টুঙ্গিপাড়া প্রতিনিধিঃ
সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে সরকারের নেয়া পদক্ষেপ Òবৈকালিক চিকিৎসাসেবাÓ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার ১০০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চালু করা হয়েছে। এ সেবার মাধ্যমে সরকার নির্ধারিত ফি দিয়ে কম খরচে চিকিৎসাসেবা পেয়ে উপকৃত হচ্ছেন টুঙ্গিপাড়া উপজেলাসহ ও আশপাশ এলাকার মানুষ। তবে চালুর দুই মাস অতিবাহিত হলেও তেমন সাড়া মেলেনি এই চিকিৎসা সেবায়। চিকিৎসকরা বলছে প্রচার-প্রচারণা কম থাকায় রোগী কম হচ্ছে। তবে সরকারি হাসপাতালে এ সেবা চালু হওয়ায় চিকিৎসা খরচ প্রায় এক চতুর্থাংশে নেমে দাড়িয়েছে বলে মনে করছেন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।
গোপালগঞ্জ জেলাসদরসহ পাঁচ উপজেলায় রয়েছে পাঁচটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। এর মধ্যে টুঙ্গিপাড়া উপজেলা হাসপাতালে চালু করা হয়েছে সরকারের এই পাইলট প্রকল্প “বৈকালিক চিকিৎসাসেবা। চলতি বছরের ৩০ মার্চ থেকে এ কার্যক্রম শুরু হয়। সেদিন মাত্র একজন রোগী ২০০টাকা ফি দিয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করেন। এরপর ৪৪টি কার্যদিবসে শিশু ও বৃদ্ধসহ বিভিন্ন বয়সের দুই শতাধিক মানুষ চিকিৎসা নিয়েছেন বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন।
সরকারি ছুটি ব্যতীত প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে চলে ৬টা পর্যন্ত ফি নিয়ে রোগী দেখা । এ সময়ের মধ্যে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ মেডিকেল অফিসারগণ চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। এই হাসপাতালে অধ্যাপক কোন ডাক্তার নেই। এখানে জুনিয়র কনসালটেন্ট ও মেডিকেল অফিসার দিয়ে চলে চিকিৎসা সেবা। তারা যার যার নির্ধারিত ফি নিয়ে রোগী দেখেন।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেখাতে হলে জেলা শহর বা জেলার বাইরে ঢাকা বা খুলনা যেতে হয়। সেক্ষেত্রে চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত চেম্বার বা বাইরের ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চিকিৎসা খরচ অনেকটাই বেশি। তবে বৈকালিক চিকিৎসাসেবা চালু হওয়ায় উপকার পাওয়া শুরু করেছে উপজেলাবাসী।
সরেজমিন সোমবার (২৯ মে) বিকেল ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত বৈকালিক চিকিৎসাসেবার হালচাল দেখতে ১০০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যাওয়া হয়। হাসপাতালের ২০৫ নম্বর কক্ষে একাই বসে সময় কাটাচ্ছে সোমবারের রোস্টার অনুযায়ী দায়িত্বরত মেডিকেল অফিসার ডা. মো. আলমগীর হোসেন। তিনি কালের খবরকে বলেন, সরকার যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে এটি সময়োপযোগী ও গুরুত্বপূণ। এই দ্রব্যমূলের বাজারে চিকিৎসা ব্যায়ও বেড়েছে। রোগীরা যদি নামে মাত্র মূল্যে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে পারে তাহলে তাদের অনেক উপকার হবে। তবে এই স্বল্প ফিতে চিকিৎসকরা বৈকালিক চিকিৎসা দেন এ বিষয়ে অনেকেই জানেন না। এটার জন্য ব্যাপক প্রচার প্রচারণা প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। প্রচার প্রচারনা করতে পারলে সরকারের উদ্যোগ সফল হবে। মানুষ কম খরচে চিকিৎসা সেবা পাবে এবং উপকৃত হবেন।
বৈকালিক চিকিৎসা সেবা নিতে আসেন টুঙ্গিপাড়া উপজেলার গিমাডাঙ্গা গ্রামের মেজবাহ শেখের স্ত্রী গৃহবধু লিমা আক্তার (২০)। তিনি গাইনী জনিত সমস্যা নিয়ে চিকিৎসা নেন মেডিকেল অফিসার মোঃ আলমগীর হোসেনের কাছে। এসময় তার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, হাসপাতালের বৈকালিক চিকিৎসার বিষয়ে হাসপাতালে এসে জানতে পারলাম। বাইরে যদি ডাক্তার দেখাতে হয় তাহলে সিরিয়াল দিয়ে অনেক সময় বসে থাকতে হয়। ফি বেশি লাগে। আবার অনেক টাকার টেস্ট দেয়। যা মানুষের জন্য খুবই কষ্টের। বৈকালিক চিকিৎসায় স্বল্প ফিতে সহজেই নিরিবিলি পরিবেশে ডাক্তার দেখাতে পেরেছি। সুবিধা হয়েছে। টাকা বেচে গেছে। তবে মানুষকে জানাতে গ্রামগঞ্জে প্রচারনা করা দরকার।
টুঙ্গিপাড়া উপজেলার পাটগাতী ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর গ্রামের হাসান মিয়ার ছেলে আবুল হানিফ মিয়ার সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন বৈকালিক সেবা চালুতে আমাদের সুবিধা হয়েছে। কম ভিজিটে সেবা পাচ্ছি। যারা বোঝে তারা হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়। যারা এখনো বিষয়টি জানতে পারেনি তারা বাইরে ডাক্তার দেখায়। এছাড়া পরীক্ষা-নিরীক্ষা হাসপাতালে হয়। এসব সুবিধার কথা বেশি বেশি প্রচার-দরকার।
এদিন বৈকালিক চিকিৎসায় চিকিৎসকদের সহকারীর দায়িত্বে থাকা রত্মা বেগম বলেন, রোগীর সংখ্যা খুবই কম। কোনদিন ১/২জন। আবার কোন দিন ৩/৪জন। যেদিন কনসালটেন্ড ডাক্তারের চেম্বারে থাকে সেদিন ৭/৮ জন হয়। হাট বাজার বা গ্রাম গঞ্জের বিভিন্ন স্থানে প্রাইভেট ক্লিনিক বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মত প্রচার দিতে পারলে মানুষ হাসপাতালে এসে চিকিৎসা নিবে।
টুঙ্গিপাড়া ১০০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ( দায়িত্বরত) ডা. তরিকুল ইসলাম বলেন, হাসপাতালে বর্হিবিভাগে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়। এছাড়া জরুরী বিভাগে সার্বক্ষণিক সেবা চলে। স্বাস্থ্যসেবা জনগণের আরও কাছে পৌঁছে দিতে ৩জন জুনিয়র কনসালটেন্ড ও ৯জন মেডিকেল অফিসার দিয়ে একটি ডিউটি রোস্টার তৈরী করা হয়েছে। সে অনুযায়ী এসব চিকিৎসক দিয়ে বৈকালিক চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। এ পর্যন্ত ১৯৯জন রোগী চিকিৎসা নিয়েছে। জনবল সংকটের মধ্য দিয়ে আমরা প্রাইলট প্রকল্পের সেবা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি।
তিনি আরো বলেন, বৈকালিক চিকিৎসাসেবার বিষয়ে অনেকে অবগত না থাকায় শুরুতে রোগী কম হত। বর্তমানে রোগীর সংখ্যা একটু বেড়েছে। চিকিৎসার পাশাপাশি বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা স্বল্প খরচে হাসপাতালে করা হয়ে থাকে। তবে সরকার প্রচার প্রচারণা বাড়ালে রোগীর চাপ বাড়বে।
Design & Developed By: JM IT SOLUTION
Leave a Reply