রবিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ১২:৩০ পূর্বাহ্ন

সংকটে কোটালীপাড়ার শত বছরের নৌকার হাট! ঐতিহ্য বিলীন হওয়ার পথে

Reporter Name
  • Update Time : রবিবার, ১৩ জুলাই, ২০২৫, ১.১৭ পিএম
  • ১৮৮ Time View

‡নৌকা বিক্রির জন্য ঘাঘর হাটে বসে আছে বিক্রেতা

কোটালীপাড়া প্রতিনিধিঃ
গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার ঐতিহ্যবাহী শত বছরের ঘাঘর নৌকার হাট আজ যেন হারাতে বসেছে তার প্রাণ। একসময় যেখানে হাটভরতি থাকতো নানান রকমের নৌকা আর ক্রেতাদের হাকডাক, এখন সেখানে শুধুই নীরবতা। হাতে গোনা কিছু বিক্রেতা অলস সময় কাটান। নেই আগের সেই কোলাহল, নেই বৈচিত্র্যপূর্ণ নৌকার সমারোহ।

নদীমাতৃক নিম্নাঞ্চলের এ জনপদে নৌকা একসময় ছিল মানুষের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। অথচ এখন নৌকার ব্যবহার প্রায় বিলুপ্তির পথে। অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা মাছের ঘের, সরকারি খাল ও জলাশয় দখল, এবং প্রকৃতিগত পরিবর্তনের ফলে কমে গেছে নৌকা ব্যবহার, যার সরাসরি প্রভাব পড়েছে এই শত বছরের নৌকার হাটে।

স্থানীয় জাঠিয়া গ্রামের বাসিন্দা নরেশ বাড়ৈ বলেন,“আগে সুন্দরি ও লোহা কাঠের তৈরি টেকসই নৌকা পাওয়া যেত। একটা কিনলে ১৫-২০ বছর ব্যবহার করা যেত। এখনকার রেইন্ট্রি ও মেহগনি কাঠের নৌকা এক-দেড় বছরেই ভেঙে যায়। তাছাড়া এ বছর দামও অনেক বেশি।”

নৌকা বিক্রেতা গোপাল ঘরামী জানান,“কাঠ, লোহার দাম এবং শ্রমিকদের মজুরি বেড়ে যাওয়ায় আমাদেরও বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। আগে প্রতি হাটে ২০-৩০টি নৌকা বিক্রি করতাম, এখন মাত্র ৩-৪টি বিক্রি হয়।”

অন্য বিক্রেতা শ্যামল মন্ডল বলেন,“খাল-বিল দখল, মাছের ঘেরের কারণে এখন আর আগের মতো মানুষের নৌকার প্রয়োজন নেই। কেবল কিছু ঘের মালিক মাছের খাবার দেওয়ার জন্য নৌকা কিনেন। আর কিছু শ্রমিক আছে তারা শাপলা  ও শামুক তোলার জন্য নৌকা কিনে থাকেন।”

এই হাটের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্বের কথা তুলে ধরে স্থানীয় সাংস্কৃতিক কর্মী সজল বালা বলেন,“নৌকা শুধু পরিবহন নয়, এ অঞ্চলের সংস্কৃতির অংশ। আগে হাটে নৌকা বেয়ে গান গাইতে গাইতে আসত বিক্রেতারা। ক্রেতারাও নৌকা কিনে আনন্দে বাড়ি ফিরতেন। এখন ভ্যানগাড়িতে নৌকা আনা-নেওয়া হয়। সেই প্রাণচাঞ্চল্য হারিয়ে গেছে।”
তিনি দুঃখ প্রকাশ করে আরো বলেন,“অপরিকল্পিত উন্নয়ন ও দখলদারিত্ব আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে গলা টিপে মারছে। আগামী প্রজন্মের জন্য হলেও নৌকার ঐতিহ্য রক্ষা জরুরি।”

এ বিষয়ে কোটালীপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মাসুম বিল্লাহ বলেন,“নৌকা এই অঞ্চলের ঐতিহ্য ও ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। যদি কেউ নৌকা তৈরিতে বা সংরক্ষণে সহযোগিতা চান, উপজেলা প্রশাসন অবশ্যই পাশে থাকবে। অপরদিকে, মাছের ঘেরের দৌরাত্ম্য ও খাল-বিল দখল বন্ধে আমরা শিগগিরই ব্যবস্থা নেব।”

 

 

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Advertise

Ads

Address

Office : Sheikh Fazlul Haque Moni Stadium (2nd floor), Gopalganj-8100 Mobile: 01712235167, Email: kalerkhabor24.com@gmail.com
© All rights reserved 2022

Design & Developed By: JM IT SOLUTION