কালের খবরঃ
গোপালগঞ্জে রাস্তায় ফেলে রাখা ৯৫ বছরের বৃদ্ধ মা রাবেয়া বেগমের ঠাঁয় হচ্ছে বৃদ্ধাশ্রমে। আদর যন্তে বড় করা সন্তাদের এমন কান্ডে হতবাক মা। তবে এখন আর তিনি সন্তানের কাছে ফিরতে চান না। ওই বৃদ্ধাকে আশ্রয় দেয়াসহ দেখভাল করছে গোপালগঞ্জ সদর থানা পুলিশ।
পুলিশের পক্ষ থেকে ধারনা করা হচ্ছে, রাবেয়া বেগম বৃদ্ধা হওয়ায় সন্তানেরা তাকে রাস্তায় ফেলে চলে গেছেন। ওই বৃদ্ধার ঠিকানা খুঁজতে কাজ করছে পুলিশ।
যে মা দশমাস দশদিন গর্ভেধারণ ও তীব্র যন্ত্রণা সহ্য করে সন্তানদের বড় করলেন সেই মাকে ই রাস্তায় ফেলে গেলেন সন্তানেরা। যে মা গর্ভে ধারণ করে সন্তানদের পৃথিবীর আলোর মুখ দেখিয়েছেন, সেই মাকে বৃদ্ধ বয়সে বোঝা মনে করে রাস্তায় ফেলে যাওয়ায় স্থানীয়রা একে অমানবিক বলে মনে করেছেন। বৃদ্ধ বয়সে সন্তানরা মা-বাবার ছায়া হলেও রাবেয়া বেগমের ঠাঁয় হচ্ছে এখন একাকী বৃদ্ধাশ্রমে।
সোমবার (২২ জানুয়ারী) থানায় দিয়ে দেখা গেছে, ৯৫ বছরের বৃদ্ধা রাবেয়া বেগম। এখন যেন চোখের পানিই যে তার সঙ্গী। বয়সের ভারে আর শীতে জমে যাওয়া রাবেয়া কথা বলা আর চলাফেরা করতে পারেন না তিনি। স্বামী মারা গেলেও বেঁচে থাকার শেষ আশ্রয় ছিল চার সন্তান। কিন্তু যাদের সারাটা জীবনে আদর স্নেহ দিয়ে বড় করছেন আজ তাদের কাছেই যে তিনি এক বড় বোঝা।
রাস্তা থেকে উদ্ধার করা রাব্বি সরদার বলেন, সকাল ১০টার দিকে এই বৃদ্ধাকেগোপালগঞ্জ সদও থানার উত্তর পাশে রাস্তায় বসে কাপছিলেন এই বৃদ্ধা মা। ওনাকে প্রথম নাম ও ঠিকানা জিজ্ঞাসা করতেই তিনি কেঁদে ফেললেন। পরে নাম বললেন রাবেয়া। বাড়ির ঠিকানা বলতে পারেনি। তবে তিনি বলেন, একজন মহিলা তাকে এখানে রেখে চলে গেছে। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলি ওনাকে কম্বল, পানি ও খাবার কিনে দেই। পরে গোপালগঞ্জ সদর থানায় গিয়ে ওসিকে বিষয়টি জানালে তিনি চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। তিনি আরো বলেন, বৃদ্ধা জানিয়েছেন তার বাড়িতে দুই ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে। এর বেশী আর কিছু বলতে পারেনি।
গোপালগঞ্জ সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি মুহাম্মদ আনিচুর রহমান জানান, সোমবার (২২ জানুয়ারী) সকালে জেলা শহরের থানাপাড়া মোড়ে শীতার্ত অবস্থায় রাবেয়া বেগমকে পড়ে থাকতে দেখে রাব্বি সরদারসহ কয়েকজন যুবক। পরে তারা তাকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। এরপর তার দেখভালের দায়িত্ব দেন গোপালগঞ্জ সদর থানা পুলিশ। সদর থানার ওসি মুহাম্মদ আনিচুর রহমান বৃদ্ধা রাবেয়া বেগম কম্বল ও শীতবস্ত্র পড়িয়ে দেন। পরে বৃদ্ধাকে পাঠানো হয় গোপালগঞ্জ সদরের এসিল্যান্ডের কাছে। সদর এসিল্যান্ডের নির্দেশে বৃদ্ধার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়।
বয়সের ভারে কথা না বলতে পারলেও রাবেয়া বেগম নিজের নাম আর তার চার ছেলেমেয়ে রয়েছে বলে জানাতে পারলেও আর কিছুই বলতে পারেনি। তবে তাকে তার সন্তানরা ফেলে রেখে যেতে পারে বলে ধারনা করা হচ্ছে।গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা নীপা ব্যাপারী বলেন, শতবর্ষী এই বৃদ্ধার শারীরিক অবস্থা তেমন ভালো নয়। বৃদ্ধা রাবেয়ার শরীর আঘাতে চিহ্ন ও বুকে ব্যাথা রয়েছে। আমরা স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর পুলিশ তাকে নিয়ে চলে যায়।
সমাজসেবা অধিদপ্তরের গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা সহকারী পরিচালক সুলতানা জাহিদ পারভীন বলেন, ডাক্তারী পরীক্ষা শেষ বৃদ্ধা রহিমাকে সমাজসেবা অধিদপ্তরে আনা হয়। আইনী প্রক্রিয়া শেষে এসিল্যান্ড মহোদয়ের নির্দেশ গাজীপুরের পুবাইল বৃদ্ধশ্রামে রাতেই পাঠানো হবে।
গোপালগঞ্জ সুজনের সভাপতি রবীন্দ্রীনাথ অধিকারী বলেন, বৃদ্ধা বাবা মাকে রাস্তায় ফেলে যাওয়া সমাজের অবক্ষয়। আত্মকেন্দ্রিক, কুক্ষীগত ও নিজের স্বার্থের কারনে ঘটছে এমন ঘটনা। সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দোষীদের আইনের আওতায় আনা উচিত।
Design & Developed By: JM IT SOLUTION
Leave a Reply