কালের খবরঃ
গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক কাজী মাহবুবুল আলম বলেছেন,নিত্যপ্রয়োজনীয় পন্য যেগুলো আছে যেমন, চাল, ডাল, পেয়াজ, রসুন, তেলসহ সাধারণ মানুষের জন্য যেটি বেশি প্রয়োজন সেগুলোর বাজার মূল্য স্থিতিশীল রাখার জন্য নানান উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।সরকার এসব পন্যের আমদানী শুল্ক কমিয়েছে, প্রনোদনাসহ ঋণ সহায়তা দিয়েছে। তারপর ও বাজারে দ্রব্যমূল্য উর্ধোগতি অব্যাহত রয়েছে। সরকার নানান ধরনের বাজার মনিটরিং করছে।তাতে তেমন ফল আসছে না।এখন আমরা একটা জিনিস বুঝেছি অর্থনীতিকে অর্থনৈতিক ভাবে মোকাবেলা করতে হবে।যেমন সামরিক বিষয় সামরিক ভাবে মোকাবেলা করতে হয়।বাজার মনিটরিং আসলে ফল দিচ্ছে না।তাই বাজারে যোগান বাড়াতে হবে এবং সরকারের কৃষি বিপনন বিভাগ যে ২৯টি পন্যের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে,আমারা সেই নির্ধারিত দামে বা তার চেয়ে কম দামে পন্য বিক্রি করতে গোপালগঞ্জে কালেক্টর বাজার বসিয়েছি।মঙ্গলবার (২৬মার্চ) গোপালগঞ্জ জেলা শহরের লঞ্চঘাট এলাকায় কালেক্টর বাজার উদ্বোধন কালে তিনি এ কথা বলেন।
জেলা প্রশাসক বলেন,১৭৭২ সালে এই কালেক্টর পদটি সৃস্টি। সেই কালেক্টর মাঠামোর ভিত্তিত্বে জেলার কার্যক্রম চলে আসছে।সেই থেকে কালেক্টরই শীর্ষে। তাই কালেক্টরের আওতায় যেসব খাস জমি আছে আমরা যেসব স্থানে বাজার বসাচ্ছি। সুদুর প্রসারী পরিকল্পনায় নেমেছি আমরা। বাজার ব্যবস্থা স্থিতিশীল করার লক্ষে আমরা জেলার বিভিন্ন সমবায় সমিতি, দুস্থ পরিবার, আশ্রয়ণ প্রকল্পের সদস্য, আমার বাড়ি আমার খমার আছে তাদের মধ্যে যাদের পুঁজি আছে তাদের পুঁজিতে এবং যাদের পুঁজি নেই তাদের পুঁজি সহায়তা দিয়ে জেলা প্রশাসনের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় এবং সহযোগীতায় এই বাজার পরিচালিত হবে। গোপালগঞ্জের জেলার প্রতিটি উপজেলার প্রতিটি হাট বাজারে আমরা পর্যায়ক্রমে নিত্য প্রয়োজনীয় ভোগ্য পন্য কালেক্টর বাজারের মাধ্যমে নিয়ে আসবো।কোথাও স্থানীয় ভাবে আবার কোথাও বিদেশ থেকেও আমদানীকৃত পন্য নিয়ে আমরা এই কালেক্টর বাজারে সরবরাহ করবো।পুরো ম্যানেজমেন্ট ব্যবস্থাটা একটি নতুন মডেল হবে।সেটাই হবে গোপালগঞ্জ মডেল বা কালেক্টর বাজার।
তিনি বলেন,কালেক্টর বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় সকল পন্য পর্যাপ্ত থাকবে। সরকার নির্ধারিত দামে বা তার চেয়ে কম দামে।এটাকে আমরা বলি ওয়েলফেয়ার বিজনেস বা কল্যাণ মূলক ব্যবসা।এতে ব্যবসায়ীদেরও লাভ থাকবে আর সাধারন মানুষ সরকার নির্ধারিত মূল্যে মালামাল পাবে।তাতে বাজারে যারা মোনাফাখোর আছে তারও বাধ্য হবে কম লাভে পন্য বিক্রিতে। বাজারে অন্যযারা ব্যবসায়ীরা আছেন তারা দেখবে সরকার নির্ধারিত মূল্যে বিক্রি হচ্ছে তখন তারাও তাদের পন্যের দাম কমাতে বাধ্য হবেন। তার ফলে সরকারের যে কাঙ্খিত লক্ষ্য বাজার স্থিতিশীল রাখা সেটা প্রতিফলিত হবে।সেই লক্ষে আমরা বাজারে নেমেছি।
জেলা প্রশাসক আরো বলেন, সরকার ব্যাপক উন্নয়ন মূলক কর্মকান্ড করেছে। মেগা প্রজেক্ট করেছে, কিন্তু বাজারে পন্যের উর্ধোগতির কারনে সরকারের জনপ্রিয়তা ম্লান হয়ে যাচ্ছে।এটা করছে চিহৃত কিছু ব্যবসায়ী গোষ্ঠী।আমরা সেই গোষ্ঠীকে নিয়ন্ত্রণের জন্য বাজারে নেমেছি। এখন থেকে বাজার মনিটরিং নয় বাজারে প্লেয়ার হিসেবে নামবো।বাজারকে আমরা নিয়ন্ত্রণের ভূমিকায় রাখবো।
তিনি আরো বলেন, আমাদের টার্গেট হচ্ছে নিন্মবিত্ত ও মধ্যবিত্ত জনগোষ্ঠী। উচ্চ বিত্ত নয়। এটা আমাদের পাইলট কার্যক্রম। এটা করতে গিয়ে কি সমস্যা বা কি সুবিধা আছে সেটা বিবেচনা করে সামনের দিকে এগোবো। এখানে মালামাল সংগ্রহ, সরবরাহের বিষয় রয়েছে।সেগুলো বিবেচনা করে স্থায়ী ভিত্তিত্বে পর্যায়ক্রমে গোপালগঞ্জের কালেক্টর বাজার স্থাপন করা হবে।
সরকার নির্ধারিত দামে পন্য বিক্রির লক্ষ্য নিয়ে গোপালগঞ্জে বসানো হয়েছে “কালেক্টর বাজার।” বাজার শুরু পর থেকে ক্রেতা সাধারনের ভিড় বেড়েছে। এই বাজারে ন্যায্যমূল্যে পন্য কেনার জন্য রীতিমত নিন্ম আয়ের সাধারণ মানুষ উপচে পড়ছে।তারা লাইনে দাড়িয়ে কম দামে পন্য কিনছেন। গোপালগঞ্জের বিভিন্ন সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মিরা একত্রিত হয়ে জেলা প্রশাসনের সহায়তায় এই কালেক্টর বাজারে পন্য বিক্রি কাজে নিয়োজিত রয়েছেন। কালেক্টর বাজার চালুর পর ইতোমধ্যে বাজারে এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।
বাজার পরিচালনাকারীদের সূত্রে জানাগেছে,গোপালগঞ্জ বাজারে গরুর মাংস ৭৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে করা “কালেক্টর বাজারে” গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৬৬০টাকা কেজি দরে।যা সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে ৪টাকা কম।তরমুজ ও বাঙ্গি বিক্রি হচ্ছে পিচ হিসেবে।যা ৩০টাকা কেজি দরের সমান। আর সাধারন ব্যবসায়ীরা জেলা শহর ছাড়াও উপজেলার হাট বাজারে গুলোতে তরমুজ বিক্রি করছেন ৪০/৫০ টাকা কেজি দরে। তুলনামূলক দাম কম হওয়ায় “কালেক্টর বাজারে” ক্রেতা-সাধারনের ভীড় সারাদিন লেগেই থাকছে।
গরুর মাংস সহ অন্যান্য দ্রব্য সরকার নির্ধারিত মূল্যে বিক্রি করায় জেলা শহরের ব্যবসায়ীরাও দাম কমাতে শুরু করেছেন। পরিত্র রমজানে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিত্বে দরিদ্র মানুষের হাতে কমদামে পন্য তুলে দিতে পেরে আত্মতৃপ্তি লাভ করছেন স্বেচ্ছাসেবকরা। আর ক্রেতারাও বাজার মূল্য থেকে তুলনা মূলক কম দামে টাটকা ফলমুল ও মাংস কিনতে পেরে খুশি।
বাজার করতে আসা গোপালগঞ্জ শহরের আরামবাগ এলাকার বাসিন্দা আলেয়া বেগম বলেন,এই উদ্যোগটির প্রশংসা করে বলেন েএটি একটি মহোতি উদ্যোগ। বাজারে প্রতিকেজি গরুর মাংস ৭০০/৭৫০ টাকায় বিক্রি হয়। আর ঈদ আসলে আরো বাড়িয়ে দেয়া হয়।এখানে দাম কম। সেই জন্য আমারা এখানে এসেছি।গরুর মাংস ও ফল কমদামে পাওয়া যাচ্ছে।প্রয়োজন অনুযায়ী কিনেছি।
মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল রোডের বাসিন্দা শহীদ শেখ বলেন,এই বাজারে টটকা মাল পাওয়া যাচ্ছে।বর্তমানে বাজারে যে উর্ধ্বগতি।৭০০/৭৫০টাকা গরুর মাংস বিক্রি করা হচ্ছে।এখানে ১০০টাকা কমে কিনতে পারছি।কম আয়ের মানুষ এখান থেকে কিনে চাহিদা মিটাতে পারে।এখানে যা যা পওয়া যাচ্ছে তা অন্য যায়গা থেকে সস্তা।
বিক্রেতা আরমান খান জয় বলেন, রমজান মাস। যারা অসাহায়, দরিদ্র মানুষ বাজারে গিয়ে ৭০০/৮০০ দরে গরুর মাংস কিনে খাওয়ার সাধ্য নাই। আমরা চেস্টা করছি নিন্ম আয়ের মানুষ যারা আছেন তাদের স্বল্প মূল্যে গরুর মাংসসহ বিভিন্ন পন্য তাদের হাতে তুলে দেয়া। সরকারি রেট ৬৬৪ টাকা থেকে ৪টাকা কমে ৬৬০টাকায় বিক্রি করছি। এই দোকানের নাম কালেক্টর বাজার হলেও এর আরেকটা ছদ্দ নাম হচ্ছে গরীবের বাজার। এখানে সর্বনিন্ম রেট।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহসিন উদ্দিন বলেন,এই কালেক্টর বাজারের উদ্যোগটি মূলত জেলা প্রশাসকের। রমজান উপলক্ষে পাইলট হিসেবে আমরা শুরু করেছি। আমরা বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার করে যদি দেখি সরকার নির্ধারিত মূল্য বা তার থেকে কম মূল্য বিক্রি করতে পারি তাহলে বাজারের ব্যবসায়ীরা কেন পারবেন না এটাই আমাদের প্রশ্ন।আমরা যদি সফল হই তাহলে ব্যবসায়ীরা আমাদের সাথে একাত্বতা প্রকাশ করে স্বাগত জানাবেন এবং বাজার স্থিতিশিল রাখতে সরকার নির্ধারিত মূল্য পন্য বিক্রি করে মানুষদের স্বস্তি দিবেন।
Design & Developed By: JM IT SOLUTION
Leave a Reply