সোমবার, ০৪ নভেম্বর ২০২৪, ০২:২২ অপরাহ্ন

নিরাপত্তার চোখ এড়িয়ে বিমানে চড়া শিশু জুনায়েদের লেখাপড়ার দ্বায়িত্ব নিলেন গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক

Reporter Name
  • Update Time : শনিবার, ৭ অক্টোবর, ২০২৩, ১১.৫৫ এএম
  • ১২৫ Time View

কালের খবর ডেক্সঃ

বিমান বন্দরের নিরাপত্তা রক্ষীদের চোখ ফাঁকি দিয়ে, ভিসা বা টিকিট ছাড়া উড়োজাহাজে চড়া সেই শিশু জুনায়েদের লেখাপড়াসহ সকল দ্বায়িত্ব নিলেন গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক কাজী মাহবুবুল আলম। তিনি জুনায়েদের লেখা-পড়া সহ সব কিছুর ব্যবস্থা করে দেবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আর এ ব্যাপারে সমাজসেবা অফিসকে তিনি নির্দেশনাও দিয়েছেন। নির্দেশনা অনুযায়ী দুই একদিনের মধ্যে জুনায়েদের নতুন ঠিকানা হতে যাচ্ছে গোপালগঞ্জ শিশু পরিবারে। জেলা প্রশাসকের গনশুনানীতে বুধবার (৪ অক্টোবর) জুনায়েদের বাবা ইমরান মোল্লার সাথে জেলা প্রশাসকের অফিস কক্ষে এসে তার ভবিষ্যত স্বপ্ন পাইলট হবার কথা ব্যক্ত করে জুনায়েদ। সেই সাথে মাদ্রাসা শিক্ষার লেখাপড়া ছেড়ে স্কুল কলেজের লেখাপড়ার আগ্রহ  প্রকাশ করে সে। জেলা প্রশাসক তার ইচ্ছার কথা মনোযোগ দিয়ে শোনেন। আর সে অনুযায়ী জুনায়েদের বাবার অনুমতি সাপেক্ষে তাকে গোপালগঞ্জ সরকারি শিশু পরিবারে ভর্তি হয়ে লেখা-পড়া করার প্রস্তাব দেন। এতে জুনায়েদ ও তার বাবা রাজী হন। জেলা প্রশাসক এদিন বাবা-ছেলেকে উন্নতমানের খাবার খাওয়ান এবং জুনায়েদকে ব্যাডমিন্টন খেলার জন্য ২টি ব্যাড উপহার দেন।

জুনায়েদ জানিয়েছে, আমি বাড়ি থেকে বেরিয়ে ঢাকা যাই। যাত্রাবাড়ি বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে নেমে দেখি এয়ারপোর্ট যাওয়ার বাস। সবাইকে ডাকছে। আমি উঠে বসি চলে যাই এয়াপোর্টের সামনে। সেখানে গিয়ে প্লেন উড়ছে। আমারও শখ হলো প্লেনে ওঠার। মানুষের সাথে সাথে আমিও ভিতরে ঢুকে গিয়ে সিটে বসে পড়ি। পরে আমাকে নামিয়ে দেয়। পুলিশ আমাকে থানায় নিয়ে বসিয়ে রাখে। পরে বাবাকে খবর দিয়ে আমাকে বাড়ি পাঠায়।সেসময় আমি যে কাজটি করেছি সেটা অন্যায় বা ভুল হয়েছে। তবে আমার ইচ্ছা লেখাপড়া করে আমি একদিন প্লেন চালাবো। তাই আমি ভালো লেখাপড়া করতে চাই। ডিসি স্যার আমার লেখাপড়ার দায়িত্ব নিয়েছেন স্যারকে আমি ধন্যবাদ জানাই।

জুনায়েদের বাবা ইমরান মোল্লা বলেন,জেলা প্রশাসক স্যার আমার ছেলেকে সরকারি ভাবে লেখাপড়াসহ সকল দায় দায়িত্ব নেয়ার প্রস্তাব দেন। আমি এবং আমার ছেলে জুনায়েদ তাতে রাজী হয়েছি। কারন জুনায়েদ বড় হয়ে পাইলট হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। পাইলট হওয়ার জন্য যে লেখাপড়া  দরকার সেটার জন্য অর্থও প্রয়োজন। এই সামর্থ আমার নেই । তাই সরকারের ইচ্ছায় আমি মত দিয়েছি। আগামী ১/২ দিনের মধ্যে জুনায়েদকে শিশু পরিবারে ভর্তি করে দিব।

তিনি আরো বলেন,জেলা প্রশাসকের এ ধরনের উদ্যোগ নেয়ায় আমি খুশি। কোথায় থাকবে সে স্থানও দেখেছি। সে এখন থেকে ঠিকমত লেখা-পড়া করবে বলে আমাকে জানিয়েছে। বড় হয়ে সে পাইলট হওয়ার ইচ্ছা পোষণও করেছে। বাড়ি থেকে আর পালানোর চেষ্টা করবেনা বলেও জানিয়েছে।

গোপালগঞ্জ সমাজ সেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক হারুণ অর রশীদ বলেন, জেলা প্রশাসক স্যার আমাকে সেই প্লেনে ওঠা শিশুটিকে শিশু পরিবারে ভর্তি করে লেখাপড়ার জন্য নির্দেশণা দিয়েছেন। সে অনুযায়ী আমি তাকে ভর্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। জুনায়েদ এক দুই দিনের মধ্যে আসবে বলে আমাকে নিশ্চিত করেছে। আশাকরি এখানে থেকে লেখাপড়া করলে জুনায়েদ একদিন তার অভিষ্ট লক্ষে পৌছাবে।

জুনায়েদের ইচ্ছা পুরনে লেখাপড়া সহ সব ধরনের সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করার কথা জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক কাজী মাহবুবুল আলম। তিনি বলেন, বিগত ১১ সেপ্টেম্বর রাতে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তাকর্মীদের চোখ ফাঁকি দিয়ে বিদেশগামী বিমানে উঠে পড়ে জুনায়েদ। এ নিয়ে সারাদেশে তোলপাড় ও আলোড়ন সৃষ্টি হয়। তাকে এবং তার বাবাকে জেলা প্রশাসকের গণশুনানিতে ডেকে এনে জুনায়েদের মনের ইচ্ছা শোনা হয়। তাতে সে মাদ্রাস বোর্ডের লেখাপড়ার পরিবর্তে সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থায় লেখাপড়া করার আগ্রহ প্রকাশ করে। স্কুল কলেজে লেখাপড়া  শিখে পাইলট হওয়ারও ইচ্ছা জানিয়েছে। আমি তার ইচ্ছার গুরুত্ব দিয়ে ভালো লেখাপড়ার জন্য গোপালগঞ্জ শিশু পরিবারে রাখার প্রস্তাব দিলে সে এবং তার বাবা ইমরান মোল্লা সম্মতি দেন। জুনায়েদ যদি সরকারি  শিশু পরিবারে থেকে লেখাপড়া করে তাহলে সরকার তার সকল ধরনের দায় দায়িত্ব বা সুযোগ সুবিধা দিবে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category

Advertise

Ads

Address

Office : Sheikh Fazlul Haque Moni Stadium (2nd floor), Gopalganj-8100 Mobile: 01712235167, Email: kalerkhabor24.com@gmail.com
© All rights reserved 2022

Design & Developed By: JM IT SOLUTION