শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:০০ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
গোপালগঞ্জে বিএনপি-স্থানীয় জনতার মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া। গাড়ি ভাংচুর। এস.এম জিলানী সহ আহত অন্ততঃ ৩০জন গোপালগঞ্জে ট্রেনে কাটা পড়ে প্রাণ গেল যুবকের গোপালগঞ্জে মাশরুম চাষ সম্প্রসারণ নিয়ে মাঠ দিবস গোপালগঞ্জে কৃষি ব্যাংকের পর্যালোচনা সভা অনুষ্ঠিত টুঙ্গিপাড়ায় নারীকর্মীদের মাঝে সঞ্চিত অর্থের চেক বিতরণ কাশিয়ানীতে গাঁজাসহ দুই ভাই শ্রীঘরে গোপালগঞ্জে মহিলা দলের ৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে গোপালগঞ্জে ছাত্রজনতার বিক্ষোভ শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে হত্যা মামলার প্রতিবাদে টুঙ্গিপাড়ায় শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ ছাত্রলীগকে প্রতিঘাত নয়, ফুল দিয়ে বরণ করার আহবান যুবদলের

চোখের নিমিশেই মধুমতি গ্রাস করলো আমার আশ্রয়স্থল, জমি ও গাছ

Reporter Name
  • Update Time : বুধবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১২.০৬ পিএম
  • ১৯২ Time View

কালের খবরঃ

কিছু বুঝে ওঠার আগেই নিমিশেই শেষ হয়ে গেলো সারা জীবনে তিল তিল করে গড়া বাড়ি, ঘর ও গাছপালা। মাত্র এক ঘন্টার মধ্যেই মধুমতি নদী গিলে খেল আমার দুইটি একতলা দালান, ওয়ালসেট দুইটি টিনের ঘর। সেই সাথে একে একে তলিয়ে গেল ৪০টি সুপারি গাছ, ১৩টি নারিকেল গাছ, ৭টি কাঁঠাল গাছ, ৫টি আম গাছ সহ বিভিন্ন ধরনের ফলফলাদির গাছ। সকল গাছেই প্রতিবছর ফল ধরে। গাছ যখন নদী গর্ভে ডুবে যাচ্ছিল তখন আমাকে করুন শুরে বলছে হে মালিক আমাদের রক্ষা কর। তোমার সামনে আমাদের মধুমতি খেয়ে ফেলছে।  তখন আমি শুধু আল্লাহকে বলেছি হে আল্লাহ তুমি আমার প্রাণের সম্পদ গাছ গুলোকে হেফাজত করো। এসব কথা বলতে বলতে কেঁদে ফেললেন গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার জালালাবাদ ইউনিয়নের ইছাখালি গ্রামের মধুমতি নদীর পাড় ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্থ আব্দুল কাফি মোল্লা ওরফে কাফি হাজী।

তিনি বলেন, গত ৮ সেপ্টেম্বর সকালে আমার বাড়ি থেকে প্রায় একশত গজ দুরে ছিল নদীর পাড়। দুপুর ১২টার দিকে হঠাৎ ভাঙ্গন শুরু হয়। এক এক করে গাছগুলো নদীর ভাঙ্গনে পানির নিচে চলে যাচ্ছে। এই দেখে মসজিদের মাইকে গ্রামবাসিকে ডাকলে তারা আসতে আসতে আমার দুইটি দালানঘর দুইটি ওয়ালসেট টিনের ঘর নদী গভে বিলিন হয়ে গেল। গ্রামবাসি ঘরের মধ্যের কিছু মালামাল সরিয়ে নিতে পারলেও রক্ষা করতে পারেনি আমার ঘরবাড়ি ও স্যালো মেশিন। এই ভাঙ্গণে আমার প্রায় ১৩ বিঘা ধানের জমি  নদীতে মিশে গেছে। সব মিলে যে ক্ষতি হয়েছে তার বাজর দর প্রায় দুই থেকে আড়াই কোটি টাকার হবে। এখন আমি ভাঙ্গণ বাড়ি থেকে প্রায় আধাকিলোমিটার দুরে টিনের ছাপড়া তুলে বসবাস করছি। ছেলে মেয়ে নাতিপোতা নিয়ে এক দুর্বিসহ অবস্থায় আছি।

শুধু আব্দুল কাফি মোল্লা নয় এ বছর বর্ষা মৌসুম শুরুর পর থেকে নদী ভাঙ্গনের শিকার হয়েছেন একই গ্রামের আরিফ মোল্লা, আকু মোল্লা, এনায়েত মোল্লা, আহসান মোল্লা সহ ১৮টি পরিবারের ঘরবাড়ি ও জমিসহ গাছপালা নদীতে তলিয়ে গেছে।গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার ইছাখালী-ধোলইতলা-ডুবসি এলাকায় মধুমতি নদীতে ভাঙ্গণ নতুন কিছু নয়।  প্রায় ২০বছর আগে থেকে এসব গ্রামে ভাঙ্গণ চলছে। প্রতিবছর নদীতে পানি বৃদ্ধি আর কমার সময় এসব এলাকার মানুষ নদী ভাঙ্গনের শিকার হয়ে থাকেন। পানি উন্নয়ন বোর্ড স্থায়ী ভাবে কার্যকর কোন পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় প্রতিনিয়ত মানুষ নিঃস্ব হচ্ছে। হারাচ্ছে জমি-জমা, গাছপালা ও ঘরবাড়ি।

এলাকাবাসী সূত্রে জানাগেছে, বিগত প্রায় ২০ বছর ধরে এই স্থানে ভাংগন শুরু হয়েছে। ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে এলাকার মানচিত্রই বদলে দিয়েছে মধুমতি। প্রায় তিন শতাধিক পরিবার ইতোমধ্যে নদীর অন্যপাড়ে বসতি গড়েছেন। যা এখন নড়াইল জেলার মধ্যে পড়েছে। এমনও আছে একই পারিবারের মানুষ ভাঙ্গনের কারনে দুই পাড়ে বসবাস করছে। এসব মানুষ গোপালগঞ্জের বাসিন্দা হলেও নড়াইল জেলার মধ্যে বসবাস করে। ফলে কোন জেলারই সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেনা তারা।

তারা আরো বলেন,শত শত মানুষের চাষাবাদের জমি ভেঙ্গে নদীতে চলে গেছে। কখন কে আবার বসত-বাড়ি হারা হবেন এই শংকা তাড়িয়ে ফিরছে গ্রামবাসীদের। নদীর কাছে যাদের বাড়ি তাদের কেউ কেউ বাড়ি ঘর ভেঙ্গে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন আগে ভাগেই।গ্রামবাসী ও ক্ষতিগ্রস্থরা জানান, প্রতি বছর বর্ষার সময় পানি উন্নয়ন বোর্ড কিছু জিও ব্যাগ এনে রাখেন। নদী ভাঙ্গন শুরু হলে সেগুলো ভাঙ্গন এলাকায় ফেলে ভাঙ্গন রোধের চেষ্টা চালান। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়না।

গত সোমবার (১২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ভাংগন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা। তিনি বেশী ক্ষতিগ্রস্থ ১১টি পরিবারের প্রত্যেকটির জন্য ৩ বান্ডিল (২৪পিচ) টিন, ১৪ হাজার করে নগদ টাকা ও ৩০কেজি করে চাল অনুদান হিসেবে দিয়েছে। এছাড়া কম ক্ষতিগ্রস্থ ৭টি পরিবারের প্রত্যেকটির জন্য নগদ ৫হাজার  ও ৩০কেজি চাল দিয়েছেন।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড, গোপালগঞ্জ-এর নির্বাহী প্রকৌশলী ফয়জুর রহমান জানান, মধুমতি নদীতে ওই এলাকা প্রতিবছরই ভাঙ্গনের কবলে পড়ে। ইছাখালী-ধোলইতলা-ডুবসি এলাকায় ভাংগনের হাত থেকে রক্ষা করতে প্রায় পাঁচশ মিটার এলাকার জন্য ১০ হাজার জিও ব্যাগ প্রস্তুত করা হয়েছে। গত রবিবার (১১ সেপ্টেম্বর) থেকে ব্যাগ ফেলা শুরু হয়েছে। ভাংগন রোধে পৌনে দুই কিলোমিটার এলাকায় নদীর পাড় স্থায়ী ভাবে বাঁধ দেয়া প্রয়োজন। তাই গেলো বছর প্রকল্প তৈরী করে মন্ত্রনালয়ে পাঠানো হয়েছে। প্রকল্প পাশ হলে নদীর পাড় বাঁধাই কাছ শুরু করা হবে।

জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা বলেন, এলাকা পরিদর্শন করে যেটা দেখলাম সেটা হলো, এলাকাবাসী বহুবছর আগের থেকে ভংগনের শিকার হচ্ছে। এবছরও মানুষের ঘরবাড়ি, ফসলি জমি নদীতে ভেঙ্গে তলিয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্থ ১৮টি পরিবারকে প্রাথমিক ভাবে টিন , নগদ টাকা ও চাল দেয়া হয়েছে। আর স্থায়ী ভাবে নদী শাসনের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড গোপালগঞ্জকে দ্রুততার সাথে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category

Advertise

Ads

Address

Office : Sheikh Fazlul Haque Moni Stadium (2nd floor), Gopalganj-8100 Mobile: 01712235167, Email: kalerkhabor24.com@gmail.com
© All rights reserved 2022

Design & Developed By: JM IT SOLUTION