মঙ্গলবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৫, ০১:১০ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
কোটালীপাড়ায় যুবলীগ নেতা পদত্যাগ করে যুবদলে যোগদান গোবিপ্রবিতে ২৭২ অস্বচ্ছল শিক্ষার্থী পেল মেধা বৃত্তি গোপালগঞ্জে তুলার কারখানার হলারে গামছা পেঁচিয়ে ফাঁস লেগে শ্রমিকের মৃত্যু নিখোঁজের ২১ দিন পর গোপালগঞ্জে ব্যবসায়ীর গলিত মরদেহ উদ্ধার, গ্রেপ্তার-১ গোপালগঞ্জ শহরের একটি হোটেলের কক্ষ থেকে এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার প্রান্তিক জনগণের উন্নয়ন ও পরিবেশ সচেতনতায় কর্মশালা, প্রকাশনা উৎসব এবং তথ্যচিত্র প্রদর্শনী কোটালীপাড়ায় বিদ্যুৎ স্পৃষ্টে কৃষকের মৃত্যু। গোপালগঞ্জে এমএস মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যানের পিতার অষ্টম মৃত্যু বার্ষিকী পালিত গোবিপ্রবিতে প্রয়াত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্মৃতিতে স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত গোপালগঞ্জ-২ আসনে বিএনপির প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিলের দাবী করেছে বঞ্চিত পাঁচ প্রার্থী

গোপালগঞ্জে ডেঙ্গুতে একজনের মৃত্যু। হুহু করে বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী

Reporter Name
  • Update Time : রবিবার, ১৬ জুলাই, ২০২৩, ৭.০৪ পিএম
  • ৪৪৬ Time View

পংকজ মন্ডলঃ

গোপালগঞ্জে ডেঙ্গুতে একজনের মৃত্যু হয়েছে। গত শনিবার বিকাল সোয়া ৪টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। এছাড়া প্রতিদিনই বাড়ছে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। জেলা ও উপজেলা সদরসহ গ্রামের মানুষ আক্রান্ত হয়ে গোপালগঞ্জ আড়াইশ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালসহ উপজেলা হাসপাতালে আসছেন চিকিৎসা নিতে। কিন্তু ডেঙ্গু বিস্তার রোধে প্রশাসন বা জনপ্রতিনিধিদের কোন কার্যক্রম না থাকায় ক্ষোভ জানিয়েছে জেলাবাসীর। এদিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলেছেন প্রতিদিনই ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এভাবে বাড়তে থাকলে বিছানা  সংকটে পড়তে হবে।

গোপালগঞ্জ শহরের নিচুপাড়া, পাচুরিয়া, নবীনবাগ, মিয়াপড়া, কুয়াডাঙ্গা, সিকদারপড়াসহ বিভিন্ন স্থান ও গোপালগঞ্জ আড়াইশ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল চত্বর সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, জেলা শহরের বিভিন্ন এলাকায় সড়কে  ও সড়কের পাশে জমে আছে পানি। অপরিষ্কার অবস্থায় ড্রেন, বাসা-বাড়ি ও রাস্তাঘাটে ডাবের খোসা ও ফুলের টপে জমে থাকছে পানি । যা থেকে বংশবিস্তার করছে এডিস মশাসহ বিভিন্ন জাতের মশা। এসব মশা নিধনে স্প্রে বা ওষুধ না ছিটানোর কারনে শহর বা গ্রামের ডোবা নালায় জমে থাকা পানি থেকে মশার বংশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই গোপালগঞ্জে প্রতিদিনই ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। শুধু শহরে নয় আক্রান্ত হচ্ছে গ্রামের মানুষও। অথচ ডেঙ্গু প্রতিরোধে প্রশাসন কিংবা পৌরসভা বা ইউনিয়ন কর্তৃপক্ষের   থেকে দৃশ্যমান কোন কার্যক্রম দেখা যায়নি।এ কারনে মানুষের মধ্যে আতংক দেখা দিয়েছে।

এদিকে স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, চলতি বর্ষা মৌসুমের জুন থেকে (জুলাই ১৬ ) রবিবার পর্যন্ত ১৭৬ জন রোগী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে। জুন মাসে রোগী ছিলো ৭০ জন। আর জুলাই মাসের ১৬ তারিখ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ১০৬ জন। এখন জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু  রোগী ভর্তি আছে ৪৩ জন। রোগীর সংখ্যা প্রতিদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর মধ্যে গোপালগঞ্জ আড়াইশ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ২০ জন, টুঙ্গিপাড়া হাসপাতালে ৩জন,কোটালীপাড়া হাসপাতালে ২জন, মুকসুদপুর হাসপাতালে ১৪জন ও কাশিয়ানী হাসপাতালে ৪জন রোগী ভর্তি আছে। ১৩২জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে। গত শনিবার গোপালগঞ্জের পাশ্ববর্তী বাগেরহাট জেলার আস্তাইল গ্রামের গাউজ (৫০) নামে এক ব্যক্তি গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাপসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। এদের মধ্যে অধিকাংশ রোগী ঢাকাসহ বিভিন্ন বড় শহর থেকে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে গোপালগঞ্জ জেলা ও উপজেলা হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছে। এরমধ্যে শিশু, নারীসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ রয়েছেন।

গোপালগঞ্জ আড়াইশ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি রোগী বাগেরহাট জেলার মোল্লাহাট উপজেলার চরআস্তাইল গ্রামের মুন্নু খার ছেলে মোঃ সুজন খা। তিনি পেশায় একজন পাইলিং মিস্ত্রি। সুজন খা বলেন গোপালগঞ্জ পুলিশ লাইনস এলাকায় পাইলিং এর কাজ করার সময় আমার জ্বর হয়। জ্বর নিয়ে বাড়ি যাই। তিন চার হয় জ্বর কমে না। পরে আমি গোপালগঞ্জ হাসপাতালে ভর্তি হয়ে ডেঙ্গু পরীক্ষা করি। পরীক্ষায় পজেটিভ আসে।

কাশিয়ানী উপজেলার রামদিয়া গ্রামের বাসিন্দা গৃহবধু আসমা বেগম । তিনি বলেন আমি বাড়িতে থাকি বাড়ি থেকেই আমার ডেঙ্গু হয়েছে। ডেঙ্গু (এডিস) মশা গ্রামেও আছে। তা না হলে আমার ডেঙ্গু হবে কেন। আমিতো কোন শহরে যাইনি।

গোপালগঞ্জ আড়াইশ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে আরো কথা হয়  বরিশালের উজিরপুর উপজেলার সাতলা গ্রামের  আব্দুল জলিল ফকিরের ছেলে অশিকুল ফকিরের সাথে। তিনি বলেন ঈদের পর ঢাকা যাই। ঢাকা   একটি রেষ্টুরেন্টে কাজ করি।  সেখান থেকে জ্বর হয়। গোপালগঞ্জে আত্মীয় থাকায় এখানে এসে ভর্তি হয়েছি। গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার গিমাডাঙ্গা গ্রামের নূর মিয়া শেখের ছেলে মোঃ জিহাদ  মিয়া শেখ। তিনি বলেন বাড়ি বসেই জ্বর হয়। টুঙ্গিপাড়া হাসপাতালে তিনদিন  চিকিৎসা করে। ভালো না হওয়ায় গোপালগঞ্জে ভর্তি হয়েছে।

ঢাকা মিরপুরে কুঠির শিল্পের কাজ করেন গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার ডুমদিয়া গ্রামের মোঃ আলমগীর খানের দুই ছেলে মোঃ শিয়াম খান ও মোঃ মেহেদী হাসান খান।  দুই ভাইয়েরই  ৬দিন জ্বর । তারা ঢাকা থেকে জ্বর নিয়ে বাড়িতে আসেন। এসে গোপালগঞ্জ হাসপাতালে ভর্তি হন।

গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার করপাড়া ইউনিয়নের বনগ্রামের বাসিন্দা এস এম নজরুল ইসলাম বলেন,ডেঙ্গু  প্রতিরোধে গোপালগঞ্জে তেমন কোন কার্যক্রম চোখে পড়েনি। আমরা যারা শহর বা গ্রামে বসবাস করছি, প্রতিটি মানুষের ভেতরে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ডেঙ্গু প্রতিরোধে সব ড্রেন পরিস্কার করা ও পর্যাপ্ত মশার ওষুধ ছিটানো দরকার।

গোপালগঞ্জ শহরের নবীনবাগ এলাকার বাসিন্দামোঃ ইলিয়াস শেখ বলেন,হাসপাতাল এলাকায় নোংরা পরিবেশ। এখানে মাসের পর মাস ময়লা আবর্জনা ও পায়খানার টেংকির ময়লা উপচে সয়লাভ থাকে। এখন থেকে প্রচুর মশা মাছির জন্ম হয়। সব মিলে একটা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। এগুলো পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করা খুবাই জরুরী।

শহরের মিয়াপাড়া রোডের বাসিন্দা মোহসিন উদ্দিন সিকদার বলেন, সারা দেশের মত গোপালগঞ্জেও ডেঙ্গু রোগ বৃদ্ধি পেয়েছে। মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। তারপরও পৌর কর্তৃপক্ষ বা প্রশাসেন কোন উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্শণ করে বলি দ্রুত এডিস মশাসহ সকল ধরনের ক্ষতিকর পোকামাকড় নিধনের ব্যবস্থা করে আমাদের আতংক মুক্ত করতে।

কোটালীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ নন্দা সেন গুপ্তা বলেন,গত জুন মাসের তুলনায় চলতি জুলাই মাসে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। অধিকাংশ রোগী ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থান থেকে আক্রান্ত হয়ে এখানে আসছেন। হাসপাতাল থেকে যেন আর কোন রোগী আক্রান্ত না হয় সেজন্য মশারিসহ হাসপাতালের আশপাশ এলাকা নিজ উদ্যোগে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে। ব্লিসিং পাউডার ছিটিয়ে হাসপাতাল এলাকা জীবানু মুক্ত করার চেস্টা অব্যাহত রয়েছে।

গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ জীবিতোষ বিশ্বাস বলেন,  হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর চাপ বাড়ছে। এরা অধিকাংশ অন্যত্র থেকে আক্রান্ত হয়ে এখানে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হচ্ছেন। হাসপাতালে ইতিমধ্যে দুই পৃথক ওয়ার্ডে নারী ও পুরুষ রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। গত শনিবার গোপালগঞ্জের পাশ্ববর্তী বাগেরহাট জেলার মোল্লাহাট উপজেলার আ¯াÍইল গ্রামের গাউজ (৫০) নামে এক ব্যক্তি মারা গেছেন। উনি ১২ জুলাই এখানে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হয়েছিলেন।

তিনি আরো জানান, হাসপাতাল থেকে মশার মাধ্যমে ডেঙ্গু যাতে ছড়াতে না পারে তার জন্য উদ্যোগ গ্রহন করা হয়েছে। হাসপাতাল আশপাশ পরিস্কার পরিচ্ছন্নের কাজ ইতিমধ্যে শুরু করা হয়েছে। আগামী সপ্তাহে হাসপাতালের পরিবেশ আরো উন্নত হবে।

সিভিল সার্জন নিয়াজ মোহাম্মদ বলেছেন, ডেঙ্গুতে আক্রান্তের হার কমাতে আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে। স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় সাধারন মানুষকে জানাতে ও সচেতনতা বাড়াতে মাইকিং করার উদ্যোগ গ্রহন করা হয়েছে। নিজেরা সচেতন না হলে ডেঙ্গুর প্রকোপ ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভবনা রয়েছে।

গোপালগঞ্জের সিভিল সার্জন ডাক্তার নিয়াজ মোহম্মদ বলেন,ডেঙ্গু রোগী জেলায় প্রতিদিন বাড়ছে। এভাবে বাড়তে থাকলে  হাসপাতালে আসন সংকুলন দেখা দিবে। তাই জনগনকে সচেতন হতে হবে। বাড়িঘরের জমে থাকা পানি নিস্কাশন, ময়লা আর্বজনা পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখার কোন বিকল্প নেই।

 

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Advertise

Ads

Address

Office : Sheikh Fazlul Haque Moni Stadium (2nd floor), Gopalganj-8100 Mobile: 01712235167, Email: kalerkhabor24.com@gmail.com
© All rights reserved 2022

Design & Developed By: JM IT SOLUTION