বুধবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৪৪ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
কোটালীপাড়ায় তিন পাখি শিকারীকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা গৃহবধূকে হত্যার পর ঝুলিয়ে রাখার অভিযোগ মায়ের বাবাকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে,অসুস্থ দাদী ও আমরা কিভাবে বাঁচবো? নবীন শিক্ষার্থীদের ফুল দিয়ে বরণ করলো বশেমুরবিপ্রবি শতাধিক শিক্ষার্থী পেল দুর্নীতি বিরোধী স্লোগানের শিক্ষা উপকরণ গোপালগঞ্জে প্রে‌মের প্রস্তাব প্রত্যাখানে দশম শ্রেণির ছাত্রী ও মা-কে কু‌পি‌য়ে জ*খ*ম গোপালগঞ্জে ইউপি চেয়ারম্যানসহ পাঁচ আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতা গ্রেপ্তার গোপালগঞ্জ হবে বিএনপির উর্বর ভূমি-জয়নুল আবেদীন মেসবাহ দিদার হত্যা মামলায় কাশিয়ানী থেকে আওয়ামী লীগ কর্মী গ্রেপ্তার টুঙ্গিপাড়ায় নয় ব্যবসায়ীকে জরিমানা

চোখ জুড়ানো বলাকইড় পদ্মবিল! নয়নাভিরাম দৃশ্য

Reporter Name
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ৪ আগস্ট, ২০২২, ১২.৪৯ পিএম
  • ২৩১ Time View

কালের খবরঃ

পদ্ম ফুটেছে গোপালগঞ্জের বলাকইড় বিলে।বিলটির শোভাবর্ধন করেছে এই পদ্মফুল। যা দেখতে প্রতিদিনই রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার শত শত সৌন্দর্য প্রেমি পর্যটকরা পদ্ম বিলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে ভিড় করছেন।

এ বিলে ফুটে থাকা লক্ষ লক্ষ পদ্মের সৌন্দর্য আসলেই অলৌকিক! বর্ষাকালে গ্রাম বাংলার অন্যতম মনমুগ্ধকর দৃশ্য এটি। এমন নয়নকাড়া দৃশ্যের অবতারনা ঘটেছে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার কলাকইড় গ্রামের জলাবদ্ধ বিলে। এ বিলে গেলেই এখন দেখা মিলবে সাদা ও গোলাপী রং এর পদ্মের। বড় বড় সবুজ পাতার গালিচার মধ্যে মাথা উঁচু করে দাড়িয়ে আছে  রাশিরাশি পদ্ম। পরিবার-পরিজন বা বন্ধুদের নিয়ে ঘুরতে আসছে এ পদ্মবিলে ।

পর্যটকদের ভিড়ে বিনোদনপ্রেমীদের প্রিয় স্পট হিসেবে রূপ নিতে শুরু করেছে কলাকইড় বিল। ইতো মধ্যে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নৌকায় উঠা নামার জন্য একটি পাকা ঘাটলা, যাত্রী ছাউনী, শৌচাগার ও ওয়াশরুম তৈরী করা হয়েছে। শুধু যে সাধারণ মানুষ বা শিক্ষার্থীরা এখানে আসেন তা নয়। এখানে ভ্রমণ করে থাকেন প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা, বিভিন্ন স্কুল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থীরাও।

পদ্মের ইতিকথাঃ

স্থানীয় কলাকইড় গ্রামের বাসিন্দা ও করপাড়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান বেগ বলেন, ১৯৮৮ সালের বন্যার পর এই বিলে পদ্মগাছের দেখা মেলে। সেই থেকে বিলের জমিতে দুই একটি করে গাছ ও ফুল ফোটা শুরু হয়। আস্তে আস্তে এর পরিধি বেড়ে চলছে। এখন প্রায় দেড় থেকে দুইশ বিঘা জমিতে পদ্মফুল ফুটে থাকে। বোরো আবাদ মৌসুমে জমি পরিস্কার করে ধান চাষ করা হয়। ধান চাষের পর জমিতে পানি আসার সঙ্গে সঙ্গে পদ্মের বীজ (মোথা) থেকে  শাপলার মতো গাছ বের হয়। প্রতিবছর আষাঢ় মাস থেকে পদ্ম ফুল ফোটা শুরু হয়। চলে আশ্বিন কার্তিক মাস পর্যন্ত।তিনি আরো বলেন, বিলের ফুল দেখতে জেলা শহর গোপালগঞ্জসহ দেশের বিভিণœ জেলার মানুষ আসেন। এসব পর্যটক আসাতে আমাদের খুব ভালো লাগে।

দর্শনার্থীদের কথাঃ 

পদ্মবিলে ঘুরতে আসা গোপালগঞ্জ শহরের বিণাপাণি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থী প্রত্যাশা মন্ডলের সঙ্গে কথা হয় । তিনি বলেন, পদ্মফুলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য বাবা মা ও ভাইকে সঙ্গে করে এখানে এসেছি। নৌকা ভাড়া করে  ঘুরে ঘুরে ফুল দেখেছি। পদ্ম গাছের বড় বড় পাতা পুরো বিল ছড়িয়ে আছে।ফুলের উপর মৌমাছি বসেছে।প্রাকৃতিকএই সৌন্দর্য শহরের পাওয়া যায়না। বিলে এসে আমি খুব আনন্দ পেয়েছি। এ শিক্ষার্থী আরো বলেন,বিলজুড়ে সবুজের মাঝে সাদা ও গোলাপী কালারের পদ্মফুল ফুটে থাকতে দেখে মনটা ভরে উঠে।  লোভ সামলাতে না পেরে কিছু ফুলও ছিড়েছি।

পদ্মবিলে ঘুরতে আসা বিণাপাণি সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী মাহজাবিন মোহনা বলেন, বিলের চারিদিকে তাকালে মনে হয় পদ্মফুলের গালিচা। দূর থেকে মনে হবে বিলে কেউ সবুজ গোলাপী বিছানা পেতেছে। এ যেন পদ্মমেলা। তার সঙ্গে ঘুরতে আসা ফুফু হালিমা রহমান, সহপাঠি ফুফাতো বোন সাইমা বিনতে মাহবুব, পঞ্চম শ্রেণীর রাইমা বিনতে মাহবুব, বর্ষণ হোসেন মাহি, পপি মন্ডলসহ বেশ কয়েকজন ভ্রমণ পিপাষুদের সঙ্গে কথা হয়।তারা জানান, স্নিগ্ধতার রং আর আকাশে মেঘের ভেলা। এই দুই মিলে যেন একাকার হয়েছে প্রকৃতি। বলাকইড় বিলের বিস্তৃর্ণ এলাকা জুড়ে গোলাপি রংয়ের পদ্ম দেখে মন জুড়িয়ে গেছে।

সমস্যাঃ

বলাকইড় পদ্মবিলের নৌকাঘাটের সরদার,মোঃ ইয়াছিন বেগ, মিন্টু সরদার, শফিকুল সরদার,ইকবাল সরদার বলেন,গোপালগঞ্জ জেলা সদর থেকে বলাকইড় গ্রামের পদ্মবিল ১৪কিলোমিটার দূরত্ব। এর মধ্যে বলাকইড় হাই স্কুল পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার রাস্তা খুবই ভালো। সময় লাগে মাত্র ১৫ থেকে ২০ মিনিট। কিন্তু স্কুল এলাকা থেকে পদ্মবিল পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার ইটবিছানো সরু রাস্তা। মাঝে মধ্যে আবার খানাখন্দর। এই রাস্তাটুকু যাত্রীদের নেমে হেটে যেতে হয়। তাতে ফুল দেখতে আসা মানুষদের খুব কষ্ট হয়। ভাঙ্গাচোরা রাস্তাটি সংস্কার করা হলে পর্যটকরা সাচ্ছন্দে  আসা যাওয়া করতে পারবেন বলে তারা জানিয়েছেন।

বিশিষ্টজনের কথাঃ

গোপালগঞ্জ উদীচীর সহসভাপতি ও সাংবাদিক মোজাম্মেল হোসেন মুন্না বলেন, পদ্ম বিল পর্যটকদের যেন মায়াবী হাতছানি দিয়ে ডাকছে। জলের বুকে যেন পদ্মের মেলা। বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে পদ্মফুলের সৌন্দর্যশোভিত এ বিল ইতিপূর্বে তেমন একটা পরিচিত ছিল না। গত কয়েক বছর বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রচারের কারনে আর প্রকৃতি প্রেমি প্রশাসনের প্রচেষ্টায় পরিচিতি বেশ বেড়েছে।তাই পদ্মবিল দেখতে এখন প্রতিদিনই দর্শনার্শীরা ভিড় করে থাকেন।তিনি অভিযোগ করে বলেন, পদ্মবিল থেকে অনেকেই পদ্মফুল ছিড়ে নিয়ে যায়, এতে পদ্মবিলের সৌন্দর্য হারাচ্ছে। প্রশাসন পদ্মবিলটি সংরক্ষণের ব্যবস্থা নিলে ভবিষ্যতে আকর্ষণীয় একটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠবে বলে আমার বিশ্বাস।

যেভাবে যাবেনঃ

ঢাকা, খুলনা, বাগেরহাট,বরিশাল, নড়াইল, যশোর, রাজশাহী, কুষ্টিয়াসহ দেশের  বিভিন্ন জেলা থেকে সড়ক ও রেল পথে গোপালগঞ্জ জেলা সদরের পুলিশ লাইনস মোড়ে নামতে হবে। সেখান থেকে ইজিবাইক, থ্রিহুলার, পায়ে চালিত ভ্যানে করে যেতে হবে কলাকইড় বিলে।সময় লাগে মাত্র ২০ থেকে ২৫ মিনিট। বিলের পাশে বাঁধা থাকে বিছানা পাতা খোলা নৌকা। সেসব নৌকা ভাড়া করে বিলে যেতে হবে।

খরচঃ

এসব যানবাহন রিজার্ভ করলে ২শ থেকে আড়াইশ টাকা লাগবে। আর শেয়ারে গেলে জনপ্রতি ৪০টাকা ভাড়া নিবে। তবে ব্যক্তিগত বা ভাড়া করা প্রাইভেটকার বা জীপ গাড়িতে সেখানে পৌছানো যাবে। আর নৌকা ভাড়া নির্ধারিত হয় সাইজের ভিত্তিত্বে। ছোট নৌকা ২-৩ জনের জন্য  ২০০-৩০০ টাকা। মাঝারি নৌকা ৩-৮ জনের জন্য ৫০০- ৮০০টাকা আর বড় নৌকা ১০ থেকে ১৫-২০জনের জন্য ১হাজার থেকে দেড়হাজার টাকা।  নৌকা ভাড়া ঠিক করে নিতে হবে।

 উপার্জনঃ

নৌকা মাঝি মোঃ সাফু শেখ,মোঃ ইনাজ ঢালী, সুমন চৌধুরী, মারুফ শেখ, জিয়া শেখ, আতিক শেখ বলেন, বিল এলাকা হওয়ায় ধান কাটার পর এলাকায় কোন কাজ থাকেনা। আল্লাহ আয়ের জন্য আমাদের এখানে পদ্মফুলের সমাহার ঘটিয়েছে। প্রতিদিন দর্শনার্থীরা আসেন। পদ্ম দেখার জন্য ৩৫টি নৌকা রয়েছে। এতে প্রায় ৬৫জন লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। দর্শনার্থীদের আমরা নৌকায় করে বিলে নিয়ে ফুল দেখাই। এতে যে আয় রোজগার হয় তাতে প্রতিজনের ৪০০/৫০০টাকা রোজগার হয়।

সতর্কতাঃ

বিলে বাস্তবতা হলো নিচে পানি উপরে রোদ। সকাল থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত  প্রচন্ড রোদ থাকে। তাই ছাতা, ক্যাপ নিয়ে যাবেন। বিকেলে গেলে ভালো হয়। ওখানে পানি চিপস, চানাচুর, চকলেট ও কোমল পানিও কেনার জন্য কয়েকটি দোকান আছে। তবে পেটপুরে খাওয়ার কোন হোটেল বা রেষ্টুরেন্ট নেই।

প্রশাসনের কথাঃ

জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা বলেন,বলাকইড় পদ্মবিলটি সৌন্দর্য মন্ডিত একটি এলাকা। জুলাই থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত প্রচুর পদ্মফুল ফুটে এবং পুরো বিল জুড়ে একটি অনাবিল সৌন্দর্য তৈরী করে। এটি একটি সিজোনাল পর্যটন কেন্দ্র। বিলটি মূল রাস্তা থেকে একটু ভিতরে।

তিনি আরো বলেন, ইতো মধ্যে একবার গ্রামীণ এই রাস্তাটির সংস্কার কাজ করা হয়েছে। যেহেতু এখন প্রচুর পর্যটক আসছেন তাই পর্যটকদের সুবিধার জন্য পুনরায় রাস্তাটি সংস্কার কাজ দ্রুত করা হবে। এছাড়া এখানে আধুনিক সুযোগ সুবিধা সৃস্টির লক্ষে আমরা কাজ করছি।

 

 

 

 

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category

Advertise

Ads

Address

Office : Sheikh Fazlul Haque Moni Stadium (2nd floor), Gopalganj-8100 Mobile: 01712235167, Email: kalerkhabor24.com@gmail.com
© All rights reserved 2022

Design & Developed By: JM IT SOLUTION