
কালের খবর, বিশেষ রির্পোটঃ
সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে বিনাটিকেটে ও ভিসাছাড়া কুয়েতগামী উড়োজাহাজে উঠা জুনায়েদের বাড়ির সামনে ব্রীজ করে দিয়ে স্বপ্নের একধাপ পুরন করলো জেলা প্রশাসক কাজী মাহবুবুল আলম।
গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে তার বাবার সাথে এসে এক গনশুনানীর দিন জেলা প্রশাসকের সাথে দেখা করে জুনায়েদ। সেখানে তার ইচ্ছার কথা জানিয়ে বলেন, তার বাড়ির সামনে একটি বাঁশের সাকো রয়েছে, সেখানে মানুষের পারাপারের জন্য একটি ব্রীজ বা ওয়াকওয়ে বানানোর। তখন জেলা প্রশাসক কাজী মাহবুবুল আলম জুনায়েদের বাড়ির সামনে খালের উপর একটি ওয়াকওয়ে বা কাঠের সেতু তৈরী করে দেয়ার আশ্বাস দেন। তারই প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক কাজী মাহবুবুল আলম তার স্বপ্ন পূরনের জন্য মুকসুদপুর উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দিলে মুকসুদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার এসএম ইমাম রাজী টুলু জুনায়েদের বাড়ির সামনে কাঠের ব্রীজ তৈরীর প্রকল্প গ্রহণ করেন। উপজেলা প্রশাসনের অর্থায়নে প্রায় দুই লক্ষটাকা ব্যয়ে সম্প্রতি দৃস্টিনন্দন একটি কাঠের ব্রীজ তৈরী করে দেন।
জুনায়েদের আরও একটি স্বপ্ন লেখাপড়া শিখে ভবিষতে পাইলট হওয়ার। তার জন্য গোপালগঞ্জ শিশু পরিবারে ভর্তির ব্যবস্থা করে দেন জেলা প্রশাসক। জুনায়েদ এখন শিশু পরিবারে থেকে লেখাপড়া করছে।
জুনায়েদের বাড়ির সামনে কাঠের সেতু নির্মান করে দিয়ে জেলা প্রশাসক কাজী মাহবুবুল আলম তাঁর দেয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করায় এলাকাবাসী খুশি। বিশেষ করে বেশী খুশি হয়েছে জুনায়েদ। কেননা তার কথার গুরুত্ব দিয়ে জেলা প্রশাসক ব্রীজ নির্মাণ করে দিয়েছেন, এতে সে খুবই আনন্দিত। এলাকায় মানুষ তাকে এখন খুব ভাল বাসছে বলে জানিয়েছে জুনায়েদ।

এ ব্যাপারে জুনায়েদ জানায়, জেলা প্রশাসক স্যার আমার ইচ্ছার কথা শুনে বাড়ির সামনে একটি সুন্দর কাঠের সেতু নির্মান করে দিয়েছেন। এই ব্রীজটি তৈরী হওয়ায় আমার পরিবার ও এলাকার মানুষ ব্রীজ ব্যবহার করে সহজেই যাতায়াত করতে পারছেন। খালপাড়ারের ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা অন্যের সাহায্য ছাড়া পারাপার হয়ে স্কুল, কলেজ ও মাঠে গিয়ে খেলাধুলা করছে।
মুকসুদপুরের বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের সদস্য মোরাদ হোসেন বলেন, জুনায়েদের সুবাদে এলাকার দীর্ঘদিনের খাল পারাপারের সমস্যার সমাধান হয়েছে। দীর্ঘদিন লোকজন ভুগছিল তা থেকে রেহাই পেয়েছে।এজন্য জেলা প্রশাসক স্যারকে ধণ্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
জুনায়েদের পারইহাটি গ্রামের সবজি ব্যবসায়ী ইমরান মোল্লা বলেন, আমরা ব্যবসা বাণিজ্যের জন্য হাটবাজারে যাই। সেসময় নৌকা বা সাকো পারাপার হতে হয়। এতে খুবই সমস্যা হয়। এছাড়া এলাকার উৎপাদিত কৃষিপণ্য ঘরে তুলতে অসুবিধা হতো।এখন জুনায়েদের চাহিদার ভিত্তিত্বে ডিসি স্যার আমাদের একটা কাঠের ব্রীজ করে দিয়েছেন। এতে আমাদের খুবই সুবিধা হবে। আমরা সহজে ব্রীজ পারাপার হয়ে জেলা বা উপজেলার বিভিন্ন স্থানে যেতে পারবো।
জুনায়েদের বাবা ইমরান হোসেন বলেন, জেলা প্রশাসক এ ধরনের উদ্যোগ নেয়ায় আমি শুধুনয় এলাকার সকল মানুষ খুবই খুশি।এখন গ্রামবাসি খালের এপার থেকে ওপারে সহজে পারাপার হতে পারছে। জমির ফসল ঠিকঠাক ঘরে তুলতে পারবে। স্কুল কলেজগামী শিক্ষার্থীরা সময়মত স্কুল বা কলেজে যেতে পারবে। এছাড়া জেলা প্রশাসক স্যার আমার ছেলে লেখপড়ার জন্য গোপালগঞ্জ শিশু পরিবারে ভর্তি করে দিয়েছেন।সে ওখানে থেকে লেখাপড়া করছে। জুনায়েদের স্বপ্ন পূরনে জেলা প্রশাসনের এগিয়ে আসায় বাবা হিসেবে আমি জেলা প্রশাসককে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

মুকসুদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার এসএম ইমাম রাজী টুলু বলেন, জুনায়েদ জেলা প্রশাসকের কাছে তার ইচ্ছার কথা জানালে স্যার আমাকে এলাকা ভিজিট করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা প্রহণের নির্দেশ দেন। তারই প্রেক্ষিতে মুকসুদপুর উপজেলা প্রশাসনের উদ্যেগে প্রকল্প প্রহণের মাধ্যমে প্রায় দুই লক্ষটাকা ব্যয়ে একটি কাঠের ব্রীজ নির্মাণ করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক কাজী মাহবুবুল আলম বলেন, একজন শিশু যখন তার স্বপ্নের কথা বলে। তখন সবারই উচিৎ তাকে গুরুত্ব দিয়ে ইচ্ছা পুরন করা। তার প্রথম দাবী ছিল তার গ্রামের বাড়ির খালের উপর একটি ব্রীজ আর লেখা পড়ার জন্য সাহায্য সহযোগীতা। তাই আমি ব্রীজ নির্মাণের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করি। আর একটি ইচ্ছার কথা বলেছে সেটি হলো পাইলট হয়ে বিমান চালোবে জুনায়েদ। এই জন্য লেখাপড়ার দরকার তাই তাকে গোপালগঞ্জ শহরে শিশু পরিবারে রেখে লেখাপড়া শিখানো হচ্ছে।
উল্লেখ্য প্লেনে উঠে বসা সেই জুনায়েদকে হয়তো আমরা ভুলেই গেছি। জুনায়েদ যেদিন সবার অলক্ষ্যে প্লেনে উঠে দেশ ব্যাপী তোলপাড় ও আলোড়ন সৃস্টি হয়। দরিদ্র পরিবারের সন্তান জুনায়েদের শখ ছিল প্লেনে চড়ে আকাশ দেখবে। আকাশ ছোয়ার স্বপ্ন নিয়ে প্লেনে চড়ে ভেসে বেড়াবে নীল আকাশে। কিন্তু, শেষ মহুর্তে সেদিন আর তার আকাশে ওড়ার সখ পূরন হয়নি। শেষ পর্যন্ত প্লেনের কর্মচারীদের হাতে ধরা খেয়ে প্লেন থেকে তাকে নামিয়ে আনা হয়। স্বপ্ন ভগ্ন হয়ে বাড়িতে চলে আসতে হয় তাকে।
Design & Developed By: JM IT SOLUTION