হৃদয় সরকার,বশেমুরবিপ্রবি প্রতিনিধিঃ
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অবহেলার কারনে কেন্দ্রীয় মন্দিরকে ঘিরে পরপর একাধিক অসন্তোষজনক ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু এতে প্রশাসনের টনক নড়ছে না।বলছি গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বশেমুরবিপ্রবি) কেন্দ্রীয় মন্দিরের নিরাপত্তার কথা। এ মন্দিরে নিরাপত্তার অভাবে বিভিন্ন সময়ে আপত্তিকর ঘটনা ঘটেছে। বিশ্বিবদ্যালয়ের কম্পিউটার চুরি করে মন্দিরের পেছনে রাখা, পর্যাপ্ত পরিমাণ আলোর অভাবকে সুযোগ হিসেবে কাজে লাগিয়ে নেশাগ্রস্ত এবং অসামাজিক ব্যক্তিরা নানা ধরনের আপত্তিকর ঘটনা ঘটাচ্ছে। এমনকি মন্দিরের কাজে ব্যবহার করা টিউবওয়েলটিও চুরি করে নিয়ে গেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মন্দিরে পর্যাপ্ত পরিমাণে আলোর ব্যবস্থা নেই এবং মন্দিরের নিরাপত্তার জন্য নেই কোনো সিসিটিভি ক্যামেরা। এমনকি নিয়মিত পূজা-পার্বণের জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে পুরোহিত নিয়োগ দেওয়া হয়নি।
এবিষয়ে শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, পুরোহিত নিয়োগ দেওয়া সহ সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে আলোর ব্যবস্থা করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মন্দির কমিটির পক্ষ থেকে একাধিকবার দরখাস্ত প্রদান করলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে আশ্বাস ব্যতিত তেমন কোনো ফলাফল আসেনি। তারা বলেন, মন্দিরের নিরাপত্তার জন্য আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, উপাচার্য, রেজিস্টার বরাবর একাধিকবার দরখাস্ত প্রদান করেছি। কিন্তু দুঃখজনক হলেও এটা সত্যি যে প্রশাসনের অবহেলার কারনে আমরা হিন্দু শিক্ষার্থীরা মন্দির কেন্দ্রিক ধর্মীয় বিষয় থেকে দূরে সরে যাচ্ছি।
এবিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মন্দিরের সাধারন সম্পাদক সজল বর্মন বলেন, মন্দিরের পেছনে পর্যাপ্ত পরিমাণ আলোর অভাবে বহিরাগতরা সেখানে গিয়ে বিভিন্ন ধরনে অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত হয় এবং এগুলোর প্রমাণসহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর বরাবর গত ২৮ আগস্ট তারিখে মন্দিরের নিরাপত্তার জন্য দরখাস্ত প্রদান করি। কিন্তু দরখাস্ত প্রদানের এক সপ্তাহ অতিক্রম হলেও প্রশাসন থেকে এখন পর্যন্ত আলোর ব্যবস্থা করে দেয়নি। যার কারনে মন্দিরের কাজে ব্যবহার করা টিউবওয়েলটা দূর্বৃত্ত্বরা চুরি করে নিয়ে গেছে। তিনি বলেন, মন্দিরের পেছনে লাইটের ব্যবস্থা থাকলে এমনটা হতোনা এমনকি মন্দিরের সামনে সিসিটিভির ব্যবস্থা থাকলে এমন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটত না।
বিশ্ববিদ্যালয় মন্দির গেইট সংলগ্ন দায়িত্বপ্রাপ্ত আনসার মো. আক্তার হোসেন বলেন, সন্ধ্যার পর থেকে আমি গেইটে দায়িত্ব পালন করছি। টিউবওয়েল চুরি হয়ে যাওয়ার বিষয়টা আমি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে জানতে পরে ঘটনাস্থল পর্যবেক্ষন করি। তিনি বলেন, মন্দিরের পেছনে পর্যাপ্ত পরিমাণ আলোর অভাব রয়েছে যার কারনে সেখানে বিভিন্ন ধরনের নেশা করা হয় এবং অসামাজিক কার্যক্রম ঘটে থাকে। যার প্রমাণ আমি নিজে পেয়েছি। মন্দিরের পেছন থেকে খুব সহজেই টিউবওয়েলটা খুলে নিয়ে গেছে। মন্দিরের নিরাপত্তার জন্য তিনি আরো বলেন, মন্দিরের সামনে বা পেছনে সিসিটিভির ব্যবস্থা থাকলে এমন আপত্তিকর ঘটনা ঘটত না।
মন্দির সম্পর্কিত বিষয়ে জানতে চাইলে রসায়ন বিভাগের শিক্ষক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর পার্থ সারথী রায় বলেন, একটি টিউবওয়েল চুরি হওয়ার ঘটনা খুবই অপ্রত্যাশিত। কতোটা নিচু মন-মানসিকতার লোকজনের কাজ এটি তা বিবেচনা করলে বোঝা যায় মন্দিরের পিছনের অন্ধকার বা ঝোপঝাড় এ কারনে খারাপ লোকদের আনাগোনা রয়েছে। এ ধরনের অনাকাঙ্খিত ঘটনা যারা ঘটাতে পারে তারা অত্যন্ত নিকৃষ্ট মন মানসিকতার। এদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ সতর্ক হতে হবে আমাদের। তিনি বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি এরা বহিরাগত। কাজেই প্রশাসন সহ সকলকে নিরাপত্তাজনিত ইস্যু গুরুত্ব সহকারে দেখার আহব্বান করছি। তিনি আরও বলেন, প্রশাসন মন্দির বা সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দাবীর ব্যাপারে যথেষ্ট গুরুত্ব দিলেও কোনো এক অজানা কারণে নিরাপত্তাজনিত ইস্যুটাতে বিলম্বে পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। আমি প্রশাসনের কাছে জোর দাবী জানাচ্ছি। পর্যাপ্ত আলোসহ সিসিটিভি স্থাপন এবং দায়িত্ব প্রাপ্ত আনসারদের নির্দিষ্ট সময় পরপর টহল জোরদার করার জন্য। সবশেষে সনাতন শিক্ষার্থীদের আরো সতর্কতার সহিত মন্দিরের কার্যক্রম পরিচালনার আহবান করছি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড.রাজিউর রহমান বলেন, মন্দিরের নিরাপত্তার জন্য সনাতন ধর্মাবল্মবী শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে একটি দরখাস্ত পেয়েছি। এবং দরখাস্তের প্রেক্ষিতে আমি মন্দিরের নিরাপত্তার জন্য আলোর ব্যবস্থা করে দিয়েছি কিন্তু প্রশাসনিক কারনে আলোর ব্যবস্থা করতে একটু বিলম্ব হয়েছে। তিনি বলেন, মন্দির থেকে টিউবওয়েল চুরি হয়ে যাওয়াটা খুবই অপ্রত্যাশিত, এবিষয়ে আমরা মন্দিরের জন্য টিউবওয়েলের ব্যবস্থা করে দিব।
এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মোরাদ হোসেনের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও কোনো প্রকার যোগাযোগ করা যায়নি।
উল্লেখ্য, গত বছর ২০২১সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার থেকে কম্পিউটার চুরি করে সেগুলো মন্দিরের পেছনের ঝুপঝাড়ে রাখা হয়। এবং মন্দিরের পেছনে পর্যাপ্ত পরিমাণে আলোর অভাবে একাধিকবার অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। বহিরাগত এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সেখানে গিয়ে মাদকদ্রব্য সেবন করারও প্রমাণ পাওয়া যায়।
Design & Developed By: JM IT SOLUTION
Leave a Reply