কালের খবরঃ
চলতি মৌসুমে গোপালগঞ্জে পাটের ভাল ফলন হয়েছে। তবে বৃষ্টি কম হওয়ায়, জমিতে বর্ষার পানি না আসা এবং ডোবা, নালায় পানি কম জমে থাকার কারনে পাট জাগ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন চাষিরা। বাধ্য হয়ে তারা ভ্যান রিক্সা ও ঘোড়ার গাড়ীতে করে জমি থেকে ৩/৪ কিলোমিটার দুরে খাল বা পুকুরের পানিতে পাট জাগ দিতে হচ্ছে। ফলে অতিরিক্ত শ্রমিক ও পরিবহন খরচ হওয়ায় পাটের উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই সংগে নষ্ট হচ্ছে আশেঁর গুনাগন। কর্তৃপক্ষ পাটচাষ টিকিয়ে রাখতে ও কৃষক বাচাতে মূল্য বৃদ্ধির কথা বলছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানাগেছে,চলতি মৌসুমে গোপালগঞ্জ জেলার ২৪ হাজার ৩শ ৯৬ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ করা হয়েছে। চলতি মৌসুমে পাট কাটা চলছে। ইতো মধ্যে শতকরা কুড়ি ভাগ পাট কাটা হয়েছে। অন্যান্য বছরের তুলনায় পাটের ফলনও ভাল হয়েছে। পাট জাগ দিতে (পঁচাতে) ডোবা,খাল বিলে ও জমিতে পানি প্রয়োজন। তবে বৃষ্টি কম হওয়ায় ও জমিতে বর্ষার পানি না আসায় এবং ডোবা, নালায় পানি কম থাকায় পাট জাগ দেয়া নিয়ে চিন্তিত কৃষক। পানি সল্পতায় পাট পঁচানো নিয়ে বিপাকে পড়েছেন গোপালগঞ্জের পাট চাষিরা।
এলাকাঘুরে দেখা গেছে কৃষকেরা জমি থেকে পাট কেটে সড়কের দুই পাশে স্তুপ করে রেখেছে। কেউবা জমিতে। সেখান থেকে কেউ মাথায় করে বা ভ্যান রিক্সা ও ঘোড়ার গাড়িতে করে দুরের কোন জলাশয়ে নিয়ে পাট জাগ দিচ্ছেন। পর্যাপ্ত পানি না পাওয়া ময়লা পানিতে পাট জাগদেয়া হচ্ছে। এতে গুনগত মান নষ্ট হওয়ার আশংকা করছেন কৃষক। এদিকে পরিবহন বা শ্রমিকের জন্য অতিরিক্ত ব্যয় হওয়ায় উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আবার বিভিন্ন সময় পাটের দর পতন ও ন্যায্য মূল্য না পাওয়া, উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি ও পানির অভাবে পাট জাগ দিতে না পারার দুশ্চিন্তায় রয়েছে কৃষক।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার চন্দ্রদিঘলিয়া গ্রামে পাট চাষী আলমগীর ভূঁইয়া বলেন, বহু কষ্টে অনেক খরচ করে পাটচাষ করেছি। এখন কাটা শুরু হয়েছে। পাট কেটে যে জাগ দিব তার কোন উপায় নেই। জমিতে কোন পানি নেই আবার কোন কোন জমিতে এক ফুট পানি। সেখানে জাগ দেয়া সম্ভব না। তাই বাধ্য হয়ে দূরে নদী,খাল বা পুকুরে নিয়ে পঁচাতে হচ্ছে। এতে অতিরিক্ত কিষাণ লাগছে। ভ্যান বা নসিমনে করে দূরে নিতে খরচ হচ্ছে। তাই চাষে অতিরিক্ত ব্যয় হচ্ছে। এ ব্যাপারে সরকারের সুনজর দেয়া দরকার। গ্রামের খাল, রাস্তার পাশে ডোবা খনন করে পানি জমানোর ব্যবস্থা করা উচিৎ। সেই সাথে পাটের দাম বৃদ্ধি না হলে আমাদের লোকসান গুনতে হবে।
একই উপজেলার সোনাকইড় গ্রামের সুশান্ত পোদ্দার বলেন,পানির অভাবে বাধ্য হয়ে পাট কেটে বিলের মধ্যে পুকুরে নিতে হচ্ছে। পাঁচশ করে একটা কিষাণ কিনতে হচ্ছে। আবার জাগ হওয়ার পর কিষাণ দিয়ে আনতে হবে। এবার পাট যে দামে বিক্রি হচ্ছে তাতে খরচের পয়সা উঠবে না। তাই পাটের দাম আরো বাড়িয়ে মূল্য নির্ধারণ করা প্রয়োজন।
গোপালগঞ্জ কৃষিসম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ পরিচালক আব্দুল কাদের সরদার বলেন, কৃষক পাট কেটে জাগ দেয়ার কাজে ব্যস্ত। এবছর তুলনা মূলক বৃষ্টি কম হয়েছে। পাটের জমিতে বর্ষার পানি আসেনি। কৃষকেরা ভ্যান বা মাথায় করে দুরের জলাশয়ে নিয়ে পাট জাগ দিচ্ছেন । এতে করে কৃষকের উৎপাদন খরচ বেশী হবে। তাই স্থানীয় খাল বা পুকুর খনন করে পানির সুব্যবস্থা না করা হলে কৃষক পাট চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে
Design & Developed By: JM IT SOLUTION
Leave a Reply