কালের খবরঃ
সোমবার (১০ অক্টোর) প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের পর যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার কালনায় মধুমতি নদীর উপর নির্মিত দেশের প্রথম ৬ লেন বিশিষ্ট দৃষ্টিনন্দন মধুমতী সেতু সোমবার দুপুর ১২টায় প্রধানমন্ত্রী ভার্চুয়ালি এই সেতুর উদ্বোধন করবেন। ওইদিন থেকেই সেতুতে গাড়ি চলাচল শুরু হবে। সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্টের প্রকল্প ব্যবস্থাপক, প্রকৌশলী মোঃ আশরাফুজ্জামান উদ্বোধনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।তিনি বলেন, ১০ অক্টোবর (সোমবার) প্রধানমন্ত্রী ভার্চুয়ালি গোপালগঞ্জ ও নড়াইল জেলার সীমান্তে কালনায় মধুমতী সেতু উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মধুমতি নদীর কালনায় এ সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। সেতুর পূর্ব পাড়ে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলা রাতইল ইউনিয়নের শংকরপাশা ও পশ্চিম পাড়ে নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলা। শংকরপাশা গোপালগঞ্জ জেলার শেষ গ্রাম। এই দু’ জেলার সীমান্তে নির্মিত হয়েছে সেতুটি। সেতু নির্মানের ফলে ঢাকার সাথে স্থলবন্দর বেনাপোলসহ অন্তত ১০ জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হবে। সুবিধাভোগী জেলাগুলো হলো নড়াইল,যশোর, খুলনা, সাতক্ষীরা, মাগুরা, ঝিনাইদাহ,মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা। এছাড়া দেশের বিভিন্ন জেলার মানুষের যোগাযোগের সুবিধা হবে।
মধুমতি সেতুর প্রকল্প ব্যবস্থাপক ও সওজ নড়াইলের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফুজ্জামান বলেন, বর্তমানে সেতুটি গাড়ি চলার জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত হয়েছে । নদী শাসনের কাজ পর্যায়ক্রমে করা হবে। সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্টের আওতায় জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) অর্থায়নে এ সেতু নির্মিত হয়েছে। জাপানের টেককেন কর্পোরেশন ও ওয়াইবিসি এবং বাংলাদেশের আবদুল মোনেম লিমিটেড যৌথভাবে এ সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ করেছে।
তিনি বলেন, মধুমতী সেতুর মাঝখানে বসানো হয়েছে ১৫০ মিটার দীর্ঘ স্টিলের একটি স্প্যান। নেলসন লোস আর্চ টাইপের (ধনুকের মতো বাঁকা) এ স্প্যানটি তৈরি করা হয় ভিয়েতনামে। স্প্যানের দুই পাশের অন্য স্প্যানগুলো পিসি গার্ডারের (কংক্রিট) তৈরী। এটি ছয় লেনের সেতু। চারটি মূল লেনে দ্রুতগতির ও দুটি লেনে ধীর গতির যানবাহন চলাচল করবে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানাগেছে, ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইনপ্রুভমেন্ট প্রজেক্টের মাধ্যমে ২০১৮ সালের ৫ সেপ্টেম্বর সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ ও সেতু মন্ত্রনালয় নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করেছে। ব্রিজটির নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথাছিল চলতি বছরের ২৫জুলাই। এই সেতুর দৈর্ঘ ৬৯০ মিটার, প্রস্থ ২৭.১০ মিটার। ২৭২টি পাইলের উপর ১২টি পিয়ার ও ১৩টি স্প্যান বসানো হয়েছে। ব্রিজে গার্ডার সংখ্যা ১৬০টি। মাঝে ১৫০ মিটার দৈর্ঘ একটি স্টিলের ব্রিজ রয়েছে। যেটি ধনুকের মতো বাঁকা। এই অংশটি ব্রিজের সৌন্দর্য বর্ধণ করেছে। সেতুর দুইপাশে এপ্রোচ সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে সোয়া ৪ কিলোমিটার। এর মধ্যে ৮টি আন্ডারপাস ও ১৪টি কালভার্ট রয়েছে। এসবের চুক্তিমূল্য (নির্মাণ ব্যয়) ধরা হয়েছে ৯৫৯ কোটি ৮৫ লাখ টাকা।
এলাকাবাসী ও সড়ক বিভাগ সূত্রে জানাগেছে,মধুমতি নদীর উপর এ অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘ দিনের প্রত্যাশিত সেতু। গত ২৫ জুন পদ্মা সেতু চালু হলেও কালনা সেতু চালু না হওয়ায় দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ পদ্মা সেতুর সুফল পুরোপুরি ভোগ করতে পারেনি না। এ সেতুটি চালু হলে সমগ্র বাংলাদেশের সাথে দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চলের যাতায়াতের আর কোন প্রতিবন্ধকতা থাকবে না। স্বাচ্ছন্দে পশ্চিম বঙ্গের জেলার মানুষ রাজধানী ঢাকাসহ দেশব্যাপী বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করতে পারবেন। সেই সাথে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ সারাদেশের সাথে বেনাপোল স্থলবন্দরের যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজতর হবে। ফলে সমগ্র বাংলাদেশের সাথে এ অঞ্চলের বাড়বে আর্ন্তজাতিক বানিজ্যিক প্রসারও।
রাতইল ইউনিয়নের শংকরপাশা গ্রামের বাসিন্দা মঞ্জুরুল আলম বলেন, কালনা সেতু আমাদের প্রাণের দাবী ছিলো। দেরীতে হলেও সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। সেতুটি চালু হলে আমাদের এলাকা এবং নড়াইল জেলাসহ পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার উৎপাদিত কৃষিপন্য সহজে দেশব্যপি পাঠানো সম্ভব হবে। কৃষক ন্যায্যমূল্য পাবেন। ঢাকার মানুষ মধুমতি ব্রিজ পার হয়ে অনাসায়ে বেনাপোল বর্ডার হয়ে ভারত যেতে পারবেন। যাতায়াতের জন্য একটা নতুন দিগন্ত সৃস্টি হবে।
নড়াইল জেলার লক্ষীপাশা পৌরসভার বাসিন্দা মোঃ ইদ্রিস আলী মোল্লা বলেন, আমার বয়স ৬২বছর। এতো দিন কালনায় খেয়া ও ফেরী পারাপার হয়েছি। এতে আমাদের ভোগান্তী হতো। টাকা পয়সাও বেশী খরচ হতো। ব্রীজ চালু হলে আমাদের আর ভোগান্তী থাকবেনা। সহজেই যাতায়াত করতে পারবো।
শুধু ইদ্রিসআলী ও মঞ্জুরুল আলম নয় অভিব্যক্তি জানিয়েছেন,লোহাগড়া গ্রামের হাসি খানম, হাবিল মোল্লা, আহম্মদ আলী শেখ, নাসির উদ্দিন , শংকরপাশা গ্রামের হাবিবুর রহমান, জিকরুল শেখ, খালেদা খানম, নারগিস সুলতানা , কমলেস বিশ্বাস সহ কথা হয় অনেকের সঙ্গে। তারা বলেন, কালনা সেতু হয়ে যশোর বেনাপোল, সাতক্ষীরাসহ বিভিন্ন জেলায় যেতে পারবো। এখন আর খেয়া বা ফেরীর জন্য অপেক্ষা করতে হবে না। যখন ইচ্ছা তখন যাতায়াত করতে পারবো।
সেতুর প্রকল্প ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মোঃ আশরাফুজ্জামান বলেন, জাতীয় ও আন্তুর্জাতিক পর্যায়ে এ সেতুর গুরুত্ব অনেক। ১০ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধনের পর সেতুটি যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে। মধুমতি সেতু এক দিকে যেমন জনগনের ভোগান্তী দূর করবে সেইসাথে এ অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘ দিনের প্রতিক্ষার অবসান ঘটবে, অন্যদিকে বেনাপোলের সাথে টেকসই সড়ক যোগাযোগ স্থাপনের মাধ্যমে খুলবে বাংলাদেশের সাথে আর্ন্তজাতিক ব্যবসার প্রসার। আর সেই সাথে পুর্ণঙ্গতা পাবে স্বপ্নের পদ্মা সেতু।
Design & Developed By: JM IT SOLUTION
Leave a Reply