কালের খবরঃ
দশলক্ষাধিক মতুয়া ভক্তের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হবে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীর ওড়াকান্দিতে বারুনী স্নান উৎসব ও মেলা। মতুয়া মহাপুরুষ শ্রী শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্মতিথি উপলক্ষে এই স্নান উৎসব হয়ে আসছে প্রায় ২০০ বছর আগের থেকে। আজ বুধবার (২৬ মার্চ) রাত ১১টায় শুরু হবে এই স্নান। চলবে পরের দিন বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) রাত ৯টা পর্যন্ত। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মতুয়া সম্প্রদায়ের সর্ববৃহৎ মহাবারুনী স্নান উৎসব ও তিন দিনব্যাপী মেলা চলবে পরের দিন শুক্রবার ( ২৮ মার্চ) বিকেল পর্যন্ত। এবছর শ্রী শী হরিচাঁদ ঠাকুরের ২১৪তম জন্মতিথি। প্রতিবছর ফাল্গুন মাসের মধুকৃষ্ণা ত্রয়োদশী তিথিতে পাপ থেকে মুক্তি ও পূণ্য লাভের আশায় দেশের বিভিন্ন জেলা ছাড়াও ভারত, নেপাল সহ বিভিন্ন দেশ থেকে ১০ লাক্ষাধিক পূর্ণাথী অংশ নিবেন এ স্নান উৎসবে। এ উপলক্ষে ওড়াকান্দির ঠাকুর বাড়ীর আশাপাশ এলাকার অন্তঃত ৫ কিলোমিটার জুড়ে উৎসবের আমেজ বিরাজ করে থাকে।
এবছর ২৭ মার্চ বৃহস্পতিবার ব্রহ্মমূহুর্তে বাংলাদেশ মতুয়া মহাসংঘের মহাসংঘাদিপতি শ্রীমতি সীমাদেবী ঠাকুর মঙ্গলপ্রদীপ প্রজ্জ্বলন ও কামনা সাগরে স্নান করে উৎসবের উদ্বোধন করবেন। এরপর দেশ বিদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আশা মতুয়া ভক্তরা কামনা ও শান্তি সাগরে স্নান করবেন।
স্নান উৎসবে যোগ দেয়া ভক্তদের পদচারনার সাথে ঢাক, ঢোল আর কাঁসোরের শব্দে মুখরিত হয়ে উঠবে পুরো ঠাকুরবাড়ি। ভক্তরা মন্দিরে পূজাঅর্চনা শেষে ঠাকুর বাড়িতে অবস্থিত কামনা সাগর ও শান্তি সাগরে (মুলতঃ বড় পুকুর) স্নান করে ঠাকুরের কাছে পাপ থেকে মুক্তি, পুন্য লাভ ও দেশবাসীর মঙ্গল প্রার্থনা করে থাকেন।
স্নান ও মেলা সঠিকভাবে পালন করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসক মুহম্মদ কামরুজ্জামান, পুলিশ সুপার মোঃ মিজানুর রহমান সহ পদস্থ কর্মকর্তাগণ ওড়াকান্দির উৎসব স্থল পরিদর্শন করেছেন।
স্নানোৎসব কমিটির সভাপতি ও শ্রী শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের ষষ্ঠ পুরুষ শ্রী সুব্রত ঠাকুর বলেন, এ উৎসবকে ঘিরে ভক্তদের থাকার ও প্রসাদের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেনা বাহিনী ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যের পাশাপাশি মতুয়া সংঘের প্রায় সাত শতাধিক স্বেচ্ছাসবক ভক্তদের থাকা খাওয়া, ঠাকুর বাড়িতে প্রবেশ ও বাহির হওয়ার সহ সার্বিক দায়িত্ব পালন করবেন।
বাংলাদেশ মতুয়া মহাসংঘের মহা-সংঘাদিপতি সীমাদেবী ঠাকুর বলেন,দেশ ও দশের মঙ্গল কামনায় প্রতিবছর ঠাকুরের স্নানউৎসব অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। এবছর ২১৪তম বছর। ভক্তদের জন্য থাকার জায়গা বাড়ানো হয়েছে। ভক্তরা তাদের মানস কামসায় ঠাকুর বাড়ি আসবে।
পুলিশ সুপার মোঃ মিজানুর রহমান বলেন, আমি ওড়াকান্দি ঠাকুরবাড়ি পরিদর্শন করেছি। কমিটির লোকজনের সঙ্গে কথা হয়েছে। মতুয়া ভক্তদের অনুষ্ঠানটি যাতে শান্তিপূর্ন ভাবে সম্পন্ন হয় সে বিষয়ে পুলিশ বাহিনী কাজ করে যাচ্ছে। ২৬ মার্চ বুধবার সকাল থেকে ২৮ মার্চ শুক্রবার পর্যন্ত প্রায় সাড়ে তিনশ পুলিশ সদস্যের সমন্বয়ে বেশ কয়েকটি ইউনিট শিপটিং পদ্বতিতে দায়িত্ব পালন করবে।
এদিকে এ উৎসব নিরাপদে শেষ করতে ঠাকুরবাড়ী পরিদর্শন করে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন জেলা প্রশাসক মুহম্মদ কামরুজ্জান। তিনি কালের কন্ঠকে বলেন, ঠাকুর বাড়ি এলাকায় সুউচ্চ পর্যবেক্ষন চৌকি ও সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। সেনাবাহিনী, র্যাব, পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এ বিষয়ে একাধিকবার সভা করা হয়েছে। সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থার মাধ্যমে লাখ লাখ মতুয়া ভক্তের স্নানোৎসবটি সম্পন্ন করতে প্রশাসন কাজ করছে।
উল্লেখ্য, শ্রী শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুর ও তাঁর ছেলে গুরুচাঁদ ঠাকুরের জন্মস্থান কাশিয়ানী উপজেলার এই ওড়াকান্দি গ্রামে। তাদের অনুসারী ভক্তদের বলা হয় মতুয়া ভক্ত। বিশ্বের কোটি কোটি মতুয়া ভক্তদের কাছে ওড়াকান্দি ঠাকুরবাড়ি একটি পবিত্র পুণ্যভূমি। নিম্নবর্ণের হিন্দু সম্প্রদায়ের ত্রাণ কর্তা হিসাবে ১৮১২ খ্রিস্টাব্দের ১১ মার্চ আবির্ভূত হয়েছিলেন হরিচাঁদ ঠাকুর। পরবর্তিতে তাঁর ছেলে গুরুচাঁদ ঠাকুর। তাই প্রতিবছর হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্মতিথি মধুকৃষ্ণা ত্রয়োদশীতে এখানে অনুষ্ঠিত হয় স্নানোৎসব ও মেলা।
এই বাড়িতে ২০২১ সালের ২৭ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ওড়াকান্দির ঠাকুর বাড়িতে আসেন এবং শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের মন্দিরে পূজাঅর্চনা করেন।
Design & Developed By: JM IT SOLUTION
Leave a Reply