কালের খবরঃ
দীর্ঘ দিনের ভোট ব্যাংক খ্যাত গোপালগঞ্জ ১ আসন । এবার নৌকা প্রতীকের জয় লাভ কিছুটা চ্যালেঞ্জের মুখে । চড়াই উতরাই পেরিয়ে নৌকা মার্কার জয়লাভ হবে। তবে বিএনপি ভোটে না আসায় আওয়ামী লীগ থেকে যারা স্বতন্ত্র প্রার্থীর মনোনয়ন সংগ্রহ করেছিলেন তারা দু’একজন বাদে সকলেই নৌকার বিপক্ষে নির্বাচনী ক্যাম্পেইন এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীকে সার্বিক সহযোগিতা করায় এবং মুকসুদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের হাতেগোনা দু’একজন নেতার বির্তকিত কার্যক্রমের কারণে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মুহাম্মদ ফারুক খান এমপির পক্ষে এবছর ফাঁকা মাঠে গোল দেওয়া দুস্কর হয়ে পড়েছে। দলের প্রার্থীকে জয়লাভের জন্য দু’উপজেলা ( মুকসুদপুর – কাশিয়ানি) আওয়ামী লীগ, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ, সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ গাঁট বেধে মাঠে নেমেছেন।
অপরদিকে এবারের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশী কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক উপ কমিটির সাবেক সদস্য, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করে স্বতন্ত্রপ্রার্থী হিসেবে ঈগল প্রতীকে নির্বাচন করছেন মোঃ কাবির মিয়া। এজন্য গোপালগঞ্জের ৩ টি আসনের মধ্যে গোপালগঞ্জ ১ ( সংসদীয় ২১৫) আসনে নির্বাচনী মাঠ বেশ সরগরম।
১৯৯৬ সাল থেকে ২০১৮ পর্যন্ত সকল জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, মুহাম্মদ ফারুক খান পক্ষে ফলাফল দেশের মধ্যে ঈর্শানীত। এবং সেই কারণে এবারও দলীয় মনোনয়ন বোর্ডের সিদ্ধান্তে ৬ষ্ঠ বারের মত ধারাবাহিকভাবে দল তাঁকে মনোনয়ন দিয়েছেন।
১৯৯৬ সালে অনুষ্ঠিত ৭ম সংসদ নির্বাচনে গোপালগঞ্জ-১ আসনে মোট ভোটার ছিল ১ লাখ ৮৭ হাজার ৩ শ ৫০। ওই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী জামায়াতে ইসলামী’দাড়িপাল্লা প্রতীকে ৫ হাজার ২শ ৩৬ ভোট পেয়েছিলেন। অপরদিকে নৌকা প্রতীকে মুহাম্মদ ফারুক খান ১ লাখ ১৯ হাজার ৫শ ৩৬ ভোটে প্রথম জয়লাভ করেন। ওই সময় ভোটের ব্যবধান ছিল ১ লাখ ১৪ হাজার ৩শ ভোট।
২০০১ সালে অনুষ্ঠিত ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মুহাম্মদ ফারুক খান নৌকা মার্কায় পেয়েছিলেন ১ লাখ ৪৫ হাজার ৩শ ৯১ ভোট। অপরদিকে ওই সময়ের হেভিওয়েট বিএনপি প্রার্থী মহব্বত জান চৌধুরী পেয়েছিলেন ২০ হাজার ১শ ৩৬ ভোট।
২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত ৯ম সংসদ নির্বাচনে ২ লাখ ৪২ হাজার ১শ ৫২ মোট ভোটার এর মধ্যে মুহাম্মদ ফারুক খান পেয়েছিলেন ১ লাখ ৮৩ হাজার ২শ ৩৭ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি বিএনপি’র সেলিমুজ্জামান মোল্যা পেয়েছিলেন ৯ হাজার ৯শ ৮৬ ভোট।
২০১৪ সালে ১০ম সংসদ নির্বাচনে ২ লাখ ৭৬ হাজার ৫শ ৭৬ ভোটের মধ্যে মুহাম্মদ ফারুক খান আওয়ামী লীগ প্রার্থী হয়ে নৌকা প্রতীকে ২ লাখ ৪০ হাজার ৩শ ৪ ভোট পেয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি জাতীয় পার্টির দীপা মজুমদার পেয়েছিলেন ৫ হাজার ৮শ ৬৩ ভোট।
সর্বশেষ ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন মোট ৩ লাখ ২১ হাজার ১শ ৩০ ভোট, আর ছিল ৪ প্রার্থী। সেখানে নৌকা মার্কায় ভোট পেয়েছিল ৩ লাখ ৩ হাজার ১ শ ৬২ আর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ প্রার্থী (হাতপাখা) মোহাম্মাদ মিজানুর রহমান পেয়েছিলেন ৭শ ২ ভোট।
এবারে মুকসুদপুর ও কাশিয়ানী এলাকায় ১ পৌরসভা ২৩ ইউনিয়নে মোট ভোটকেন্দ্র ১ শ ৩৮টি। মোট ৩ লাখ ৭৪ হাজার ৫শ ৯০ ভোটার রয়েছেন। দু উপজেলার নেতা কর্মীদের দাবি এবারও অতীতের ইতিহাসের সাথে মিল রেখে ভোট প্রাপ্তিতে নতুন ইতিহাস গড়বেন।
এজন্য তার নির্বাচনী এলাকার তৃণমুল পর্যায়ের সকল নেতাকর্মীরা ভোটের মাঠে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন। উন্নয়নের ফিরিস্তি প্রচার করছেন, নিজেদের দোষত্রুটি থাকলে তার জন্য অনুতপ্ত হওয়াসহ ক্ষমা প্রার্থনা করছেন।
অপরদিকে ভোট ব্যাংক থাকলেও দীর্ঘ ১৫ বছর দল ক্ষমতা থাকায় কিছু কিছু নেতা কর্মী আচার আচরণ জনমতের বিপক্ষে গিয়েছে। দলের সাংগঠনিক সম্পাদক থেকে পদোন্নতি পেয়ে যুগ্ম সাধারন সম্পাদক হওয়া নেতা সর্বদা ফারুক খানের ভাই পরিচয় দিয়ে প্রশাসন যন্ত্রকে ব্যবহারের চেষ্টা চালিয়েছেন, তাতে ব্যর্থ হয়ে এলাকায় দাঙ্গা হামলা, বাড়ীঘর লুটপাট, পুলিশের কাছ থেকে আসামী ছিনতাইসহ বেশ কয়েটি মামলার আসামী, এলাকায় মেহমান গেলেও রক্তাক্তহয়ে জীবন নিয়ে ফিরেছেন। মাদক ব্যবসায়িদের সমর্থন দেওয়াসহ নানাবিধ কারনে নির্বাচনের সময়ে ফারুক খানের পক্ষের সাধারন মানুষ বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে বালে জানান এলাকাবাসী।
কয়েকটি এলাকায় ক্ষেত্র বিশেষ উপজেলা কমিটি সভাপতি, ফারুক খান কন্যা কানতারা খান এবং উপজেলা ক্রীড়া পরিষদের সম্পাদক মাহমুদ খান কুটি কয়েকটি কার্যক্রমে বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থীর পাল্লা ভারী হয়েছে বলে জানান এক ত্যাগী নেতা।
অপরদিকে গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলের মনোনয়ন না পেয়ে কিছু লোক দল থেকে সরে দাড়িয়েছেন। আবার যারা নৌকার বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে কয়েকটি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ প্রার্থী পরাজিত হয়েছে, বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে অল্প ভোটের ব্যবধানে পরাজয় বরণকারি স্বতন্ত্র প্রার্থীরা এবার সম্মিলিত ভাবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কাবির মিয়ার পক্ষে সর্বশক্তি নিয়োগ করে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
কেন্দ্রীয় যুবলীগের শিক্ষা প্রশিক্ষণ ও পাঠাগার সম্পাদক ব্যারিষ্টার আলী আসিফ খান রাজীব। তিনিও মনোয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। যুবলীগের কেন্দ্রীয় চেয়ারম্যান শেখ ফজলে সামস পরশের নির্দেশে যুবলীগের সাধারন সম্পাদক মাইনুল হোসেন নিখিল স্বাক্ষরিত চিঠিতে নৌকা প্রতীকের নির্বাচন করার নির্দেশনা দিলেও তিনি এলাকায় আসে না। তার চাচাকে নৌকা বিরোধী সভা সমাবেশে অংশ নিতে দেখা যাচ্ছে। এভাবে সংরক্ষিত আসনের মহিলা এমপি নার্গিস রহমান এলাকায় নৌকার প্রচারণায় নেই । তার আপন ভাই নৌকা বিরোধী কাবির মিয়ার পক্ষে অফিস খুলে তার নিকটজনদের নিয়ে নৌকার বিরুদ্ধে ক্যাম্পেইন করে যাচ্ছেন। ননীক্ষির ইউনিয়নের নৌকার প্রতীকে বিরেুদ্ধে অল্পের জন্য পরাজয় বরণ করেছেন মজিবুর রহমান শেখ। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থীর জন্য প্রতিদিন ১০ ডেকচি খাবার তৈরী করে স্বতন্ত্র প্রার্থী কাবির মিয়ার প্রক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন। এরূপ ভাবে কাশিয়ানি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানও ছিলেন গোপালগঞ্জ ১ আসেনের নৌকা প্রতীক। তিনি না পেয়ে তার এলাকারা আংশিক (৭ ইউনিয়নে) স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মীদের সমর্থন দেওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে।
এছাড়া এবারের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শক্তিশালী মনোনয়ন প্রার্থী ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সদস্য ও অগ্রণী ব্যাংকের পরিচালক খন্দকার মঞ্জুরুল হক লাবলু। গত ১০ বছর নানাবিধ ক্যাম্পেইন করেছেন তিনি। তার ক্যাম্পেইনে প্রধান সমন্বয়ক ছিলেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কাবির মিয়া। তিনি মনোনয়ন না পেয়ে কাবির মিয়াকে সমর্থন দিয়েছেন। শোনা যাচ্ছে তিনি কাবির মিয়া নির্বাচনে বিপুল পরিমান অর্থের যোগানদাতা। কাবির মিয়ার পক্ষে অন্যান্য মনোয়নপ্রার্থীরাও সমর্থন দিয়েছেন। এজন্য সব স্তরে কাবির মিয়ার সাংগঠনিক কর্মকান্ড না থাকলেও বিরোধীরা এক হয়েছে। আর এ কারণে ফাঁকা মাঠেও চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হচ্ছে। এজন্য এবার এই জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাঠে আওয়ামী লীগের ভোট ব্যাংক আরো কমে গেছে।
এ ব্যাপারে মুহাম্মদ ফারুক খান বলেন, যেহেতু ইতোপূর্বে একাধিকবার নির্বাচন করেছি। আওয়ামী লীগের পক্ষে মাঠে ময়দানে নির্বাচনী প্রচারণা করেছি। আমি শুধুমাত্র নির্বাচনকে ঘিরে নয় সব সময় জনগণের পাশে আছি এবং থাকব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অস্প্রদায়িক বাংলাদেশের যে স্বপ্ন দেখেন। আমি সে স্বপ্ন বাস্তবায়নে নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছি। আমার দায়িত্ব নির্বাচনী এলাকার মানুষের জীবনযাত্রার মানউন্নয়ন করা। কতটা করতে পেরেছি সেটা দৃশ্যমান। উন্নয়ন যেহেতু চলমান সেটা চলতেই থাকবে। তিনি আরো বলেন, শিক্ষা ও যোগাযোগ ব্যবস্থায় উন্নয়নসহ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্ন বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করছি। তিনি অস্প্রাদায়িক চেতনায় জাতি, ধর্ম নির্বিশেষে দোয়া এবং আর্শীবাদ ও ভোট প্রার্থনা করেছেন।
অপর দিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী কাবির মিয়া বলেন, আমাদের পরিবারই ফারুক খানকে মুকসুদপুর কাশিয়ানি এলাকায় রাজনীতিতে এনেছেন। গত ২৮ বছর তিনি একছত্র রাজনীতি করে আমাদের পরিবারকে আওয়ামী রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছেন। রাজাকার ও বিএনপি নেতার সন্তানদের আওয়ামী রাজনীতিতে পুণঃবাসন করায় তৃণমুলের জনতা তাঁর উপর ক্ষিপ্ত হয়েছে। এই এলাকার মানুষ নৌকার পক্ষে তবে তারা মাঝি পাল্টানোর জন্য আমাকেই ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন।
এই আসনে অন্য যাঁরা প্রার্থী মাঠে রয়েছেন তারা হলেন জাতীয় পার্টি মনোনিত শহিদুল ইসলাম (লাঙ্গল) তৃণমুল বিএনপি মনোনিত জাহিদুল ইসলাম (সোনালী আশ), এনপিপির শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ বাবুল (আম) ।
তাদের প্রচার প্রচারণা কয়েকটি পোষ্টার ব্যানারের মধেই সীমাবদ্ধ। রাজনীতির মাঠে রয়েছে আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্র প্রার্থী।
Design & Developed By: JM IT SOLUTION
Leave a Reply