কালের খবরঃ
গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার কালনা পয়েন্টে মধুমতি নদীর উপর নির্মিত মধুমতি সেতুর শুভ উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার ( ১০ অক্টোবর) দুপুরে ভিডিও কনফারেসিং এর মাধ্যমে এ সেতুর শুভ উদ্বোধন করেন তিনি।এতে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ১০ জেলার মানুষের স্বপ্নপুরণ হলো। দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর গোপালগঞ্জসহ মধুমতি পাড়ের মানুষের মধ্যে খুশির বন্যা বইছে। এতে ব্যবসা বাণিজ্যোর নতুন দিগন্তের সুচনা হবে । গড়ে উঠবে শিল্প কলকারখানা। সৃষ্টি হবে কর্মসংস্থানের।
সোমবার (১০ অক্টোবর) রাত ১২ টা ১ মিনিট থেকে মধুমতি সেতুতে যানবাহন চলাচল শুরু হবে বলে জানিয়েছেন কাশিয়ানী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেদী হাসান । ২০১৫ সালের ২৪ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সেতুর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সেতুর নির্মাণ কাজের শুভ উদ্বোধন করেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে যুক্ত ছিলো (গোপালগঞ্জ প্রান্ত)। গোপালগঞ্জ অংশের অনুষ্ঠানে সংরক্ষিত ২৫ আসনের সংসদ সদস্য নার্গিস রহমান, জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা, পুলিশ সুপার আয়েশা সিদ্দিকী, গোপালগঞ্জ সড়ক জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. সুরুজ মিয়া, সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী তাপসী দাশ, ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইমগ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট (বাংলাদেশ) এর অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক অাবু হেনা মোস্তফা কামাল, সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ জাহিদ হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি চৌধুরী এমদাদুল হক, সাধারন সম্পাদক মাহাবুব আলী খান, টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ আবুল বশার খায়ের, কাশিয়ানী উপজেলা চেয়ারম্যান সুব্রত ঠাকুর, টুঙ্গিপাড়া পৌরসভার মেয়র শেখ তোজাম্মেল হক টুটুলসহ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, প্রশাসনের উর্দ্ধধন কর্মকর্তাবৃন্দ ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীগণ উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, মধুমতি সেতু উদ্বোধনের আনন্দ জনগনের সাথে ভাগাভাগি করতে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মুহাম্মদ ফারুক খান মধুমতি সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে কাশিয়ানীর ভাটিয়াপাড়া গোল চত্বরে স্থানীয় নেতাকর্মিদের নিয়ে সমাবেশ করেছেন। সমাবেশে কাশিয়ানী উপজেলা আওয়ামী সভাপতি মোক্তার হোসেন, সাধারন সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, মুকসুদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রবিউল আলম শিকদার, সাধারন সম্পাদক সাহিদুর রহমান টুটুল প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।
গত ২৫ জুন পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর যশোর ও নড়াইলসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের কাছে কালনা সেতু নিয়ে আগ্রহ বেড়েছে। পদ্মা সেতু পার হয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের প্রবেশদ্বার হবে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার মধুমতী সেতু। এ সেতু নির্মাণের ফলে ঢাকার সাথে ১০ জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হবে। এ সেতুর মাধ্যমে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা-কালনা- নড়াইল-যশোর-বেনাপোল জাতীয় মহাসড়ক তথা এশিয়ান হাইওয়ের সাথে যুক্ত হলো। বাংলাদেশের অন্যতম বহৎ স্থলবন্দর বেনাপোল ও ভোমরা, নওয়াপাড়া নদীবন্দর, যশোর ও নড়াইল জেলা ও ভারতের সাথে ঢাকার দুরত্ব কমবে।
সেতুটির দৈর্ঘ্য ৬৯০ মিটার এবং প্রস্থ ২৭.১০ মিটার। উভয় পাশে ৬ লেনের সংযোগ সড়ক রয়েছে, যার দৈঘ্য প্রায় সাড়ে চার কিলোমিটার। সেতুর মাঝখানে বসানো হয়েছে ১৫০ মিটার দীর্ঘ একটি স্টিলের স্প্যান। ধনুকের মতো বাঁকা এ স্প্যান তৈরি হয়েছে ভিয়েতনামে। এই স্প্যানের উভয় পাশের অন্য স্প্যানগুলো পিসি গার্ডারের (কংক্রিট)। ছয় লেনের এ সেতু হবে এশিয়ান হাইওয়ের অংশ। চারটি মূল লেনে দ্রুতগতির ও দুটি লেনে কম গতির যানবাহন চলাচল করবে। সেতুতে একটি ৮ লেনের টোল প্লাজা রয়েছে। সেতু নির্মাণে মোট ব্যয় ৯৬০ কোটি টাকা।
সেতুতে পারাপারের জন্য বড় ট্রেইলার ৫৬৫ টাকা, তিন বা ততোধিক এক্সসেল বিশিষ্ট ট্রাক ৪৫০ টাকা, দুই এক্সসেল বিশিষ্ট মাঝারি ট্রাক ২২৫, ছোট ট্রাক ১৭০ টাকা, কৃষি কাজে ব্যবহৃত পাওয়ার ট্রিলার ও ট্রাক্টর ১৩৫ টাকা, বড় বাসের ক্ষেত্রে ২০৫ টাকা, মিনিবাস বা কোস্টার ১১৫ টাকা, মাইক্রোবাস, পিকাপ, কনভারশনকৃত জিপ ও রে-কার ৯০ টাকা, প্রাইভেটকার ৫৫ টাকা, অটোটেম্পু, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, অটোভ্যান ও ব্যাটারিচালিত তিন চাকার যান ২৫ টাকা, মোটরসাইকেল ১০ টাকা এবং রিকশা, ভ্যান ও বাইসাইকেল পাঁচ টাকা করে টোল নির্ধারত করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা বলেন, মধুমতি সেতু উদ্বোধনের ফলে গোপালগঞ্জে ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে। এতে নতুন নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে।
Design & Developed By: JM IT SOLUTION
Leave a Reply