
কালের খবরঃ
সড়ক দুর্ঘটনায় আহতদের সুচিকিৎসার জন্য ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের পাশে গোপালগঞ্জের ঘোনাপাড়ায় ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে একটি ট্রমা সেন্টার। সেন্টারটি নির্মাণের পর প্রায় অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে। যেখানে আঘাত বা সড়ক দুর্ঘটনায় আহতদের চিকিৎসা দেয়ার কথা, সেখানে চলছে কমিউনিটি ক্লিনিকের মতো জ্বর , কাশি বা সর্দি রোগের চিকিৎসা। কর্তৃপক্ষ বলছে, যন্ত্রাংশ, চিকিৎসক ও লোকবলের অভাবে সেন্টারটি পূর্ণাঙ্গভাবে চালু করা সম্ভব হচ্ছে না।
গোপালগঞ্জ শহরতলীর ঘোনাপাড়া এলাকায় ২০২০ সালে ট্রমা সেন্টারটি নির্মাণ করা হয়। এখানে হাসপাতাল বিল্ডিংসহ মোট ৩টি বিল্ডিং রয়েছে। প্রায় ৬ বছর আগে নির্মাণ কাজ শেষ হলেও সেন্টারটি চালু না হওয়ায় নষ্ট হচ্ছে বিল্ডিং,আসবাবপত্রসহ বিভিন্ন যন্ত্রাংশ। আর যেসব যন্ত্রাংশ স্থাপন করা হয়েছিল তার মধ্যে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মালামালও ইতোমধ্যে চুরি হয়ে গেছে এবং সেন্টারের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।

সেন্টারে গিয়ে দেখা গেছে মাত্র তিনজন সিনিয়র স্টাফ নার্স, দুইজন উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার ও একজন অফিস সহায়ক এবং একজন নৈশ্য প্রহরী দিয়ে চলছে এই প্রতিষ্ঠানের কর্যক্রম। যারা এলাকার সর্দি, কাশি ও জ্বর এবং ডায়াকেটিকে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকেন। প্রতিদিন এই স্টোরে গড়ে অর্ধশত রোগী সেবা নিয়ে থাকেন। কর্মক্রম না থাকায় বিল্ডিং গুলোর রং নষ্ট হয়ে গেছে। হাসপাতাল ও আবাসিক ভবনের বিভিন্ন কার্নিশে জন্মেছে ছোট-বড় পরগাছা। সেই সাথে আবাসিক ভবনগুলোতে মরিচা ধরেছে। সেন্টারের ভিতরে ক্ষতিগ্রস্ত যন্ত্রপাতি, ভাঙাচোরা অবস্থায় পড়ে আছে। সড়কে চলাচলকারী পরিবহন চালক ও স্থানীয়রা দুর্ঘটনায় আহত লোকজনকে সেবা দিতে সেন্টারটি পুর্ণাঙ্গভাবে চালুর দাবী জানিয়েছেন।

ট্রমা সেন্টারের চিকিৎসা নিতে আসা সদর উপজেলার গোবরা ইউনিয়নের ভাটিয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা তামিম হোসেন বলেন, আমার তিন দিন জ্বর। তাই ওষুধ নিতে এসেছি। এখানে জ্বর কাশি ও ডায়াবেটিক রোগের ওষুধ দেয়া হয়। আমরাতো জানতামএক্সিডেন্ট বা ভাঙ্গাচোরা রোগীদের চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতাল টি বানানো হয়েছে। তার কোন চিকিৎসা এখানে হয়না।
নাম প্রকাশে অনেচ্ছুক জেলার কোটালীপাড়া উপজেলার বাসিন্দা ও ইডিসিএল এ চাকুরীরত এক ব্যক্তি বলেন, ট্রমা সেন্টারে কাজ হবে দুর্ঘটনায় কবলিত রোগীদের চিকিৎসা দেয়া। কোটি কোটি টাকা খরচ করে হাসপাতাল তৈরী করেছে অথচ চালুর ব্যাপারে সরকার বেশ উদাসিন। প্রতিনিয়ত গোপালগঞ্জসহ আশপাশ এলাকায় দুর্ঘটনা ঘটে। গ্রামবাসী মারামারি করে অসুস্থ হয়। দের নচিকিৎসার জন্য ঢাকা- খুলনা বা বরিশাল মেডিকেলে যেতে হয় । যেতে যেতে অনেক রোগী মারা যায়। এসব বিষয় বিবেচনা করে এই সেন্টারটি চালু হওয়া প্রয়োজন।

ট্রমা সেন্টারে কর্মরত সিনিয়র স্টাফ নার্স পিংকি সিকদার বলেন, এখানে আশপাশ এলাকার নারী পুরুষ আসেন জ্বর, কাশিসহ ঠান্ডা জনিত রোগ নিয়ে। আবার কেউবা আসেন সরকারি হাসপাতালে ডাক্তার দেখিয়ে ডায়বেটিক রোগের ওষুধ নিতে। আমরা ৩জন নার্স ও ২জন উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার সেসব রোগীদের চিকিৎসাসেবাসহ ওষুধ সরকারাহ করে থাকি। সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত প্রতিষ্ঠান খোলা থাকে। প্রতিদিন গড়ে ৫জন রোগী এখান থেকে সেবা পেয়ে থাকেন। তিনি আরো বলেন, ট্রমা সেন্টারটি চালু না হওয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় আহতরা এখানে আসেনা। এলাকাবাসী ছোটখাটো রোগ নিয়ে এখানে আসেন। যারা আসেন আমরা তাদের চিৎিসা দিয়ে থাকি।

অফিস সহায়ক ওবায়দুর রহমান বলেন, সেন্টারটি চালু হওয়া দরকার। গোপালগঞ্জে অনেক সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। মানুষ জীবন হাতে নিয়ে ঢাকা- খুলনা যায়। অনেকে পথেই মারা যায়। এই সেন্টারটি চালু হলে দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা কমে আসবে।
সিভিল সার্জন, ডাঃ আবু সাঈদ মোঃ ফারুফ, বলেন, বেশ কিছু সমস্যার কারণে ট্রমা সেন্টারটি চালু করা সম্ভব হয়ে উঠেনি। ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ট্রমা সেন্টারের সকল তথ্য উপাথ্য পাঠানো হয়েছে। চিকিৎসকসহ প্রয়োজনীয় জনবল পেলে প্রতিষ্ঠানটি চালুর মাধ্যমে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া সম্ভব হবে। এতে প্রাণহানির সংখ্যা অনেকটা কমে আসবে । মানুষ উপকৃত হবেন বলে মনে করেন এই চিকিৎসক। #
Design & Developed By: JM IT SOLUTION