কালের খবরঃ
জেলা পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন পেতে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়েছে। কারা দলীয় মনোনয়ন পাচ্ছেন-এ নিয়ে নেতা কর্মীদের মধ্যে ও এলাকায় চলছে নানান জল্পনাকল্পনা। গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। এই জেলায় বিগত নির্বাচনে চেয়ারম্যান হিসেবে আওয়ামী লীগ দলীয় মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা চৌধুরী এমদাদুল হক।
এবারও দলীয় মনোনয়নের মাধ্যমে জেলা চেয়ারম্যান নির্ধারন করা হবে বলে দলীয় নেতৃবৃন্দ সূত্রে জানাগেছে। তবে এই জেলা অন্য দলের কোন প্রার্থী দেয়ার সম্ভাবনা নেই। গোপালগঞ্জ বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জাসদ, ওয়াকার্স পার্টি ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে নির্বাচনে প্রার্থী দেয়ার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তারা কোন সদুত্তর দেননি।
সারা দেশের সাথে গোপালগঞ্জ জেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ আগামী ১৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হবে। সম্ভাব্য প্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইতোমধ্যে তারা নির্বাচনে অংশ নিতে প্রচার-প্রচারণা শুরু করে দিয়েছেন। সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে প্রার্থিতা জানান দিচ্ছেন অনেকে। সেই সঙ্গে গোপালগঞ্জ-০১ আসনের সাংসদ ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব) মুহাম্মদ ফারুক খান, গোপালগঞ্জ -০২ আসনের সাংসদ ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম ও গোপালগঞ্জ-০৩ আসনের সাংসদ, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছেন।
আগামী ১৭ অক্টোবরে জেলা চেয়ারম্যান পদে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে আগ্রহী গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ-এর সাবেক চেয়ারম্যান এবং বর্তমানে প্রশাসক হিসেবে দায়িত্বরত চৌধুরী এমদাদুল হক, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব আলী খান, সহসভাপতি শেখ মোঃ রুহুল আমিন, সিকদার নূর মোহাম্মদ দুলু, বর্তমান সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শেখ লুৎফার রহমান বাচ্চু, জেলা আওয়ামী লগের যুগ্ম-সাধারন সম্পাদক এস এম আক্কাস আলি, কোটালীপাড়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ উপ-কমিটির সহসম্পাদক বিমল কৃষ্ণ বিশ্বাস, গোপালগঞ্জ পৌর সভার সাবেক মেয়র ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী লিয়াকত আলী লেকু, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক মোত্তাহিদুর রহমান শিরুর নাম শোনা যাচ্ছে।
জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সূত্রে জানা গেছে, জেলা পরিষদ নির্বাচন দলীয় মনোনয়নের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হবে। তবে দল থেকে এখন পর্যন্ত নির্দেশনা আসেনি। কেন্দ্র যেভাবে নির্দেশনা দিবে আমরা সেগুলো বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করবো। আর দল যাকে মনোনয়ন দিবে, আমরা তার পক্ষে কাজ করে দলীয় প্রার্থীকে নির্বাচিত করবো।
এ ব্যাপারে জেলা বিএনপির আহবায়ক শরীফ রাফিকুজ্জামান বলেন, বর্তমান ক্ষমতাসিন আওয়ামী লীগ সরকারের উপর বিএনপির কোন আস্তা নাই। তাই এই সরকারের অধিনে কোন ধরনের নির্বাচন বিএনপি করবে না। সে হিসেবে গোপালগঞ্জ জেলা পরিষদ নির্বাচনে আমরা যাচ্ছিনা।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি চৌধুরী এমদাদুল হকের অসুস্থতার কথা উল্লেখ করে তার বড় ছেলে নাসিমুল হক চৌধুরী মুঠোফোনে বলেন, আব্বা অসুস্থ্য কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে। নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, বিগত সময়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আব্বাকে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছিলেন। এবারও মনোনয়ন প্রত্যাশী। এই নির্বাচনে দল যদি পুনরায় মনোনয়ন দেয় তাহলে এবারও নির্বাচনে অংশ নিবেন।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব আলী খান বলেন, জেলা পরিষদ নির্বাচন দলীয় মনোনয়নের মাধ্যমে হবে। আমি দলের সেক্রেটারি হিসেবে মনোনয়ন প্রত্যাশী। ‘আশা করি দল আমাকেই মনোনয়ন দেবে। তা ছাড়া দলের সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’ যাকে মনোনয়ন দিবে জেলা আওয়ামী লীগ তার পক্ষে কাজ করবে।
শেখ মোঃ রুহুল আমিন বলেন, ‘দলের সিনিয়র সহ সভাপতি হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করছি। এবছর আমি জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন প্রত্যাশী। আশাকরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে মূল্যায়ন করবেন।
জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সিকদার নূর মোহম্মদ দুলু বলেন, দেশের টানে মুক্তিযুদ্ধ করেছি। ছাত্র রাজনীতি থেকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে কাজ করছি। জেলার সভাপতি চৌধুরী এমদাদুল হকের পর আমিই এখন দলে সিনিয়র। আমার থেকে বয়সে অনেকে বড় আছেন। কিন্তু দলে এসেছেন পরে। তাই আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমার মূল্যায়ন পাবো বলে আশা করছি।
শেখ লুৎফার রহমান বাচ্চু বলেন, দেশ শত্রু মুক্ত করতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সারা দিয়ে জীবন বাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছি। দলের হয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের অভিভাবক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও জননেতা শেখ ফজলুল করিম সেলিম সাহেব যদি আমাকে জেলা চেয়ারম্যান হিসেবে মনোনয়ন দেন সেটা আমি মাথা পেতে নেব।
বিমল কৃষ্ণ বিশ্বাস বলেন, ছাত্র আন্দোলন থেকে প্রাণের সংগঠন আওয়ামী লীগের সঙ্গে আছি। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কমিটিতে দায়িত্ব নিয়ে কাজ করেছি। কোটালীপাড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে দুইবার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছি। জনগনের পাশে থেকে সামর্থ অনুযায়ী সেবা দিয়ে যাচ্ছি। রাজনীতির দীর্ঘ পথে দলের বাইরে কোন কাজ করিনি। দল যেভাবে সিধান্ত দিবে আমি সেই দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করবো। আশাকরি আমার মাতৃ সমতুল্য বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন দিবেন।
জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারন সম্পাদক এস এম আক্কাস আলি জানান, আমি ছাত্র রাজনীতি থেকে এখন পর্যন্ত দায়িত্বের সাথে দলের প্রতিটি কাজে অংশ নিয়ে আসছি। আগামীতে গোপালগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসাবে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী। তিনি বলেন, সারা জীবন দলের জন্য কাজ করেছি আশাকরি তার মূল্যায়ন আমি পাবো।
এছাড়া সদস্য পদে নির্বাচন করতে একাধিক পুরুষ ও নারী প্রার্থীরা কেন্দ্রীয় ও জেলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতৃবৃন্দের কাছে ধন্না দিচ্ছেন। নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণের চেষ্টা করছেন। এবছর জেলা পরিষদ নির্বাচনে গোপালগঞ্জের পাঁচ উপজেলাকে পাঁচটি ওয়ার্ডে বিভক্ত করা হয়েছে। আর এই পাঁচ উপজেলায় অন্তত ২০জন পুরুষ সদস্য ও অন্তত ১০জন নারী সদস্যদের নাম শোনা যাচ্ছে।তারাও দলীয় সমর্থন নিতে কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছেন।
Design & Developed By: JM IT SOLUTION
Leave a Reply