কালের খবরঃ
অপরিকল্পিত রাস্তা নির্মাণ ও মৎস্য ঘের তৈরীর ফলে পিঠাবাড়ি-তাড়গ্রাম বিলের প্রায় এক হাজার বিঘা জমিতে জলাবদ্ধতা সৃস্টি হয়ে চাষাবাদে ব্যাঘাত ঘটছে।রোপন মৌসুমের সময় পার হলেও জলাবদ্ধতার কারনে ধানের চারা চাষ করতে পারছেননা কৃষক। এই কারনে এলাকার পরিবারগুলো অর্থনৈতিক ভাবে ক্ষতির সম্মুথীন হচ্ছেন। কৃষকরা পিঠাবাড়ি খালের পানি প্রবাহ সচল করে সঠিক সময়ে চাষাবাদের সুযোগ সৃস্টির দাবীতে মানববন্ধন করেছে। বিল এলাকার কৃষকরা বুধবার (২৫ জানুয়ারি) দত্তডাঙ্গা- গান্ধিয়াশুর সড়কের পিঠাবাড়ি ব্রীজের উপর হাতে হাত ধরে মানববন্ধন রচনা করেন। মানববন্ধনে তারা খালের মুখ খুলে দিয়ে বিলের জমি সঠিক সময়ের চাষাবাদের আওতায় আনার দাবী জানান।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার কাজুলিয়া ইউনিয়নের পিঠাবাড়ি ও তাড়গ্রামের ক্ষতিগ্রস্থ জমির মালিকদের সূত্রে জানাগেছে, বিগত তিনবছর পিঠাবাড়ি ব্রীজের দক্ষিণপাশ দিয়ে লক্ষীপুরা গ্রামের মসজিদ পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকায় মাটির রাস্তা নির্মাণ করা হয়। এর আগে ও পরে রাস্তার দুইপাশে ৭/৮ টি মৎস্য ঘের তৈরী হয়। এসব ঘেরের পাড় ও রাস্তার কারনে পিঠাবাড়ি – তাড়গ্রাম বিলের প্রায় এক হাজার বিঘা জমি সময়মতো চাষাবাদের আওতায় আসছে না। চাষাবাদ নামী (দেরী) হওয়ায় উৎপাদিত ফসল জোয়ারের পানিতে নষ্ট হয়ে যায়। জমি করতে খরচ হলেও কাজের কাজ কিছুই হয় না। বরং শ্রমও অর্থ ব্যয় করে লোকসানের মুখোমুখি হতে হচ্ছে জমির মালিকদের।
তাড়গ্রামের ব্লক মালিক গোবিন্দ বৈরাগী বলেন, পিঠাবাড়ি-তাড়গ্রাম বিলে ১৪টি ব্লকে প্রায় দেড়হাজার বিঘা ধানের জমি রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় হাজার বিঘা চাষাবাদে ব্যঘাত ঘটছে। এই কারনে এলাকার প্রায় পাঁচশত পরিবার ফসল উৎপাদন করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। কিন্তু বিগত তিন বছর হলো পিঠাবাড়ি ব্রীজের মুখে দক্ষিণ পশ্চিম পাশ দিয়ে একটি রাস্তা নির্মাণ করা হয়। এছাড়া রাস্তার আশপাশ দিয়ে বেশ কিছু মৎস্য ঘের কাটা হয়েছে। ঘেরের পাড় ও রাস্তার কারনে বিলের পানি খাল দিয়ে বেরহতে পারেনা। তাই জমি চাষ করতে বিলম্ব হয়। আর সঠিক সময়ে চাষাবাদ না করতে পারায় এসব জমিতে ফসল উৎপাদন হয়না। যাও হয় তাও জোয়ারের পানিতে তলিয়ে নষ্ট হয়ে যায়। খালের মুখে একটি বা দুইটি ব্রীজ করে বা পানি সরানোর ব্যবস্থা করলে এই সমস্যা দূর হবে।
পিঠাবাড়ি গ্রামের বিধান বালা বলেন, তাড়গ্রাম বিলে আমার তিন বিঘা জমি। তিন বছর হলো কোন ফসল ঘরে আনতে পারিনা। খরচপাতি সবই হচ্ছে ,কিন্তু কোন ধান ঘরে আসছেনা। এভাবে চলতে থাকলে আমিসহ এলাকার কৃষকরা লোকসানের পড়বো। আমি চাই খালের মুখ খুলে দিয়ে বিলের পানি বেরকরার ব্যবস্থা হোক।
একই গ্রামের পরেশ টিকাদার বলেন, তাড়গ্রাম পিঠাবাড়ি বিলে আমার সাতবিঘা জমি রয়েছে। এই জমির ফসল দিয়ে চলে আমার সংসার। বিগত তিনবছর হলো বিলের পানি না নামায় ধান নামি হয়ে যাচ্ছে। দেরী হলেও কষ্ট করে চাষাবাদ করে যে ধান পাই তাতে খরচের টাকাও উঠে না। কৃষি নির্ভর আমার পরিবার। ফসল ফলাতে না পারলে আমারদেনা হতে হবে। তাই আমাদের সমস্যা সমাধানে সরকার এগিয়ে আসবে এই প্রত্যাশা করি।
তাড়গ্রামের নারায়ন বৈরাগী (৭০), পিঠাবাড়ি গ্রামের মোঃ মিলু মোল্লা (৮০), দয়াল বালা (৬৩) সুজয় সরকার বলেন,গেলো তিন বছর হলো ফাল্গুন মাসে ধানের চারা রোপন করতে হচ্ছে। চৈত্র মাসের শেষ দিকে বিলে জোয়ারের পানি ঢুকে পড়ে। এই কারনে বিলের ধান পানিতে নষ্ট হয়ে যায়। খালের মুখে রাস্তা ও ঘের তৈরী হওয়ায় পানি নামেনা। পিঠাবাড়ি খালের মুখ খুলে দিয়ে দত্তডাঙ্গা ও শেওড়াবাড়ী বড় খালের সঙ্গে সংযোগ দিলে জলাবদ্ধতা দূর হবে। তা না হলে এলাকার মানুষ অভাবী হয়ে পড়বে।
কাজুলিয়া ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড সদস্য তনয় চৌধুরী বলেন, বিলের মধ্যে যে খালগুলো রয়েছে সেগুলোতে কচুরিপানা জমে ভরাট হয়ে গেছে। তাছাড়া রাস্তা তৈরীর সময় কোন ব্রীজ বা কালভার্ট করা হয়নি। এই কারনে বিলের পানি বড় খালে নামতে পরেনা। খালগুলো খনন করা হলে এই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
কাজুলিয়া ইউনিয়নের দায়িত্বরত কৃষি কর্মকর্তা ও সদর উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা বাদল জয়ধর জলাবদ্ধতার কথা স্বীকার করে বলেন, রাস্তা নির্মাণ ও বেশ কিছু ঘের তৈরী হওয়ায় বিলের পানি নামতে সমস্যা হয়। এই কারনে বিলের জমি দেরীতে জাগে। খালের পানি প্রবাহ সচল করতে বিলের মধ্যে যে ছোট ছোট খাল রয়েছে তা খনন করা প্রয়োজন। তাহলে তাড়গ্রাম পিঠাবাড়ি বিলের প্রায় তিনশ বিঘা জমির জলাবদ্ধা দূর হবে বলে আমি মনে করি।
Design & Developed By: JM IT SOLUTION
Leave a Reply