কালের খবরঃ
সানজানা রহমান। জন্ম ও বেড়ে ওঠা যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার নাভারন গ্রামে। বাবা মোঃ হাবিবুর রহমান। নাভারনে আকিজ বিড়ি ফ্যাক্টরিতে হিসাবরক্ষকের কাজে নিয়োজিত । সানজানা গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে এগ্রিকালচার বিভাগের স্নাতক চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি গোপালগঞ্জ শহরের মডেল স্কুল রোর্ডের একটি ভাড়া বাড়ির মেসে থাকেন। বর্তমানে সানজানা একজন উদ্যোক্তাও।
নিম্ম মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান সানজানা। ভাইবোনের মধ্যে সানজানা বড়। ছোট ভাই নাফিজ ইকবাল নাহিদ এলাকায় লেখাপড়া করে। মা গৃহিনী । পড়ালেখার অবসরে ছোটবেলা থেকে মা মোহসিনার কাছ থেকে শিখেছেন পোষক তৈরীর জন্য কাটিং ও সেলাই। তাই করোনাকালে বাবার আয় কমে যাওয়ায় বেকায়দায় পড়েন তিনি। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় লেখাপড়ার পাশাপাশি সেই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে শুরু করেন অনলাইনে নিজের তৈরী পোষাক ব্যবসা। কোন পুঁজি ছাড়াই তিনি এই ব্যবসায় পা বাড়ান। তার অনলাই ভিত্তিক প্লাটফরম ফেসবুক পেইজ ও গ্রুপ ‘চিত্রন’-এর মাধ্যমে বিভিন্ন অনলাইন পেইজ থেকে পোষাকের ছবি আপলোড করতে থাকেন। সেই ছবি দেখে ক্রেতারা অর্ডার দেয়া শুরু করেন। গ্রাহকদের কাছ থেকে অর্ডারের সময় অর্ধেক মূল্য অগ্রীম নিয়ে তিনি পোষাক তৈরীর অর্ডার কনফার্ম করেন এবং সময়মতো সরবরাহ করে থাকেন। এভাবেই জমে উঠে তার ব্যবসা।
ব্যবসা ভাবনাঃ
সানজানা রহমান তার ব্যবসা ভাবনার কথা বলতে গিয়ে বলেন,ছোটবেলা থেকে আমার ছবি আঁকার উপর আগ্রহ ছিল। বিভিন্ন প্রতিযোগীতায় ছবি এঁকে পুরস্কারও পেয়েছি। বড় হওয়ার পর জল রং ও ফেব্রিক্স রং এর মাধ্যমে কাগজে ও কাপড়ের ওয়ালমেট তৈরী করেছি। সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে কাপড়ের উপর নিজের ও পরিবারের জন্য পোষাক তৈরী করি । করোনাকালিন বাবার আয় কমে যাওয়ায় মাথায় আসলো হ্যান্ড পেইন্টের মাধ্যমে পোষাক তৈরী কারে অনলাইন ব্যাবসা করার। কিন্তু হাতে কোন টাকা নেই। বাবার কাছেও টাকা চাইতে বা ব্যবসার কথা জানাতে সাহস পাচ্ছিলাম না। পরে সাহসকরে ‘চিত্রন’ নামে অনলাইন গ্রুপ পেইজ করলাম। সেখানে অন্য অনলাইন ব্যবসায়ীদের পেইজ থেকে হ্যান্ড পেইন্টের পোষাকের ছবি ডাউনলোড করে নিজের ‘চিত্রন’ নামে ফেসবুক পেইজ ও গ্রুপে ছবি আপ করতে থাকি। শুরুর দ্বিতীয় দিনে একই ডিজাইন ও রং এর একটি করে শাড়ী, পাঞ্জাবী ও বাচ্চার পোষাকের অর্ডার পাই। তিনটির মূল্য ২হাজার ৭০০টাকা। তাদের কাছ থেকে পনেরশ টাকা অগ্রীম নিয়ে একসপ্তাহ সময় নিয়ে কাজ শুরু করি। সময়মতো কাজ শেষ করে বাকী টাকা পরিশোধ করে পোষাক নেয়ার অনুরোধ করি। গ্রাহক বাকী টাকা পরিশোধ করলে কুরিয়ারের মাধ্যমে পোষকগুলো পাঠিয়ে দিই। প্রথম অর্ডারটি সঠিক ভাবে দিতে পেরে নিজেরই খুব ভালো লেগেছিল। লাভ হয়েছিল প্রায় এক হাজার টাকা। তখন থেকে শুরু হলো পুঁজি। এরপর থেকে প্রতিদিন একটা দুইটা করে অর্ডার আসা শুরু হলো। এখন কোন কোন প্রতিদিন ৫-৬টা অর্ডারও হয়ে থাকে। এছাড়া ঈদুল ফিতর,ঈদুল আযহায়, পহেলা বৈশাখে বেশী অর্ডার হয়ে থাকে। এসব অর্ডারের মধ্যে মেয়েদের জন্য শাড়ী, কুর্তি, অনপিচ, টুপিচ,থ্রিপিচ, ফ্রক, কামিজ ও ছেলেদের জন্য পাঞ্জাবী ও ফতুয়া তৈরী করি। এসব পোষাক যথাসময়ে সরবরাহ করেছি। এখনও আমি অর্ধেক পেমেন্টের মাধ্যমে অর্ডার গ্রহণ করে থাকি। বর্তমানে আমার ফেইজবুক গ্রুপে সদস্য সংখ্যা তিন সহস্রাধিক। এসব সদস্যদের কাছ থেকে অর্ডার আসে। আর কুরিয়ারের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন জায়গায় অর্ডার ডেলিভারি করে থাকি। আবার কেই সরাসরি এসে অর্ডার দেন ও নিয়ে যান। এভাবে চলছে আমার ই- কমার্স ব্যবসা। সবই করছি লেখা পড়ার ফাঁকে। বর্তমানে আমার যে আয় হচ্ছে তাতে লেখা পড়ার খরচের জন্য বাবার কাছ থেকে কোন টাকা আনা লাগছেনা। বরং বাবাকে মাঝে মধ্যে টাকা দিতে পারছি। সব খরচ বাদে এখন আমার কাছে বেশ পুঁজি হয়েছে।
তিনি আরো বলেন,মানুষ পোষাকের জগতে ব্যতিক্রম কিছু চায়। তাই ব্যতিক্রম পোষাক পেতে হলে হ্যান্ড পেইন্ট ডিজাইনের বিকল্প নেই। হ্যান্ড পেইন্টের চাহিদা খুব রয়েছে এ পর্যন্ত হাজারেরও উপরে পোষাক তৈরী ও বিক্রি করা হয়েছে।
ভবিষত ভাবনাঃ
লেখাপড়া শিখে সব শিক্ষার্থীই চায় ভালো একটা চাকরী করবে। আমিও সেটা চাই। তবে লেখাপড়ার পাশাপাশি আমার এই চিত্রনকে দেশের খ্যাতনামা একটি প্রতিষ্ঠানে রুপ দিতে চাই। যে প্রতিষ্ঠানে হাজার হাজার কর্মী থাকবে। দেশের মানুষ দেশে কাজ করে সাবলম্বী হবেন। বেকারত্ব দূর হবে। আগামীতে সেই চিন্তা মাথায় নিয়ে আমি পথ চলছি। তিনি আরো বলেন,যেহেতু আমি এগ্রিকালচার নিয়ে লেখাপড়া করছি। ভবিষতে দেশের যে কোন স্থানে একটি কৃষি ফার্ম গড়ে তোলার ইচ্ছা রয়েছে।
উদ্যোক্তা সৃষ্টিঃ
তিনি বলেন, আমার দেখাদেখি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠিরা অনেকেই আগ্রহী হয়েছেন অনলাইন ব্যবসা করতে। ছেলে মেয়ে মিলে অন্তঃত দশজনকে ব্যবসার আইডিয়া ও পরামর্শ দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে অনেকে ব্যবসা শুরুও করেছেন। তাই আমি বলবো সবাইকে উদ্যোক্তা হিসেবে এগিয়ে আসতে হবে। লেখাপড়া শিখে সুধু চাকরীর পিছনে না ছুটে উদ্যোক্তা হন। শিক্ষার্থীদের সবার উদ্দেশ্য হওয়া উচিৎ সবসময় নিজে কর্মী না হয়ে বরং কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র তৈরী করা। তাহলে দেশের জন্য মঙ্গল। আর শিক্ষার্থীরা যদি গতানুগতিকতার বাইরে গিয়ে উদ্ভাবনীমূলক কিছু চিন্তা করেন তাহলে সেটা সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ও দীর্ঘমেয়াদী টিকে থাকা সম্ভব হবে।
Design & Developed By: JM IT SOLUTION
Leave a Reply