কালের খবরঃ
জ্বালানী তেলের দাম বৃদ্ধির সাথে সাথে গোপালগঞ্জের বাজারেও বৃদ্ধি পেয়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পন্যের দাম। সবচেয়ে বেশী বেড়েছে কাচা মরিচের দাম। মরিচ ১৬০ টাকা স্থল থেকে ২৮০টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। চাল, ডাল আটাসহ মানুষের প্রয়োনীয় সকল জিনিসের দামই বেড়েছে। বাদ পড়েনি শাকসবজিও। বেচা বিক্রিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ায় তুলনামুলক বেচাকেনা কমে গেছে দোকানীদের। অনেকে চাহিদার তুলনায় কম কিনে বাড়ি ফিরছেন।
শুক্রবার (১২ আগস্ট) গোপালগঞ্জ জেলা শহরের বড়বাজার, বটতলাবাজার পাচুড়িয়া বাজারে গিয়ে দেখা গেছে। বাজার করতে গিয়ে ক্রেতা সাধারণ বেকায়দায় পড়েছেন। দাম বৃদ্ধির কারনে প্রয়োজনের তুলনায় কম জিনিসপত্র কিনে বাড়ি ফিরছেন তারা। চালের দাম প্রকার ভেদে কেজিতে বেড়েছে তিন-চার টাকা। আর সুগন্ধি চালের দাম বেড়ে কেজিতে ৬ থেকে ৮টাকা। পিয়াজের দাম বেড়েছে কেজিতে ৫টাকা, রসুন ১০টাকা, আদা ১০টাকা, পটল ২০টাকা, বেগুন ২০, শশা ১০টাকা, বরবটি ১৫, গাঁজর ৩০টাকা, টমেটো ২০টাকা, উচ্ছে ৩০টাকা, ঢেঁড়শ ২০টাকা মিস্টি কুমড়া ১০টাকা, পাতাকপি ১০টাকা, লাউ প্রতিপিচ ১০টাকা বেড়েছে। সবচেয়ে বেশী বেড়েছে কাঁচা মরিচের দাম। প্রতিকেজি কাঁচামরিচে দাম বেড়ে ৮০ থেকে ১০০ বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ২৮০টাকা। লাউ প্রতিপিচ ১০/১৫ টাকা ও মিষ্টি কুমড়া কেজিতে ৫টাকা বেড়েছে। ডিম প্রতিকেচ (৩০টা) ৩০০ থেকে বেড়ে ৩৩০টাকা, জিরা ৪৪০টাকার স্থলে বেড়ে ৪৮০টাকা, আটা ৪৫ থেকে ৫০টাকা। চিনি ৮০টাকা থেকে ৯০টাকা। দাম বেড়েছে লবনেরও। প্রতিকেজি লবনের মূল্য ৫/১০টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। বেড়েছে বিভিন্ন প্রকার সাবানের দামও। প্রতিপিচ সাবানে ৫ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া উপজেলা সদর ও গ্রামের হাট বাজারেও বৃদ্ধি পেয়েছে দ্রব্য মূল্য।
এদিকে মাংসের বাজারও চড়া। প্রতিকেজি খাসির মাংস ৮৫০টাকা ও গুরুর মাংস ৭০০টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। যা পূর্বের তুলনায় কেজিতে ৫০টাকা বেশী। মুরগীর মাংসে বেড়েছে ৩০ থেকে টাকা। বাজার সদাই করতে এসে হিমশিম খাচ্ছে ক্রেতা সাধারণ। আর ব্যবসায়ীরা বলছেন দাম বাড়াতে বেচাকেনায় খুবই অসুবিধা হচ্ছে। বেচাবিক্রিও কমে গেছে তাদের। যে আগে পাঁচ কেজি চাল কিনতো সে নিচ্ছে তিন কেজি। বিক্রি অর্ধেকে নেমে গেছে। এরপরও খরিদাররা আমাদের সঙ্গে খারাপ আচরন করে থাকে। দামাদামি করে মাল বেচতে হয়।
গোপালগঞ্জ বড়বাজারে বাজার করতে আসা সদর উপজেলার ঘোষগাতী গ্রামের রিক্সা চালক কিবরিয়া শেখ বলেন, বাজারে এসে দেখি সব জিনিসপত্রের দাম বেশী। তরিতরকারি তো ছোয়া যাচ্ছে না। কার্প জাতীয় মাছ প্রকার ভেদে ২৪০ থেকে ২৮০টাকা। ইলিশের দাম শুনতে ভয় লাগে। আধাকেজি ওজনের ইলিশ এক হাজার টাকা । কেজি সাইজের ইলিশ একহাজার চারশ থেকে পাঁচশ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশী মাছ পাঁচশ থেকে এক হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আমারা যারা কম আয়ের মানুষ তাদের তো পুকুরের চাষের মাছ ছাড়া আর কি খাবো। ১২০ টাকার কার্প মাছ এখন ২৬০টাকায় পৌছেয়েছে। আর তেল লবন, আটা, ডাল, সাবান, মশলা সব কিছুরই দাম বেড়েছে। এখন কিভাবে চলবো বুঝে উঠতে পারছিনা।
শুধু কিবরিয়া শেখ নয় কথা হয় বাজার করতে আসা ঘোষেরচর গ্রামের রোকশনা বেগম, সেলিম খান, শহরের নবীনবাগ এলাকার মুদী দোকানী নূর আলম সিকদার, মধুপুর গ্রামের আলম গাজী, হাসান মোল্লা,মোঃ আজিবর মোল্লার সাথে। তারা বলেন, শাকসবজি থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় প্রতিটা জিনিসের দাম বেড়েছে। যে টাকা নিয়ে বাজারে আসি তা দিয়ে চাহিদা মোতাবেক বাজার করতে পারছিনা।ফলে অর্ধেক বাজার করে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে। এরপর আবার ছেলে মেয়ের লেখাপড়া , ওষুধ খরচ আছে।েএই অবস্থায় কিভাবে চলবো এখন এটাই ভাবার বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে।
শহরের বটতলা রোডের বেচা মোল্লা বলেন,সরকার শুধু তেলের দাম বাড়ালো। সেই সাথে সাথে বেড়ে গেলো প্রতিটা মালামালের দাম। বাজারের অবস্থা এভাবে থাকলে বেচে থাকা খুবই কষ্টের । এ ব্যবাপারে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করি।
তরকারি বিক্রেতা মোঃ রাজু মোল্লা, আনিসুর রহমান বলেন যেসব কাচামাল দুর থেকে আসে সেইসবের দাম বেড়েছে বেশী। আর স্থানীয় ভাবে উৎপাদিত তরিতরকারি দাম তেমন একটা বেশী বাড়েনি। তবে দাম বাড়ার কারনে বেচা বিক্রিতে সমস্য হচ্ছে। খরিদারদের সঙ্গে বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পরতে হচ্ছে। ফলে বেচাবিক্রি অর্ধেকে নেমেছে। মানুষ প্রয়োজনের তুলনায় কম কিনছেন।জিনিসপত্রের দাম সহনীয় পর্যায়ে থাকলে বেচাবিক্রি থেকে শুরু করে সব কিছুতেই সুবিধা হতো।
মুদি ব্যবসায়ী গোলাম কিবরিয়া কায়েস বলেন, সরকার দাম বাড়িয়েছে শুধু জ্বালানী তেলের। কিন্তু সকল কোম্পানী তাদের পন্যের দাম মুহুর্তের মধ্যে পরিবর্তণ করে দাম বৃদ্ধি করেছে। অর্ডার কেটে নিয়ে যাচ্ছে। মাল যখন ডেলিভারী দিচ্ছে তখন দেখি বিল এসেছে বেশী। এতে আমাদের ব্যবসার খুব সমস্যা হচ্ছে। তাই তেলের দাম সমন্বয়সহ দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখার দাবী জানাচ্ছি।
এ ব্যাপারে জেলা বাজার ও কৃষি বিপনন কর্মকর্তা মোঃ আরিফ হোসেন বলেন, তেলের মূল্য বৃদ্ধির সাথে সাথে পরিবহন ভাড়া বেড়ে গেছে। সেই সাথে বাজারেও দ্রব্যমূলের দাম কিছুটা বেড়েছে। বিশেষ করে প্রতিটা কোম্পানী তাদের পন্যের মূল্য বৃদ্ধি করেছে। আমরা যারা বাজার নিয়ন্ত্রণ কাজের সঙ্গে যুক্ত আছি তারা সব সময় বাজার মনিটরিং করে যাচ্ছি। যাতে কোন ব্যবসায়ী পন্য মজুদ করে সংকট সৃষ্টি করতে না পারেন।
Design & Developed By: JM IT SOLUTION
Leave a Reply