
কালের খবরঃ
ঈদ উদযাপন উপলক্ষে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য ধরে রাখতে গোপালগঞ্জে অনুষ্ঠিত হলো ঘোড়দৌড় প্রতিযোগীতা। নির্মল চিত্ত বিনোদন ভাগাভাগি করতে ও যুব সমাজকে মাদকমুক্ত রাখতে কাশিয়ানী উপজেলার মহেশপুর ইউনিয়নের নোয়াপাড়া বাগিয়া গ্রামে এ প্রতিযোগীতার আয়োজন করা হয়। এ ঘোড়দৌড় প্রতিযোগীতা দেখতে ভীড় করে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার অন্তঃত দশ হাজার মানুষ। প্রতিযোগীতা শেষে অংশগ্রহণকারী বিজয়ী ঘোড়া মালিকের হাতে তুলে দেয়া হয় নগদ অর্থ।
গত বৃহস্পতিবার (৩ এপ্রিল) বিকেলে সরেজমিনে গিয়ে জানাগেছে, একসময় দেশের জাতীয় অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গ্রামের মানুষের চিত্ত বিনোদনের সুযোগ করে দিত ঘোড়দৌড় প্রতিযোগীতা। কিন্তু শহরের হাওয়া গ্রামে উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় এখন আর তেমন একটা এই খেলা দেখা যায় না।
তাই সাধারন মানুষের চিত্ত বিনোদন দিতে ও যুব সমাজকে মাদকমুক্ত রাখতে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার মহেশপুর ইউনিয়নের নোয়াপাড়া বাগিয়া ফুটবল মাঠে মোঃ ইদ্রিস শেখের উদ্যোগে আয়োজন করা হয় এই ঘোড়দৌড় প্রতিযোগীতা।
এ প্রতিযোগীতায় নড়াইল, মাদারীপুর, ফরিদপুর, যশোর ও গোপালগঞ্জ থেকে ২৫টি ঘোড়া দৌড় প্রতিযোগীতায় অংশ নেয়। বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলা কয়েক রাউন্ডে প্রায় চার কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে ঘোড়াগুলো। চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছাতে ঘোড়ার সওয়ারের দৃষ্টি পরিচালিত করে ঘোড়াকে। উপলক্ষে বসে গ্রামীণ মেলা। মেলায় নানা ধরনের পন্যের পসরা সাজিয়ে বসেন দোকানীরা।

দৌড়ে নড়াইলের রবিউল মোল্যার ঘোড়া প্রথম, একই জেলার রাব্বি মোল্যার ঘোড়া দ্বিতীয়, শিমুল শেখের ঘোড়া তৃতীয় ও আরজু মোল্যার ঘোড়া চতুর্থ হয়। পরে বিজয়ী ঘোড়ার মালিকদের হাতে নগদ অর্থ পুরস্কার তুলে দেন আয়োজকেরা।
প্রতিযোগীতায় অংশ নিয়ে প্রথম হওয়ায় ঘোড়ার মালিক নড়াইলের রবিউল মোল্যা (৪৫) বলেন, এখানে নিজের ঘোড়া নিয়ে প্রতিযোগীতায় এসেছি। প্রতিযোগীতায় অংশ নিতে পেরে খুব ভাল লেগেছে। এলাকার মানুষও আনন্দ পাচ্ছে। পুরস্কারটা অনেক বড় বিষয় নয়। মানুষকে আনন্দ দিতে পেরে আমি খুশী হই।
ঘোড়া দৌড়ে অংশ নেয়া অপর ঘোড়ার মালিক শাহাজান শেখ (৪৫) বলেন, ঈদ, পুজা, পার্বনসহ গ্রামীন অনুষ্ঠানে আমরা দৌড় প্রতিযোগীতায় অংশ নিয়ে থাকি। দেশের বিভিন্ন স্থানে আমরা ছুটে যাই। অংশ গ্রহন করে আমরা আনন্দিত হই।
ঘোড় দৌড় দেখতে আসা মুকসুদপরের মেহের মামুন বলেন , এখানে দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে ঘোড়া দৌড় অনুষ্ঠিত হয়ে আসচ্ছে। দুই এক বছর বাদে সব বছরই আমি এসেছি। এ বছরও এসেছি। আমি চাই প্রতি বছর যেনো এখানে ঘোড়া দৌঁড় প্রতিযোগীতা অনুষ্ঠিত হয়।এজন্য আয়োজকদের ধন্যবাদ জানাই।
কাশিয়ানীর খায়েরহাট গ্রামের নিজামুল আলম মুরাদ বলেন, ঘোড়দৌড় দেখতে পরিবার নিয়ে এসেছি। খুব আনন্দ পেলাম। এমন আয়োজন সব গ্রামে হওয়া উচিৎ।দশম শ্রেণির শিক্ষার্ী বৃষ্টি বলেন, এবারই প্রথম ঘোড়দৌঁড় প্রতিযোগীতা দেখলাম। মা-বাবার সাথে এসেছি। খুব ভাল লেগেছে।

আয়োজক কমিটির সদস্য মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ঈদের একদিন পর দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে আমাদের গ্রামে ঘোড়দৌড় প্রতিযোগীতা হয়ে আসছে। সারা বছর এই দিনটির জন্য সকলে অপেক্ষা করে থাকে। ঈদে সকলকে আনন্দ দিতে এ আয়োজন করা হয়েছে।
আয়োজক কমিটির অপর সদস্য আবু জাফর মোল্যা বলেন, কালের আবর্ ঘোড়দৌড় হারিয়ে যাচ্ছে। গ্রামীন খেলাধূলা হারিয়ে যাওয়ায় যুব সমাজ মাদক ও মোবাইল গেমে আসক্তি হয়ে পড়ছে। তাই বিনোদন দিতে ও যুব সমাজকে মাদক ও মোবাইল গেম থেকে দূরে রাখতে ঘোড়দৌড় প্রতিযোগীতার আয়োজন করা হয়েছে।
ঘোড়দৌড় প্রতিযোগীতার আয়োজক মো. ইদ্রিস শেখ বলেন, আধুনিকতার ছোয়ায় আমাদের দেশ থেকে ঐতিহ্যবাহী খেলাগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। এসব খেলাগুলো ধরে রাখা উচিত। এছাড়া যুব সমাজকে খারাব কাজ থেকে বিরত রাখতে আগামীতে এসব খেলাগুলো ধরে রাখতে আগামীতেও এমন আয়োজন করা হবে।
Design & Developed By: JM IT SOLUTION