কালের খবরঃ
নিরাপত্তা কর্মীদের চোখ ফাঁকি দিয়ে বিমানে উঠা শিশু জোনায়েদ মোল্রা (১১) এখন বাড়ীতে শিকল বন্ধী। পরিবার তার পায়ে শিকল পরিয়ে ঘরের খুটির সঙ্গে বেধে রেখেছে।
সংবাদ মাধ্যম ও নেট পাড়ায় ভাইরাল হওয়া জোনায়েদকে এক পলক দেখতে ভিড় করছে আত্মীয় স্বজন ও পাড়া প্রতিবেশীরা।
গত রবিবার সকালে দাদী আসমা বেগমকে মাদ্রাসার যাওয়ার ওয়াদা করে জোনায়েদ মোল্লা (১১) তালাবদ্ধ ঘর থেকে বের হয়েই ছুট দেয়। প্রথমে ইজিবাইকে করে মুকসুদপুর বাসস্ট্যান্ড। তারপর ঢাকার বাসে উঠে চলে যায় সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ডে। সেখান থেকে বাসে করে বসুন্ধরা, এরপর এয়ারপোর্ট যায় সে। এর আগেও কাউকে কোন কিছু না বলে চলে যাওয়ায় ঘরে তালাবদ্ধ করে রাখা হতো শিশু জোনায়েদকে।
জোনায়েদ মোল্লা সঙ্গে কথা হলে সে সাংবাদিকদের জানায়, এয়ারপোর্ট যাওয়ার পর উপরে উঠতে গেলে তাকে গেটের লোক (নিরাপত্তা কর্মিরা) বাঁধা দেয়। পাসপো্র্ট ছাড়া উপরে উঠা যাবেনা বলে। পরে অন্য পাশ দিয়ে ঘুরে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে জোনায়েদ। গত সোমবার রাতে দো-তলায় উঠে এক নম্বর গেট দিয়ে ঢুকার পর দেখি একজন পাসপোর্ট নিচ্ছে আবার দিয়ে দিচ্ছে। তখন অনেকজন যাত্রী এক সাথে ঢুকতেছিল সেই সুযোগে সে চেকিং পার হয়ে ঢাকা থেকে কুয়েতগামী কুয়েত এয়ারওয়েজের রাত ৩টা ১০ মিনিটে একটি ফ্লাইট (কেইউ-২৮৪) পাসপোর্ট ও বোর্ডিং পাস ছাড়াই উঠে পড়ে।বিমানের সিটে এক ঘন্টার মতো বসার পর ওই সিটের যাত্রী আসায় তাকে সিট থেকে তুলে দেয়া হয়। তখন বিমানের আর কোন সিট ফাঁকা ছিলো না। পরে তাকে বিমান কর্মীরা নামিয়ে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে তাকে বিমানবন্দর থানা হেফাজতে রাখা হয়।
কুয়েত এয়ারওয়েজের ফ্লাইটে উঠে পড়া শিশু জোনয়েদ মোল্লা গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের পারইহাটি গ্রামের স্থানীয় একটি মসজিদের ঈমাম ও সবজি ব্যবসায়ী ইমরান মোল্লার ছেলে।
জোনায়েদ মোল্লা ছোট চাচা ইউসুফ মোল্রা বলেন, এয়ারপোর্ট থানা থেকে তাকে মোবাইলে ফোন দিয়ে জোনায়েদ সম্পর্কে খোঁজ খবর নেয়ার পর ঘটনা সম্পর্কে জানতে পারি। তখন তার মা অথবা বাবাকে এসে জোনায়েদকে নিয়ে যেতে বলা হয়। মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) রাত তিনটার সময় জোনায়েদকে তার নিকট হস্তান্তর করা হয়। বুধবার (১৩ সেপ্টেম্বর) বাড়ীতে আসার পর আবার পালিয়ে যায়। পরে ওর খালা বাড়ী থেকে তাকে ধরে এনে ঘরে আটকে রাখা হয়েছে ।
জোনায়েদের বাবা ইমরান মোল্লা বলেন, ১৮ মাস বয়সে অভাব-অনাটনের কারণে জোনায়েদের মা ওকে ফেলে গিয়ে অন্যত্র বিয়ে করে। পরে তিনি আবার বিবাহ করেন। জোনায়েত ছাড়াও তার আরো এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। ওর সৎ মা অন্য ছেলে-মেয়ের মতো করে ওকে ভালবাসে। কিন্তু ছেলেটি সুযোগ পেলেই পালিয়ে যায়। তাই বাড়ির পাশে এসে আলিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি করেছি। এঘটনার পর মনে হচ্ছে ওর মানষিক কোন সমস্যা হয়েছে। শীঘ্র ওকে ভাল চিকিৎসকের কাছে নেয়া হবে বলেও তিনি জানান।
এক প্রশ্নের উত্তরে ইমরান মোল্রা বলেন, চিকিৎসা শেষে ওর পায়ের শিকল খুলে দেয়া হবে। আর তাকে তালাবদ্ধ অবস্থায়ও রাখা হবে। পালিয়ে গেলে ঝামেলায় পড়তে হয় তাই এমন ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
বিমানবন্দর থানার ওসি আজিজুল হক মিয়া জানান, শিশুটি থানা হেফাজতে ছিল। তার বাড়ি গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলায়। তার অভিভাবককে খবর দেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে চাচা ইউসুফ মোল্লা আরও জানান, তার ভাতিজা জোনায়েদ মোল্লা খুবই দুরন্ত পনা। তাকে হাফেজিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি করা হয়েছিলো। সেখান থেকে সে বার বার পালিয়ে আসে বলে তাকে বাড়ির পাশে আলিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি করা হয়েছে। বর্তমানে জোনায়েদ ৫ম শ্রেনীতে পড়ে। তারপরও সে বাড়ি থেকে মাঝে মধ্যে হারিয়ে যায় আবার একাই ফিরে আসে। এরআগে সে পালিয়ে ঢাকা, মংলা, রাজবাড়ীসহ বিভিন্ন জায়গায় গিয়েছিল।
Design & Developed By: JM IT SOLUTION
Leave a Reply