কালের খবরঃ
গোপালগঞ্জের রঘুনাথপুর গ্রামে মৎস্য ঘেরপাড়ে পরীক্ষামূলক বিদেশী ফল সাম্মাম চাষ করে সফলতা পেয়েছেন কৃষক অবনি মন্ডল। লাউ কুমড়া ও শাকসবজির সঙ্গে থাইল্যান্ডের ফল সাম্মাম ফলিয়ে এলাকায় তাক লাগিয়েছেন তিনি। তাঁর ক্ষেতের মাচায় এখন থরে থরে ঝুলছে অসংখ্য সাম্মাম। নতুন এই ফল এবারই প্রথম চাষ হয়েছে গোপালগঞ্জে। ফলন ভালো হওয়ায় কৃষি বিভাগ বাণিজ্যিক ভাবে আগামীতে এই চাষ বাড়ানোর মরামর্শ দিচ্ছেন কৃষকদের।
সাম্মাম চাষী গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার রঘুনাথপুর পূর্বপাড়া গ্রামের বাসিন্দা কৃষক অবনি মন্ডল। তিনি বলেন, দীর্ঘ প্রায় তিনযুগ ধরে ঘেরে মৎস্যচাষ ও পাড়ে লাউ, মিষ্টিকুমড়া, শশা,মরিচ,বেগুনসহ বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি উৎপাদন করে আসছেন। ত্রিশউর্ধ্ব ছেলে সুশান্ত মন্ডলকে সাথে নিয়ে নিজের ঘেরপাড়ে এসব সবজি ফলিয়ে বাজারে বিক্রি করে জীবন জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। গেলো বছর ৪বছর বয়সী আদরের নাতীকে নিয়ে তিনি গোপালগঞ্জ শহরে আসেন ডাক্তার দেখাতে। রাস্তায় ফলের দোকানে হলুদ রং এর সাম্মাম দেখে নাতি সুবর্ণ মন্ডল ফলটি খাবে বলে বায়না ধরে। বাধ্য হয়ে ঠাকুরদা অবনি মন্ডল একশত ষাট টাকা কেজি দরে তিনশত টাকা দিয়ে একটি সাম্মাম ফল কেনেন।
একটা দুই কেজি ওজনের সাম্মাম (বাঙ্গি) তিনশটাকা হওয়ায় তাঁর মাথায় এই ফলচাষের ইচ্ছা হয়। খোঁজ খবর নিতে থাকেন বিভিন্ন বীজ ও কৃষি অফিসে। পরে কৃষি অফিসের পরামর্শে দোকান থেকে তিনগ্রাম বীজ একহাজার তিনশ টাকায় কেনেন। বাড়ির আঙ্গীনায় বীজ থেকে চারা তৈরী করেন। পরে জৈষ্ঠ্য মাসের শেষ দিকে ঘেরের দুই পাড়ে ৫৬ টি সাম্মাম গাছের চারা লাগান। পরে বাঁশ ও নেট দিয়ে মাচা তৈরী করে গাছগুলো তাতে উঠিয়ে দেয়া হয়। অনেকটা শশা বা চালকুমড়া গাছের মতো লাতা জাতীয় সাম্মাম গাছ। ফল পাকার আগে মনে হবে মাচায় সারিসারি চালকুমড়া ঝুলছে। ফলটি পাকলে হলুদ রং ধারন করে। আগস্টের প্রথম থেকে তিনি ফল বিক্রি শুরু করেছেন। শহরের বটতলা বাজারে ১২০টাকা কেজি দরে প্রায় ১৫০টি ফল বিক্রি করে প্রায় বিশ হাজার টাকা ঘরে তুলেছেন। গাছে আরো ফল রয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে আরো প্রায় ১০ হাজার টাকা বিক্রি হবে। তাদের উৎপাদিত নতুন এই ফল দেখতে ও সফলতা জানতে এলাকার অন্য কৃষক ও কৃষি অফিসাররা আসছেন প্রতিনিয়ত।
কৃষক অবনি মন্ডলের ছেলে সুশান্ত মন্ডল বলেন, বাবা বাজার থেকে বীজ কিনে চারা তৈরী করে আমাকে দেন। আমি তিনফুট দুরত্বে ৫৬টি গর্ত করি। গর্তের মাটিতে ডিএপি, ইউরিয়া ও পটাস সার পরিমান মতো দিয়ে এক সপ্তাহ রেখে দেই। পরে প্রতিটি গর্তে দুইটি করে সাম্মামের চারা রোপন করি। একমাসের মধ্যে গাছে ফুল ও ফল ধরেছে। এখন পর্যন্ত কোন পোকামাকড়ের আক্রমণ হয়নি। মাঝে দুইবার ডিএপি সারের পানি দিয়েছি। আর আগাছাগুলো পরিস্কার করেছি। তিনি আরো বলেন, লাউ কুমড়া বা অন্যসব সবজি চাষের থেকে এই চাষ সহজ ও লাভজনক। আগামীতে সাম্মাম চাষ বাড়ানোর চিন্তা ভাবনা রয়েছে।
একই গ্রামের কৃষক মন্মথ বিশ্বাস। তিনি বলেন, প্রায়ই ঘেরপাড়ে এসে চাষপদ্ধতি ও ফলগুলো দেখি। কম জায়গায় এবং স্বল্প খরচে বেশী লাভ হওয়ায় আগামী বছর সাম্মাম চাষ করার ইচ্ছা আছে। এর বাজার মূল্যও বেশ।
শুধু মন্মথ বিশ্বাস নয় কথা হয় কৃষক সমীর মালাকার, সাইফুল আলম,সোহাগ মোল্লা, হরষিত বালাসহ বেশ কয়েকজনের সঙ্গে। তারা বলেন,আগামীতে কৃষি কর্মকর্তা ও চাষী অবনির সঙ্গে কথা বলে সাম্মাম চাষ করবো।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার রঘুনাথপুর ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা প্রদীপ হালদার বলেন, সাম্মাম একটি উচ্চ ফলনশীল ও উচ্চ লাভ সম্পন্ন ফসল। কৃষক অবনি মন্ডল প্রথমে গোপালগঞ্জে চাষ করে সফলতা পেয়েছেন। তার দেখাদেখি আগামীতে অনেক কৃষক এই চাষ করবেন বলে আমাকে জানিয়েছেন। আগামী মৌসুমে বেশী করে সাম্মাম চাষ বৃদ্ধিতে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।
গোপালগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, খামারবাড়ির উপপরিচালক ড. অরবিন্দ কুমার রায় বলেন,সাম্মাম বাঙ্গী জাতীয় একটি বিদেশী ফল। এটি খুব মিষ্ট। এই ফল রঘুনাথপুরে চাষ হওয়ায় এখানকার আবহাওয়ার সঙ্গে মানানসই প্রমাণিত হলো। উচ্চ ফলন ও লাভ হওয়ায় আগামীতে বাণিজ্যিক ভাবে এই ফসল চাষ বাড়াতে কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হবে। তারা জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন বড়বড় শহরে বাজারজাত করতে পারলে অর্থনৈতিক ভাবে লাভবান হবেন।
Design & Developed By: JM IT SOLUTION
Leave a Reply