কালের খবরঃ
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার চরমানিকদাহ গ্রামের আশ্রয়ন প্রকল্পে ৭৯৫ নম্বর ঘরে আশ্রয় মিলিছে জন্মপঙ্গু ষাটউর্দ্ধ ফিরোজা বেগমের।স্বামী মারা গেছে ২৫ বছর আগে।এর পর ভাই বাড়ি ও আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে কাজ করে জীবন চালিয়েছেন এই বৃদ্ধা।মাঝে মধ্যে তাকে ভিক্ষাবৃত্তি ও করতে হয়েছে। এখনও প্রতিবেশীর বাড়ি কাজ করে ও অন্যের দানধ্যানে জীবন চলে।
মুজিবশত বর্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহার ঘর পেয়ে অনন্দে কেঁদে ফেলেন এই বৃদ্ধা নারী ফিরোজা বেগম । বুধবার (২২ মার্চ) সকালে ঘরের দলিল ও চাবি হাতে পেয়ে চোখের জল ফেলে দেন তিনি। কাঁদতে কাঁদতে বলেন, আমার এই শেষ জীবনে শেখ হাসিনা মাথা গোজার ঠাই করে দিয়েছেন। ছেলে মেয়েহীন জীবনে নিজের ঠিকানায় থাকতে পারবো এটা কোন দিন ভাবতে পারিনি। স্বামী থাকতেই পরে জায়গায় ঘর করে থেকেছি। দিনমজুর স্বামী আর আমি পঙ্গু।বাসায় বসে কাজ করে কোন মতে চলেছি। কোন দিন নিজের ঘর বা বাড়ি হবে তা ভাবতে পারিনি। যতদিন বাঁচবো তাঁর (শেখ হাসিনা) জন্য নামাজ পড়ে দোয়া করবো। সে যেন মানুষের কল্যানে কাজ করতে পারে এবং দীর্ঘায়ু পায়।
তিনি আরো বলেন,২৫ বছর আগে স্বামী সত্তার মোল্যা হঠাৎ অসুখ হয়ে মারা যান। শহরতলীর চরমানিকদাহ গ্রামে একটি সরকারি জায়গায় ঘর করে থাকতাম।সেখানে আশ্রায়ণের ঘর হয়েছে। স্যারেরা আমার কথা জানতে পেরে একটি ঘর দিয়েছে।আল্লাহর রহমতে আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইচ্ছায় এই উপহার ঘর পেয়েছি।
শুধু ফিরোজা বেগমই নয় অবেগ আপ্লুত হয়ে কন্ঠ ভারি করেন,গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার চরমানিকদাহ গ্রামের নয়ন মোল্লার (২৭) বাবা আক্তার মোল্লা বলেন, আমার ছেলে শারীরীক প্রতিবন্ধী। ১২ বছর বয়সে হঠাৎ জ্বর হয়। সেই জ্বরে আমার ছেলের মুখ বাকা, পা বাকা হয়ে যায়।মুখ দিয়ে লালা ঝড়ে।১৫ বছর হলো সে খুবই অসুস্থ। এদিকে তাকে চিকিৎসা করাতে আমি দেনা হয়ে অসহায়। সম্পত্তি যা ছিল বিক্রি করে চিকিৎসা ও সংসার চালিয়েছি।সরকার আমার ছেলেকে ৮০৪ নম্বর ঘরটি দিয়েছে। এই জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমি কোনদিন ভুলতে পারবোনা।আমি যতদিন বেঁচে থাকবো ততদিন তাঁর জন্য দোয়া করবো। তিনি যেন দীর্ঘায়ু লাভ করেন।
এই আশ্রায়ণ প্রকল্পে ঘর পেয়েছেন আলেয়া বেগম (৭২)নামে এক অন্ধ নারী। তাঁর স্বামী আকফর বিশ্বাস তিনিও অন্ধ।আগে শহরতলীর পোদ্দারেরচর গ্রামের অন্যের জায়গায় ঘর তুলে বসবাস করতেন। বিবাহীত জীবনের প্রায় ৪৫ বছর ভিক্ষাকরে চলেছেন। কোন দিন নিজের ঘর হবে এমন স্বপ্ন দেখেন নি এই দম্পত্তি। জীবনের শেষ বয়সে এসে নিজের নামে জায়গা ও ঘর হয়েছে। এটি দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। তিনি এজন্য শেখ হাসিনার মঙ্গল কামনায় আল্লাহর কাছে দুহাত তুলে দীর্ঘায়ু কামনা করেন।
শুধু এরাই নয় একাধিক সুবীধাভোগীর সঙ্গে কথা হয়। তারা জানিয়েছেন, আমরা নিম্ম আয়ের মানুষ পরিবার পরিজন নিয়ে খেয়ে না খেয়ে জীবন চালাই। এই কারনে জমি কেনাতো দূরের কথা ঘর বানানোর স্বপ্ন দেখতে পারিনি। আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের আশ্রয়স্থল দিয়েছে এতে আমরা মহা খুশী । ওনার জন্য দোয়া ছাড়া আর কিছু করার নাই। তাই যতদিন বাঁচবো নামাজ পড়ে শেখ হাসিনার জন্য মোনাজাত করবো। উনি যেন সুস্থ্য থাকে ভালো থাকে।
বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় গোপালগঞ্জে ৫৪৩টি ঘরের চাবি ও জমির দলিল হস্তান্তর করা হয়েছে। এর মধ্যে টুঙ্গিপাড়া উপজেলায় ১৬৪টি, কোটালীপাড়া উপজেলায় ১২৯টি, সদর উপজেলায় ১১০টি, কাশিয়ানী উপজেলায় ১০০টিও মুকসুদপুর উপজেলায় ৪০টি ঘর বিতরণ কর হয়। দুই কক্ষ বিশিষ্ট এ ঘরে রয়েছে একটি বারান্দা, রান্না ঘর আর বাথরুম। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার জমিসহ ঘর পেয়ে বদলে গেছে ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের জীবনমান। শুধু মাথা গোজার ঠাঁই নয় বিভিন্ন ধরনের কুটির শিল্পের কাজ করে রোজগার হচ্ছে অর্থ। এতে ঘুরে দাঁড়াবার স্বপ্ন দেখছেন তারা।
এ উপলক্ষে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদ, টুঙ্গিপাড়া উপজেলা পরিষদ,কাশিয়ানী উপজেলা পরিষদ, কোটালীপাড়া উপজেলা পরিষদ ও মুকসুদপুর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
টুঙ্গিপাড়া উপজেলা পরিষদের ঘর বিতরণ অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক কাজী মাহবুবুল আলম, সদর উপজেলা পরিষদে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক( রাজস্ব) মোসা. নাজমুন নাহারসহ স্ব স্ব উপজেলা নির্বাহী অফিসার, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ ও সুবীধাভোগীরা উপস্থিত ছিলেন।
Design & Developed By: JM IT SOLUTION
Leave a Reply