কালের খবরঃ
গোপালগঞ্জে সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। গত রবিবার (১০ আগস্ট) রাতে ওই শিক্ষার্থীর মা বাদী হয়ে শিক্ষক মোহাম্মদ মিরাজ হোসেনকে (৪০) আসামি করে মামলাটি দায়ের করেছেন। তিনি গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার করপাড়া ইউনিয়ন বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ক শিক্ষক। তবে তিনি ইংরেজি বিষয়ে শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়াতেন।
রবিবার (১০ আগস্ট) রাতে মামলাটি রেকর্ড করা হলেও আজ সোমবার (১১ আগস্ট) দুপুরে মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গোপালগঞ্জ সদর থানার ওসি (তদন্ত) মোঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন।
ওসি (তদন্ত) মোঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ওই শিক্ষার্থীর জবানবন্দী রেকর্ড করার জন্য আজ সোমবার তাকে আদালতে পাঠানো হয়। গোপালগঞ্জ সদর কোর্টের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রোমানা রোজী ২২ ধারায় ভুক্তভোগী স্কুল ছাত্রীর জবানবন্দী রেকর্ড করেন। তবে মামলা দায়েরের পর আসামিকে গ্রেপ্তার করতে ২ দফা অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। মামলার বিষয়টি আঁচ করতে পেরে রবিবার থেকে তিনি পলাতক রয়েছেন। তাকে গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
এর আগে গত রবিবার দুপুরে (১০ আগস্ট) শিক্ষক মিরাজ হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এছাড়া এ ঘটনার তদন্তে ৩ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেন স্কুল ম্যানেজিং (অ্যাডহক) কমিটির সভাপতি ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ সেলিম তালুকদার। তদন্ত কমিটির প্রধান হয়েছেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের একাডেমিক সুপারভাইজর অরুণ চন্দ্র মন্ডল। কমিটির অন্য দু’জন সদস্য হলেন স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সদস্য মফিজুর রহমান ও স্কুলের সহকারী শিক্ষক নাজভিন জাহান। কমিটিকে আগামী ২০ আগস্টের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে স্কুলের প্রধান শিক্ষক কমলেশ বিশ্বাস বলেন, গত ৬ আগস্ট সপ্তম শ্রেণির ওই ছাত্রীর জন্মদিন ছিল। স্কুল ছুটির পর বিকাল সাড়ে চারটা থেকে পৌনে পাঁচটার দিকে বিদ্যালয়ের পরিত্যক্ত ভবনের একটি কক্ষে জন্মদিনের অনুষ্ঠান করেন ওই শিক্ষক সহ শিক্ষার্থীরা। জন্মদিনের অনুষ্ঠান শেষে ওই শিক্ষার্থী ভুল করে সেখানে একটি ডায়েরি রেখে চলে আসে। পরে সে সেখানে আবার ডায়েরি আনতে যায়। তখন শিক্ষক মোহাম্মদ মিরাজ হোসেন তাকে একা পেয়ে তার সাথে অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণ আচরণ করেন। এরপর ওই শিক্ষার্থী কাঁদতে কাঁদতে পরিত্যক্ত ভবনের ওই রুম থেকে বেরিয়ে আসে। সহপাঠী সহ অন্যান্য শিক্ষার্থীদের বিষয়টি সে জানায়। এ ঘটনায় পরের দিন ৭ আগস্ট শিক্ষার্থীরা অভিযুক্ত শিক্ষকের পদত্যাগের দাবিতে আমার কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করে। এ ব্যাপারে আমি শিক্ষার্থীকে জিজ্ঞাসাবাদ করি। তখন সে আমার কাছে ঘটনা খুলে বলে।
তিনি আরো বলেন, ওই শিক্ষক ২০১৯ সালে স্কুলে একই ধরনের ঘটনা ঘটান। তখন ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষ থেকে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। অভিযুক্ত শিক্ষক ওই ঘটনায় ২৫ দিন জেল খেটেছিলেন। পরে আপস-মীমাংসা করে তিনি মামলা থেকে রক্ষা পান, বলেন প্রধান শিক্ষক।
এদিকে, গত রবিবার সকাল দশটায় স্কুল খোলার পর শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করে ওই শিক্ষকের পদত্যাগের দাবিতে স্কুল ক্যাম্পাসে মানববন্ধন সহ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে। এ সময় তারা শিক্ষকের পদত্যাগ দাবি সম্বলিত ব্যানার, ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড বহন করে। স্লোগানে স্লোগানে শিক্ষার্থীরা স্কুল প্রাঙ্গণ উত্তাল করে তোলে।
খবর পেয়ে স্কুল ম্যানেজিং (অ্যাডহক) কমিটির সভাপতি মোঃ সেলিম তালুকদার তার কার্যালয়ে প্রধান শিক্ষক, শিক্ষার্থীর অভিভাবক সহ অন্যান্যদের ডেকে নেন। শিক্ষার্থীর বাবা-মা সহ উপস্থিত সবার কথা শুনে ঘটনার সত্যতা পান। তিনি তাৎক্ষণিকভাবে অভিযুক্ত শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করেন।
এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠনের কথা জানিয়ে স্কুল ম্যানেজিং (অ্যাডহক) কমিটির সভাপতি মোঃ সেলিম তালুকদার বলেন, অভিযুক্ত শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তে ৩ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী ২০ আগস্টের মধ্যে তদন্ত কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনে অভিযুক্ত শিক্ষক মিরাজ হোসেন দোষী সাব্যস্ত হলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পাশাপাশি তাকে স্থায়ী বরখাস্তের সুপারিশ করা হবে বলে জানান ওই কর্মকর্তা।
অভিযুক্ত শিক্ষক মোহাম্মদ মিরাজ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, তার বিরুদ্ধে আনিত ধর্ষণ চেষ্টার কথা অস্বীকার করে বলেন, জন্মদিনের অনুষ্ঠানে ছাত্রীর কানের কাছে মুখ নিয়ে “হ্যাপি বার্থডে” বলি। ২০১৯ সালেও এক ছাত্রীর জন্মদিনের অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন। তখন প্রতিপক্ষ তাকে হয়রানি করার জন্য ভুক্তভোগী পরিবারকে দিয়ে মামলা দিয়েছিল। তখন তিনি প্রায় ১ মাস জেলে ছিলেন। পরে ওই পরিবার মামলা তুলে নিলে তিনি জেল থেকে বের হয়ে আসেন।
Design & Developed By: JM IT SOLUTION