কালের খবরঃ
শনিবার (৬ এপ্রিল) থেকে শুরু হচ্ছে তিনদিন ব্যাপী শ্রী শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের ২১৩-তম জন্ম তিথিতে স্নানোৎসব ও বারুনী মেলা। এদিন সকাল ৭টা ২১ মিনিটে হরিচাঁদ ঠাকুরের উত্তরসূরীগণ প্রথমে কামনা সাগরে স্নান করে স্নানোৎসবের উদ্ভোধন করবেন।এর পর হরিচাঁদ ঠাকুরের ভক্ত মতুয়ারা স্নান করবেন। স্নানোৎসব চলবে পরের দিন রবিবার ভোররাত পর্যন্ত।আর মেলা অনুষ্ঠিত হবে সোমবার বিকাল পর্যন্ত। এটি দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। এখানে প্রায় ১০ লক্ষ মতুয়া ভক্তদের সমাগম হয়ে থাকে। এই উৎসব সঠিক ভাবে সম্পন্ন করতে ঠাকুর বাড়ি এলাকায় সুউচ্চ পর্যবেক্ষণ টাওয়ার ও অর্ধশতাধিক সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে।
গত ২১ সালের ২৭ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঠাকুর বাড়ি পরিদর্শন করেন ও হরিচাঁদ গুরুচাঁদ মন্দিরে পূজাঅর্চণা করেন। এর পর থেকে ঠাকুরবাড়িটি বিশ্ববাসির কাছে পরিচিত হয়ে ওঠে।অনুষ্ঠান উপলক্ষে আইন-শৃংখলা বাহিনীর পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা। আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যের পাশাপাশি মতুয়া সংঘের প্রায় পাঁচশত স্বেচ্ছাসবক সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবেন।
কাশিয়ানী উপজেলার ওড়াকান্দিতে লাখ লাখ মতূয়াভক্ত ও হরিচাঁদ-গুরুচাঁদ ঠাকুরের ভক্তরা এখানে স্নান করতে আসেন। তারা পাপ মোচনের জন্য এই যোগস্নান করে থাকেন। স্নানোৎসব উপলক্ষে এখানে প্রতিবছর বসে বারুনী মেলা। মেলা চলবে সোমবার বিকাল পর্যন্ত। মেলায় কুঠির শিল্পের বিভিন্ন খেলনা, মাটির তৈরী তৈজসপত্র, বাঁশের জিনিস, তালপাখা, মিষ্টি মন্ডা, খাদ্য সামগ্রী, নাগর দোলনাসহ শিশুদের বিনোদনের জন্য নানা আয়োজন রাখা হয়। স্নানোৎসব ও মেলা পরিচালনা কমিটির সভাপতি সুপতি ঠাকুর শিবু বলেন, উৎসব শান্তির্পর্ণভাবে সম্পন্ন করতে প্রশাসনের পাশাপাশি নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এছাড়া ঠাকুরবাড়ির প্রবেশপথসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সিসি ক্যামেরার আওতায় নেয়া হয়েছে। যা পুলিশ প্রশাসন মনিটরিং করবেন। আশাকরি ঠাকুরের স্নানোৎসব ও মেলা সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন হবে।
হরিচাঁদ ঠাকুরের উত্তরসূরী ও কাশিয়ানী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সুব্রত ঠাকুর জানিয়েছেন, দেশের বিভিন্ন স্থান ও ভারত, নেপালসহ বিভিন্ন দেশের প্রায় ১০ লক্ষাধিক মতুয়া ভক্তরা এ স্নানোৎসবে যোগ দেন। ভক্তরা হাতে বিজয় ও সত্যের লাল নিশান এবং ডাঙ্খা (বড় ঢোল) বাজিয়ে উলু ধ্বনি দিয়ে মাইলের পর মাইল পথ পাড়ি দিয়ে ছুটে আসেন তীর্থভূমি শ্রীধাম ওড়াকান্দিতে। দুরের ভক্তরা বাস, ট্রাক, নসিমণ, করিমণ, ইজি বাইক, থ্রি-হুইলার ও নৌ-পথে নৌকা ও ট্রালারে করেও মতুয়াভক্তরা ওড়াকান্দিতে উপস্থিত হন। আগত ভক্তরা প্রথমে কামনা ও পরে শান্তি সাগরে (বড় আকৃতির পুকুর) স্নান করে পাপ মোচন ও শান্তি কামনা করেন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ( সার্কেল, মুকসুদপুর অঞ্চল) মোঃ কামরুজ্জামানের সাথে কথা হয় মঠোফোনে। তিনি বলেন অনুষ্ঠানটিকে নিরবিচ্ছিন্ন করতে দুই শতাধিক পুলিশ সদস্যের একটি শিপটিং ডিউটি রাখা হয়েছে। এছাড়া ৭৭টি সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। কমিটির পক্ষ থেকে পাঁচশতাধিক স্বেচ্ছাসেবক দায়িত্ব পালন করবে।বৃহস্পতিবার সকল সদস্যদের নিয়ে নিরাপত্তা সম্পর্কিত একটি ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার সকাল থেকে তারা দায়িত্ব পালন করছেন। ইতোমধ্যে পুলিশ সুপার আল বেলী আফিফা ঘটনাস্থ পরিদর্শণ করে আমাদের দিক নির্দেশনা দিয়েছেন। এই অনুষ্ঠান চলবে আগামী (৮ এপ্রিল) সোমবার বিকাল পর্যন্ত। এই কয়েকদিনে প্রায় ১০ লক্ষ মানুষের সমাগম ঘটবে।আশাকরি কোন রকম ঝামেলা ছাড়াই অনুষ্ঠানটি সুসম্পন্ন হবে।
জেলা প্রশাসক কাজী মাহবুবুল আলম বলেন, স্নানোৎসব সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন করতে পুলিশের পাশাপাশি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেয়া হয়েছে। যেহেতু এখানে বড় ধরনের জমায়েত হবে, সেই কারনে সিসি টিভি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। সেই সাথে পর্যাপ্ত সুপেয়পানি ও স্যানিটেশনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এছাড়া প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে একটি অস্থায়ী সেবাকেন্দ্র বসানোসহ সার্বিক ব্যবস্থা তদারকি করা হবে।আশাকরি কোন ধরনের অঘটন ছাড়া অনুষ্ঠানটি সম্পন্ন হবে।
উল্লেখ্য, শ্রী শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুর ও তাঁর ছেলে গুরুচাঁদ ঠাকুরের জন্মস্থান কাশিয়ানী উপজেলার এই ওড়াকান্দি গ্রামে। তাদের অনুসারী ভক্তদের বলা হয় মতুয়া ভক্ত। বিশ্বের কোটি কোটি মতুয়া ভক্তদের কাছে ওড়াকান্দি ঠাকুরবাড়ি একটি পবিত্র পুণ্যভূমি। নিম্নবর্ণের হিন্দু সম্প্রদায়ের ত্রাণ কর্তা হিসাবে ১৮১২ খ্রিস্টাব্দের ১১ মার্চ আবির্ভূত হয়েছিলেন হরিচাঁদ ঠাকুর। পরবর্তিতে তাঁর ছেলে গুরুচাঁদ ঠাকুর। তাই প্রতিবছর হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্মতিথি মধুকৃষ্ণ ত্রয়োদশীতে এখানে অনুষ্ঠিত হয় স্নানোৎসব ও মেলা।
Design & Developed By: JM IT SOLUTION
Leave a Reply