।
বুধবার (৩১ জানুয়ারী) বিকালে গোপালগঞ্জ জেলা শহরের পৌরপার্ক চত্বরে এ পিঠা উৎসবের উদ্বোধন করেন গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক কাজী মাহবুবুল আলম। পরে তিনি বিভিন্ন পিঠার স্টল ঘুরে দেখেন ও গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য বিভিন্ন সাধের এবং রংয়ের পিঠার সাধ নেন। এসময় জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মাহবুব আলী খান, ডিডিএলাজি আজাহারুল ইসলাম,জেলা কালচারাল অফিসার ফারহান কবীর সিফাত সহ স্থানীয় বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেসতাকর্মী ও শিল্পীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া পিঠা উৎসব উপলক্ষে জেলা শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে স্থানীয় শিল্পীদের পরিবেশনায় অনুষ্ঠিত হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। আনুষ্ঠানে আগত অতিথিবৃন্দ এ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন। পিঠা উৎসব চলে শুক্রবার (২ ফেব্রুয়ারী) রাত ১০টা পর্যন্ত। সমাপনি অনুষ্ঠানে মেলায় আগত পিঠা স্টলের স্বত্বাধিকারীদের হাতে সনদপত্র তুলে দেন গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক( ডিডিএলজি) আজহারুল ইসলাম।
পিঠা উৎসব দেখতে আসা শহরের বটতলা রোডের বাসিন্দা স্কুল পড়–য়া ছাত্রী প্রত্যাশা মন্ডল বলেন, বাবা মা ও পিসিদের কাছে শুনেছি একসময় পিঠাই ছিল গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য। আত্মীয় স্বজন বাড়িতে এলে তাদেও পিঠঅ না খাইয়ে যেতে দিতনা। এখন ফাস্টফুডের যুগ। এই যুগে পিঠা মেলা। মেলায় এসে ভাপাপুলি,আন্দসা,খীরসা, পাটিসাপটা, চন্দ্রপুলি, নকশি পিঠা, লবঙ্গ লতিকা পিঠা, বিবিখানা,কামরাঙ্গ পিঠাসহ বিভিন্ন ধরনের পিঠার নাম জানতে ও দেখতে পেলাম। উৎসবের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের পিঠার সাধ ও নিলাম। সব মিলে আমার খুব ভালে লেগেছে।
গোপালগঞ্জ শেখ হাসিনা স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ শাহানাজ রেজা এ্যানী বলেন, বাঙ্গালীদের বারো মাসে তের পার্বণ। ষড়ঋতুর এই বাংলাদেশে যখন পার্বণগুলো হয় তখন আমাদের সভাবগত বৈশিষ্টগুলো ফুটে তোলে। আগে পৌষ ও মাঘ মাসে ঘরে ঘরে পিঠা হতো। এখন তা কমে এসছে। সেটা বিবেচনা করে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি পিঠা উৎসব ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। এই জন্য শিল্পকলা কর্তৃপক্ষকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।
গোপালগঞ্জ শিল্পকলা একাডেমির কালচারাল অফিসার ফারহান কবীর সিফাত বলেন, পিঠা বাংলার ঐতিহ্যবাহী একটা বিষয়। সেই প্রাচীনকাল থেকে চলে আসছে আমাদের নকশি পিঠা। এটা আমাদের ঐতিহ্যের অংশ। শিল্পকলা একাডেমির কাজ বাংলার পুরানো ঐতিহ্যকে লালন করে প্রবাহমান ধারার সঙ্গে যুক্ত করা, সময়ের সাথে নতুন প্রজন্মের কাছে পৌছে দেয়াই হলো আমাদের লক্ষ্য। এই উদ্দেশ্যে ৬৪টি জেলার সকল উপজেলায় একযোগে পিঠা ও সাংস্কৃতিক উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। আশাকরি এই অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে দেশ শিল্প সাংস্কৃতিতে আরো একধাপ এগিয়ে যাবে।
জেলা প্রশাসক কাজী মাহবুবুল আলম বলেন, আমাদের গ্রামীন সাংস্কৃতির বিভিন্ন উপকরনের মধ্যে পিঠা একটি। বর্তমানে বিজাতীয় সাংস্কৃতি বা আগ্রাশন থেকে বাংলার ঐতিহ্যকে রক্ষা করতে এই ধরনের কর্মসূচী হাতে নেয়া হয়েছে। আর নতুন প্রজন্মের কাছে বাংলার ঐতিহ্য তুলে ধরতে শিল্পকলা একাডেমি এই উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। আশা করবো নতুন প্রজন্ম এই উৎসবের মাধ্যমে বাংলার কৃষ্টি-কালচার সম্পর্কে জানতে পারবে।
Design & Developed By: JM IT SOLUTION
Leave a Reply