বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১১:৪৪ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
কাশিয়ানীতে বাসের ধাক্কায় প্রাণ গেল রাজমিস্ত্রীর গোপালগঞ্জ এডভান্টিস্ট চার্চের ভূমি অধিগ্রহণের চেক বিতরণ বশেমুরবিপ্রবিতে ডিনস কমপ্লেক্স উদ্বোধন গোপালগঞ্জে তারুণ্যের উৎসব করেছে সমাজসেবা অধিদপ্তর সমাজ পরিবর্তনের মূল চালিকা শক্তি তরুণরাই! কোটালীপাড়া ইউএনও সাগুফতা অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে গোপালগ‌ঞ্জ দুদকের মামলা। কোটালীপাড়ায় ধর্ষণের শিকার চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী! আদালতে মামলা করল মা টুঙ্গিপাড়ায় পুলিশের উপর হামলা ও গাড়ী ভাংচুর মামলায় ইউপি সদস্য গ্রেপ্তার টুঙ্গিপাড়ায় নারী উদ্যোক্তাদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে ও উৎপাদিত পণ্য বাজারজাতকরনে কর্মশালা ও প্রদর্শনী একাত্তর পরবর্তী এই প্রথম গোপালগঞ্জে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ-এর শোভাযাত্রা ও সমাবেশ

ঈদে বাড়ি আসতেও ভয় পেতাম! এখন একটানে বাড়ি

Reporter Name
  • Update Time : সোমবার, ২৭ জুন, ২০২২, ৯.১৭ এএম
  • ২৫৯ Time View

কালের খবরঃ

পদ্মা ঘাটের ভোগান্তীর  কারনে ঈদে বাড়ি যেতেও ভয় পেতাম। গত ঈদও ঢাকায় করেছি। এখন প্রতিটা ঈদ বাড়িতে করতে পারবো। শুধু ঈদই নয় মাসে বা সপ্তাহে একবার অসতে পারবো। নিজেদের গাড়ী আছে মন চাইলেই ছেলে মেয়ে নিয়ে একটানে বাড়ি এসে আপন জনদের সঙ্গে সময় কাটাতে পারবো। এসব কথা বলেন ঢাকা থেকে খুলনার খালিসপুর গামী প্রাইভেটকার যাত্রী মোঃ আজমল হোসেন নামে এক ব্যবসায়ী।

রবিবার (২৬ জুন) দুপুর ১২টায়  গোপালগঞ্জ শহরের কুয়াডাঙ্গায়  ছাবিরা রউফ ফিলিং স্টেশনে তেল কিনতে আসলে কথা হয়  এই ব্যক্তির সঙ্গে।

তিনি কালের খবরকে বলেন, “আমরা ঢাকার ওয়ারির বাসা থেকে স্ত্রী, ফারিয়া হোসেন, তৃতীয় শ্রেনীতে অধ্যায়নরত মেয়ে এলিসিয়া জারা ও প্লে শ্রেণীর ছেলে আয়লান হোসেনেকে সঙ্গে নিয়ে  সকাল সাড়ে ৭টায় নিজস্ব গাড়ী নিয়ে রওনা হই। সকাল ৯টা ১৮ মিনিটে পদ্মা সেতুর টোল প্লাজায় ব্রীজের টোল দেই।সিরিয়ালে গাড়ী বেশী থাকায় একটু দেরী হয়।টোল দিতে সময়  লাগে ৩০ সেকেন্ড। টোল দেয়ার পর মাত্র ৮ মিনিটে ব্রীজ পার হয়ে এপাড়ে আসি। মনোরম সেতু দেখতে দেখতে কিছু বুঝে ওঠার আগেই  ব্রীজ পার হয়ে গেলাম।

তিনি আরো বলেন, আমার গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার রাজপাট গ্রামে। এখন খুলনায় স্থায়ী বসবাস আমাদের। ব্যবসার কারনে ঢাকায় থাকি। পদ্মা সেতুর কারনে আমাদের আগে খুব ভোগান্তী ছিল । ঘন্টার পর ঘন্টা ফেরীর জন্য ঘাটে বসে থেকে নদী পার হতে হয়েছে। এখন সেই চিন্তা দুর হলো। প্রয়োজনে যে কোন সময় ঢাকা, গোপালগঞ্জ বা খুলনা যাতায়াত করতে পারবো।

মোঃ আজমল হোসেনের স্ত্রী ফারিয়া হোসেন বলেন, “ আমি রাজশাহীর মেয়ে। যমুনা সেতু পার হয়ে বাবার বাড়ি যাওয়া আসা করি। যমুনা সেতুর থেকে পদ্মা সেতু অনেক উন্নত মনে হয়েছে। সেতু পার হওয়ার পর যে সড়ক সেটাও অনেক ভালো। নদী পাড়ের অসুবিধার জন্য শ্বশুর বাড়ি কম যাওয়া হতো। ভোগান্তী কথা মনে করে গত ঈদে ঢাকায় ঈদ করেছি। সেতু চালু হয়েছে আমাদের খুব সুবিধা হয়েছে। এখন সময় পেলেই ছেলে মেয়ে নিয়ে বাড়িতে আসতে পারবো।

গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার পাকুরতিয়া গ্রামের সৌদি প্রবাসী  এলাহি হাওলাদার। তিনি দেশে ফিরেছেন  গত সপ্তাহে। রবিবার তিনি ঢাকার ফুলবাড়িয়া বাসস্ট্যান্ড থেকে সকাল ৯টা ১৫ মিনিটে  টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেসের বাসে উঠেন। দুপুর ১২টায় গোপালগঞ্জের পুলিশ লাইনস মোড়ে পৌছান। মাত্র তিন ঘন্টায় তিনি ঢাকা থেকে গোপালগঞ্জে আসেন।

এলাহি হাওলাদার কালের খবরকে বলেন, “আমি সৌদি আরব থাকি প্রায় ১০ বছর। সৌদির অনেক স্থানে ঘুরেছি। অনেক নদীর উপর ব্রীজ দেখেছি। সে দেশের সড়ক বা ব্রীজের তুলনায় আমাদের পদ্মা ব্রীজ শতগুন ভালো মনে হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, পদ্মা নদী পার হতে আমাদের দুই আড়াই ঘন্টা অতিরিক্ত ব্যয় হতো।  মাত্র ৭মিনিটে সেতু পার হলাম। আগে ঘাটে যে সময় লাগতো সেই সময়ে ঢাকা থেকে গোপালগঞ্জে চলে আসলাম।

প্রাইভেট কার চালক , মোঃ মোমিন মিয়া বলেন, “আমি সান ফার্মার মার্কেটিং অফিসার রাজন মিয়ার গাড়ী চালাই। অফিসের কাজে স্যারকে নিয়ে প্রায়ই ঢাকা থেকে খুলনা যাওয়া লাগে। আগে ঘাটে এসে ফেরী পেতে দেড় দুই ঘন্টা বসে থাকতে হতো। আবার পার হতে এক ঘন্টা সোয়া ঘন্টা লাগতো। আর আজ সকাল ১০টায় মীরপুর থেকে রওনা হয়ে দুপুর সাড়ে ১২টায় গোপালগঞ্জ পৌছালাম। এর থেকে শান্তি বা আরামদায়ক যাত্রা আর কিছুই হতে পারে!

গোপালগঞ্জ  সদর উপজেলার মাঝিগাতী ইউনিয়নের বাঘাজুড় গ্রামের নিহারীকা বিশ্বাস বলেন, “ আমার ছেলে ঢাকার শাহাজাতপুর এলাকায় থাকে। ছেলের বাসায় প্রায়ই যাওয়া লাগে। আগে বাসে মাওয়া ঘাট হয়ে যেতাম। কখনও লঞ্চ আবার কখনও ফেরীতে পারাপার হতাম। ঘাটে এসে বেশ সময় অপেক্ষা করতে হতো।  আজই প্রথম পদ্মা সেতুর  উপর দিয়ে বাসে আসলাম । খুব কম সময়েই নদী পার হয়েছি। আমাদের কোন কষ্টই হয়নাই।

শুধু এসব যাত্রী বা চালকই নয় কথা হয় অসংখ্য বাসযাত্রী ও চালকদের সঙ্গে। তারা বলেন, দক্ষিণ- পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের জন্য যাতায়াতের খুবই সুবিধা হলো। দীর্ঘ দিনে ভোগান্তীর অবসান ঘটলো। কারনে অকারনে টাকা দেয়া থেকে রক্ষা পেলাম । মালামালা বহনে সুবিধা হবে। ঘাটে এসে কুলি লাগবেনা। ঘাটপাড়ের মানুষের খারাপ আচারন থেকে রেহাই হলো।

এদিকে রবিবার সকাল ৬টা থেকে জনসাধারনরে জন্য যানবাহন চলাচল খুলে দেয়ায় কারনে-অকারনে গোপালগঞ্জের অনেকেই ঢাকা-গোপালগঞ্জ ও গোপালগঞ্জ থেকে ঢাকা যাতায়াত করেছেন। দীর্ঘ বছরের যে কষ্ট আর বঞ্চনা সয়েছেন দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ সে দুঃখ কষ্টের একটু প্রশান্তি নিতে তাদের এই যাত্রা।

প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা শনিবার (২৫জুন) আনুষ্ঠানিকভাবে এই সেতু উদ্বোধন করায় মনের খুশিতে দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চলের অনেকেই কোন কাজ না থাকলেও ঢাকায় গিয়েছেন। আবার অনেকেই ঢাকা থেকে বাড়িতে এসেছেন, আবার বিকেলে ফিরে যাবেন। ইতিহাসের স্বাক্ষী হতে তাদের এই যাওয়া-আসা।

এছাড়া অনেকেই মটরসাইকেলে করে ঢাকা থেকে গোপালগঞ্জে এসেছেন, আবার ঢাকার দিকে রওনা হয়েছেন অনেকেই। এমনিতেই গোপালগঞ্জবাসীর মধ্যে পদ্মা সেতু চালু হওয়া নিয়ে একটা আলাদা অনুভূতি,আলাদা আনন্দ ছিল।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মস্থান এই গোপালগঞ্জে। জাতির পিতার মেয়ে শেখ হাসিনার দৃঢ় মনোবলের কারনে আজ পদ্মার বুকে নির্মিত হয়েছে এই অঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের স্বপ্নের পদ্মা সেতু। যদিও এখন আর পদ্মা সেতু স্বপ্ন নয়, স্বপ্ন আজ বাস্তবে রুপ নিয়েছে।

রবিবার ঢাকা থেকে গোপালগঞ্জ হয়ে গ্রামের বাড়ি বাগেরহাট যাচ্ছিলেন মটরসাইকেল চালিয়ে মোহাম্মেদ হোসেন। স্থানীয় পুলিশ লাইনস এলাকায় সকাল সাড়ে ৮টায় এই প্রতিনিধির সাথে আলাপ কালে তিনি জানান, তিনি খুবই আনন্দিত, উচ্ছেসিত। বাধাহীনভাবে ঢাকা থেকে গোপালগঞ্জে এসে পৌছিয়েছেন। এটি একদিন আগেও সম্ভব হয়নি। আমাদের প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও সাহসী পদক্ষেপের কারনে এটি সম্ভব হয়েছে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category

Advertise

Ads

Address

Office : Sheikh Fazlul Haque Moni Stadium (2nd floor), Gopalganj-8100 Mobile: 01712235167, Email: kalerkhabor24.com@gmail.com
© All rights reserved 2022

Design & Developed By: JM IT SOLUTION