কালের খবরঃ
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা । এ উপলক্ষে গোপালগঞ্জের মন্দিরগুলোতে এখন শুরু হয়েছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। নানা আয়োজনের মধ্যে দিয়ে পূজার পরিবেশ তৈরি করছেন প্রতিমা শিল্পী ও আয়োজকরা। ইতিমধ্যেই খড় ও মাটি দিয়ে প্রতিমা তৈরির কাজ শেষ হয়েছে এবং এখন চলছে রং তুলির শেষ আঁচড়ে প্রতিমাগুলোর সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলার কাজ। দুর্গাপূজার আনন্দে মেতে উঠতে প্রস্তুত গোপালগঞ্জের প্রতিটি মন্দির।
এ বছর গোপালগঞ্জ জেলার ১২৮৫টি মন্দিরে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মন্দির সদর উপজেলায়—৩৫৩টি, কোটালীপাড়ায় ৩২১টি, মুকসুদপুরে ২৯৮টি, কাশিয়ানীতে ২২৪টি এবং টুঙ্গিপাড়ায় ৯০টি মন্দিরে পূজা হবে। পূজার আয়োজন যাতে নির্বিঘ্নে এবং শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়, সেজন্য প্রশাসনও সজাগ রয়েছে। মন্দিরগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে এবং ১ হাজার ৭৭টি মন্দির সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় থাকবে। পুলিশ, আনসারসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা পুরো সময় জুড়ে মন্দিরগুলোতে দায়িত্ব পালন করবেন।
পূজার প্রস্তুতি নিয়ে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আগামী ২১ সেপ্টেম্বর মহালয়ার মধ্য দিয়ে দেবী পক্ষের শুরু হবে, আর ২৮ সেপ্টেম্বর ষষ্ঠী পূজার মাধ্যমে পূজা শুরু হবে। ২ অক্টোবর বিজয়া দশমীর মাধ্যমে দুর্গাপূজা শেষ হবে।
গোপালগঞ্জ শহরের বিভিন্ন মন্দির ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিমা তৈরির কাজ এখন শেষ, এখন চলছে রং তুলির শেষ আঁচড়ে দেবী দুর্গা, লক্ষ্মী, গনেশ, কার্তিক এবং সরস্বতীর রূপে প্রতিমাগুলোর রঙিন রূপ ফুটিয়ে তোলার কাজ। প্রতিমা শিল্পীরা দিন–রাত এক করে প্রতিমাগুলোর সৌন্দর্য চূড়ান্ত করছেন।
প্রতিমা শিল্পী উত্তম পাল বলেন, এ বছর আমি ৫টি প্রতিমা তৈরি করেছি। প্রতিটি প্রতিমার রং তুলির শেষ আঁচড় দিয়ে সাজানো হচ্ছে। তবে মজুরি কম হলেও, আমাদের প্রাচীন পেশা ধরে রাখার জন্য আমরা সকল পরিশ্রম করতে প্রস্তুত।
প্রতিমা শিল্পী বাবুল পাল জানান, বাজারের দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাওয়ায় মজুরি কম হয়েছে, তবে তারপরও এই পেশা ছাড়ার প্রশ্নই ওঠে না। বাপ–দাদার আদি পেশা যেন টিকে থাকে, তার জন্যই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
পূজা আয়োজকদের মধ্যে অন্যতম জয়দেব সাহা বলেন, এ বছর মন্দিরের ডেকোরেশন, আলোকসজ্জা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান নিয়ে পূজার আয়োজন করতে যাচ্ছি। দর্শনার্থীদের জন্য পূজা দেখার সুন্দর ব্যবস্থা করা হয়েছে।
গোপালগঞ্জের পূজা উদযাপন ফ্রন্টের সভাপতি অশোক বিশ্বাস জানান, গোপালগঞ্জ একটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জেলা, এবং এখানে সব ধর্মের মানুষ একসঙ্গে পূজা উদযাপন করেন। আমাদের উদ্দেশ্য হল সকলের সহযোগিতায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশে পূজা উদযাপন করা।
এছাড়া, গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসক মুহম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, পূজার আগে ইতিমধ্যে প্রশাসনিক প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং আমরা নিশ্চিত যে, গোপালগঞ্জে দুর্গাপূজা নির্বিঘ্নে হবে।
অন্যদিকে, আয়োজক শ্রী নাগদীপ সরকার বলেন, এ বছর পূজা জাঁকজমকভাবে হবে। মন্দির সাজানো, আলোকসজ্জা, দর্শনার্থীদের জন্য পূজা দেখার ব্যবস্থা, এবং প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা সব কিছুই নিশ্চিত করা হয়েছে।
এই বছর দুর্গাপূজার উৎসবটি গোপালগঞ্জের গ্রাম থেকে শহর পর্যন্ত ঢাকের বাজনা, উলুধ্বনি এবং আরতিতে মুখরিত হয়ে উঠবে। সব মিলিয়ে, গোপালগঞ্জে শারদীয় দুর্গাপূজা এবছর হতে যাচ্ছে এক বর্ণিল, আনন্দময় এবং শান্তিপূর্ণ উৎসব।
Design & Developed By: JM IT SOLUTION