কালের খবরঃ
উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে দেশের প্রথম ৬ লেন বিশিষ্ট কালনা সেতু । গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার কালনা পয়েন্টে মধুমতি নদীর উপর নির্মানাধীন কালনা সেতুর নির্মাণ কাজ এখন শেষ পর্যায়ে। এখন চলছে সেতুর মাঝে সড়ক ডিভাইডারের কাজ।সেপ্টেম্বর মাসের যেকোন দিন উদ্বোধনের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। দৃষ্টিনন্দন এ সেতু বাংলাদেশের মধ্যে প্রথম ৬ লেনের সেতু। এটির মাঝের দেড়শ মিটার লম্বা স্প্যানটি বড় ধনুকের মতো বাঁকা। জাপান বাংলাদেশ যৌথ ভাবে সেতুটি নির্মাণ করেছে। সেতু চালু হলে বেনাপোল স্থলবন্দরসহ দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের অন্ততঃ ১০টি জেলার মানুষের দীর্ঘ দিনের দুর্ভোগ লাঘব হবে। কমে যাবে বিভিন্ন জেলার সঙ্গে ঢাকার দুরত্ব। সেই সাথে পুর্ণঙ্গতা পাবে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। কালনা সেতু চালুর মাধ্যমে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে সড়ক পথে যাতায়াতের আর কোন প্রতিবন্ধকতা থাকবেনা।
এলাকাবাসী ও সড়ক বিভাগ সূত্রে জানাগেছে,মধুমতি নদীর উপর এ অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘ দিনের প্রত্যাশিত কালনা সেতু। নির্মাণ কাজ ৩১ আগস্টের মধ্যে শেষ হবে বলে জানিয়েছেন সড়ক বিভাগ। বাকী থাকছে লাইটপোষ্ট স্থাপনের কাজ। আগামী এক মাসের মধ্যে সে কাজটিও সম্পন্ন হবে। সেতুটি উদ্বোধনের জন্য শেষ মুহুর্তের কাজ এগিয়ে চলছে দ্রুত গতিতে। গত ২৫ জুন পদ্মা সেতু চালু হলেও কালনা সেতু চালু না হওয়ায় দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ পদ্মা সেতুর সুফল পুরোপুরি ভোগ করতে পারছেন না। এ সেতুটি চালু হলে সমগ্র বাংলাদেশের সাথে দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চলের যাতায়াতের আর কোন প্রতিবন্ধকতা থাকবে না।স্বাচ্ছন্দে এ অঞ্চলের মানুষ রাজধানী ঢাকাসহ দেশব্যাপী বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করতে পারবেন। সেই সাথে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ সারাদেশের সাথে বেনাপোল স্থলবন্দরের যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজতর হবে। ফলে সমগ্র বাংলাদেশের সাথে এ অঞ্চলের বাড়বে আর্ন্তজাতিক বানিজ্যিক প্রসারও।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানাগেছে, ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইনপ্রুভমেন্ট প্রজেক্টের মাধ্যমে ২০১৮ সালের ৫ সেপ্টেম্বর সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ ও সেতু মন্ত্রনালয় নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করছে। ব্রিজটির নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথাছিল চলতি বছরের ২৫ জুলাই। এই সেতুর দৈর্ঘ ৬৯০ মিটার, প্রস্থ ২৭.১০ মিটার। ২৭২টি পাইলের উপর ১২টি পিয়ার ও ১৩টি স্প্যান বসানো হয়েছে। ব্রিজে গার্ডার সংখ্যা ১৬০টি। মাঝে ১৫০ মিটার দৈর্ঘ একটি স্টিলের ব্রিজ রয়েছে। যেটি ধনুকের মতো বাঁকা। এই অংশটি ব্রিজের সৌন্দর্য বর্ধণ করেছে।সেতুর দুইপাশে এপ্রোচ সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে সোয়া ৪ কিলোমিটার। এর মধ্যে ৮টি আন্ডারপাস ও ১৪টি কালভার্ট রয়েছে।এসবের চুক্তিমূল্য (নির্মাণ ব্যয়) ধরা হয়েছে ৯৫৯ কোটি ৮৫ লাখ টাকা।
রাতইল ইউনিয়নের শংকরপাশা গ্রামের বাসিন্দা মঞ্জুরুল আলম বলেন, কালনা সেতু আমাদের প্রাণের দাবী ছিলো। দেরীতে হলেও সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। শুনেছি সেপ্টেম্বর মাসে সেতুতে যানবাহন চলাচল শুরু হবে। সেতুটি চালু হলে আমাদের এলাকা এবং নড়াইল জেলাসহ পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার উৎপাদিত কৃষিপন্য সহজে দেশব্যপি পাঠানো সম্ভব হবে। কৃষক ন্যায্যমূল্য পাবেন। ঢাকার মানুষ কালনা ব্রিজ পার হয়ে অনাসায়ে বেনাপোল বর্ডার হয়ে ভারত যেতে পারবেন। মোটকথা যাতায়াতের একটা নতুন দিগন্ত সৃস্টি হবে।
নড়াইল জেলার লক্ষীপাশা গ্রামের বাসিন্দা মোঃ ইদ্রিস আলী বলেন, আমার বয়স ৬০বছর। এতো দিন কালনায় খেয়া ও ফেরী পারাপার হয়ে যাতায়াত করেছি। এতে আমাদের যেমন ভোগান্তী হয়েছে তেমনি টাকা পয়সাও বেশী খরচ হয়েছে। ব্রিজ চালু হলে আমাদের আর ভোগান্তী থাকবেনা। সহজেই চলাচল করতে পারবো। এ জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাই।
শুধু মঞ্জুরুল আলম ও ইদ্রিসআলী নয় অভিব্যক্তি জানিয়েছেন,লোহাগড়া গ্রামের নাসিমা আক্তার,জোৎসনা বেগম, শংকরপাশা গ্রামের ভ্যান চালক হায়দার মোল্লা, আফি শেখ, চাপতা গ্রামের অনিল রায়, অসিম বিশ্বাস সহ অনেকে। তারা বলেন, কালনা সেতু হয়ে যশোর বেনাপোল, সাতক্ষীরা, নড়াইল, খুলনা, ঝিনাইদাহ,মাগুরাসহ বিভিন্ন জেলার মানুষ দেশের বিভিন্ন স্থানে স্বাচ্ছন্দে যেতে পারবো। এখন আর খেয়া নৌকা বা ফেরীর জন্য অপেক্ষা করতে হবে না। যখন ইচ্ছা তখন রওনা দিয়ে গন্তব্যে পৌছানো যাবে।
কালনা সেতুর প্রকল্প ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মোঃ আশরাফুজ্জামান বলেন, জাতীয় ও আন্তুর্জাতিক পর্যায়ে এ সেতুর গুরুত্ব অনেক। সেপ্টেম্বরের প্রথমদিকে সেতুটি যানচলাচলের জন্য সম্পুন্ন প্রস্তুত থাকবে। প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধনের দিনক্ষণ ঠিক করলে সেতুটি যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে। কালনা সেতু এক দিকে যেমন জনগনের ভোগান্তী দূর করবে সেইসাথে এ অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘ দিনের প্রতিক্ষার অবসান ঘটবে, অন্যদিকে বেনাপোলের সাথে টেকসই সড়ক যোগাযোগ স্থাপনের মাধ্যমে খুলবে বাংলাদেশের সাথে আর্ন্তজাতিক ব্যবসার প্রসার।এলাকার উৎপাদিত কৃষিপন্য ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানের পৌছাতে এই সেতুর ভুমিকা গুরুত্বপুর্ণ হবে। আর সেই সাথে পুর্ণঙ্গতা পাবে স্বপ্নের পদ্মা সেতু।
Design & Developed By: JM IT SOLUTION
Leave a Reply