রবিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:৫২ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
গোপালগঞ্জে পৃথক অভিযানে আড়াই লক্ষটাকার নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ, ব্যবসায়দের জরিমানা কাশবন সাহিত্য পত্রিকা পুরষ্কার পেল যারা বিনাধান-২৫ এ কমবে চিকন চাল আমদানি নির্ভরতা গোবিপ্রবি’তে জিএসটি গুচ্ছভুক্ত ‘সি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত কোটালীপাড়ায় আগুনে পুড়লো ১০ দোকান। ৩০ লক্ষ টাকার ক্ষতি শুক্রবার থেকে শুরু গোবিপ্রবি’তে জিএসটি গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা। প্রস্তুতি সম্পন্ন কোটালীপাড়ায় কুকুর ব্যাগ থেকে বের করলো নবজাতকের লাশ! কোটালীপাড়ায় হয়েগেল শতবছরের ঐতিহ্যবাহী ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা ও বৈশাখী মেলা গোপালগঞ্জে বিএনপির কর্মি সমাবেশ অনুষ্ঠিত কুয়েট শিক্ষার্থীদের দাবির সমর্থনে গোবিপ্রবির শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন

৬৩ বছর পর প্রাণ ফিরেছে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বিজড়িত পাঁচুড়িয়া খালের

Reporter Name
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ১৭ নভেম্বর, ২০২২, ৪.২৮ পিএম
  • ২৪৫ Time View

কালের খবরঃ

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি বিজড়িত গোপালগঞ্জ শহরের পাঁচুড়িয়া খালের প্রাণ ফিরেছে। মধুমতি নদীর  সাথে বৃহস্পতিবার (১৭ নভেম্বর) পাঁচুড়িয়া খালের পুণঃসংযোগ স্থাপন করা হয়েছে। এরমধ্য দিয়ে দীর্ঘ ৬৩ বছর পর বঙ্গবন্ধুর গ্রামেরবাড়ি টুঙ্গিপাড়া যাওয়ার পাঁচুড়িয়া খাল প্রাণ ফিরে  পেলো। এ নিয়ে  গোপালগঞ্জ শহরবাসীর মধ্যে খুশির বন্যা বইছে।

এ দিন সকালে শহরের পাঁচুড়িয়া পৌর নিউ মার্কেট এলাকায় পাঁচুড়িয়া খালের সাথে শহর মধুমতি নদীর  পুণঃসংযোগ স্থাপনের উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা ।

এ সময় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব আলী খান, পৌর মেয়র শেখ রকিব হোসেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক নাজমুন নাহার, এলজিউডির নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ এহসানুল হক,  পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো.ফাইজুর রহমান, সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ জাহিদ হোসেন,সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মহসিন উদ্দীন, সহকারি কমিশনার (ভূমি) মো.মামুন খান, পৌর কাউন্সিলরগণ সহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত  ছিলেন।

জেলা উদীচীর সভাপতি নাজমুল ইসলাম বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের গোপালগঞ্জ শহরের ব্যাংকপাড়ায় পৈতৃক বাড়ি রয়েছে। তিনি শহরের পাঁচুড়িয়া খাল দিয়ে টুঙ্গিপাড়া গ্রামের বাড়িতে আসা যাওয়া করতেন। বঙ্গবন্ধু তাঁর অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে এটি উল্লেখ করেছেন। এটি বঙ্গবন্ধুর বাড়ি যাতায়াতের নৌরুট। পাঁচুড়িয়ার খালের সাথে মধুমতি নদীর সংযোগ ছিল। পাঁচুড়িয়া খালপাড়ে পাকিস্তান সরকার খাদ্য গুদাম নির্মাণ করে। মধুমতি নদী ও পাঁচুড়িয়া খালের সংযোগ স্থলে প্রচন্ড স্রোত ছিল। স্রোতের কারণে খাদ্যগুদাম সহ বসতবাড়ি ভাঙনের কবলে পড়তে পারে এমন আশংকা ছিল। তাই ১৯৫৯ সালে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার এ খালটির মুখে বাঁধ দিয়ে বন্ধ করে দেয়। ফলে শহর মধুমতি নদীর সাথে পাঁচুড়িয়া খালের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে ।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানাগেছে,মুজিব বর্ষ উপলক্ষ্যে ২০১৯ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি যাওয়ার নৌরুটটি সংরক্ষণের উদ্যোগ গ্রহন করে সরকার।  গোপালগঞ্জ শহরের পাঁচুড়িয়া থেকে বর্ণি বাওড় হয়ে টুঙ্গিপাড়া বঙ্গবন্ধুর বাড়ি পর্যন্ত ১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ নৌরুট খনন ও সৌন্দর্য বর্ধণের কাজ শুরু করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। ১০ কিলোমিটার খননের পর শহর অংশের ৮ কিলোমিটার খননের কাজ আর হয়নি। পাঁচুড়িয়া খালের সাথে শহর মধুমতি নদীর সংযোগ স্থাপনে জাতীয় নদী কমিশনেরর সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করেন। তারা বেশ কিছু সুপারিশ করেন।

সূত্রটি আরো জানান,দীর্ঘ ৬৩ বছর খালটির সাথে শহর মধুমতি নদীর পানি প্রবাহ বন্ধ ছিল।  দখল আর দূষণে খালটি বিপন্ন হয়ে পড়ে। এই খালটির বন্ধ মুখ অবমুক্ত করার উদ্যোগ গ্রহন করেন জেলা প্রশাসক। পৌর মেয়রের সহযোগিতায় গত ১ অক্টোবর পাঁচুড়িয়া খাল থেকে শহর মধুমতি নদীর সংযোগ স্থাপনের কাজ শুরু হয়।  নিউ মার্কেট ও ওয়াপদা জামে মসজিদের মাঝের রাস্তা হয়ে জেলা সড়ক দিয়ে ১৫০ মিটার খনন করে এই সংযোগ স্থাপন করা হয়। এতে বেশ কিছু স্থাপনা ভাঙ্গা পরে। জেলা সড়কের ওই স্থানে সড়ক ও জনপথ বিভাগ ব্রিজ নির্মাণের প্রকল্প নিয়েছে। এতে পাচুড়িয়া খালটি দূষণ আর দখলের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। দীর্ঘদিন খালের দুই পাড়ে বসবাস করা মানুষ দুর্গন্ধ মুক্ত নির্মল বাতাস উপভোগ করতে পারবেন।খালের পানি দিয়ে তারা নিত্যদিনের প্রয়োজন মিটানো সহ খালের মাছ ধরে মৎস্যজীবীরা জীবিকা নির্বাহ করতে পারবেন। সেচ কাজে এই খালের পানি ব্যবহৃত হবে। এতে নৌ চলাচলের সুবিধাসহ মানুষের আর্থ সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটবে।

খালের মুখ উন্মুক্ত করার খবরে বিপুল সংখ্যক মানুষ খাল পাড়ে ভীড় করেন। তাদের চোখে মুখে ছিলো আনন্দ ও উচ্ছ্বাস।দীর্ঘদিন ধরে এলাকাবাসীর দাবী থাকলেও খালটি দুষণ আর দখলের হাত থেকে রক্ষায় উদ্যোগ নেয়নি কেউ।

গোপালগঞ্জ পৌরসভার মেয়র শেখ রকিব হোসেন জানান, দীর্ঘদিন ধরে খালটির পানি প্রবাহ আটকে রাখায় কুচুরিপনা ও ময়লার স্তুপ তৈরী হয়েছিলো। দখলে ছোট হয়ে যাচ্ছিল খালটির প্রশস্থতা। পানি পচে দুর্গন্ধ ও মশামাছির প্রজনন ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছিলো শহরের মধ্যদিয়ে প্রবাহমান খালটি।

তিনি আরো বলেন, পৌর মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহনের পর খালটির ময়লার স্তুপ অপসারণ ও কুচুরিপনা পরিস্কার করেছি। পরবর্তিতে খালটি পানি প্রবাহ পুণঃস্থাপনের জন্য উদ্যোগ নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে।বৃহস্পতিবার সকালে খালটির সাথে মধুমতি নদীর সংযোগ স্থাপন করেছি। এটি আমাদের কাছে ঐতিহাসিক দিন। এখন আমরা এই এলাকার সৌন্দর্য বর্ধনসহ নানাবিধ কাজ শুরু করব। এটি শহরবাসীর বিনোদনের স্থান হবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো.ফাইজুর রহমান বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি যাওয়ার নৌ-রুটের খনন ও সৌন্দর্য বর্ধণ সহ অন্যান কাজ বন্ধ ছিল। শহর মধুমতি নদী ও পাঁচুড়িয়া খালের সংযোগ হয়েছে। এখন বাদবাকী কাজ  দ্রুত সম্পন্ন করা হবে। ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, ১৯৫৯ সালে ফরিদপুর জেলা পরষিদ পাঁচুড়িয়া খালের মুখে বাঁধ দেয়। তখন খালের সাথে শহর মধুমতি নদীর সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়। দীর্ঘ ৬৩ বছর পর শহর মধুমতি নদী ও পাঁচুড়িয়া খালের সংযোগ বৃহস্পতিবার স্থাপন করা হয়েছে। টুঙ্গিপাড়া উপজেলার শৈলদহ নদী থেকে ডুমুরিয়া খাল বর্ণি বাওড়ে এসে মিশেছে। আর বর্ণি বাওড় থেকে পাচুঁড়িয়া খাল শহর মধুমতি নদীতে পড়েছে। পাঁচুড়িয়া খালের দৈর্ঘ ৮ কিলোমিটার। আর প্রস্ত ৪০ মিটার। আর বর্ণি বাওড় থেকে ডুমরিয়া খালের দৈর্ঘ প্রায় ২২ কিলোমিটার।

গোপালগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ জাহিদ হোসেন বলেন, টেকেরহাট-গোপালগঞ্জ-ঘোনাপাড়া সড়ক প্রশস্ত করছি। এই সড়ক ঘোনাপাড়া থেকে গোপালগঞ্জ শহরের মধ্য দিয়ে টেকেরহাট যাচ্ছে । এতিমধ্যে সড়কটির কাজ শুরু হয়েছে। পাঁচুড়িয়া খালের সাথে শহর মধুমতি নদীর সংযোগ আমাদের রাস্তা কেটে করা হয়েছে। যানবাহন চলচলের জন্য আমরা বিকল্প সড়ক ও বেইলী ব্রিজ করে দিয়েছি। খনন শেষ হলে আমরা টেকেরহাট-গোপালগঞ্জ-ঘোনাপাড়া সড়ক প্রশস্ত করণ প্রকল্প থেকে ওই স্থানে একটি ব্রিজ করে দেব। এটি প্রকল্পে আগে থেকেই ধরা আছে।

জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি বিজড়িত পাঁচুড়িয়া খালটিতে দীর্ঘদিন ধরে পানি প্রবাহ বন্ধ থাকায় দুষণ আর দখলে খালটি সংকীর্ণ হয়ে পড়েছিলো। আমরা শহর মধুমতি নদীর সাথে খালটি পুণঃসংযোগ স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছি। এই খালটিকে ঘিরে নানামুখি উদ্যোগ গ্রহন করা হয়েছে।এটি শহরবাসীর একটি দর্শনীয় স্থান হবে। এছাড়া জেলাবাসী খালটিকে নানামুখি কাজে ব্যবহার করতে পারবেন।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category

Advertise

Ads

Address

Office : Sheikh Fazlul Haque Moni Stadium (2nd floor), Gopalganj-8100 Mobile: 01712235167, Email: kalerkhabor24.com@gmail.com
© All rights reserved 2022

Design & Developed By: JM IT SOLUTION