পদ্মা সেতুই বদলাবে গোপালগঞ্জসহ দক্ষিণ–পশ্চিমাঞ্চল মানুষের ভাগ্য –
বিশিষ্ট জনদের অভিমত
কালের খবর বিশেষ রির্পোটঃ
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা গোপালগঞ্জ । এ জেলার মানুষের ভাগ্য বদলে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। এই সেতুকে ঘিরেই সোনালী ভবিষ্যতের স্বপ্ন বুনতে শুরু করেছেন গোপালগঞ্জের বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষ। পদ্মা সেতু চালু হলে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থার আমুল পরিবর্তন ও নতুন দ্বার উন্মোচন হবে।পিছিয়ে পড়া এই জেলার মানুষ ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে আরও মনোযোগী হয়ে নতুন নতুন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলবে। তৈরী হবে অসংখ্য শিল্প কলকারখানা।সৃস্টি হবে কর্মসংস্থানের। ফলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের ব্যবসা বাণিজ্যসহ ব্যপক উন্নতি সাধিত হবে। শুধু পদ্মানদী পারাপারের কারনে পিছিয়ে ছিল পদ্মার দক্ষিণ ও পশ্চিম অঞ্চলের এসব জেলা। জেলা গুলো হচ্ছে- ঢাকা বিভাগের গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরীয়তপুর ও রাজবাড়ী। খুলনা বিভাগের খুলনা, বাগেরহাট, যশোর, সাতক্ষীরা, নড়াইল, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ ও মাগুরা। আর বরিশাল বিভাগের বরিশাল, পিরোজপুর, ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা ও ঝালকাঠি জেলা।
গোপালগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক, এম বদরুল আলম নাসিম বলেন,রাজনৈতিক মতোবিরোধ আমাদের যা-ই থাকুকনা কেন,পদ্মা সেতুটা ছিল এই অঞ্চলের মানুষের একটি প্রাণের দাবী ও স্বপ্নের সেতু। এই সেতু বানানোতে আমি গোপালগঞ্জের একজন সন্তান হিসেবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে কৃতজ্ঞতা এবং তাঁর সাহসী পদক্ষেপের জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি।আজকে এই দক্ষিণ অঞ্চলের মানুষ যে অবহেলিত ছিল তা দূর হবে। ঢাকার সাথে ব্যবসা বাণিজ্য এবং যাতায়াতের যে সুবিধাটা মানুষ পাবে সে সুফল সারা দক্ষিণ বঙ্গের মানুষ উপভোগ করবে।২৫ তারিখে সেতু উদ্বোধন হচ্ছে তার জন্য আল্লাহর কাছে সুকরিয়া আদায় করি।হে আল্লাহ তুমি আমাদের এই স্বপ্নের সেতুটাকে সফল ভাবে সম্পন্ন করার সুযোগ দিয়েছো।
গোপালগঞ্জ জেলা বিএনপির আহবায়ক শরীফ রাফিকুজ্জামান বলেন,পদ্মা সেতু এ অঞ্চলের মানুষের বহুদিনের একটি প্রত্যাশা।অনেক আগেই পদ্মা সেতু হোক মানুষের এই প্রত্যাশা ছিল। বিভিণ্ন কারনে হয়নাই।শেষ পর্যন্ত অনেক বিলম্ব হলেও অনেক চড়াই-উৎরাই পার হয়ে এটা উদ্বোধন হতে যাচ্ছে। এটা আমাদের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের জন্য অত্যান্ত আনন্দের সংবাদ এবং আমি ব্যক্তিগত ভাবেও আনন্দিত।সুধু যে ২১ জেলার মানুষ সুযোগ সুবিধা পাবে তা নয়।গোটা বাংলাদেশের মানুষের যোগাযোগের একটি উন্নয়ন ও সেতু নেটওয়ার্ক তৈরী হলো। তারই একটি ধাপ আমরা অতিক্রম করলাম।ইতোপূর্বে উত্তর অঞ্চলের জনগনের প্রত্যাশা অনুযায়ী যমুনা সেতু তৈরী হয়েছে। তার দ্বারা সে অঞ্চলে অর্থনৈতিক একটি গতি এসেছে।উত্তর অঞ্চলের পিছিয়েপড়া মানুষেরা অর্থনৈতিক ভাবে এগিয়ে এসেছে।তেমনি গোপালগঞ্জসহ দক্ষিণ অঞ্চলের মানুষেরও অর্থনৈতিক পরিবর্তন হবে। সর্বপরি গোপালগঞ্জ জেলা বিএনপির কনভেনার হিসেবেই নয় আমি একজন গোপালগঞ্জের সন্তান হিসেবেও এই ব্রীজ তৈরী এবং উদ্বোধন হওয়াতে আনন্দিত এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানাচ্ছি।
স্থানীয় সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোঃ হাবিবুর রহমান বলেন, পদ্মা সেতু চালুর পর থেকে পন্য পরিবহন ও মানুষের যাতায়াত খরচ ও সময় বাচবে। পদ্মা সেতুকে ঘিরে যে কর্মকান্ড হবে, সেটি হলো কৃষিজাত পন্য সংরক্ষণ, বিপনন, হিমাগার, পর্যটন, বড়শিল্প, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প গড়ে উঠবে। এতে শুধু গোপালগঞ্জ নয় দক্ষিণ বঙ্গের ২১টি জেলায় প্রবৃদ্ধি বাড়বে।এই কারনে দেশের জিডিপিতে প্রায় এক থেকে দুই পারসেন্ট আয় বাড়বে।
তিনি আরো বলেন,দক্ষিণ বঙ্গে বড় দুইটি সমুদ্র বন্দর পায়রা ও মংলা বন্দর রয়েছে। এই সমুদ্র বন্দর গুলো গোপালগঞ্জের কাছাকাছি হওয়ায় গোপালগঞ্জ এখন গেটওয়ে অবস্থানে রয়েছে। এখানে কৃষি ভিত্তিক শিল্প কারখানা, যেমন মৎস্য ও সবজি প্রসেসিং জোন, পর্যটন জোন , প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখার জন্য রির্সোট হতে পারে।সেতুর কারনে এখানে যে কানেক্টিভিটি তৈরী হবে,সে জন্য প্রতিদিনই গোপালগঞ্জের মানুষ ঢাকাসহ দেশের বিভিণ্ন স্থানে উৎপাদিত পন্য নিয়ে যেতে পারবেন। আবার অন্য জেলার মানুষও এখানে আসতে পারবেন।তিনি আরো বলেন, গোপালগঞ্জসহ আশপাশ জেলার প্রচুর পরিমানে সবজি ও মৎস্য উৎপাদন হয়ে থাকে । সেগুলোর গুনগতমান ঠিক রাখতে হিমাগার তৈরী প্রয়োজন। পদ্মা সেতু চালু হলে সেসব সম্ভব হবে।তাতে কৃষক ন্যায্য মূল্য পাবেন, ফসল ও নষ্ট হবে না । আয় বৃদ্ধি পাবে।ফলে গোপালগঞ্জের অর্থনীতিতে প্রভাব বিস্তার করবে।এইসব প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলে কৃষকদের বা শ্রমজীবী মানুষের চাহিদা বাড়বে।তাদের মজুরী বাড়বে। এভাবেই শ্রমজীবী মানুষের জীবনমান ও অর্থনৈতিক পরিবর্তন আসবে।
শেখ ফজিলাতুন্নেছা মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ শশাঙ্ক মল্লিক বলেন,দক্ষিণ বঙ্গের অনেক প্রত্যাশিত এই পদ্মা সেতু। পদ্মাসেতু চালুর মধ্য দিয়ে গোপালগঞ্জসহ দক্ষিণ পশ্চিমের ২১ জেলার মানুষ অনেক উপকৃত হবেন।বাংলাদেশের জাতীয় আয় বৃদ্ধি পাবে। এটা বাংলাদেশের জন্য আর্শিবাদ।গোপালগঞ্জসহ দক্ষিণ এলাকার শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষা গ্রহন করতে অনেক সুযোগ সুবিধা তৈরী হবে। ঢাকায় অবস্থানরত অনেক অভিজ্ঞ শিক্ষক ঢাকা থেকে দক্ষিণ এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চাকরী করতে পারবেন। যাতায়াতের কারনে এসব শিক্ষকরা কর্মস্থলে অবস্থান করে ছেলে মেয়েদের সহজে উন্নতমানের পাঠদান করাতে পারবেন।
গোপালগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের সহসভাপতি মোঃ মোশারফ হোসেন বলেন,“পদ্মা সেতু নির্মানের ফলে ঢাকার সাথে গোপালগঞ্জের দূরত্ব কমে আসবে এবং সময় বাচবে। এ কারনে গোপালগঞ্জে ইতোমধ্যে শিল্পায়নের কাজ শুরু হয়েছে। বিশেষ করে মুকসুদপুর থেকে কাশিয়ানী পর্যন্ত প্রায় ২৫ কিলোমিটার এলাকায় মহাসড়কের দুইপাশে ছোট ছোট শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। আগামীতে গার্মেন্টসসহ রফতানিমুখী বড় ধরনের নানা শিল্প-কারখানা গড়ে উঠবে বলে আমি আসাবাদি।’ এই শিল্প কলকারখানা গড়ে উঠলে গোপালগঞ্জের অনেক বেকার যুবক যুবতীদের কর্মসংস্থান হবে। শ্রমিকদের মূল্য বাড়বে। সেই সাথে অর্থনৈতিক উন্নয়ন হবে।
এ প্রসঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শেখ লুৎফর রহমান বাচ্চু বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সব সময় চাইতের সকলের জন্য বাসযোগ্য একটি দেশ বা রাষ্ট্র গড়ে তোলার। সবাই যাতে ভালো থাকে সুখে থাকে।জীবন মানের উন্নয়ন হয়। তারই ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু প্রকল্প হাতে নেয়ার পর বিএনপিসহ দেশী বিদেশী অনেক রাজনৈতিক চক্র প্রতিবন্ধকতা শুরু হয়। সেসব কাটিয়ে বিদেশী কোন সাহায্য সহযোগীতা ছাড়াই, দৃঢ় সাহসীকতায় নিজেদের অর্থায়নে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু করেন। আজ সেই সেতু উদ্বোধন হবে। জনগনের চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে। এতে গোপালগঞ্জসহ দেশের সকল মানুষের সুবিধা হবে। এ জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কৃতজ্ঞতা ও অভিনন্দন জানাই।
তিনি আরো বলেন, পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠায় তাঁরই কন্যা নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন।পদ্মাসেতু নির্মাণের মধ্যদিয়ে দেশকে তিনি আরো একধাপ এগিয়ে নিলেন। ফলে দক্ষিণ অঞ্চলসহ দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে। অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, ব্যবসায়ীক উন্নয়ন হবে।ব্যবসায়ীরা মংলা ও পায়রা বন্দর ব্যবহার করে কম খরচে শিল্প কলকারখানার জন্য কাঁচামাল আনা নেয়া করতে পারবেন। দেশের আয় বাড়বে জনগনও ভালো থাকবে।
Design & Developed By: JM IT SOLUTION
Leave a Reply