মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:৫৪ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
নানান আয়োজনে মাদারীপুরে উদ্যাপিত হলো আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস মুকসুদপুরে আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ ও বেগম রোকেয়া দিবস পালন মুকসুদপুরে আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস পালন বেগম রোকেয়া দিবসে গোপালগঞ্জে ৫ জয়িতাকে সংবর্ধনা গোপালগঞ্জে আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস পালিত গোপালগঞ্জে জিংক ও আইরন সমৃদ্ধ ধান চাষাবাদ সম্প্রসারনে মাঠ দিবস কাশিয়ানী থেকে ৭টি ককটেল, দেশীয় অস্ত্র সহ দুই ডাকাত সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন গোপালগঞ্জে শতভাগ অর্জনে জেলা প্রশাসনের মতবিনিময় সভা গোপালগঞ্জে ট্রাক চাপায় প্রাণ গেল এক শিশুর গোপালগঞ্জে আন্তঃকলেজ ক্রীড়া প্রতিযোগিতা শুরু

“আমাদের দেশে হবে সেই মীনা কবে?”

Reporter Name
  • Update Time : শনিবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১২.৩১ পিএম
  • ২৭২ Time View

পিয়াল সাহা,গোপালগঞ্জঃ

“শুধু ভিক্ষা করে কখনো স্বাধীনতা লাভ করা যায় না। স্বাধীনতা অর্জন করতে হয় শক্তি দিয়ে, সংগ্রাম করে। স্বাধীনতার মূল্য দিতে হয় রক্ত দিয়ে।”-নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু

আমার কাছে স্বাধীনতা মানে একটি দেশের সার্বভৌমত্বের স্বীকৃতি, যা ওই দেশটির জনগণের দুর্দমনীয় সংকল্পের গভীরে প্রোথিত শিকড়ে রস সঞ্চার করে ঐক্য চেতনার অমিয় ধারাকে বহন করে দেশকে তার কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যের দিকে নিয়ে যায়। একটি দেশ গঠনের জন্য প্রথমে প্রয়োজন ওই দেশের স্বাধীনতা। স্বাধীনতা ব্যতীত কোনো দেশ পরিপূর্ণ হতে পারে না। কিন্তু এই স্বাধীনতা কুড়িয়ে পাওয়া এক মুঠো মু্ক্তো বা বদান্যতার উপহার নয়। এই স্বাধীনতা অর্জিত হয় একটি জাতির কঠোর সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের বিনিময়ে।

রবীন্দ্রনাথের দৃষ্টিতে সোনার বাংলা, জীবনানন্দ দাশের দৃষ্টিতে রূপসী বাংলা, আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের স্বাধীনতাও কিন্তু খুব সহজে অর্জিত হয়নি। স্বাধীনতা অর্জনের পথে বাংলার মৃত্যুভয়হীন সূর্যসন্তানেরা আপন বুকের রক্তে পিচঢালা কালো রাস্তা রঞ্জিত করতেও দ্বিধাবোধ করেনি। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ উপনিবেশ থেকে মুক্ত হলেও আমাদের বাংলাদেশের জনগণ তখনো প্রকৃত স্বাধীনতা লাভ করতে পারেনি। শুরু হয় পশ্চিম পাকিস্তানিদের ঔপনিবেশিক স্বৈরশাসন, যেখানে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ হলো শোষিত এবং পশ্চিম পাকিস্তানিরা হলো শাসক। তাদের প্রথম আঘাত এসে পড়ে আমাদের প্রিয় মাতৃভাষা বাংলার ওপর। কিন্তু আমরা এই অবিচার মেনে নিইনি। চারদিক থেকে শুরু হয় ভাষা আন্দোলন এবং অর্জিত রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলার স্বীকৃতি। তারপরও হানাদারদের অন্যায় শাসন থেমে থাকেনি।

অবশেষে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ উপস্থিত হয়—৭ মার্চ, ১৯৭১। ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতার ডাক দেন। তাঁর ডাকে বাঙালি জাতি স্বাধীনতা অর্জনের যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে আর কোনো উপায় খুঁজে না পেয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরে মিত্রবাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর কাছে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করে। অবশেষে অর্জিত হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা। বাংলাদেশের এই অর্জিত স্বাধীনতা সমগ্র দেশবাসীর বহুকাল লালিত মুক্তি ও সংগ্রামের অঙ্গীকারে ভাস্বর।

কিন্তু দুঃখের বিষয় এই যে, আজ রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বাধীনতা থাকলেও পারিবারিকভাবে অনেক শিশুই পরাধীন। যেখানে স্বাধীনতা মানে একটি জাতির আত্মপরিচয়ের গৌরবে উজ্জ্বল এবং ত্যাগ ও বেদনায় মহীয়ান এক উদ্ভাসিত চেতনা, সেখানে আজ অনেক শিশুর নিজস্ব আত্মপরিচয়ই নেই। স্বাভাবিকভাবে একটি শিশু হেসে-খেলে মজার সাথে শিক্ষা গ্রহণ করবে। শিক্ষাই কেবল একটি শিশুকে উন্নত করতে পারে- তা নয়। একজন শিশুও শিক্ষাব্যবস্থার উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তবে সেজন্য শিক্ষার দ্বারা শিশুদেরকে মূল্যবোধসম্পন্ন নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে হবে। কিন্তু আজ সমাজের অনেকেকেই শিশুদের সফলতা বিচার করে শিখনফলে নয়, পরীক্ষার ফলে। কেউ যদি পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করে, তাহলে সে সফল শিক্ষার্থী হিসেবে সমাজে বিবেচিত; তা সে সৎভাবে করুক, আর অসৎভাবেই করুক। কিন্তু কেউ কখনো এটা বিবেচনা করে দেখে না যে ঐ শিক্ষার্থী আদৌ কিছু শিখতে পেরেছে কিনা এবং সে তার শিখনফলকে আদৌ জীবনে ব্যবহার করতে পারবে কিনা। ফলে শিক্ষা শিশুদের হৃদয়ে মূল্যবোধ সৃষ্টি তো করতে পারছেই না, বরং ভীতিবোধ সৃষ্টি করছে। পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করা যে দোষের-আমি তা বলছি না। তবে শিশুদের শিক্ষাগত যোগ্যতাকে বিচার করার জন্য পূর্বশর্ত হিসেবে পরীক্ষার ফলাফলকে বিবেচনা না করে শিশুদের সততা ও শিখনফলকেই বিবেচনা করা উচিত বলে আমি মনে করি। অন্যথায়, শিক্ষাজীবনে শিশুদের স্বাধীনতা বিঘ্নিত হবে। শুধু তাই নয়। এই দৃষ্টিভঙ্গিকে এক শ্রেণির মানুষ বাল্যবিবাহের প্রধান হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। বাল্যবিবাহের জন্য তারা এই দৃষ্টিভঙ্গিকে তৃতীয় হাত তথা অযুহাত হিসেবে তুলে ধরছে। যে সকল মেয়েরা পড়াশোনা করে মীনার মতো হতে চায়, তাদের স্বপ্ন ও স্বাধীনতা ধূলিসাৎ হয়ে যাচ্ছে এই ধরণের দৃষ্টিভঙ্গির কারণে। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের একটি মেয়ে যদি খুব পরিশ্রমের মাধ্যমে পড়াশোনা করে পরীক্ষায় একটু খারাপ ফলাফল করে, তাহলে তার বাবা এটা ধরেই নেয় যে ঐ মেয়ের দ্বারা আর পড়াশোনা সম্ভব নয়। পড়াশোনা করার জন্য মেয়েদের নিরলস পরিশ্রমকে বৃথা প্রমাণ করে এভাবে অসংখ্য পিতা তাদের কন্যা সন্তানকে অল্প বয়সেই বিয়ে দিয়ে দেন। ফলে যারা ভবিষ্যতে মীনার মতো হতে পারতো, তাদের স্বাধীনতা হারিয়ে গিয়ে স্বপ্নগুলো আর পূরণ হতে পারছে না। বিশ্বব্যাপী বাল্যবিবাহের সর্বোচ্চ হার যে দেশগুলোতে বাংলাদেশ তার মধ্যে অন্যতম। প্রতি ৩টি বিয়ের ২টি হয় বাল্যবিবাহ। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের মার্চ থেকে জুন মাসে সারা দেশে ২৩১টি বাল্যবিবাহ সংঘটিত হয়। অন্যদিকে কুড়িগ্রামের উত্তরাঞ্চলীয় জেলায় সর্বোচ্চ ৬১টি এবং নাটোর জেলায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যক ২৩টি বাল্যবিবাহ সংঘটিত হয়। এভাবে চলতে থাকলে ধীরে ধীরে দেশের প্রায় সকল অঞ্চলে বাল্যবিবাহের ভয়াবহতা বিরাজমান হবে। মীনা তার গ্রামে যখনই বাল্যবিবাহের ঘটনা দেখত, তখনই সে প্রতিবাদ করে বর ও কনে উভয়পক্ষকে বাল্যবিবাহের অপকারিতা সম্পর্কে বোঝাত। কিন্তু আমাদের দেশে গোটা কয়েক মীনা থাকলেও সংখ্যাটা যথেষ্ট না। এবিষয়ে প্রতিটি অভিভাবককে সচেতন হতে হবে। তারা যদি নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করে, পুরো বিশ্বটাই পরিবর্তিত হবে। তাহলেই প্রতিটা ঘরে ঘরে মীনার মতো শিশুরা বেড়ে উঠবে এবং দেশ তথা সমগ্র বিশ্ব উন্নতির চূড়ায় পৌঁছাতে সক্ষম হবে।

 

 

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category

Advertise

Ads

Address

Office : Sheikh Fazlul Haque Moni Stadium (2nd floor), Gopalganj-8100 Mobile: 01712235167, Email: kalerkhabor24.com@gmail.com
© All rights reserved 2022

Design & Developed By: JM IT SOLUTION