বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫, ০১:১২ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
কোটালীপাড়ায় ৪০০ ক্ষুদে শিক্ষার্থী পেল স্কুল ব্যাগ ও টিফিন বক্স প্রেমের টানে সুদুর চীন থেকে গোপালগঞ্জে ছুটে এসেছেন এক চীনা যুবক, বিয়ের মাধ্যমে সম্পন্ন হলো সফল প্রেমের গোপালগঞ্জে চায়নাদুয়ারী ও কারেন্টজাল বিক্রির অপরাধে দুই ব্যবসায়ীকে কারাদন্ড ও ৪ব্যবসায়ীকে ১লক্ষ ৫হাজার টাকা অর্থদন্ড ভারতের অন্যায় আবদারের কাছে আমরা মাথানত করবো না – ড. আসাদুজ্জামান রিপন বাদ্যযন্ত্র মনতুরা বানিয়ে সঙ্গীতাঙ্গনে সাড়া ফেলেছেন শিল্পী অজিৎ হালদার কাশিয়ানীতে যাত্রীবাহী বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে ৬ শিশুসহ আহত-২০ কাশিয়ানীতে ব্যবসায়ীর বাড়িতে দূর্ধর্ষ চুরি সেনাবাহিনীর মিথ্যে পরিচয়ে বিয়ে, শেষ পর্যন্ত ভুয়া প্রমাণিত হয়ে পুলিশ হেফাজতে সোমবার টুঙ্গিপাড়া উপজেলা বিএনপির সম্মেলন। বিএনপির সংবাদ সম্মেলন গোপালগঞ্জে ভ্যান চুরির ঘটনায় দুই গ্রুপের সংঘর্ষ! নারীসহ আহত অর্ধশতাধিক

বর্ষায় বিল পাড়ের দরিদ্র মানুষের আয় শাপলা বিক্রি

Reporter Name
  • Update Time : বুধবার, ৯ অক্টোবর, ২০২৪, ৪.৫৭ পিএম
  • ১৮৯ Time View

পংকজ মন্ডলঃ

গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার সিংগা গ্রামের দরিদ্র কৃষক বিনয় মন্ডল (৫৫)। শুকনা মৌসুমে করেন অন্যের জমিতে কৃষি শ্রমিকের কাজ। আর বর্ষাকালে বিলের শাপলা সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করে চালান জীবন জীবীকা। সরেজমিনে সিংগা দক্ষিণ বিলে নৌকায় করে শাপলা সংগ্রহ করতে দেখা যায় তাকে। এসময় তিনি বলেন,আমরা দরিদ্র কৃষক পরিবারের মানুষ। সারা বছর কৃষিকাজ করে ও শাপলা বিক্রি করে সংসার চালাই। আমাদের এলাকা বিলাঞ্চল হওয়ায় বর্ষার সময়  জমিগুলো পানিতে তলিয়ে থাকে।  কোন ফসল হয়না। তবে বিলে প্রচুর পরিমান শাপলা জন্মে। আমি ভোররাত থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত সিংগার বিলে শাপলা সংগ্রহ করি। ছোট আকৃতির প্রতিমোটা শাপলা ৫টাকা দরে ফরিয়াদের কাছে পাইকারী বিক্রি করি। তাতে প্রতিদিন আমার  তিনশ থেকে সাড়ে তিনশ টাকা আয় হয়। তাই দিয়ে চলে আমার পাঁচ সদস্যের সংসার। শুধু তাই নয় এভাবেই আমাদের এলাকার অনেকেই উপার্জন করে সংসার চালায়।

ওই বিলে কথা হয় একই গ্রামের শাপলা তোলার কাজে নিয়োজিত স্বপন বিশ্বাস,বৌদ্ধনাথ বিশ্বাস, শ্যামল ঢালী, সরোজ ঢালীর সঙ্গে । তারা বলেন, ভোর রাতে নৌকা নিয়ে বিলে বের হই। নৌকায় ঘুরে ঘুরে শাপলা তুলি। প্রতিদিন ৬০থেকে ৭৫ আটি শাপলা তুলি। দুপুরে শহর বা বিভিন্ন এলাকা থেকে পাইকাররা ইজিবাইক বা পিকআপ নিয়ে আসে শাপলা কিনতে। তাদের কাছে আমরা মোঠা হিসেবে বিক্রি করে তিনশ’ থেকে চারশ’ টাকা পাই। পাইকাররা আবার এসব শাপলা জেলাসহ দেশের বিভিন্ন  হাটবাজারে নিয়ে বিক্রি করে থাকেন।

জেলা কৃষি অফিস জানিয়েছে, বর্ষায় গোপালগঞ্জের নদ-নদী, খাল-বিল ও জলাশয় পানিতে ভরপুর থাকে।   এসময় বিলে বিলে শোভা পায় সবুজ ও সাদা রংয়ের শাপলা। শাপলা শুধু জাতীয় ফুল নয়। শাপলা এ অঞ্চলের মানুষের কাছে সবজি হিসেবেও সমধিক জনপ্রিয়। আর এ শাপলা তুলে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহের কাজ করছেন গোপালগঞ্জ জেলার শতাধিক বিলে বেশ কয়েক হাজার দরিদ্র মানুষ। আবার অনেকে বিল থেকে শাপলা তুলে খেয়ে থাকেন।

অফিস সূত্রে আরও জানাগেছে,গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার মোল্লারবিল,রঘুনাথপুরবিল,আন্ধারকোটাবিল,বোড়াশীবিল,চেচানিয়াবিল,কান্দিবিল, কাজুলিয়া বিল কাশিয়ানী উপজেলার  সিংগা বিল, হাতিয়ারা বিল, পুইশুর বিল,বেথুড়ি বিল, মুকসুদপুর উপজেলার চান্দারবিল এবং কোটালীপাড়া-টুঙ্গিপাড়ার জোয়ারিয়া বিল, কান্দিরবিলসহ শতাধিক বিলে প্রাকৃতিক ভাবে জন্ম নেয় শাপলা। বর্ষায় এসব বিল পানিতে তলিয়ে থাকে। বর্ষা মৌসুমে এসব বিল এলাকার কৃষকদের তেমন কাজ থাকেনা। তাই বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ এ শাপলা তোলার কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত করে অর্থ উপার্জন করে থাকেন।

আর এই শাপলাকে কেন্দ্র করে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার গান্ধিয়াশুর, সাতপাড় ও কাশিয়ানি উপজেলার সিংগা, হাতিয়ারা, কোটালীপাড়ার রামনগর, কালিগঞ্জ, ভঙ্গারহাটসহ বিভিন্ন স্থানে শাপলা বিক্রির বাজার গড়ে উঠেছে।

সিংগা গ্রামের নসিমন চালক চিন্ময় মন্ডল ও  বিকাশ বিশ্বাস বলেন, সিংগা ব্রিজ থেকে প্রতিদিন ৩/৪টি নসিমন শাপলা নিয়ে বাগেরহাটের মোল্লাহাট, ফকিরহাট, নড়াইল জেলার নড়াগাতী বাজারে যাই। এসব এলাকার ব্যবসায়ীরা এখানে এসে শাপলা কিনে নিয়ে আবার ওখানে বাজারে বিক্রি করে। প্রতিদিন আমার  একহাজার টাকা রোজগার হয়। এভাবে  আষাঢ় , শ্রাবণ, ভাদ্র ও আশ্বিন মাস পর্যন্ত চলে এই শাপলার ট্রিপ।

বিল এলাকায় শাপলা কিনতে আসা  পাইকার ব্যবসায়ী আনিস মোল্লা, মনোজ মল্লিক,হেদায়েদ কাজীর সাথে কথা হলে তারা বলেন, আমরা সাতপাড়, সিংগা ও হাতিয়াড়া লাকার মানুষদের কাছ থেকে শাপলা কিনে গোপালগঞ্জ জেলা শহরসহ বিভিন্ন হাট-বাজারে পাইকারী দরে বিক্রি করি। এতে যে ব্যবসা হয় তাতে ভালোই হয়।  দিন গেলে দেড় দুই হাজার টাকা লাভ হয়। ঘুরে না বেড়িয়ে কাজ করে খাওয়া ভালো। এতে শাপলা সংগ্রহকারীদেরও উপকার হলো আর আমাদের ও কিছু হলো। মানুষের খাদ্য হিসেবে এই শাপলা বেশ চাহিদাও রয়েছে।

এব্যাপারে জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আঃ কাদের সরদার বলেন, শাপলা এই অঞ্চলের মানুষের কাছে খুবই জনপ্রীয় একটি সবজি। সুদুর অতিত থেকে এই শাপলা এই এলাকার মানুষ সবজি হিসেবে খেয়ে আসছে। পুষ্টি গুনে সমৃদ্ধ শাপলায় রয়েছে আয়োডিন ও আয়রন এবং সাথে রয়েছে পানি। এছাড়া শাপলা বিক্রি করে দৈনন্দিন আয় করে জীবিকা নির্বাহ করছেন বিল এলাকার হাজারও  দরিদ্র মানুষ। গোপালগঞ্জের বিলে প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেয়া শাপলা জেলার চাহিদা মিটিয়ে অন্যান্য জেলায়ও যেয়ে থাকে। আবার অনেকে শাপলার ব্যবসা করে লাভবান হচ্ছেন।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category

Advertise

Ads

Address

Office : Sheikh Fazlul Haque Moni Stadium (2nd floor), Gopalganj-8100 Mobile: 01712235167, Email: kalerkhabor24.com@gmail.com
© All rights reserved 2022

Design & Developed By: JM IT SOLUTION